লাশের নেশায় মেতেছে পুলিশ : ১৯ দিনে ১৫৫ জন হত্যা
লেখক : তোফাজ্জল হোসেন কামাল
লাশের নেশায় মেতেছে পুলিশ। রাষ্ট্রের জনগণের করের টাকায় বেতন-ভাতা ভোগী পুলিশ এখন জনগণের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে ঐতিহ্যবাহী পুলিশ বাহিনী এখন হত্যাকারী বাহিনীতে পরিণত। তাদের সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি। এই দু’বাহিনী মিলে এখন দেশজুড়ে চালাচ্ছে গণহত্যা। অপ্রতিহত গতিতে চালানো গণহত্যার ফলে দেশ আজ বধ্যভূমিতে পরিণত। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। চলছে সমালোচনার ঝড়। এরপরও পুলিশ বাহিনীর কাজ-কর্ম এখন সরকারের গদি রক্ষা ও খায়েশ পূরণের নেশায় মত্ত। ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে পুলিশ ‘উন্মত্ত’। সরকার বিরোধী কোন গণতান্ত্রিক কর্মসূচিই পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। রাজপথে নামলেই বাহিনীর মোড়কে থাকা সরকারি দলের গুলী, টিয়ারশেল, গ্রেনেড আর বেধড়ক লাঠিচার্জসহ বিভিন্ন ধরনের হামলার শিকার হতে হচ্ছে। কোন কোন স্থানে আটকের পর খুব কাছ থেকে গুলী করে হত্যা করা হচ্ছে। গত ১৯ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলীতে ১৩৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারই ঘটেছে ৭০ জনের মৃত্যু। পরদিন এ সংখ্যা ৭৫-এ দাঁড়ায়। এর আগে ১১ দিনে মৃত্যু ঘটেছে ১৭ জনের। সর্বশেষ গত ৬ দিনে ১১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। জামায়াতে ইসলামীর দাবি গত ৮ দিনে ১৪৭ জনের নির্মম মৃত্যু ঘটেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দাবি অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ১৫৫। অধিকার এসব হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। এছাড়া পুলিশের গুলীতে একই সময়ে কমবেশি আহত হয়েছেন ৫ সহ¯্রাধিক। আটক হয়েছেন দু’সহস্রাধিক। নিখোঁজের সংখ্যাও কম নয়। এ যেন গা শিহরে উঠা রাষ্ট্রীয় গণহত্যা। সারা দেশে অপ্রতিহত গতিতে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রাজনৈতিক গণহত্যা। সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, মনে হচ্ছে দেশ এক বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আটক রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলন শুরুর পর এ পর্যন্ত সারা দেশে ১৫৫ জ ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ র্যাব-পুলিশ-বিজিবি এবং সরকারি দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের গুলীতে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে হারে জনতার ওপর গুলী চালানো হয়েছে, তাতে মৃত্যুর কিছু কিছু ঘটনা যে বাদ পড়ে গেছে তাতে সন্দেহের কোনো কারণ নেই। সেই হিসেবে নিহতের এ সংখ্যা পূর্ণাঙ্গ নয়। এদের মধ্যে ১২৩ জন নিহত হয়েছেন গত পাঁচদিনে পুলিশ ও সরকার সমর্থক পেটোয়া বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের হাতে। নিহতদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী। দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম এ রাজনৈতিক গণহত্যা চলতে থাকলেও রহস্যজনকভাবে নীরব তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় ঘোষণা করেন গত ৫ ফেব্রুয়ারি। এ রায় প্রত্যাখ্যান করা হয় দলের পক্ষ থেকে। একই সাথে তার আইনজীবীরা বলেন, তারা ন্যায়বিচার পাননি, আপিল করবেন।
এদিকে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া ট্রাইব্যুনালের রায়কে কেন্দ্র করে ‘ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক’ নামের এক সংগঠনের ব্যানারে সরকারের পোষ্য কিছু তরুণ গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগে জমায়েত হওয়া শুরু করে। এ জমায়েত থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আটক সব রাজনৈতিক নেতাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ‘ফাঁসি দেয়ার দাবি তোলা হয়। জামায়াত ও শিবিরকে প্রতিরোধের ডাক দেয়া হয় শাহবাগ থেকে। তাদের এ উস্কানিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় রাজনৈতিক গণহত্যা। এ গণহত্যায় অংশ নেয় পুলিশ ও সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের ক্যাডাররা। ইতোমধ্যে শাহবাগে অবস্থানরত তরুণদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানান দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক মন্ত্রী। এ সমর্থনের পর রাজনৈতিক গণহত্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার হরতাল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলীতে চারজন নিহত হয়। ওই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির দ-াদেশ দেয়ার পর সারাদেশের ইসলামী জনতা ও সাঈদী ভক্তরা ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠেন। তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। এই প্রতিবাদ থামাতে গিয়ে সরকারের নির্দেশে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি উন্মত্ত হয়ে ওঠে। তাদের বন্দুকের নল হয়ে উঠে তপ্ত। তপ্ত নলের বুলেটে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঝরে যায় ৭০-এর অধিক তাজা প্রাণ। এ সময় প্রতিবাদী জনতার ওপর অকাতরে ছোঁড়া শাসক দলের গুলীতে গুরুতর আহত হয় শত-সহস্র প্রাণ। পরদিন শুক্রবার সে সব প্রাণের মধ্যে কয়েকজনের জীবন প্রদীপ নিভে যায়।
