Sunday, March 31, 2013

রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্তকারীরাই ইসলাম ও স্বাধীনতার শত্রু

নিউ ইয়র্কে শানে রিসালাত সম্মেলনে আলেমরা
রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্তকারীরাই ইসলাম ও স্বাধীনতার শত্রু

নিউ ইয়র্ক : নিউ ইয়র্কে শানে রিসালাত সম্মেলনে আলেমরা বলেন, ইসলাম ধর্ম ও নবী করিম (সাঃ) কে অপমান করলে কোন মুসলমান চুপ থাকতে পারেনা। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে কটাক্ষকারী মুরতাদদের প্রতিরোধ করা ঈমানী দায়িত্ব। তারা বলেন, সরকার মুখে ইসলামের কথা বলে, কিন্তু কাজ কর্মে মুরতাদদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।



সরকার ইসলামের পক্ষে হলে অবশ্যই মুরতাদদের বিচার নিশ্চত করে তা প্রমাণ করতে হবে। 
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের মদিনা মসজিদে আয়োজিত সম্মেলনে আলেমরা এসব কথা বলেন। ৩১ মার্চ রোববার নিউ ইয়র্কের সম্মিলিত উলামা, ইমাম ও মুফতিগণ এ সম্মেলনের আয়োজন করেন।


সম্মেলনে আলেমরা বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম ও নবী রাসূল (সাঃ) কথা বললে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে কটাক্ষের প্রতিবাদ করলে পুলিশের গুলি খেয়ে মরতে হয়। অপরদিকে ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) কে অপমানকারীরা সরকারের কাছে প্রিয়। তাদেরকে সরকার সকল সুযোগ সুবিদা দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে।



আলেমরা বলেন, বাংলাদেশে দাড়ি টুপি ও নামাজ পড়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ইসলাম প্রিয় মানুষকে হামলা, মামলা ও খুন করে দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি প্রশাসন থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর মধ্যেও নামাজি ব্যক্তিদের উপর সরকার নজরদারি চলছে। যার কারণে সরকারী চাকরীজীবি অনেকে নামাজ পড়তেও ভয় পাচ্ছেন। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্ম পালনে বাঁধা সহ্য করা যায়না।



তারা আরো বলেন, আলেমরা আওয়ামী লীগের সূত্র না, আবার বিএনপি জামায়াতের বন্ধুও না। আমরা ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) কে কটাক্ষকারী মুরতাদদের বিপক্ষে। মুরতাদরা মুসলমানের শত্রু।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আলেমরা বলেন, আপনার পিতাকে কাটাক্ষ করলে আপনার সহ্য হয়না, অথচ মুসলিম জাহানের নয়নের মনি আল্রাহর রাসূল (সাঃ) কে অপমানকারীদের পক্ষ নিয়েছেন।



মুরতাদদের সমর্থনকারীরাও মুরতাদ উল্লেখ করে তারা বলেন, গুটিয়েক তথাকথিত আলেম মুরতাদদের পক্ষ নিয়েছে। এদের মতো চদ্মবেশী মুনাফিক রাসূলের (সাঃ) যুগেও ছিলো। এসব কথিত আলেমদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তারা।



তারা আরো বলেন, মৃত ব্যক্তির লাশকে যেমন সিল্কের কাপড়ে মড়ির লাভ নেই, তেমনি পুরানো বিষয়কে জীবিত করে জাতিকে বিভক্ত করে লাভ নেই।  
ইসলাম ক্ষমা এবং ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বহু কাফেরেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালাও পরকালে তার বান্দাদের ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমাদেরও অতীতের ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টি দেখে জাতি বর্ণ নিঃর্বিশেষে দেড় গড়ার কাজে মন দেয়া উচিত।


 আমরা তা না করে পুরানো ক্ষতকে নতুন করে চুলকিয়ে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। মূলত রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্তকারীরা ইসলাম ও স্বাধীনতার শত্রু। 
তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাড় করে দিয়েছে সরকার। অথচ আলেমরাই সবচেয়ে দেশ প্রেমিক। আলেমরা দুর্নীতি হানাহানি মুক্ত। তারা দেশ, ইসলাম ও মানবতার সেবার সেবা করে যাচ্ছেন। 



স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীরকে গণহত্যার নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তারা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, খুনী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করে দেশের মানুষকে নির্যাতনের হাত থেকে বাচাঁন। এছাড়াও পাঠ্য পুস্তকে ইসলাম ও কুরানকে বিকৃতির জন্য শিক্ষামন্ত্রীর অপসারণ দাবী করেন আলেমরা।



আগামী ৬ এপ্রিলে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের সংঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করে আলেমরা বলেন, লংমার্চে বাঁধা দিলে যে কোন গঠনার জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে।



হযরত আল্লামা শাহ আহমদ শফী ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী ঐক্যমত পোষণ করেন তারা। সম্মেলন শেষে আগামী ২৮ এপ্রিল নিউ ইয়র্কের সকল মসজিদের ইমাম, কমিটি ও মুসল্লিদের নিয়ে মত বিনিময় সভার ঘোষণা দেন ওলামা ইউএস’র সভাপতি মাওলানা রফিক আহমেদ।



শানে রিসালাত সম্মেলনে বায়তুল হামদ’র প্রিন্সিপাল মুফতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন দারুল সুন্নাহ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতী রুহুল আমীন। সম্মেলন পরিচালনা করেন বায়তুশ শরাফ মসজিদের ইমাম মাওলানা জাকারিয়া মাহমুদ।


সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুফতি আবদুল মালেক, হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম, মুফতি লুৎফুর রহমান ক্বাসেমী, মাওলানা রফিক আহমেদ, মাওলানা আবু সুফিয়ান,মাওলানা আজিরুদ্দিন, মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা আব্দুর রহমান, হাফিজ আব্দুল্লাহ আল কাফি, হাফেজ রফিকুল ইসলাম, মাওলানা আবু সায়ীদ, মাওলানা ওবায়দুল হক, হাফিজ বুরহান উদ্দিন, শাকিল রহমান, জুলফিকুল চৌধুরী, হাফিজ আব্দুল মতিন, মাওলানা মাহমুদুল ইসলাম মাদানী, মাওলানা আসাদ, হাফেজ মাহবুব, মাওলানা ইব্রাহিম, হাফিজ আব্দুল মান্নান, ক্বারী খলিলুর রহমান, হাফিজ মাহবুবুর রহমান, মাওলানা ইলিয়াস, ডা. জুন্নুন। সম্মেলনের শুরুতে কোরান তেলওয়াত করেন মুহাম্মদ তানিম।



Friday, March 29, 2013

হাসীনার হেলেপড়া কুরসিতে শক্ত ধাক্কা



মুনতাসির মামুনের মুরতাদ প্রসঙ্গ ও
হাসীনার হেলেপড়া কুরসিতে শক্ত ধাক্কা





ফিরোজ মাহবুব কামাল                
মুনতাসির মামুনের মনকষ্ট
দৈনিক জনকন্ঠের ১৭ই মার্চ,২০১৩ সংখ্যায আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী মুনতাসির মামুন মনের প্রচন্ড ক্ষেদ নিয়ে লিখেছেন, তাকে কেন নাস্তিক ও মুরতাদ বলা হয়।তার অভিযোগ,এ নিয়ে আমাকে কয়েকবার মুরতাদ ঘোষণা করা হলো।..গত দুই দশকে এই ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান আমাদের মুরতাদ ঘোষণা করেছে,জামায়াতীরা বলছে আমরা নাস্তিক। আল্লামা শফির হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, হেফাজতে ইসলামও তাকে জামায়াতের মত মুরতাদ ও নাস্তিক বলছে। তার কথা,তা হলে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জামায়াতের পার্থক্য কী রইল? তিনি মুরতাদের একটি অর্থ খাড়া করেছেন। বলেছেন, মুরতাদ মানে কী? ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ফিরে যাওয়া। মুরতাদ প্রসঙ্গে উলামাদের মতের ব্যাখা দিতে গিয়ে বলেছেন,ইসলাম কেউ ত্যাগ করেছে তাকে মুরতাদ বলা ও তার ওপর হামলা করা। এইটি উলেমাদের মত। কোরান বা রাসূলের (স) নয়। এখানে তিনি উলামাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ উলামা এমন কিছু বলছেন যা পবিত্র কোরআন-হাদীসে নাই। অর্থাৎ তার ভাষায় উলামাগণ মিথ্যাবাদী। এবং অভিযোগোর সুরে বলেছেন, উলেমাদের কাছে আমরা তো দেশ আর ধর্ম ইজারা দিইনি।
  
