আমরা এখন কী করবো?
লেখক: খোমেনী ইহসান
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বাধীনতা দিবসের পরে বাংলাদেশে একটা মহাঝড় বয়ে যাবে। সেই ঝড়ের ফলাফল কী হবে তাও এর মধ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে।
দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও। আমরা এর প্রমাণ দেখলাম গত ১৮ মার্চ। শেখ হাসিনার জনসভায় মাত্র ৫০ হাজার লোক আসলো। যদিও লোক আসার কথা ছিল কমপক্ষে ৫ লাখ। গতকাল আওয়ামী লীগপন্থী আলেমদের সমাবেশে এক হাজার লোক হলো। যদিও খরচ করা হয়েছিল ৫ কোটি টাকা।
গ্রামে যেতে পারছেন না মন্ত্রী ও এমপিরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে রফা করে নিয়েছেন। অনেকেই আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপি বা জামায়াতে যোগ দিচ্ছেন।
সংবাদমাধ্যমেও এরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রথম আলোর প্রচার সংখ্যা কমে গেছে কমপক্ষে দেড় লাখ। সরকারপন্থী চ্যানলগুলো বিশ্বাস করছে না মানুষ। এ অবস্থায় সব গণমাধ্যমে সরকার বিরোধী মত প্রাধান্য পেতে শুরু করছে। সরকারপন্থী প্রপাগান্ডিস্টদের লেখাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না আর। বিশেষভাবে চোখে পড়ার ব্যাপার হলো টকশোগুলোতে আওয়ামী লীগপন্থীরা এখন নিচু স্বরে কথা বলছেন। যা বলছেন তাতেও দেখা যাচ্ছে বিরোধী দলের অনুগ্রহ পাওয়া প্রার্থনা ধ্বনিত হচ্ছে।
এই যে পরিস্থিতি তার প্রভাব এরই মধ্যে পড়েছে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে। আওয়ামী লীগপন্থী চিহ্নিত আমলাদের বড় একা হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের বেশিরভাগ লোক এখন সরকার বিরোধীদের সমর্থন করছেন। পুলিশ বাহিনীতেও একটা বড় মেরুকরন ঘটেছে। সরাকারীদলীয় কিছু খাস লোক ছাড়া আর কেউই জনগণের উপর গুলি চালাতে রাজি হচ্ছে না। যা কোন গোপণ ব্যাপর নয়। অত্যন্ত পষ্ট ব্যাপার। দেখা যাচ্ছে চরম আওয়ামী পন্থী পুলিশ হলেও কেউ কেউও দলবাজির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসছেন। এরই মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরা, যশোর, কক্সবাজার এলাকায়। সাতক্ষীরায় তিন জন ওসিকে এ কারনে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ আমরা জানি এ সরকারের আমলে কোন দলপন্থীরা কিভাবে ওসি হয়েছিল।
বিচার বিভাগেও যে একটা ঘটনা ঘটেছে তা কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি। হাইকোর্টের একজন বিচারক ইসলাম অবমাননার ঘটনা সব বিচারপতিকে অবহিত করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এজন্য অনুমোদনও দিয়ে গেছিলেন। তারপর আমরা কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। আসল ঘটনা হলো বিচার বিভাগ এখন আর সরকারের পায়রবিতে লপ্ত না যে ইচ্ছে হলেই কিছু করা যাবে। বিচার বিভাগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনকে সমর্থন করছে না। আর বার এসোসিয়েশনসহ সমগ্র বিচার অঙ্গনের মধ্যেই কাজ করছে সরকার বিরোধী মনোভাব।
এত কথা বললাম পরিস্থিতি বুঝানোর জন্য। আর পরস্থিতি এ কারণে বুঝা দরকার যে বাংলাদেশকে যেভাবে নির্জীব করে দেয়া হয়েছিল, তা আর টেকছে না, বাংলাদেশের আবার জেগে ওঠার পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে।
কেউ পছন্দ করুন আর না করুন বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের পক্ষে একটা জনজোয়ার তৈরি হয়েছে। ইসলামপন্থীদের মাধ্যমেই মূলতঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটা বড় পালাবদল ঘটতে যাচ্ছে।