বৃহস্পতিবারের হত্যাকা-কে নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন মহল এই হত্যাকা-কে গণহত্যা বলে অভিহিত করে। তাদের মতে, স্বাধীনতার পরে বিগত ৪২ বছরে এ দেশে এত হত্যাকা- এক দিনে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে আর ঘটেনি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর এ দেশে এক দিনে পুলিশের গুলীতে সর্বোচ্চ ১২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। সেই মৃত্যুকে তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ গণহত্যা বলে দেশে-বিদেশে প্রচার করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে।
বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই দিন পুলিশের গুলীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭০ এর অধিক লোক মারা যায়। এসব মৃত্যুকে গণহত্যা বলে দাবি করা হয়েছে। সে হিসেবে ঢাকায় ৩ জন, সাতক্ষীরায় ১৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ জন, রংপুরে ৭ জন, গাইবান্ধায় ৮ জন, নোয়াখালীতে ৫ জন, চাঁপাইতে ৩ জন, কক্সবাজারে ৩ জন উল্লেখযোগ্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে গণহত্যা চালানোর সময় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের ওপর যৌথভাবে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা। তারা ব্যাংক, হাসপাতাল, বীমা, জামায়াতে ইসলামী সমর্থক ব্যক্তিদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর এবং লুটপাট করেছে। চাঁপাইনববাবগঞ্জে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে, একই জেলায় পর্যটন করপোরেশনের সোনামসজিদ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী বিক্ষুব্ধ জনতার ভয়ে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন। সেদিন রাতে জামায়াতে ইসলামী দাবি করেছে, সাধারণ মানুষের ওপর গুলী চালিয়ে কমপক্ষে ৬৬ নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের দেয়া হিসেবে পুলিশের গুলীতে সাতক্ষীরায় ১০, রংপুরে ৭, পঞ্চগড় ৭, চট্টগ্রামে ৩, কক্সবাজার ৪, সিরাজগঞ্জে ৩, নারায়ণগঞ্জে ৩, দিনাজপুরে ৩, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪, নোয়াখালীতে ৩, মৌলভীবাজারে ৩, গাইবান্ধায় ৩, ঢাকার মিরপুরে ১, উত্তরায় ১, কুমিল্লা, নাটোর, যশোর লক্ষ্মীপুরে ১ জন করে মোট ৬৫ জন নিহত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আরও বলেছে, সারাদেশে পুলিশের গুলীতে ৫ হাজারের মতো সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। তার মধ্যে
গুলীবিদ্ধ অন্তত ৫০০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সরকার সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
সারাদেশের হত্যাকান্ডের পর ওই দিনই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতি প্রদান করে বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যে রায় দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সারাদেশে সাধারণ জনতা এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের গুলীতে জামায়াত-শিবির কর্মীসহ মোট ৫০ জন নিহত হয়েছেন। এ দাবি করে তিনি বলেন, সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশের গুলীতে রংপুরে ৭ জন, চট্টগ্রামে ৩ জন, কক্সবাজার ৪ জন, সিরাজগঞ্জে ৩ জন,নারায়ণগঞ্জে ৩ জন, দিনাজপুরে ৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, মৌলভীবাজারে ৩ জন, সাতক্ষীরায় ৫ জন, গাইবান্ধায় ৩ জন, কুমিল্লা, নাটোর, যশোর ও লক্ষ্মীপুরে ১ জন করে মোট ৫০ জন নিহত হন।”
“সারাদেশে পুলিশের গুলীতে আহত হয়েছেন আরও ৩ হাজার নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে ৫শ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
“সারাদেশে পুলিশের গুলীতে আহত হয়েছেন আরও ৩ হাজার নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে ৫শ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
রফিকুল ইসলাম খান বিবৃতিতে অভিযোগ করেন,সরকার ‘সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি’ খেলছে। কোনো যুদ্ধরত দেশেও এভাবে একদিনে ৫০ জন লোকের নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সারাদেশে শিবিরের ২১ নেতা-কর্মীকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ও দিনাজপুরে দু’জন করে, রংপুরে সাতজন, ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচজন, কক্সবাজারে দু’জন ও চট্টগ্রামে তিনজন নিহত হয়েছে। গুলীবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন আরও ৪৭ নেতা-কর্মী। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের রুহুল আমীন, মোক্তার হোসেন, দিনাজপুরের হাসিনুর, রংপুরের মশিউর রহমান, মাহমুদ হাসান, আনোয়ারুল, শাকিল, সাদেক আলী, সাহেব আলী ও চট্টগ্রামের মেজবাহ উদ্দিন ও বাহার উদ্দিনের নামও উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