যে কোন আওয়ামী বাকশালীর ন্যায় মুনতাসির মামুনও নিজেকে সেক্যুলার মনে করেন। সেক্যুলারদের চরিত্র, তাদের প্রতিটি কর্মের মধ্যে থাকে ইহলৌকিক স্বার্থ পূরণের ভাবনা। সে চেতনায় পারলৌকিক ভাবনা থাকে না। বস্তুত সেক্যুলারিজমের আভিধানিক অর্থ হলো ইহলৌকিকতা। সে ইহলৌকিক ভাবনা নিয়েই তাদের রাজনীতি, এবং তা নিয়েই তাদের সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তি। প্রতিটি কর্মের মধ্যে সেক্যুলারিস্টগণ তাই নিজেদের দুনিয়াবী স্বার্থসিদ্ধি ও অর্থনৈতীক প্রাপ্তির বিষয়টি দেখেন। আসে তাতে বিনিয়োগ ও মুনাফা তোলার ভাবনা। আসে এ পার্থিব ভূবনে একচ্ছত্র ইজারাদারির ভাবনা। আসে স্বৈরাচারি ও স্বেচ্ছাচারিরূপে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের ভাবনা। স্বার্থলাভ ও অর্থনৈতীক প্রাপ্তি ছাড়া কেউ কোন কাজ কেউ করতে পারে তা তারা ভাবতেও পারে না। শেখ মুজিব নিজে বাংলাদেশকে তার ইজারাভূক্ত দেশ মনে করতেন। নিজের শাসনামলে সে ইজাদারি তিনি এতটাই প্রবল করতে চেয়েছিলেন যে কাউকে তিনি মাথা তোলার সুযোগ দেননি। একবার নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাই গদী ছাড়তে চাননি। আজীবন গদীতে থাকার স্বার্থে অন্য কাউকে তিনি রাজনীতি, লেখালেখি ও মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে তিনি রাজী হননি। সকল বিরোধী দলের রাজনীতিকে তিনি নিষিদ্ধ করেন। নিষিদ্ধ করেন তাদের অফিস, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তক। বিরোধী দলীয় নেতাদেরও তিনি কারারুদ্ধ করেন। একই রূপ স্বৈরাচারি চেতনা বাসা বেঁধেছে হাসীনার মাথায়। বাসা বেঁধেছে হাসীনার বুদ্ধিবৃত্তিক ফুটসোলজার মুনতাসির মামুনের মাথায়। তার আফসোস বাংলাদেশে আমার দেশ, সংগ্রাম ও নয়াদিগন্তের মত পত্রিকাগুলা আজও্র কি করে থাকে?এ পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে তিনি দাবীও রেখেছিলেন। কিন্তু সেটি যে সম্ভব নয় সেটি হাসানুল হক ইনু জানিয়ে দেয়ায় তিনি প্রচন্ড মনকষ্ট পেয়েছেন -সেটিও ফুটে উঠেছে তার নিবন্ধে। তিনি ভূলে যান, এটি শেখ মুজিবের বাকশালী আমল নয়। সে আমলে তারা রাজনীতি, প্রশাসন ও বিচার ব্যাবস্থার পাশাপাশি যেভাবে মিডিয়াকে নিজেদের অধিকৃত ভারত-ভূমিতে পরিণত করেছিলেন সেটি এখন আর সম্ভব নয়। তাকে বাঁকি জীবনটি বাঁচতে হবে এ মনকষ্ট নিয়েই।    

ইজারাদারি নয়, ফরজ দায়িত্বপালন
জনকন্ঠে প্রকাশিত প্রবন্ধে তার প্রবল অভিযোগ, দেশ ও ধর্ম নিয়ে ভাবার অধিকার আলেমদের কে দিল? তার বিস্ময়পূর্ণ প্রশ্ন, আমরা তো তাদের হাতে দেশ ও ধর্মকে ইজারা দেইনি! মুনতাসির মামুনের কান্ডজ্ঞান নিয়ে এখানেই বিস্ময়। নিজেকে তিনি ইতিহাসের গবেষক মনে করেন। অথচ তার কথায় ফুটে উঠেছে, ইসলামের ইতিহাসে তিনি কতটা অজ্ঞ। মনে হচ্ছে, ইসলামের ইতিহাস থেকে তিনি কোন পাঠই নেননি। হয়তো নিলেও সেটি জোর করে ভূলে থাকতে চেয়েছেন। তারা জানা উচিত, দেশ ও ধর্মের পক্ষে কথা বলার জন্য মুসলমান কারো কাছ থেকে অনুমতি নেয় না। এটা তার ঈমানী দায়বদ্ধতা। সেটিই তার প্রকৃত ধর্ম। সে দায়বদ্ধতা থেকেই শুরু হয় জালেম শাসকের বিরুদ্ধে ঈমানদারের জিহাদ। সে মুমিনের জীবনে জিহাদ নেই,তার অন্তরে কোন ঈমানও নেই। এজন্যই প্রাথমিক কালের মুসলমানদের প্রত্যেকেই ছিলেন মোজাহিদ। শহীদ পয়দা হয়েছে প্রায় প্রতি ঘর থেকে। মুমিনের দায়বদ্ধতা শুধু  ইসলামের পক্ষে কথা বলা নয়, বরং জালেমের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ও জানমালের বিনিয়োগ। এবং তাতে সামান্যতম কার্পণ্য হলে সে ব্যক্তি আর মুসলমান হাকে না। প্রকৃত মুসলামান তাই শুধু নামায-রোযা বা হজ-যাকাত পালন করে না। বরং ইসলামের বিপক্ষ শক্তির পূর্ণ পরাজয় ও ইসলামের শরিয়তি হুকুমের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার কাজে জানামালেরও পূর্ণ বিনিয়োগ করা। সে বিনিয়োগে আপোষহীন হওয়ার মধ্যেই তাঁর ঈমানদারি।