যার প্রাথমিক লক্ষণ হলো এখানে মত প্রকাশ ও রাজনীতি করার বেলায় একটা বিষয় স্বীকার করে নিতে হচ্ছে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন মানুষকে সব সময় সম্মান করতে হবে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তার প্রতি অসম্মান, তার সুন্নাতকে উপহাস করা যাবে না। তার দেয়া দ্বীন ইসলামের বিরোধিতা করা যাবে না। আলেম-ওলেমাদের সম্মান করতে হবে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা ছেড়ে ধর্মীয় সম্প্রীতির পথ নিতে যাচ্ছে। ধর্মকে ভিত্তি ধরে করা রাজনীতিও যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি তা স্বীকার করে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এখানে আরেকটা বিষয় পষ্ট, নাস্তিকতাকে ভিত্তি ধরে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি করা যাচ্ছে না। বিশেষতঃ বামপন্থী রাজনীতি চিরতরে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গেল। বামপন্থার মধ্যে ইসলাম বিদ্বেষ ছাড়া আর কোন সারবস্তু নাই। এই রাজনীতি মানুষের স্বভাবের সঙ্গে যায় না। মানুষের বিশ্বাস ও আদর্শকে ঘৃণা করার এই রাজনীতি নিজেই নিজের মৃত্যু ঘোষণা করেছে।
আগামী ২৯ মার্চ চরমোনাইয়ের লোকেরা ও আগামী ৬ এপ্রিল দেশের সব দল-মতের ইসলামপন্থীরাই ঢাকায় জড়ো হচ্ছেন। তারা ইসলাম অবমাননার প্রশ্নে ঢাকার ইসলাম বিদ্বেষীদের ঘেরাও করতে আসলেও আশাবাদের জনজোয়ার যেন জাতীয় রাজনীতির অচলাব্স্থারই অবসান ঘটাবে।
এই জনজোয়ার যেন বিপজ্জনক কোন পরিস্থিতি তৈরি না করে, বাংলাদেশের এগিয়ে চলা ও জনগণের উন্নতির পক্ষে কাজে লাগে তার জন্য বেগম খালেদা জিয়া তার জাতীয়তাবাদী রাজনীতি নিয়া শামিল হয়েছেন আলেমদের পাশে। ধর্মীয় একটি লড়াইকে জাতীয় লড়াইয়ে পরিণত করতে খালেদা জিয়ার এই অংশগ্রহণ অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ।
এখানে সবার জন্যই সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী দল, জঙ্গী দল ইত্যাদি হিসেবে দেখানোর কোন সুযোই পাচ্ছে না সরকার ও সেক্যুলাররা। দেশে বর্তমানে যে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের রক্তের মাধ্যমেই এর জন্ম হয়েছে। বিশেষ করে শিবিরের ছেলেরা ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মতো দৃঢ়তা দেখানোর কারণেই ভারতপন্থী ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে বাংলাদেশে বিজয় অর্জন সম্ভব হলো না। এটা বিস্ময়কর যে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মতই ঈমানদার হতে পেরেছে শিবিরের কর্মীরা। অন্যায়কে রুখে দেয়ার হিম্মতের চেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর নাই।
তো আমরা দেখলাম জামায়াত-শিবির সব ঘটনার অনুঘটক হলেও তারা এ পর্যন্ত কয়েকটা কাজ করেছে ১. অস্ত্র ধারণ করেনি, বরং গণপ্রতিরোধ গড়েছে, ২. জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, ৩. বিচার বিভাগের মাধ্যমে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হত্যার চক্রান্ত করা হলেও জামায়াত বিচার বিভাগকে উত্খাত করার বদলে ন্যায় বিচার করেই যেন বিচার বিভাগ নিজেকে টিকিয়ে রাখে তার সুযোগ দিচ্ছে, এবং ৪. দেখা যাচ্ছে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নিহত হচ্ছেন পুলিশের গুলিতে, যার পেছনে ভারতের মদদের বিষয়টি অত্যন্ত পষ্ট, তার পরেও জামায়াত চলমান আন্দোলনকে ভারত বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেনি। বরং জামায়াত এমন একটা ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে বাংলাদেশ ও ভারত ভবিষ্যতে দুটি স্বাধীন-সাবভৌম দেশ হিসেবে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।
তো আমি আপাতত কোন প্রস্তাব রাখছি না। আমি শুধু এতটুকু বলছি যে, বাংলাদেশ আগামী কয়েক দিনে এক নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ হয়ে ওঠবে। সেই বাংলাদেশ যেন আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। আমাদের সুন্দরভাবে বেচে থাকার হককে স্বীকার করে নেয়। নিরাপত্তা ও নিরাপদ জীবনের ব্যাপারে আমাদের সার্বভৌমত্বকে সব সময় মান্য করে। এই জন্য আমাদের দিক থেকে কী কী প্রস্তাব ও দাবি ওঠতে পারে তা নিয়া আমাদের সবারই চিন্তা করা দরকার।
তবে এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে আসন্ন দিনগুলোর সংগ্রামকে বেগবান করতে আমাদের সক্রিয় হওয়া দরকার।
No comments:
Post a Comment