গতকাল নিহত তিন
গতকাল শনিবারও দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিবাদী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলী চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের সাথে যোগ দিয়ে র্যাব ও বিজিবি সমান্তরালে গুলী চালিয়েছে জনতার ওপর। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পুলিশ-বিজিবির গুলীতে তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে।
আমার ব্লগের তথ্য ঃ ব্লগার সুশান্ত দাশ গুপ্তের ‘আমার ব্লগ’-এ ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আরেক ব্লগার হতাহতের একটি তথ্য পোস্ট করেন। সে তথ্যে দেখা যায়, ওই দিন পুলিশের গুলীতে জামায়াত-শিবিরের ৬০টি তাজা প্রাণ ঝরে যায়। এছাড়া আরও ১৪টি প্রাণ ঝরে পড়ে। তথ্যে বলা হয়, রংপুরে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, কক্সবাজারে ২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ জন, দিনাজপুরে ১ জন, বগুড়ায় ১ জন, গাইবান্ধায় ৪ জন, নোয়াখালীতে ৭ জন, মৌলভীবাজারে ৪ জন, রাজশাহীতে ৪ জন, সাতক্ষীরায় ৫ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ জন,নওগাঁয় ১ জন, জামালপুরে ১ জন, লক্ষ¥ীপুরে ১ জন ও বি.বাড়িয়ায় ৫ জন।
গতকাল শনিবারও দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিবাদী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলী চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের সাথে যোগ দিয়ে র্যাব ও বিজিবি সমান্তরালে গুলী চালিয়েছে জনতার ওপর। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পুলিশ-বিজিবির গুলীতে তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে।
আমার ব্লগের তথ্য ঃ ব্লগার সুশান্ত দাশ গুপ্তের ‘আমার ব্লগ’-এ ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আরেক ব্লগার হতাহতের একটি তথ্য পোস্ট করেন। সে তথ্যে দেখা যায়, ওই দিন পুলিশের গুলীতে জামায়াত-শিবিরের ৬০টি তাজা প্রাণ ঝরে যায়। এছাড়া আরও ১৪টি প্রাণ ঝরে পড়ে। তথ্যে বলা হয়, রংপুরে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, কক্সবাজারে ২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ জন, দিনাজপুরে ১ জন, বগুড়ায় ১ জন, গাইবান্ধায় ৪ জন, নোয়াখালীতে ৭ জন, মৌলভীবাজারে ৪ জন, রাজশাহীতে ৪ জন, সাতক্ষীরায় ৫ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ জন,নওগাঁয় ১ জন, জামালপুরে ১ জন, লক্ষ¥ীপুরে ১ জন ও বি.বাড়িয়ায় ৫ জন।
আমার ব্লগের পরিচালনাকারী সুশান্ত দাশ গুপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে সর্বমহলে পরিচিতি আছে। জনশ্রুতি আছে, জয়ের টাকা-পয়সাতেই এই ব্লগটি পরিচালিত হয়ে আসছে। অথচ সরকার বৃহস্পতিাবারের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এতো নয় বলে দাবি করে। এই দাবির সথে সুর মেলায় বিভিন্ন মিডিয়ায় চিহ্নিত কতিপয় মহল।
১১ দিনে ১৭ জনকে হত্যা : ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ১১ দিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা হয় ১৭ জনকে। ওই গত ১১ দিনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আন্দোলনকারী বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মুসল্লীদের ওপর পুলিশের গুলীতে নিহত ১৭ জনের মধ্যে চারজনই মানিকগঞ্জের। এছাড়া সিলেটে তিনজন, কক্সবাজারে চারজন, পাবনায় দুইজন, গাইবান্ধায় তিনজন ও কুমিল্লায় একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের গুলীতে আহত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি চিকিৎ্্সাধীন রয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি নৃশংস ঘটনার ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি বিরোধীদের ওপর পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের একটি ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছাড়া হয়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কক্সবাজারে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে কক্সবাজার শহরে ‘সাঈদী মুক্তি পরিষদ’ আয়োজিত সর্বস্তরের মানুষের মিছিলে পুলিশ নির্বিচার গুলী চালাচ্ছে ও বেধড়ক লাঠিচার্জ করছে। এক পর্যায়ে দুইজন যুবককে আটক রে কয়েজন পুলিশ সদস্য বেধড়ক পেটাচ্ছে।