মুনতাসির মামুন তার প্রবন্ধে বেছে বেছে কিছু কোরআনের আয়াত পেশ করেছেন। দেখাতে চেয়েছেন, ইসলামে কোন যুদ্ধবিগ্রহ নাই। রক্তক্ষয় ও হানাহানি নাই, এক অনাবিল শান্তির ধর্ম। তাঁর কাছে আল্লাহর পথে জীহাদ হলো মহা অশান্তি। ফলে তার ধারণা, ইসলাম অতীতে প্রধান বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভূত হয়েছিল যুদ্ধবিগ্রহ না করেই। অবশ্যই ইসলাম এ পৃথিবীতে একমাত্র শান্তির ধর্ম। তবে সে শান্তির অর্থ দুর্বৃ্ত্ত শয়তানি শক্তির মুখে চুমু খাওয়া নয়, তাদের কাছে পোষমানা জীবনও নয়। মুসলমান শান্তি আনে দুর্বৃত্তদের অধিকার থেকে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আইন-আদালত মূক্ত করার মধ্য দিয়ে। এ কাজ বিশাল কাজ। একাজ মুমিনের অর্থ, শ্রম ও রক্ত চায়। নবীজীর সাহাবীদের শতকরা ৬০ ভাগের বেশী তো শহীদ হয়ে গেছেন একাজে। এবং সে কোরবানী পেশের জন্যই মুমিন ব্যক্তি মাত্রই আল্লাহর কাছে চুক্তিবদ্ধ। সে চুক্তির কথাটি পবিত্র কোরআনে এসেছে এভাবেঃ নিশ্চয়ই আল্লাহা ঈমানদারদের থেকে তাদের জানমাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, অতঃপর সে লড়াইয়ে তারা শত্রুদের যেমন হত্যা করে তেমনি নিজেরাও নিহত হয়।”–(সুরা তাওবা, আয়াত ১১১)।পরবর্তী আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সাথে এমন বিক্রয়চুক্তির সমাধার জন্য ঈমানদারকে খুশি করতে বলেছেন। কারণ এর যে উত্তম চুক্তি কোন ব্যক্তির জীবনে হতে পারে না। মুসলমানের জীবনে মূল মিশনটি এভাবেই আল্লাহতায়ালা নিজে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এক সময় সমগ্র আরবভূমির উপর কাফের শক্তির দখলদারি ছিল। সে দখলদারির অবসান ঘটানো ছাড়া ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা বাড়ানো কি সম্ভব ছিল? ফলে তখন জিহাদ অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল প্রতিটি মুসলমানের উপর। তখন লড়াইটি ছিল শয়তানি শক্তির সে দখলদারি থেকে আরবভূমিকে মূক্ত করার। আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে সে কোরবানির বরকতেই তো তাঁরা সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। আল্লাহতায়ালা তাদের ফেরেশতাকূলে গর্ব করেন। আজও সে পথ ধরেই মুসলমানগণ পুণরায় গৌরব অর্জন করতে পারে। গৌরবের সে পথটি যেমন বেশী বেশী মানব-রপ্তানী বা গার্মেন্টস-উৎপাদন নয়, তেমনি বেশী ধান-মাছ, গরু-ছাগল বা চা-পাট উৎপাদনও নয়। প্রশ্ন হলো, সে জিহাদে নিজেদের অর্থদান, শ্রমদান ও প্রাণদানে মুসলমানগণ আরবের কাফেরদের থেকে কি এজাজত নিয়েছিলেন?
  
অধিকৃত দেশঃ প্রতিরক্ষা পাচ্ছে পাপ
 বাংলাদেশ আজ ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে অধিকৃত। ইসলামের এ শত্রুদের এ দখলদারির কারণেই আল্লাহর ভূমিতে আল্লাহর শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। বরং প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে ব্রিটিশ কাফেরদের প্রণীত আইন। এ আইনে সূদদান ও সূদগ্রহণ  যেমন আইনসিদ্ধ, তেমনি আইনসিদ্ধ হলো ব্যাভিচার। তাই জনগণের অর্থে প্রতিপালীত বাংলাদেশের পুলিশ ও প্রশাসনের কাজ যেমন সূদী ব্যাংকগুলোকে প্রহরা দেয়া, তেমনি তাদের দায়িত্ব হলো পতিতাপল্লির ব্যাভিচারকে পাহারা দেয়া। ফলে জনগণের অর্থে পরিচর্যা ও প্রতিরক্ষা পাচ্ছে জঘন্যতম পাপ। এটি কি কোন মুসলমান ক্ষণিকের জন্যও মেনে নিতে পারে? দেশের সংবিধানে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার দূরে থাক তার প্রতি আস্থার ঘোষনাটিও বিলুপ্ত হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের এমন দখলদারি কি কোন মুসলমান মেনে নিতে পারে? ইসলামপন্থিদের নির্মূলে আল্লাহর শত্রুগণ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিচারকদের ব্যবহার করছে। এরা পরিণত হয়েছে সরকারে বিশ্বস্ত্র লাঠিয়ালে। ফলে বাংলাদেশের মুসলমানদের আজকের লড়াই যেমন ঈমান বাঁচানোর লড়াই, তেমনি ইসলাম বাঁচানোর লড়াই। এ লড়াই ইসলামের বিপক্ষ শক্তির দখলদারি বিনাশের লড়াই। আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সাথে এ লড়াইয়ে কোন  ঈমানদার ব্যক্তি কি নীরব  ও নিষ্ক্রীয় থাকতে পারে? এবং এ লড়াইয়ে নামার জন্য মুনতাসির মামুনদের মত ব্যক্তিদের থেকে অনুমতি নিতে হবে কেন?  দেশকি তাদের ইজারায়? এমন লড়াইয়ের হুকুম তো দিয়েছেন মহান আল্লাহ, যা বর্নিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের ছত্রে ছত্রে। নবীজী(সাঃ)র মহান সাহাবাগণ যেভাবে বার বার জিহাদ করেছেন এবং জানমালের বিপুল কোরবানী দিয়েছেন সেটি কি শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত পালনের জন্য? লক্ষ্য ছিল কি শুধু মসজিদের প্রতিষ্ঠা?  

ইসলামের পূর্বে আরবে কাফেরদের একচ্ছত্র ইজারাদারি ছিল। ইসলামের শরিয়তী বিধানের প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা দুরে থাক, প্রকাশ্যে নামায আদায় করাও তখন কঠিন ছিল। নবীজী (সাঃ) তাদের সে আধিপত্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, ফলে তাদের কাছে তিনি চিহ্নিত হন বিদ্রোহী রূপে। কাফেরদের দরবারে এটাই ছিল নবীজী(সাঃ)র বড় অপরাধ। মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় আশ্রয় নেন। অবশেষে সে মদিনাতেও তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেয়া হয়নি। খন্দকের যুদ্ধে তো আরবের সকল কাফের গোত্র মহাজোট বেধে মদিনার উপর হামলা করেছিল। অবশেষে ইসলামই বিজয়ী হয়েছে। একই রূপ ঘটনা ঘটেছে হযরত ইব্রাহীম(আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)র সাথে। ফিরাউনের দরবারে হযরত মূসা (আঃ) যখন দ্বীনের দাওয়াত পেশ করেন তখন সে দাওয়াত ফিরাউনের ভাল লাগেনি। হযরত মূসা (আঃ) ও তাঁর অনুসারিদের হত্যায় ফিরাউন সমুদ্র পর্যন্ত ধাওয়া করেছিল। আল্লাহতায়ালা বাঁচিয়ে দেন হযরত মূসা (আঃ) ও তাঁর অনুসারিদের এবং ডুবিয়ে হত্যা করেন ফিরাউন ও তার বাহিনীকে। আজও বাংলাদেশের সেই একই সনতন দ্বন্দ। দ্বন্দ এখানে ইসলামের অনুসারিদের সাথে ইসলামের বিপক্ষশক্তির। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসলামের সে বিপক্ষশক্তি শুধু অমুসলিম ভারতীয় কাফেরশক্তি নয়, তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল, আনোয়ার হোসেন, আনিসুজ্জামানের ন্যায় বহু মুসলমান নামধারি বুদ্ধিজীবীরা। যোগ দিয়েছে সকল ভারতপন্থি রাজনীতিবিদেরা। একাত্তরের প্রজন্মের নামে সম্প্রতি শাহবাগে যে নাটক অনুষ্ঠিত হলো তা কি তাদের সে ইসলামবিরোধী চরিত্রটি প্রকাশ করে দেয়নি? নমরুদ, ফিরাউন ও মক্কার কাফেরদের ন্যায়ও তারা তো ইসলামপন্থিদের রাজনীতি ও ক্ষমতা নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়েছিল। এ জীবগুলো তো ঘোষণা দিয়েছিল ইসলামপন্থি রাজাকারদের রক্তমাংস দিয়ে তারা সকাল বিকাল নাশতা করবে। তবে তাদের আক্রোশ শুধু দেশের ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ছিল না, মূল আক্রোশ তো ছিল মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর মহান রাসূলের বিরুদ্ধে। অতি অশ্লিল ও অশ্রাব্য ভাষায় তারা মহানকরুণাময় আল্লাহর বিরুদ্ধে যাচ্ছে লিখেছে। লিখেছে নবীজী (সাঃ)র স্ত্রীদের বিরুদ্ধেও। সুবোধ সন্তান কি তার পিতার বিরুদ্ধে গালিগালাজ সহ্য করতে পারে? সে কি গালিদাতার বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়বে না? নইলে সে যে পিতার সুযোগ্য সন্তান তার প্রমাণ হয় কীরূপে? আর এখানে গালি দেয়া হয়েছে মহান রাব্বুল আলামীন ও তাঁর মহান রাসূলের বিরুদ্ধে। ব্লগারদের এমন অপকর্মের কথা শোনার পরও যদি কোন ঈমানদার রাস্তায় প্রতিবাদে না নামে তবে তাঁর মধ্যে যে ঈমান আছে সেটি কীরূপে বোঝা যাবে? অথচ এ নিকৃষ্ট কুৎসিত জীবগুলোকেই মাথায় তুলেছেন শেখ হাসিনা ও তার তল্পিবাহক এক পাল বুদ্ধিজীবী। শেখ হাসিনা তো নিহত ব্লগার রাজীবকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ রূপে ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের দূষমনি এরপরও কি গোপন থাকে? হাজার বার হজ বা তাবলিগ জাময়াতের দোয়ার মজলিসে ধর্না দিয়েও কি শেখ হাসিনা ও তার সরকার আল্লাহর বিরুদ্ধে দুষমনি গোপন রাখতে পারে? মুনতাসির মামুনের অভিযোগ, কেন ব্লগারদের মুরতাদ বলা হয়? প্রশ্ন হলো,তবে কি এমন দুর্বৃত্ত জীবগুলোকে ঈমানদার বলা হবে?          

