Tuesday, March 12, 2013

ধর্মের মর্যাদায় গণমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান : নাস্তিকদের সমর্থন করাও অপরাধ





নিউ ইয়র্কে ইমামদের সমাবেশ 
 ধর্মের মর্যাদায় গণমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার
 আহবান : নাস্তিকদের সমর্থন করাও অপরাধ 

নিজস্ব রিপোর্ট : 
নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় আলেমরা বলেন, শাহাবাগে গণজাগরণের নামে ইসলাম ও রাসুল (সাঃ) কে অবমাননাকারীরা মুরতাদ। তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন করাও সমান অপরাধে অপরাধী। এসব মুরতাদদের বিচার করতে হবে। 
গণমাধ্যমকে ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় আরো জোরালো ভূমিকার আহবান জানিয়ে আলেমরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে কিছু গণমাধ্যমের অসাবধানতাবশত ইসলাম বিদ্বেষী, জাতি বিধ্বংসী ভূমিকায় উলামা ও ইমামবৃন্দ খুবই মর্মাহত, দেশবাসী চরম ক্ষুব্ধ। এ পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রয়োজন। স্বাধীনতার সুদীর্ঘ কয়েক যুগ পর স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ তত্ত্ব অবান্তর। এখন স্বাধীনতা আমাদের সকলের। আমরা সবাই স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী। ইসলাম আমাদের রাষ্ট্রধর্ম, সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে পালন করবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম। সকলের থাকবে সমান মানবাধিকার। কেউ করবে না কারোর বিরুদ্ধে বিষোদগার।
  
সোমবার ১১ মার্চ নিউ ইয়র্কের এস্টোরিয়ার শাহজালাল মসজিদে মসজিদে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ইমাম ও উলামারা লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন  বায়তুল জান্না মসজিদের ইমাম অধ্যাপক মাওলানা মহিবৃর রহমান। সভায় মদীনা মসজিদের ইমাম আবু সুফিয়ানের পরিচালনায় লিখিত বক্তব্য পড়েন মুফতি আব্দুল মালেক। মতামত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জ্যাকসন হাইটস ইসলামীক সেন্টারের ইমাম মাওলানা ইসমাঈল, মুফতি ফায়েক উদ্দিন, মুফতি লুৎপুর রহমান। অনুষ্ঠান শেষে দোয়া মুনাজাত করেন মাওলানা আব্দুল কাদের। এছাড়াও মতবিনিময় সভায় নিউ ইয়র্কের ৫০ টি মসজিদের ইমামসহ ৩ শতাধিক আলেম ওলামা উপস্থিত ছিলেন।
  
লিখিত বক্তব্য মাওলানা আব্দুল মালেক বলেন,  বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার বিশ্বসভায় টিকে থাকার জন্য যখন প্রয়োজন ইস্পাত কঠিণ জাতীয় ঐক্যের, ঠিক সেই মুহূর্তে  এক গোষ্ঠি শাসন শোষণ, লুণ্ঠণ করার জন্য জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ঘৃণা, হিংসা, হানাহানির বিষবৃক্ষ রোপন করে চলেছে। দ্বন্দ্ব সংঘাতের অপরাজনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট গোটা দেশবাসী বড়ই অসহায়, মজলুম। প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এ অবস্থার অবসান না হলে জাতির সর্বণাশ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, উলামা ইমামবৃন্দের ভূমিকা সার্বজনীন ও অরাজনৈতিক। তারা জনগণের সাথে সার্বক্ষণিক ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন; জন্ম, মৃত্যু, আকিকা, বিবাহ, জুমা, ঈদ ও দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে। অথচ গুটিয়েক নাস্তিককে ইসলাম ও আলেমদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে দেশে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করেছে সরকার। 

তারা আরো বলেন, যারা জাতীয় ঐক্যের পরিপন্থী কাজ করে তারাই স্বাধীনতাকে অরক্ষিত করে। হীন রাজনৈতিক স্বার্থে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে দলীয়করণ করে বলি দেয়া হচ্ছে। অত্যন্ত কুৎসিতভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করতে চাই যে, স্বাধীনতা পাগল সমগ্র বাংলাদেশের জনগণ আজ ইসলামের  জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত।

তারা বলেন, সংখ্যালঘুদেরকে রাজনৈতিক ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চক্রান্ত চলছে। মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র অ্যাখ্যা দিয়ে জাতির সত্য ও ন্যায়ের দিশারী সম্মানিত অংশ, সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত আলেম ইমামদেরকে একেবারে ভিত্তিহীন কাল্পনিক জঙ্গী সন্ত্রাসী বলে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে জাতিকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্র আর বরদাশত করা হবে না। 