একপর্যায়ে লাল-সাদা রঙের শার্ট পরা যুবকটি রাস্তার পাশের একটি খোলা রুমে আশ্রয় নিলে সেখানে পুলিশের ৪-৫ জন সদস্য তাকে প্রহার করতে থাকে। এক পর্যায়ে খুব কাছ থেকে এক পুলিশ সদস্য ওই যুবককে গুলী করে। কিছু সময় পরই যুবকের নিস্তেজ দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই যুবকের লাশ আর পাওয়া যায়নি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ইসলামী দলগুলোর ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে অবিরল গুলী চালাতে থাকে পুলিশ। বিভিন্ন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত খবরে দেখা গেছে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ওভারব্রিজে পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবককে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেধড়ক মারধরের এক পর্যায়ে খুব কাছ থেকে গুলী করে। গুলীবিদ্ধ যুবকের পিঠ থেকে অঝরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সে অবস্থাতেও কয়েজন পুলিশ তার নাকে-মুখে লাথি মারতে থাকে। এসব বিষয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জে আলেমসহ নিহত ৪ : ইসলাম ধর্ম অবমাননা ও হযরত মুহাম্মদ (স:)কে নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে ইসলামী দলগুলোর ডাকা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রোববারের হরতালে পুলিশের গুলীতে মাদরাসা শিক্ষকসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। গুলীবিদ্ধ হয়েছে নারী-শিশুসহ ২০ জন। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানান, হরতাল সমর্থনে সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন। তারা সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে পুলিশ কয়েকশ’ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করে। এতে চারজন নিহত হন। তারা হলেন- গোবিন্দল মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ শাহ আলম (২৫), নাজিম উদ্দিন (২৬), আলমগীর (২৫), ও মাওলানা নাসির উদ্দিন (৩০)। মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী মিয়া ওইদিন সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল এবং ৩০০ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করা হয়।
সিলেটে ৩ জন নিহত : সিলেটে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ও গত ২২ ফেব্রুয়ারি মিছিলে পুলিশের গুলীতে আহত দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছেন। এ নিয়ে সিলেটে তিনজন নিহত হয়েছেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটে সাঈদী মুক্তি পরিষদের মিছিলে পুলিশের গুলীতে আহত মহানগর শিবিরের সহ-সমাজসেবা সম্পাদক আলী আজগর খান রাহাত ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। এছাড়া শুক্রবার চৌহাট্টায় তৌহিদী জনতার মিছিলে পুলিশের গুলীতে আহত সুহিন রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সিমেক হাসপাতালে মারা যান। ওই দিন পুলিশের নির্বিচার গুলীতে মোস্তফা মোর্শেদ তাহসীন (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চৌহাট্টায় শিবিরের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে গুলী ছোঁড়ে পুলিশ। সেখানে গুলীবিদ্ধ হন রাহাত। তিনি সিলেট এমসি কলেজের ছাত্র। তার লিভারে গুলী লেগেছিল। নিহতের বাবা নুরুল মোস্তফা জালালাবাদ গ্যাসে কর্মরত। এমসি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র তাহসীন জুমার নামাজ শেষে হাউজিং এস্টেট মসজিদ থেকে মুসল্লিদের মিছিলে অংশ নেয় এবং চৌহাট্টায় পুলিশের গুলীতে শহীদ হয়। এ সময় কমপক্ষে ৫০ জন গুলীবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।
কক্সবাজারে ৪ জন : গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে কক্সবাজার শহরে সাঈদী মুক্তি পরিষদ আয়োতি সর্বস্তরের মানুষের মিছিলে পুলিশ নির্বিচার গুলী চালায়। গুলীতে চারজন নিহত ও দেড় শতাধিক গুলীবিদ্ধ হন। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের জামায়াত কর্মী নুরুল হক (৪২), পিএমখালী ইউনিয়নের মোক্তার আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৪২), শহরতলীর গোদারপাড়ার কলিমউল্লাহর ছেলে শিবিরকর্মী তোফায়েল উদ্দিন (২২) ও ছালেহ আহমদ (৪৫)।
পাবনায় ২ জন : গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পাবনায় জামায়াতের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলীতে দুই জামায়াত কর্মী নিহত হয়। নিহতরা হলো ধর্মগ্রাম এলাকার শমশের আলীর ছেলে আলাল হোসেন (১৮) ও মনোহরপুর এলাকার আবদুল কুদ্দুসের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২৩)। গুলীবিদ্ধ আরও ২ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাইবান্ধায় ৩ জন : গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইসলাম ও নবী (স:)-এর অবমাননার প্রতিবাদ ও ধর্মদ্রোহী নাস্তিক, মুরতাদদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে ওঠা ইসলামী জনতার মহাজাগরণ দমাতে নির্বিচার গুলী চালালে গাইবান্ধায় তিন মুসল্লি নিহত হন। এরা হলেন গোবিন্দপুরের মোমিন ও মুঞ্জু এবং মহদিপুর ইউনিয়নের কোকিল। এছাড়া ২৫ জন গুলীবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত ৫০ জন। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সমমনা কয়েকটি ইসলামী দলের কয়েক হাজার লোক মিছিল করে রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে ৩০ রাউন্ড গুলী চালায়। এতে ২ জন ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে মোমিন নামে আরও একজন মারা যান। এ সময় কমপক্ষে ২০ জনকে আটক করে পুলিশ।