মুনতাসির মামুনের হজ ও লাব্বায়েক
জনকন্ঠে প্রকাশিত প্রবন্ধে মুনতাসির মামূন নিজের হজ করার কাহিনী তুলে ধরেছেন। কিন্তু এটি কি কোন ব্যাপার হলো? হজ তো বহু জালেম, বহু ফাসেক, বহু সূদখোর-মদখোর, বহু স্বৈরাচারি এবং ব্যাভিচারিও বার বার করে। কত ঘুষখোর, মদখোর ব্যাভিচারিও তো মাথায় টুপি লাগায়। দাড়িও রাখে। তাতে কি তার আল্লাহভীতি বা ধর্মপরায়নতা বাড়ে? ঈমানের প্রকৃত যাচাই হয় ব্যক্তির রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে। ঈমান যাচাই হয়, লড়াইয়ের ময়দানে ব্যক্তিটি কোন পক্ষে লাঠি ধরলো তা থেকে। কতো দাড়ি টুপিধারি ব্যক্তিই তো আজ ইসলামের শত্রুদের সাথে মিশে ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কত মুসলিম নামধারি ব্যক্তিই তো অতীতে ব্রিটিশ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের বাহিনীতে যোগ দিয়ে মুসলিম ভূমিতে মুসলমান হত্যা করছে।  প্রশ্ন হলো, মুনতাসির মামুন হজ করে আসার খবর বয়ান করলেও বাংলাদেশে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির দখলদারি বিলোপের যে চলমান লড়াই, সে লড়াইয়ে তিনি কি একটি দিনও ইসলামের পক্ষে একটি কথা লিখেছেন বা ময়দানে নেমে একটি বারও আওয়াজ তুলেছেন? হজ তো হযরত ইব্রাহীম (আঃ)র সূন্নত। তাঁর সে মহান সূন্নতটি আল্লাহর প্রতি হুকুমে লাব্বায়েক তথা আমি হাজির বলা। যখন তার একমাত্র শিশু পুত্র ইব্রাহীমকে কোরবানী করার নির্দেশ এলো তখনও তিনি লাব্বায়েক বলেছেন। আজ বাংলাদেশের মাটিতে যারা ইসলামের পক্ষে লড়াই করছেন তারা তো সে লড়াই করছেন আল্লাহর দ্বীনের বিজয় আনার লক্ষ্যে। অথচ মুনতাসির মামুন তো লাব্বায়েক বলছেন ইসলামের প্রতিষ্ঠা রুখার অঙ্গিকার নিয়ে। আনুগত্য এখানে শয়তানের। ফলে একবার নয়, হাজার বার হজ করলেও সে হজের কি সামান্যতম মূল্য থাকে? এমন হজ তো সূদখোর, ঘুষখোর ও ব্যাভিচারির নামায-রোযার ন্যায়। নবীজী (সাঃ) পিছনে কত মুনাফিক বছরের পর বছর নামায পড়েছে। কিন্তু তাতে কি তাদের আদৌ কোন কল্যাণ হয়েছে। কল্যাণ তো তারাই পেয়েছে যারা আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে রণাঙ্গণে নেমেছে এবং কোরবানি পেশ করেছে। পবিত্র কোরআনে তো সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও (সুরা সাফ আয়াত ১৪)। লক্ষ্য এখানে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়। বলা হয়েছে,হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক ব্যবসার কথা বলে দিব যা তোমাদেরকে বেদনাদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবে। সেটি হলো তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনো এবং আল্লাহর রাস্তায় জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করো, সেটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে পারতে।-(সুরা সাফ আয়াত ১০-১১)। অথচ মুনতাসির মামুন আনসার রূপে কাজ করছেন ইসলামের শত্রু পক্ষের এবং লড়ছেন ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে।    

মুরতাদ কারা?
মুনতাসির মামুন আরেক মিথ্যা বলেছেন মুরতাদ শব্দের ব্যবহার নিয়ে। জনকন্ঠের নিবন্ধে তিনি লিখেছেন,আমি বিচারপতি হাবিবুর রহমানের কোরানসূত্র ঘেঁটে দেখেছি,সেখানে মুরতাদ বলে কোন শব্দ নেই। তিনি লিখেছেন,পাকিস্তানে (১৯৭১ সালের আগে) জামায়াত নেতা মওদুদী প্রথম মুরতাদ শব্দটি ব্যবহার শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠার জন্য বিরুদ্ধবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে মুরতাদ ঘোষণা করা ছিল এক ধরনের হাতিয়ার। মওদুদী মুরতাদ কী সাজানামে একটি বইও লিখে ফেলেন। এবং সেখানে নানাভাবে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। মুনতাসির মামুন যে কতটা মিথ্যাচারি ও ইসলামে মৌলিক বিষয়ে তিনি যে কতটা অজ্ঞ সেটি প্রমাণিত হয় তার এ লেখনিতে। তিনি বিশ্ববিদ্যাদয়ের একজন শিক্ষক, অথচ মুরতাদ শব্দটি তাকে খুঁজতে হয়েছে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের বইতে। অথচ শব্দটির সাথে বাংলাদেশের বহু স্কুলছাত্র ও মাদ্রাসা ছাত্রও পরিচিত। বিশেষ করে সালমান রুশদি ও তসলিমা নাসরীনের কুফরি আচরণের পর। প্রশ্ন হলো, এরূপ বিদ্যাবুদ্ধি নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করেন কীরূপে? তিনি বলতে চেয়েছেন,পাকিস্তানে মুরতাদ শব্দের প্রথম প্রচলন করেছেন মাওলানা মওদুদী। অথচ প্রকৃত সত্য হলো, ইসলামের নামায-রোযা হজ-যাকাত ও জিহাদের ন্যায় মুরতাদ শব্দটিরও প্রচলন ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই। নবীজীর জীবদ্দশাতে কেউ কেউ ইসলাম কবুলের পর ইসলাম ত্যাগ করে কাফেরদের দলে শামিল হয়েছে। নবীজীর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডও ঘোষিত হয়েছে। এ শব্দের আবিস্কারক তাই মাওলানা মওদুদী নন।

