Monday, March 4, 2013

বাংলাদেশে এখন যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে


বাং
লাদেশে এখন যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে



লেখক : খোমেনী ইহসান


বাংলাদেশে এখন যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কারণ দেশজুড়ে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য গণহত্যা চলছে। এই যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার ব্যাপারে একটা পক্ষ পষ্টতই খুনীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আরেকটা পক্ষ ভাবছেন এত বিপুল পরিমাণে মানবাধিকর লঙ্ঘিত হচ্ছে এমতাবস্থায় ইনসানিয়াতের জায়গা থেকে এক পশলা করুনা বর্ষণ করা জরুরি।





কিন্তু মুশকিলটা কতখানি ব্যাপক ও গভীর তা আমাদের কারোরই মাথায় সম্ভবত ঢুকছে না। জামায়াত-শিবিরের অব্যাহত প্রতিরোধ একটা বাস্তবতা তৈরি করেছে। যাকে এড়িয়ে যাওয়া বা ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগ নাই। শেখ হাসিনা শুধু নিজে বিপদে পড়েন নাই,তার সভাসদরা, তার দলের লোকেরা ও সমর্থকরাও বিপদে পড়ে গেছেন। পুলিশকে অস্ত্র সংবরণের কান্ডজ্ঞানটা কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতার কারণে আজ মানুষের খুনের রক্তে তাদের হাত মাখামাখি।


দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনকে বাঙালী জাতীয়তাবাদের গুলতি দিয়া তার উত্খাত করতে পারবেন না। ইসলাম বিদ্বেষ দিয়াও না। তারা এমন শক্তিশালী নয় যে তারা হত্যাকান্ডের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি না হয়ে পারবেন। সত্য তো এই যে জামায়াতের চেয়ে তাদের অবস্থান আরো দুর্বল, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের কারনেই।


এ অবস্থায় মার্কসের বই না পড়া ও মার্কসের বিজ্ঞানকে আত্মস্থ করতে না পারা টোটকা বামেদের নিয়া আমি পেরেশান বোধ করি। তারা অন্তরের মধ্যে বেহুদা ইসলাম বিদ্বেষ পোষণ করার কারণে বিপদে পড়েছেন। তারা আন্দাজের ওপরে গণহত্যা সমর্থক হয়ে গেছেন। যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হিসেবে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তত্পরতা চালাচ্ছেন।


কিন্তু ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু সত্য, বিপুল গণমানুষের প্রতিরোধের মধ্যে পাকিস্তানী হানাদারদের মসনদই না শুধু পূর্ব বাংলার ওপর তাদের কর্তৃত্বও উত্খাত হয়ে যাওয়া যেহেতু সত্য; সেহেতু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মত আচরণকারীদের পরিণতিও একই হবে। আর তাদের দোসরদের পরিণতিও একই হবে।


অনেকে হয়তো এই দুরাশার ফান্দে পড়ে আছেন যে ১৯৭১ এ পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হইছে এখন জামায়িতারা বাংলাদেশ ভাঙতেও পারবে না, নতুন কোনও রাষ্ট্রও গড়তে পারবে না।


কিন্তু দুনিয়ার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় রাষ্ট্র না ভেঙ্গে বিচ্ছিন্নতা না ঘটিয়েই রাষ্ট্রকে রূপান্তর করা সম্ভব। পুরনো রাষ্ট্রকে উত্খাত করে নতুন রাষ্ট্র গড়া সম্ভব। নতুন গঠনতন্ত্রও সম্ভব। নেপালে বিপ্লব হওয়ার জন্য আরেক দেশ থেকে স্বাধীনতা দরকার পড়েনি। ইরানে দরকার পড়েনি। মিশরে দরকার পড়েনি।


আমি অবশ্যই মনে করি না যে জামায়াত এখনই ইসলামী হুকুমত কায়ের জন্য রাষ্ট্রের রূপান্তর ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সারা দেশে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছে। আমি মনে করি জামায়াত আইনী ও রাজনৈতিক কোন উপায়েই জুলুম. নিপীড়ন ও অবিচার থেকে রেহাই পাওয়ার দিশা না পেয়ে বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছে।


জামায়াতের চাওয়া সামান্যই, তারা শীর্ষ নেতাদের মুক্তি চায় এবং শেখ হাসিনা বিদায় হলে বেশি হিস্যা নিয়া বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতায় যেতে চায়।


কিন্তু জামায়াতের লোকদের বিপুল গণপ্রতিরোধধ, জালেম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার হিম্মত সমাজকে এক নতুন জায়গায় নিয়ে এসেছে।