কুমিল্লায় ১ জন : গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতালের সময় কুমিল্লায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের ওপর পুলিশ গুলী চালালে ইবরাহীম নামে এক জামায়াতকর্মী নিহত হন। গুলীবিদ্ধ অবস্থায় তাকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। এ সময় তিনজন গুলীবিদ্ধসহ আহত হয় আরও ২৫ জন।
একদিনে নিহত ২৭ : গত রোববার ৪ মার্চ জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতালে দেশের ছয় জেলায় এক পুলিশ সদস্যসহ ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। অন্যদিকে রংপুরের মিঠাপুকুরে ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে গুলীবিদ্ধ এক জামায়াতকর্মী রোববার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে ওই দিন মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৭। ওই দিনের সংঘর্ষে বগুড়ায় ১২, জয়পুরহাটে ৬, রাজশাহীতে ৪, সাতক্ষীরায় ২, ঝিনাইদহে এক পুলিশ সদস্য ও গাজীপুরে একজন নিহত হন।
বগুড়ায় নিহত ১২ : বগুড়ায় রোববার ভোর চারটা থেকে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে নারীসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। গুলীবিদ্ধ হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। পুলিশের গুলীতে নিহতরা হলেন- বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের মিরাজ আলীর স্ত্রী রেজিনা বেগম (৪৫), ডোমন পুকুর ম-ল পাড়ার তোতা মিয়ার স্ত্রী মুনজিলা খাতুন (৩৮), একই গ্রামের মনছের আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম, রকিবের ছেলে আব্দুর রহমান (৬০), আকলিমা খাতুন, মুরাদপুরের দুলু মিয়া (৩৫), পার আচলে গ্রামের জিয়াউর রহমান (৩৯), শিবগঞ্জ উপজেলার রায় মাঝিড়া গ্রামের বাবু মিয়া, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কলাকোপা গ্রামের আলমগীর হোসেন (২০), কাগইলের আব্দুস শহীদ, সদরের পালশা গ্রামের টিটু মিয়া (২০) এবং জয়পুর পাড়ার আফতাব আহমেদের ছেলে বাদল (১৮)।
আহতদের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা অভিযোগ করছেন, পুলিশ এসে আহতদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে এবং গুলীবিদ্ধদের হাসাতালে ভর্তি হতে দিচ্ছে না।
জয়পুরহাটে নিহত ৬ : জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে হরতালে সংঘর্ষে বিজিবি ও পুলিশের গুলীতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গুলীবিদ্ধ হয়েছেন ২০ জন। এছাড়া জয়পুরহাট শহরে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে একজন। নিহতরা হলেন- আটদন্তিপুর গ্রামের ফরমান (৩৮), বাশখৈল গ্রামের নাসির (২০), কাঁশড়া গ্রামের মজিদুল (৪০), ভিগার গুচ্ছ গ্রামের আবদুল হাকিম (২০), ধরঞ্জী ইউনিয়নের দৈবনকনন্দপুর গ্রামের হেসাব আলী (৫০), রহমতপুর গ্রামের মজনু (২৫)। নিহত ছয়জনের বাড়ি পাঁচবিবি উপজেলায়। এর মধ্যে মজনু বাদে বাকি পাঁচজন মারা গেছেন পাঁচবিবিতে সংঘর্ষে। আর মজনু মারা গেছেন জয়পুরহাট শহরের সংঘর্ষে।
রাজশাহীতে নিহত ৪ : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে হরতালের সময় পুলিশের গুলীতে চারজন নিহত হয়েছে। রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) তওফিক মাহবুব চৌধুরী চারজনের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সময় আরও পাঁচজন গুলীবিদ্ধ হচ্ছেন। এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে। নিহত দু’জন হলেন- জামায়াত কর্মী মুজাহিদ (৫০) ও রফিকুল (১২)। বাকি দু’জনের পরিচয় জানা যায়নি।
সাতক্ষীরায় নিহত ২ : সাতক্ষীরায় বিজিবির গুলীতে দু’জন নিহত ও দু’জন গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার রইচপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- রইচপুর গ্রামের মফিজউদ্দিনের ছেলে জামায়াত কর্মী মাহবুবুর রহমান (৪২) ও একই গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে রইচপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সোহাগ (১২)। গুলীবিদ্ধরা হলেন-ইব্রাহিম হাজীর ছেলে মোহাম্মদ ইছাহাক (৩২) ও নূরুল আমিনের ছেলে নাজির হোসেন ওরফে বাচা (২২)।