দেহ জীবিত থাকলে তা থেকে দৈহীক শক্তির ন্যায় বর্জও উংপাদিত হয়। দেহের স্বাস্থ্য বাঁচাতে হলে সে বর্জকে নিয়মিত বর্জন করতে হয়। মলমুত্র বন্ধ হয়ে গেলে কি দেহ বাঁচে। মুরতাদগণ হলো উম্মাহর দেহের বর্জ। যে সমাজ মোজাহিদ তৈরী হয় সে সমাজে মুরতাদও তৈরী হয়। মুরতাদ তারাই যারা মুসলমান সমাজের মাঝে প্রকাশ্যে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং শত্রুদের দলে গিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কোন দেশেই জেলে, তাঁতি,কৃষক বা রাখালকে ধরে সামরিক বাহিনী কোর্ট মার্শাল করে না।দেশের বিরুদ্ধে গাদ্দারির অভিযোগে তাদের প্রাণদন্ড দেয়া হয় না।কোর্টমার্শাল তো ঘটে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বেলায়। সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ দেশেই বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু সেনাবাহিনীতে একবার যোগ দিলে যেমন উচ্চ মান-মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা আছে তেমনি অলংঘ্যনীয় দায়বদ্ধতাও আছে। সে দায়বদ্ধতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কঠোর শাস্তিও আছে। তেমনি ইসলাম কাউকে মুসলমান হতে বাধ্য করে না। ধর্মে জোর-জবরদস্তি নেই  তার ব্যাখা তো এটাই। কিন্তু মুসলমান হওয়ার অর্থই হলো আল্লাহর সৈনিক রূপে নিজেকে শামিল করা এবং শয়তানি শক্তির পক্ষ থেকে যেখানেই হামলা সেখানে গিয়ে হাজির হওয়া। মুরতাদ হলো তারাই যারা আল্লাহর ও মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তার সাথে গাদ্দারি করে। এবং সে গাদ্দারির শাস্তি মৃত্যদন্ড। নানা ফেরকা ও নানা মাজহাবের উলামাদের মাঝে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু ইসলামের মৌল বিষয়ের ন্যায় মুরতাদের সংজ্ঞা ও শাস্তি নিয়ে কোন মতভেদ নাই।

মুরতাদের শাস্তিঃ অন্যধর্ম ও ইসলামে
ইংরেজী ভাষায় ব্লাসফেমি একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থঃ খৃষ্টান ধর্মের উপাস্য ইশ্বরের বিরুদ্ধে অমর্যাদাকর, অবজ্ঞামূলক, আক্রমণাত্মক বা শিষ্ঠাচারবহির্ভূত কিছু বলা বা করা। খৃষ্টান এবং ইহুদী  এ উভয় ধর্মেই এমন অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সে শাস্তির কথা এসেছে ওল্ড টেস্টামেন্টে। বলা হয়েছেঃ এবং যে ব্যক্তি প্রভুর নামের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি তথা অপমানকর, অমর্যাদাকর বা শিষ্ঠাচার বহির্ভূত কোন কথা বলবে বা কিছু করবে তবে তার নিশ্চিত শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা। জমায়েতের সকলে তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করবে। (বুক অব লেভিটিকাস ২৪:১৬)। অপর দিকে হিন্দুধর্মে ব্লাসফেমি শুধু ইশ্বরের বিরুদ্ধে কিছু বলাই নয় বরং কোন ধর্মগুরু বা পুরোহিতের বিরুদ্ধে বলাও। হিন্দুধর্মের আইন বিষয়ক গ্রন্থ মনুষস্মতিতে বলা হয়েছে, যদি নিম্মজাতের কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন পুরোহিতকে অবমাননা করে বা তার সাথে খারাপ আচরণ করে তবে রাজার দায়িত্ব হবে দৈহীক শাস্তি বা প্রাণদন্ড দেয়া যাতে সে প্রকম্পিত হয়। -(মনুষস্মতি ২৪:১৬)।

Tuesday, March 26, 2013

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং দেশের ভবিষ্যত্



বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং দেশের ভবিষ্যত্

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক
২০০৯ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ৯ মাস পূর্বে আমি জেনেভাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিসে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে শুনলাম মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিস নেভী পিলে সপ্তাহ দু-এক আগে বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিখিত একটি পত্রে এই মর্মে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন যে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের আওতায় অভিযুক্তদের সুবিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। মিস পিলে একজন প্রথম সারির আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ। তিনি রুয়ান্ডার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন অন্যতম বিচারক ছিলেন। বাংলাদেশ ডেস্ক অফিসারের কাছে ঐ চিঠির কপি চাইলে তিনি তা প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সরকার ঐ চিঠি জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি। রেনেটার কাছ থেকেও চিঠির কপি পাইনি। 

যুদ্বাপরাধীদের বিচার শুরু হতে পারে এই আশংকায় ২০০৯ সাল থেকেই মামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলাম। একজন আইনজীবীর প্রথম এবং প্রধান কাজ হল আইনের চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই লক্ষ্যে বিশ্বের সেরা আইনজীবীদের মতামত নিতে শুরু করলাম। সর্বমোট ৫ জন বিদেশি আইন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে মতামত নিলাম। তারা হলেনঃ বৃটেনের প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ মাইকেল বেলফ, কিউ.সি.। বাংলাদেশের সংবিধান, আইন এবং বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে মাইকেল আগে থেকেই অবহিত ছিলেন। দুই দশক পূর্বে অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলায় তিনি ছিলেন বিদেশস্থ আমাদের প্রধান কৌশলী; মিঃ সলী জে সোরাবজী (ভারতের বর্ষীয়ান সিনিয়র আইনজীবী এবং এক সময়ের নামকরা এটর্নি জেনারেল), প্রফেসর উইলিয়াম শাবাজ, আয়ারল্যান্ডের গ্যালওয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক এবং মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ; গ্রেগার গাই স্মিথ, আমেরিকান নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ। তাদের সবার মতামতঃ ১৯৭৩ সালের আইন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেক নিচে এবং এই আইনের আওতায় সুবিচার সম্ভব নয়। তাছাড়াও ৮০ বছরের বেশি বয়োজ্যেষ্ঠ অস্ট্রিয়ান নাগরিক প্রফেসর ওটো টিফটারার, যিনি সলজবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের প্রাক্তন ডীন এবং ১৯৭৩ সালের আইন প্রণয়নের সাথে জড়িত ছিলেন, তার কাছ থেকে একটা মতামত নিয়েছিলাম আইনটির ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝার জন্য।

২০১০ সালের মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবার পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সবাই এক বাক্যে বিচারের পক্ষে অবস্থান নিল। কিন্তু শর্ত একটি ঃ বিচার স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। প্রথম উদ্যোগ নিলেন বৃটিশ লর্ডসভার বর্ষীয়ান সন্মানিত সদস্য এবং বাংলাদেশের একনিষ্ঠ বন্ধু লর্ড এরিক এইভারী। তার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বার এসোসিয়েশনের যুদ্ধাপরাধ কমিটি ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে একটি মতামত দেয়। এই মতামতে তারা ট্রাইব্যুনালের আইনের ১৪টি ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরেন। তারপর একে একে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি লিখেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে র্যাপ (২১ মার্চ ২০১১), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রানজিশনাল জাস্টিস (১৩ মার্চ ২০১১), হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (১৮ মে ২০১১) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (২১ জুন ২০১১) । তারা সকলেই আইনের ত্রুটি তুলে ধরে পরিবর্তনের আহ্বান জানান। অন্যথায় বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও জানিয়ে দেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই মনোভাব বাংলাদেশ সরকারের উপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইন একটি অত্যন্ত জটিল আইন। এই আইন আন্তর্জাতিক আইনের একটি অংশ। এই কারণেই সম্ভবত ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার বলেছিল অভিযুক্তরা ইচ্ছা করলে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। 