তারা অভিযোগ করেন, নাস্তিক মুরতাদদেরকে ধর্মের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতার নেশায় মীর জাফরের মতো বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করতে বস্তায় বস্তায় টাকা লুটপাট করে একদিকে মিডিয়া সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে, অন্যদিকে বিভিন্ন কৌশলে স্বাধীন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে ইসলাম ও জাতির বিরুদ্ধে একতরফা মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।




এমন এক ঐতিহাসিক ক্রান্তিলগ্নে জাতির প্রত্যাশা আমাদের গণমাধ্যম এই সর্বগ্রাসী চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে সংকীর্ণতার উর্ধে উঠতে সক্ষম হবে। যার ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম ঐক্যবদ্ধভাবে এক উজ্জ্বল সোনালী ভবিষ্যৎ রচনা করতে মনোনিবেশ করতে পারবে।
সোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসুদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাওলানা ফায়েক উদ্দিন বলেন, নাস্তিকদের সমর্থন
করার কোন সুযোগ নেই। রাসূল (সাঃ) কে অবমাননাকারীদের কোন আলেম সমর্থন করতে পারেনন।




সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে ফায়েক উদ্দিন বলেন,“আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে নই। বিচার হতে হবে নিরপেক্ষ। তবে মানবতা বিরোধী ট্রাইবুনালের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। মানবতা বিরোধী বিচারের নামে ইসলাম ও আলেমদের উপর আঘাত আমরা সহ্য করবোনা।”

মতবিনিময় সভায় ঘোষিত দাবী সমূহ, “আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” পুন:স্থাপন এবং কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে। মহানবী মোহাম্মদ (স:) কে চরম আক্রমণ করে যে জঘন্য ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য বাংলাদেশে ব্লগাররা দিয়েছে তা সুস্পষ্ট কুফুরী। তারা নি:সন্দেহে কাফের, মুরতাদ। তাদেরকে সমর্থন করা বা প্রতিবাদ না করে নীরব থাকাও কুফুরীর অন্তর্ভূক্ত। 

হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ দারুল উলুম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে প্রচারিত শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর সরকার ও দেশবাসীর প্রতি খোলা চিঠি ও ১৫ দফা দাবীর  সাথে সম্পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ। এই আন্দোলনে নিরপরাধ শহীদ পরিবারদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে এই গণহত্যা, গণগ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাওহীদি জনতার মুক্তি দাবী করছি।
গণমুসল্লি আন্দোলন বানচাল করার জন্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে সকল দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে মানুষের ধর্মীয় ও মানবাধিকার চরমভাবে লংঘিত হওয়ায় আমরা খুবই শংকিত। স্বাধীন ও ন্যায়বিচার আজ সম্পূর্ণ ভুলুণ্ঠিত। একজন বিচারপতির পদত্যাগ তারই সুষ্পষ্ট ইঙ্গিতবহ। বিচারের নামে এই প্রহসন, জুলুম জাতির জন্য খুবই ভয়াবহ। পাঠ্যপুস্তকে দেবদেবীকে আল্লাহর সাথে শরীক করায় তাওহীদি জনতা ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে। নাস্তিক মুরতাদদের ইসলাম বিরোধী সব অপপ্রচার বন্ধ করে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ ও মাস্তান দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মসজিদ মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ ও ধর্মীয় কার্যক্রম বন্ধ করা চলবে না। মিডিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একতরফা মিথ্যা প্রচারের ফলে জাতি আজ অনেক গণমাধ্যমের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এখন প্রতিটি মানুষ বাস্তব অবস্থার সাক্ষী হিসেবে বিবেকের তাড়নায় নাগরিক মিডিয়ার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অবিলম্বে গণমাধ্যমের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সকল দলের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো উচিত। কোনভাবেই কাউকে আক্রমণ করে ভিত্তিহীন প্রচারণা কারো জন্যই শুভ হবে না। দেশপ্রেমিক, সৎ, ধর্মপ্রাণ তরুণ-যুবক ও আলেম ইমামদেরকে কাল্পনিক জঙ্গী সাজিয়ে তাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে দেশ-জাতিকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে। নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলছি যে, তোমাদেরকে কেউ যেন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে তোমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে না পারে। তোমরা মুসলমানের সন্তান মুসলমান। ইসলামের পক্ষে তোমরা জোর আওয়াজ তোল: ‘জুলুম, দুর্নীতি মানি না, মানবো না,’ ‘ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু মানি না, মানবো না,’ ‘আমার নবী তোমার নবী বিশ্বনবী মোস্তফা। 

আলেমদের কর্মসূচী:

আগামী ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত বাংলাদেশের শান্তির লক্ষ্যে মানবাধিকার ও ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে বিশ্ব বিবেকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জাতিসংঘের সামনে অবস্থান।   ৩১ মার্চ রোববার ম্যানহাটনের মদীনা মসজিদে শানে রেসালাত মহাসম্মেলন ও লাগাতার কর্মসূচী ঘোষণা। 

           ভিডিও



No comments:

Post a Comment