ঝিনাইদহে পুলিশ সদস্য নিহত : ঝিনাইদহের হরিণাকু-তে হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিন শিবির কর্মী গুলীবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, হরতাল সমর্থনকারীরা সকাল ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ভাংচুর করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও হরতাল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ গুলী চালায়। এতে তিন শিবির কর্মী গুলীবিদ্ধ হন। হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ওমর ফারুক (৪০) নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত ও পাঁচ পুলিশসহ আরও অন্তত ২০ হরতাল সমর্থক আহত হয়।
গাজীপুরে নিহত ১ : গাজীপুরে পিকেটিংকালে ছাত্রশিবিরের শ্রীপুর উপজেলা সভাপতি মোঃ আবদুর রাজ্জাক ট্রাক চাপায় নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাংলা তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামের ছমির উদ্দিন সরকারের ছেলে।
মিঠাপুরে গুলীবিদ্ধ জামায়াত কর্মীর মৃত্যু : রংপুরের মিঠাপুকুরে পুলিশ-বিজিবি এবং জামায়াত-শিবির ও তৌহিদী জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলীতে আহত জামায়াত কর্মী জাহাঙ্গীর আলম (৫০) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাতালে মারা গেছেন। এ নিয়ে এ ঘটনায় মিঠাপুকুরে গুলীবিদ্ধ হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো সাত।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গুলীবিদ্ধ জাহাঙ্গীর আলমকে বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত জাহাঙ্গীরের বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী গ্রামে। তিনি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী এবং জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর রায় পরবর্তী সহিংসতায় পুলিশ-বিজিবির গুলীতে ঘটনাস্থলে ছয়জন মারা যান। এছাড়া ৫০ জন গুলীবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে রোববার একজন মারা গেলেন।
২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর রায় পরবর্তী সহিংসতায় পুলিশ-বিজিবির গুলীতে ঘটনাস্থলে ছয়জন মারা যান। এছাড়া ৫০ জন গুলীবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে রোববার একজন মারা গেলেন।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত ১৯ দিনে সারা দেশে গণহত্যার শিকার হন ১৩৪ জন নারী-পুরুষ। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ দিনে গণহত্যা করা হয় ১৭ জনকে। পহেলা মার্চ গণহত্যার শিকার হন ৬ জন, ২ মার্চ ৭ জন, ৩ মার্চ ২৭ জন, ৪ মার্চ ৪ জন ও ৫ মার্চ ৩ জন।
আবদুল কাদের মোল্লার রায় বাতিলের দাবিতে জামায়াত দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচি ঘোষণা করলে সেখানে গণহত্যা চালায় পুলিশ। চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলী চালালে পাঁচজন শহীদ হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে পুলিশের নির্বিচার গুলীতে আহত এক ব্যাংক কর্মচারী পরে হাসপাতালে মারা যান। ১৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে পুলিশ গুলী চালালে শহীদ হন তিনজন। এ ঘটনার পর প্রশাসন ওই শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। পরে সকাল থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের শুরুর দিন পুলিশের গুলীতে শহীদ হন আরও চারজন।
১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজিবকে হত্যা করে কে বা কারা। তাকে হত্যার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার ও তার সহকর্মীদের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন নিবন্ধ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী ফুঁসে ওঠেন ইসলামপ্রিয় মানুষ। জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের সব ইসলামী দলই এসব ব্লগারের ইসলামবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ও সমমনা দলগুলো নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার দাবিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদে বিক্ষোভ করে। এ বিক্ষোভ মিছিল রাজপথে নামলে গুলী চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় গণমাধ্যম কর্মীরাও আহত হন। এদিন সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে রাজধানীর পাশে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায়। পুলিশের গুলীতে সেখানে পাঁচ গ্রামবাসী শাহাদাতবরণ করেন।
পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদ- দেয়ার পর। ঐ দিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলীতে শহীদ হন ৭০ জন সাঈদীভক্ত এবং জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মী। এরপর ১ ও ২ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ জন করে ১২ জন শাহাদতবরণ করেন। রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডাকে ৩ ও ৪ মার্চ। হরতালের প্রথম দিন জামায়াত-শিবিরকর্মী এবং সাঈদীভক্তরা মিছিল বের করলে তাতে নির্বিচারে গুলী চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় সারা দেশে আরও ২৭ জন শাহাদাতবরণ করেন। গণহত্যার সময় জনতার প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ৬ জন পুলিশও নিহত হয়েছে। গত সোমবার সারা দেশে পুলিশ ও বিজিবির গুলীতে শহীদ হয়েছেন আরও ৪ জন সাঈদীভক্ত।
পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদ- দেয়ার পর। ঐ দিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলীতে শহীদ হন ৭০ জন সাঈদীভক্ত এবং জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মী। এরপর ১ ও ২ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ জন করে ১২ জন শাহাদতবরণ করেন। রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডাকে ৩ ও ৪ মার্চ। হরতালের প্রথম দিন জামায়াত-শিবিরকর্মী এবং সাঈদীভক্তরা মিছিল বের করলে তাতে নির্বিচারে গুলী চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় সারা দেশে আরও ২৭ জন শাহাদাতবরণ করেন। গণহত্যার সময় জনতার প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ৬ জন পুলিশও নিহত হয়েছে। গত সোমবার সারা দেশে পুলিশ ও বিজিবির গুলীতে শহীদ হয়েছেন আরও ৪ জন সাঈদীভক্ত।
এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরকে দমন করতে গিয়ে সরকার দেশব্যাপী পরিকল্পিত গণহত্যা চালালেও কোনো প্রতিবাদ করছে না মানবাধিকার সংগঠনগুলো। জাতিসংঘের মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এ গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইছেন বাংলদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। একই সুরে কথা বলেছেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিক কেন্দ্রের পরিচালক সুলতানা কামাল। সম্প্রতি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এ গণহত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। তারা বলেছে, এ ঘটনার দায় এড়াতে পারবে না সরকার।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হিসেব : দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গত কয়েকদিনের হত্যাকা-ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এরজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হিসেব : দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গত কয়েকদিনের হত্যাকা-ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এরজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে।
অধিকার : মানবাধিকার সংস্থা অধিকার স্বাধীন হাওয়ার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, সহিংসতা দমনের নামে পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনী ৯৮ জনকে গুলী চালিয়ে হত্যা করেছে। রাজনৈতিক কর্মী ছাড়াও নিহতদের মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু ও সাধারণ মানুষ। এ সময়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ আহত এবং ৫ জন পুলিশও বিক্ষোভকারীদের হাতে নিহত হয়েছে।
এ প্রাণহানিতে অধিকার উদ্বিগ্ন। এ ভয়াবহ ঘটনায় দেশব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রাণহানিতে অধিকার উদ্বিগ্ন। এ ভয়াবহ ঘটনায় দেশব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অধিকার পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারকে অবিলম্বে নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। এ ঘটনার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করছে অধিকার। এছাড়া সরকারকে সব পক্ষের কথা বলে চলমান সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
এ প্রাণহানিতে অধিকার উদ্বিগ্ন। এ ভয়াবহ ঘটনায় দেশব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রাণহানিতে অধিকার উদ্বিগ্ন। এ ভয়াবহ ঘটনায় দেশব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অধিকার পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারকে অবিলম্বে নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। এ ঘটনার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করছে অধিকার। এছাড়া সরকারকে সব পক্ষের কথা বলে চলমান সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সমাবেশ শুরু হওয়ার পর কয়েকজন ব্লগারের ব্লগে আল্লাহ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি, এই ঘটনার জের ধেরে সহিংসতা ও এই সময় পুলিশের নির্বিচারে চালানো গুলীতে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২২ জন নিহত হয়েছেন। এই সময়ে নারী ও শিশুরাও হতাহতের শিকার হয়েছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করে। এদিন জামায়াতনেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ফাঁসির আদেশ দেয়অর পর জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভ শুরু করে। এতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলী চালিয়ে অনেক মানুষকে হত্যা করে। এমন হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মানুষ থানা, স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারি স্থাপনা ঘেরাও ও হামলা চালায়। অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীদের বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায়, গুলীতে নিহত ব্যক্তিদের অনেকেই ছিলেন সাধারণ ছাত্র-কৃষক-জনতা এবং যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলও পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিক্ষোভরত নীরব জনগণের দিকে অস্ত্র তাক করে গুলী ছুঁড়তে দেখা যায়।