২০১১ সালে, আমরা তিনজন নামকরা বৃটিশ যুদ্ধাপরাধ আইন বিশেষজ্ঞকে বাংলাদেশে আনতে চেয়েছিলাম ডিফেন্স আইনজীবী হিসাবে। আমাদেরকে এই সুযোগ দেয়া হয়নি। দেশীয় আইনজীবীদের নিয়ে আমরা মোটামুটি একটি শক্তিশালী ডিফেন্স টিম গঠন করেছি। যারা লন্ডনস্থ আমাদের তিনজন আইনজীবীর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা পেয়ে আসছেন। তারপরেও আন্তর্জাতিক মানের ডিফেন্স প্রদানে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ কোন সময়ই প্রসিকিউশন টিমকে শক্তিশালী করা কিংবা বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এটা রহস্যজনক । এই রহস্য হয়ত একদিন উদ্ঘাটিত হবে। 

১৯৪৫ সালে গঠিত নুরেমবার্গ এবং টোকিও ট্রাইব্যুনাল ছিল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল। নুরেমবার্গের প্রায় ৫০ বছর পর বসনিয়া যুদ্ধ চলাকালে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে গঠিত হয় প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে গঠিত হয় রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল, ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি (বাংলাদেশও এই আদালতের সদস্য), ১৯৯৯ সালে পূর্ব তিমুর, ২০০০ সালে সিয়েরালিয়ন, ২০০১ সালে কম্বোডিয়া এবং ২০০৭ সালে লেবাননের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। নুরেমবার্গ এবং টোকিও ছাড়া বাকি সকল ট্রাইব্যুনালে ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ এবং ১৯৬৬ সালের ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্টস অন সিভিল এবং পলিটিক্যাল রাইটস স্বীকৃতি পায়। কারণ নুরেমবার্গ এবং টোকিওর সময় ঐ দুটি সনদ গৃহীত হয়নি। 

বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল আইনে একজন অভিযুক্তের মৌলিক অধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার স্বীকৃত নয়। সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এই সকল অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। (২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমি একদিন ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য রাখছিলাম, তখন একজন মাননীয় বিচারক আমাকে বললেনঃ মৌলিক মানবাধিকারের বিচারে আপনার মক্কেলতো বাংলাদেশের একজন তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তিনি যথার্থই বলেছিলেন।) এখানেই হচ্ছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আইনের সাথে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনের সংঘর্ষ। এ কারণেই এবং কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে সর্বদা সমালোচনামুখর। আর যারা বাংলাদেশের আইনে বিচার কার্য পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর তারা নুরেমবার্গ পরবর্তী বিগত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ের আইনের বিকাশকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা এবং অগ্রাহ্য করেছেন। যা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ফলস্বরূপ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ বিতর্কিত। তারপর ডিসেম্বর মাসে বৃটিশ সাময়িকী 'দি ইকনমিস্ট' এবং 'আমার দেশ' পত্রিকায় প্রকাশিত স্কাইপ কেলেংকারিতে বিচারক, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলী এবং মন্ত্রীদের যোগসাজশ জনসমক্ষে প্রকাশিত হবার পর পশ্চিমা বিশ্বে ট্রাইব্যুনালের সর্বশেষ বিশ্বাসযোগ্যতাটুকুও হারিয়ে গেছে। 

মুসলিম বিশ্বেও এই বিচার বিতর্কিত । ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কের প্রেসিডেণ্ট আব্দুল্লাহ গুল এবং ঐ বছরের নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী এরদোগান তাদের সফরকালে বাংলাদেশ সরকারকে বলেছিলেন : "যুদ্ধাপরাধের বিচার আপনাদের কাজের মধ্যে প্রাধান্য ১পাওয়া উচিত নয়"। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঙ্কারা সফর করেন। এই সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একান্ত একটি বৈঠকের বেশিরভাগ সময় জুড়ে স্থান পায় যুদ্ধাপরাধ বিচার সম্পর্কিত বিষয়টি। এরপর প্রধানমন্ত্রী ইউ.এস.-ইসলামিক ওয়ার্ল্ভ্র ফোরামের আমন্ত্রণে কাতার সফর করেন। তাঁর ঐ সফরকালে বিভিন্ন দেশের ইসলামী নেতৃবৃন্দ কাতারের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেন। অত্যন্ত বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা এই বিষয়গুলো জানতে পেরেছি। 

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে লিখিত একটি চিঠিতে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার না করার অনুরোধ জানালে দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানা-পোড়েনের সৃষ্টি হয়, একথাতো সবার জানা। কায়রোতে অনুষ্ঠিত বিগত ওআইসি সম্মেলনেও অনেক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ও.আই.সি সেক্রেটারি জেনারেল এবং মালয়েশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম ২রা মার্চ তিউনিশিয়ার ক্ষমতাসীন দল আন্নাহাদা পার্টির নেতা রাশেদ ঘানুশি ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা ও দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যতটুকু জানা যায় সউদী আরব তাদের উদ্বেগের কথা বাংলাদেশের কাছে ব্যক্ত করেছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় মুসলিম বিশ্বের বিরাট অংশ জুড়ে এই বিচার প্রশ্নবিদ্ধ।

৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইবুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তারপর শাহবাগ থেকে মৃত্যুদন্ডের দাবি ওঠে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। শুরু হয় দেশব্যাপী প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। কোথাও কোথাও তা হয়েছে সহিংস। বিগত দিনগুলিতে কমপক্ষে ১৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পুলিশ প্রয়োগ করেছে অতিরিক্ত শক্তি, চালিয়েছে নির্বিচারে গুলি। কোটি কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট হয়েছে। জনমনে আতংক, অনিশ্চিত ভবিষ্যত্ । বাংলাদেশে এখন শুধু আগুন জ্বলছে আর রক্ত ঝরছে। 

এমতাবস্থায় আরো দু-একটি রায় ঘোষিত হলে বা বাস্তবায়িত হলে দেশব্যাপী অস্তিরতা এবং সহিংসতা বাড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেছেন। ৯ মার্চের বৃটিশ সাময়িকী 'দি ইকনমিস্টে' প্রকাশিত সংবাদের হেডলাইন হচ্ছে ঃ "অশান্ত বাংলাদেশ, একটি বিভক্ত জাতি ঃ একটি ত্রুটিযুক্ত ট্রাইব্যুনাল পুরাতন ক্ষত উন্মুক্ত করেছে এবং দেশকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে।" 