আজ সূর্যের মত সত্য হল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মতাদর্শিক, শাসনতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক নীতির ত্রুটিপূর্ণ ও দুর্বল। বাঙালী জাতীয়তবাদ ও ধর্মনিরপক্ষেতা নামক ফ্যাসিবাদী, বর্নবাদী, ঘৃণাচর্চাকারী ও অশ্লীল মতাদর্শের খপ্পড়ে পড়েই মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত একটি রাষ্ট্র আজ রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়েছে।





এই রাষ্ট্র আর টিকবে না। নিজেই নিজের পাপের ভারে ভেঙে পড়েছে। একে সেনাশাসন দিয়া বা দলীয় সমঝোতা দিয়া আর টিকিয়ে রাখা যাবে না। এর যত দ্রুত অবসান হবে, তত তাড়াতাড়ি মানুষ নিশ্বাস নিতে পারবে। যা আপনগুণে নিজেকে অন্যায্য ও অপ্রয়োজনীয় করে তোলে তার পতন অনিবার্য।


কাজেই এখন এই রাষ্ট্রকে উত্খাত করে নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়তে হবে যেখানে সব ধর্ম. সব জাতি, সব ভাষা, সব বর্ন, সব লিঙ্গ, সব শ্রেণী শ্রেণী ও সব পেশার মানুষ সমান মর্যাদা, হক ও ইনসাফের অধিকারী হবে। এর জন্য দরকার পড়বে গণ অভ্যুত্থান এবং তার পরে একটি ইনসাফপূর্ণ গঠনতন্ত্র গঠন করতে হবে।


গঠনতন্ত্রটি এমন হতে হবে যেন পক্ষগুলো ইচ্ছা করলে ওই গঠনতন্ত্র বাতিল করে নতুন রাষ্ট্র গড়তে পারে। কেউ যদি ইসলাম কায়েম করতে চান, তা পারবন। কেউ যদি কমিউনিজম কায়েম করতে চান, তা পারবন। কেউ যদি উদার গণতন্ত্র কায়েম করতে চান, তাও পারবেন।


আমি মনে করি নতুন রাষ্ট্রটি এমন হতে হবে যেখানে সংক্ষুব্ধ নাগরিক রাষ্ট্রের পতাকা পোড়াতে পারবেন, গঠনতন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে তুই তুমি বলতে পারবেন, বিচারকদের কাছে জবাবদিহি দাবী করতে পারবেন।




আমি মনে করি নতুন রাষ্ট্রকে অবশ্যই কয়েকটি বিষয়ে সব সময় জিরো টলারেন্স নীতিতে অবিচল থাকতে হবে। ১. মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারগুলোর ব্যাপারে রাষ্ট্র সব সময় দায়বদ্ধ থাকবে, ২. ক্রসফায়ারসহ সব রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড বন্ধ করবে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার করবে, ৩. নারীর প্রতি সহিংসতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হবে এবং নারীকে তার সব হক, মর্যাদা ও নেতৃত্বের ভাগ দিতে হবে, ৪. মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা, চলাচল করার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে না, ৫. পার্বত্য চট্টগ্রামের, সমতলের ও ঢাকার জেনেভা ক্যাম্প নিবাসী অবাঙালী জাতিগোষ্ঠীগুলোকে বাঙালীদের সমান সুযোগ ও কর্তৃত্ব চর্চা করা সুযোগ দিতে হবে, ৬.তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দরকে জাতীয়করণ করতে হবে, ৭.শ্রমিকদের প্রথম শ্রেণীর জীবন যাপন করার ব্যবস্থা করতে হবে, ৮ কৃষকদের জন্য এমন ব্যবস্থা করা হবে যেন শহরমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জুলুম তাদের ফসল কেড়ে নিতে না পারে।




আমি রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্র চাই না, সীমানা পছন্দ করি না, জাতীয়তাবাদ পছন্দ করি না। আমি উম্মায় বিশ্বাসী। মাতৃতান্ত্রিক ইসলাম আমার দ্বীন। আমার রাজনীতি কায়েম হওয়া দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এর জন্য একটা পরিবেশও দরকার। কিন্তু রাষ্ট্র বাংলাদেশের যা পরিবেশ তাতে স্বয়ং শয়তানের পক্ষেও শয়তানি করা কষ্টকর। কারণ শয়তান বাঙালি জাতীয়তাবাদী না। স্বয়ং যেমন রাজাকারও না, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাও না। কাজেই এমন একটা পরিবেশের অবসান হওয়ার ব্যাপারে রণকৌশলগত সমর্থন আমি জানাই।


আমি বন্ধুদের বলি পরিস্থিতি বুঝুন, হয় চুপ থাকুন নতুবা এমন কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। আপনারা যে নিষ্ঠুর সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করেন সেই সেক্যুলারিজমের বিচারই আপনার জন্য আজ বড় বাধা। সেক্যুলারিজম তার কর্তৃত্ব কায়েমের বেলায় বাধা মনে করলে, আপনাকেও ছেড়ে দেবে না।

No comments:

Post a Comment