অধিকার এই হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সহিংসতার ব্যাপক প্রাণহানি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে। অধিকার সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে, অবিলম্বে নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং বিদ্যমান সহিংস পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে এবং মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে রাজনৈতিক দল-মত নির্বিশেষে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে।
অধিকার আরও দাবি করছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই হত্যার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। নতুবা এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেশকে এক কঠিন পরিণতিতে দিকে নিয়ে যাবে, যার সব দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। জেনাবেল হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশের দাবি, পুলিশের গুলী ও সহিংসতায় গত ১২ দিনে পুলিশ ও বিজিবির গুলীতে নির্মমভাবে নিহত হন ১৪৭ জন। আর আহত হয়ে চিকিৎসা নেন ১৫ হাজার মানুষ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মিডিয়া রিসার্চ এন্ড ট্রেনিংয়ের তথ্য মতে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি শুরুর পর এ পর্যন্ত পুলিশের গুলী ও সহিংসতায় নিহত হয়েছে ১৫৫ জন নাগরিক। তবে শুধু পুলিশের গুলীতে নিহতের সংখ্যা ১২৩ জন বলে সংস্থাটি জানায়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মিডিয়া রিসার্চ এন্ড ট্রেনিংয়ের তথ্য মতে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি শুরুর পর এ পর্যন্ত পুলিশের গুলী ও সহিংসতায় নিহত হয়েছে ১৫৫ জন নাগরিক। তবে শুধু পুলিশের গুলীতে নিহতের সংখ্যা ১২৩ জন বলে সংস্থাটি জানায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি ৬৭ : গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৩০০ বিধিতে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত পুলিশসহ ৬৭ জন নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, বেআইনী কার্যকলাপ চালাতে উস্কানিদাতা জামায়াত ও বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতাদের এই মৃত্যুর দায় দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির জন্য ২০০৯ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানায়, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং ১২ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে ২৩৫টি মামলা করা হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় এক হাজার ৫৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীত ও মানবাধিকার রক্ষার প্রধান দায়িত্বে পুলিশ। তার সঙ্গে বিজিবি, কোস্টগার্য, আনসার-ভিডিপি ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় পুলিশ আইনগত ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ ও বিজিবি পেশাগত দায়িত্ব পালনে চরম সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য দেখিয়েছে এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া : হামলায় স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপিকে দায়ী করছেন আর ঐদিকে বগুড়ার শেরপুরে শহীদ মিনারে ভাংচুরের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন যুবলীগের নেতা তৈয়বুর রহমান টিপু। তাকে জনতা পুলিশে সোপর্দ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের থলের বিড়াল এখন বেরিয়ে আসছে। জনবিক্ষোভ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকারের লোকজন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি জামায়াতের : জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, স্বতঃস্ফূর্ত জনতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় প্রত্যাখ্যান করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু তাদের প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নিয়ে সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ‘গণহত্যা’ মেতে ওঠে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য গত আট দিনে নিহত ‘১৪৭ জন’ সাধারণ মানুষের প্রতি চরম উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়।
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=110810
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=110810
গণ হত্যা বন্ধ করো
ReplyDelete