প্রতিটি যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্দেশ্য হয় অতীতের একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করা। জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা। নুরেমবার্গ থেকে যুগোম্লাভিয়া, রুয়ান্ডা থেকে আই.সি.সি, পূর্ব তিমুর থেকে সিয়েরালিয়ন বা কম্বোডিয়া পর্যন্ত হয়েছেও তাই। কিন্তুু বাংলাদেশের বর্তমান ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন যে কোনভাবেই সম্ভব নয় তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। যে বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, যে বিচার মুসলিম বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ, যে বিচার নিয়ে দেশ ও জাতি বিভক্ত, সেই বিচারের মাধ্যমে সাময়িকভাবে হয়ত কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই বিচার দেশ ও জাতির জন্য কোন কল্যাণ বহন করে আনতে পারে না। ইতিমধ্যে ৪ মার্চে প্রকাশিত এক বিবৃতির মাধ্যমে ইংল্যান্ড বারের মানবাধিকার কমিটি বর্তমান বিচার কার্য স্থগিত করে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উদ্বেগের ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহবান জানিয়েছে। ১৮ই মার্চ ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে অনুষ্ঠিত "বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপর আলোকপাত" শীর্ষক এক আলোচনা সভায় যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ অবিলম্বে এই বিচার কার্যক্রমে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত র্যাপ আরও বলেছেন, বিচারের পূর্বে সব দলের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হলে রায়-পরবর্তী প্রতিবাদ ও বিতর্ক এড়ানো সম্ভব হত। 

এমতাবস্থায়, একমাত্র সমাধান হচ্ছে আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে বিচার কার্য পরিচালনা করা। অবশ্য এই জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য। এতে কোন পক্ষেরই আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তো এই প্রস্তাবের পক্ষে। জামায়াতে ইসলামীর এই প্রস্তাবে রাজি হওয়ার উচিত। এখন সরকার এই প্রস্তাবে রাজি হলে জাতীয় ঐকমত্যের সৃষ্টি হয়। কিন্তুু প্রশ্ন হল সরকারের মনোভাবের কি পরিবর্তন হবে? সরকারের মনোভাবের পরিবর্তন না হলে এই বিচার যে জাতিকে আরো বিভক্ত করবে এবং বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিবে তাতে বোধহয় কোন সন্দেহ নেই।

 লেখক :বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং ডিফেন্স টিমের প্রধান

Sunday, March 24, 2013

আমরা এখন কী করবো?



আমরা এখন কী করবো?



লেখক: খোমেনী ইহসান


এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বাধীনতা দিবসের পরে বাংলাদেশে একটা মহাঝড় বয়ে যাবে। সেই ঝড়ের ফলাফল কী হবে তাও এর মধ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে। 

দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও। আমরা এর প্রমাণ দেখলাম গত ১৮ মার্চ। শেখ হাসিনার জনসভায় মাত্র ৫০ হাজার লোক আসলো। যদিও লোক আসার কথা ছিল কমপক্ষে ৫ লাখ। গতকাল আওয়ামী লীগপন্থী আলেমদের সমাবেশে এক হাজার লোক হলো। যদিও খরচ করা হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। 

গ্রামে যেতে পারছেন না মন্ত্রী ও এমপিরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে রফা করে নিয়েছেন। অনেকেই আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপি বা জামায়াতে যোগ দিচ্ছেন।  

সংবাদমাধ্যমেও এরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রথম আলোর প্রচার সংখ্যা কমে গেছে কমপক্ষে দেড় লাখ। সরকারপন্থী চ্যানলগুলো বিশ্বাস করছে না মানুষ। এ অবস্থায় সব গণমাধ্যমে সরকার বিরোধী মত প্রাধান্য পেতে শুরু করছে। সরকারপন্থী প্রপাগান্ডিস্টদের লেখাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না আর। বিশেষভাবে চোখে পড়ার ব্যাপার হলো টকশোগুলোতে আওয়ামী লীগপন্থীরা এখন নিচু স্বরে কথা বলছেন। যা বলছেন তাতেও দেখা যাচ্ছে বিরোধী দলের অনুগ্রহ পাওয়া প্রার্থনা ধ্বনিত হচ্ছে। 

এই যে পরিস্থিতি তার প্রভাব এরই মধ্যে পড়েছে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে। আওয়ামী লীগপন্থী চিহ্নিত আমলাদের বড় একা হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের বেশিরভাগ লোক এখন সরকার বিরোধীদের সমর্থন করছেন। পুলিশ বাহিনীতেও একটা বড় মেরুকরন ঘটেছে। সরাকারীদলীয় কিছু খাস লোক ছাড়া আর কেউই জনগণের উপর গুলি চালাতে রাজি হচ্ছে না। যা কোন গোপণ ব্যাপর নয়। অত্যন্ত পষ্ট ব্যাপার। দেখা যাচ্ছে চরম আওয়ামী পন্থী পুলিশ হলেও কেউ কেউও দলবাজির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসছেন। এরই মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরা, যশোর, কক্সবাজার এলাকায়। সাতক্ষীরায় তিন জন ওসিকে এ কারনে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ আমরা জানি এ সরকারের আমলে কোন দলপন্থীরা কিভাবে ওসি হয়েছিল।

বিচার বিভাগেও যে একটা ঘটনা ঘটেছে তা কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি। হাইকোর্টের একজন বিচারক ইসলাম অবমাননার ঘটনা সব বিচারপতিকে অবহিত করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এজন্য অনুমোদনও দিয়ে গেছিলেন। তারপর আমরা কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। আসল ঘটনা হলো বিচার বিভাগ এখন আর সরকারের পায়রবিতে লপ্ত না যে ইচ্ছে হলেই কিছু করা যাবে। বিচার বিভাগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনকে সমর্থন করছে না। আর বার এসোসিয়েশনসহ সমগ্র বিচার অঙ্গনের মধ্যেই কাজ করছে সরকার বিরোধী মনোভাব।


এত কথা বললাম পরিস্থিতি বুঝানোর জন্য। আর পরস্থিতি এ কারণে বুঝা দরকার যে বাংলাদেশকে যেভাবে নির্জীব করে দেয়া হয়েছিল, তা আর টেকছে না, বাংলাদেশের আবার জেগে ওঠার পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে।


কেউ পছন্দ করুন আর না করুন বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের পক্ষে একটা জনজোয়ার তৈরি হয়েছে। ইসলামপন্থীদের মাধ্যমেই মূলতঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটা বড় পালাবদল ঘটতে যাচ্ছে।

যার প্রাথমিক লক্ষণ হলো এখানে মত প্রকাশ ও রাজনীতি করার বেলায় একটা বিষয় স্বীকার করে নিতে হচ্ছে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন মানুষকে সব সময় সম্মান করতে হবে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তার প্রতি অসম্মান, তার সুন্নাতকে উপহাস করা যাবে না। তার দেয়া দ্বীন ইসলামের বিরোধিতা করা যাবে না। আলেম-ওলেমাদের সম্মান করতে হবে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা ছেড়ে ধর্মীয় সম্প্রীতির পথ নিতে যাচ্ছে। ধর্মকে ভিত্তি ধরে করা রাজনীতিও যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি তা স্বীকার করে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এখানে আরেকটা বিষয় পষ্ট, নাস্তিকতাকে ভিত্তি ধরে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি করা যাচ্ছে না। বিশেষতঃ বামপন্থী রাজনীতি চিরতরে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গেল। বামপন্থার মধ্যে ইসলাম বিদ্বেষ ছাড়া আর কোন সারবস্তু নাই। এই রাজনীতি মানুষের স্বভাবের সঙ্গে যায় না। মানুষের বিশ্বাস ও আদর্শকে ঘৃণা করার এই রাজনীতি নিজেই নিজের মৃত্যু ঘোষণা করেছে।

আগামী ২৯ মার্চ চরমোনাইয়ের লোকেরা ও আগামী ৬ এপ্রিল দেশের সব দল-মতের ইসলামপন্থীরাই ঢাকায় জড়ো হচ্ছেন। তারা ইসলাম অবমাননার প্রশ্নে ঢাকার ইসলাম বিদ্বেষীদের ঘেরাও করতে আসলেও আশাবাদের জনজোয়ার যেন জাতীয় রাজনীতির অচলাব্স্থারই অবসান ঘটাবে।

