গণহত্যা বন্ধ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবীতে জাতিসংঘরে সামনে আলেমদের বিক্ষোভ
বান কি মুনের কাছে স্মারকলিপি
নিউ ইয়র্ক: জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে নিউ ইয়র্কের ওলামা মাশায়েখরা বলেন, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ জনগন মুসলমান হওয়ার পরও মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নির্বিগ্নে মসজিদে যাতায়াত করতে পারছেনা। এমনকি অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদেরও সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেন, কতিপয় নাস্তিক ব্লগারের পক্ষ নিয়ে ইসলাম প্রিয় মানুষকে গুলি করে হত্যা মেনে নেয়া যায়না। অবিলম্ভে ইসলাম ও মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে অবমাননাকারী নাস্তিকদের গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিত করুন। নাস্তিকদের বিচার করতে না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।
নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার ২১ মার্চ ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা ও মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদে ইমাম, আলেম ও মুফতি ঐক্য পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করে। একই দাবীতে সমাবেশে শেষে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে তারা স্মারকলিপি দেন।
সমাবেশ থেকে নাস্তিকদের বিচার, চলমান গণহত্যা বন্ধ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চত করার দাবী জানান আলেমরা।
আলেম শাইখুল ইসলাম অধ্যক্ষ আল্লামা আহমদ শফীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নিন্দা জানিয়ে আলেমরা বলেন, নাস্তিকরা বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে চিরতরে মুছে দেয়ার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। এজন্য ইসলাম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে শুরু করে প্রিয় নবী ভক্ত আলেম বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে। একই উদ্দেশ্যে নাস্তিকরা শিক্ষা ব্যবস্থায় কোরান হাদিসের বিকৃতি থেকে শুরু করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংশ করার পায়তারা করছে।
সমাবেশে বক্তরা বলেন, শাহাবাগে গণজাগরণের নামে ইসলাম ও রাসুল (সাঃ) কে অবমাননাকারীরা নাস্তিক ও মুরতাদ। ফরিদ উদ্দিন মাসুদের মতো তথাকাথিত কতিপয় আলেম নাস্তিকদের পক্ষ নিয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, নাস্তিকদের সহযোগিতা ও সমর্থন
করাও সমান অপরাধে অপরাধী।
ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) এর সম্মান রক্ষায় সব গণমাধ্যমের সহাযোগিতা কামনা করে তারা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী প্রসংঙ্গ আসলে বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম দাড়ি, পাঞ্জাবী ও টুপিওয়ালা মানুষ সাজিয়ে কাল্পনিকভাবে জাতির সামনে হাজির করে। এসব সংবাদ প্রকাশ করে আলেম সমাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ বহু আলেম ৭১ সালে রনাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী করে তারা বলেন, পাঠ্য বইয়ে ইসলাম, কোরান ও হাদিসের বিকৃত দায় শিক্ষামন্ত্রীকে নিতে হবে। পাঠ্য বইয়ে কোরান হাদিসের বিকৃতি করার পর মুসলিম দেশের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীকে গণহত্যার নির্দেশদাতা আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী সভা থেকে তার অপসারণ দাবী করেছে আলেমরা।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়ে আলেমরা বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদে তালা লাগিয়ে পুলিশ পাহারা দিয়ে মুসল্লিদের নামাজ পড়তে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তহীন রেখে সরকার নিজেদের লোক দিয়ে হামলা ও ভাঙ্গচুর করাচ্ছে।
তারা আরো অভিযোগ করেন, সংখ্যালঘুদেরকে রাজনৈতিক ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তাদের উপর কথিত নির্যাতন নাটক সাজিয়েছে সরকার। যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্দীরে সরকার সমর্থক লোকদের হামলা দখলের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
তারা বলেন, মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র অ্যাখ্যা দিয়ে জাতির সত্য ও ন্যায়ের দিশারী এবং সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত আলেম ইমামদেরকে কাল্পনিক জঙ্গী সন্ত্রাসী বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, ৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিতর্কিত রায় দিয়ে পরিকল্পিতভাবে দেশকে সংঘাতে দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই স্কাইপি কেলেংকারীর মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়েগেছে।
সমাবেশে বায়তুল জান্না মসজিদের ইমাম প্রফেসর মাওলানা মহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মজলিসে শূরা জাস্টিজের চেয়ারম্যান ইমাম আইয়ুব আব্দুল বাকী, বেলাল মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল মালেক, বায়তুল হামিদ ইনেস্টিটিউশনের পরিচালক মাওলানা আনাস, আবু হুরায়রা মসজিদের ইমাম মাওলানা ফায়েক উদ্দিন, আসসফা ইসলামিক সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মুফতি লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, বায়তুস শরাফ মসজিদের ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ, আসসফা ইসলামিক সেন্টারের ইমাম মাওলানা রফিক আহমেদ, মুফতি খালেদ কাওসার, জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টারের ইমাম মুফতি ইসমাঈল, বায়তুল জান্নাহ মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল্লাহ কামাল, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো: ইব্রাহিম আব্দুল আজিজ ভুইঁয়া, জুনায়েদ হোসাইন ও রশিদ আহমেদ প্রমুখ। সমাবেশের শুরুতে কোরান তেলওয়াত করেন হাফেজ জুলফিকুল চৌধুরী।
যৌথভাবে সমাবেশ পরিচালনা করেন বায়তুল আমান মসজিদের ইমাম মাওলানা আজের উদ্দিন ও মদিনা মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু সুফিয়ান। সমাবেশে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের কাছে দেয়া স্মারকলিপি পড়ে শুনান মাওলানা মহিবুর রহমান।
সমাবেশ শেষে জাতিসংঘ পার্ক এলাকায় আলেমরা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য র্যালী বের করে। র্যালিটি পার্কে পদক্ষিণ শেষে দেশের কল্যান কামনা করে দোয়া মুনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশের ভিডিও দেখুন:
ভিডিও ১
ভিডিও ২
spread the truth
ReplyDelete