এই জনজোয়ার যেন বিপজ্জনক কোন পরিস্থিতি তৈরি না করে, বাংলাদেশের এগিয়ে চলা ও জনগণের উন্নতির পক্ষে কাজে লাগে তার জন্য বেগম খালেদা জিয়া তার জাতীয়তাবাদী রাজনীতি নিয়া শামিল হয়েছেন আলেমদের পাশে। ধর্মীয় একটি লড়াইকে জাতীয় লড়াইয়ে পরিণত করতে খালেদা জিয়ার এই অংশগ্রহণ অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ।

এখানে সবার জন্যই সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী দল, জঙ্গী দল ইত্যাদি হিসেবে দেখানোর কোন সুযোই পাচ্ছে না সরকার ও সেক্যুলাররা। দেশে বর্তমানে যে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের রক্তের মাধ্যমেই এর জন্ম হয়েছে। বিশেষ করে শিবিরের ছেলেরা ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মতো দৃঢ়তা দেখানোর কারণেই ভারতপন্থী ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে বাংলাদেশে বিজয় অর্জন সম্ভব হলো না। এটা বিস্ময়কর যে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মতই ঈমানদার হতে পেরেছে শিবিরের কর্মীরা। অন্যায়কে রুখে দেয়ার হিম্মতের চেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর নাই।

তো আমরা দেখলাম জামায়াত-শিবির সব ঘটনার অনুঘটক হলেও তারা এ পর্যন্ত কয়েকটা কাজ করেছে ১. অস্ত্র ধারণ করেনি, বরং গণপ্রতিরোধ গড়েছে, ২. জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, ৩. বিচার বিভাগের মাধ্যমে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হত্যার চক্রান্ত করা হলেও জামায়াত বিচার বিভাগকে উত্খাত করার বদলে ন্যায় বিচার করেই যেন বিচার বিভাগ নিজেকে টিকিয়ে রাখে তার সুযোগ দিচ্ছে, এবং ৪. দেখা যাচ্ছে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নিহত হচ্ছেন পুলিশের গুলিতে, যার পেছনে ভারতের মদদের বিষয়টি অত্যন্ত পষ্ট, তার পরেও জামায়াত চলমান আন্দোলনকে ভারত বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেনি। বরং জামায়াত এমন একটা ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে বাংলাদেশ ও ভারত ভবিষ্যতে দুটি স্বাধীন-সাবভৌম দেশ হিসেবে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।

তো আমি আপাতত কোন প্রস্তাব রাখছি না। আমি শুধু এতটুকু বলছি যে, বাংলাদেশ আগামী কয়েক দিনে এক নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ হয়ে ওঠবে। সেই বাংলাদেশ যেন আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। আমাদের সুন্দরভাবে বেচে থাকার হককে স্বীকার করে নেয়। নিরাপত্তা ও নিরাপদ জীবনের ব্যাপারে আমাদের সার্বভৌমত্বকে সব সময় মান্য করে। এই জন্য আমাদের দিক থেকে কী কী প্রস্তাব ও দাবি ওঠতে পারে তা নিয়া আমাদের সবারই চিন্তা করা দরকার।

তবে এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে আসন্ন দিনগুলোর সংগ্রামকে বেগবান করতে আমাদের সক্রিয় হওয়া দরকার।

স্বাধীন দেশে স্বাভাবিক মুত্যুর গ্যারান্টি চাই





                 স্বাধীন দেশে স্বাভাবিক মুত্যুর গ্যারান্টি চাই


নিউ ইয়র্কে স্বাধীনতা দিবসের এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে এখন কোন মানুষের নিরাপত্তা নেই। জননিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর উপর মানুষ আস্থা হারিয়ে পেলেছে। তারা নিজেইরা এখন আইনের রক্ষক হয়ে ভক্ষক। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষ হত্যা করছে। প্রতিনিয়ত লংঘন হচ্ছে মানবাধিকার। 
স্বাধীন দেশে মানুষের স্বাভাবিক মৃতে্যুর গ্যারান্টি নেই। দেশে এ ধরণের অরাজক পরিস্থিতি কারো কাম্য নই। দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বক্তারা দাবী জানান। 
রাইটার্স ফোরাম অফ নর্থ আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ২৩ মার্চ নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ফুডকোর্ট রেস্টুরেন্টের এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে লংআই ল্যান্ড সিটি ইউনিভার্সিটির মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. শওকত আলী বলেন, বাংলাদেশ এখন পুলিশী রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। পুলিশ দেশের সাধারণ মানুষ উপর যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পাক হানাদার বাহিনী সাধারণ মানুষকে এভাবে নির্যাতন করেনি। পুলিশের গুলিতে মানুষের মৃত্যু এখন স্বাভাবিক হয়ে দাড়িয়েছে।   
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা শুরু দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) কে অবমাননাকারীদের ৩ স্তরের নিরাপত্ত বেষ্টনি দিয়ে সভা সমাবেশ করাচ্ছে। অপরদিকে নাস্তিকদের শাস্তি দাবীরত আলেম ওলামাদেরকে দলীয় কর্মী ও পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে হত্যা করছে। 
বিশেষ অতিথি সাংবাদিক কাজী শামসুল মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিপক্ষের দু’পক্ষই যুদ্ধাপরাধ করেছে। বর্তমান মানবতা বিরোধী বিচারে দু’পক্ষকেই বিচারের আওতায় আনা উচিত।



তিনি আরো বলেন, তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দেয়া যাচ্ছেনা। রাজনৈতিক দলগুলো শুধু দলীয় অবস্থান থেকে নিজেদের মতো করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে। তিনি তরুণদের সব দল মতের উর্দ্ধে উঠে স্বেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধের যথাযথ ইতিহাস জানার আহবান করেন।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সাংবাদিক তাসের খান মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার ৪২ বছরে এসেও বাংলাদেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই। এমনকি মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতাও নেই। ধর্মীয় পোষাক পরলেও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার শাহবাগের আন্দোলনের দেশে হিংষা বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রকে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দিয়েছে। 
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত দিন পর দিন হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ বাংলাদেশ সরকার শক্তভাবে প্রতিবাদ করার সাহসও নেই। 
আলোচনা সভায় রাইটার্স ফোরাম অফ নর্থ আমেরিকার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আরিফের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্যে দেন, মানবাধিকার নেতা মাহতাব উদ্দিন, ড. আবুল কাসেম, প্রফেসর কাজী মোহাম্মদ ইসমাঈল, মোশারফ হোসাইন, ওয়াসেক বিল্লাহ ও মাওলান রশিদ আহমেদ। সভা পরিচলনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন।





বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদে টাইম স্কয়ারে বিক্ষোভ




বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের
প্রতিবাদে টাইম স্কয়ারে বিক্ষোভ

নিউ ইয়র্ক : বাংলাদেশে পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার গণহত্যা, গুম, মিডিয়া উপর সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ, দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি, শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামসহ দাঁড়ি-টুপিধারীদের উপর নির্মম নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশেী-আমেরিকাররা। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের টাইম স্কায়ার এক সমাবেশে এসব বিষয়ে তারা প্রতিবাদ জানান । সমাবেশ থেকে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসনের ট্রাবুনাল বাতিল ও মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবী জানান তারা।

২৩ মার্চ শনিবার বিকাল ৪টা (বাংলাদেশ সময় রবিবার রাত ২টায়) ম্যানহাটনের প্রাণ কেন্দ্র টাইম স্কায়ার সংলগ্ন  ৭ এভিনিউ ইষ্ট প্লাজা মিলনায়তনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে‘ ইউনাইটেড ফর পিস ইন বাংলাদেশ’।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন, গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইবুনালে প্রহসণের রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠনটি এবিক্ষোভ সমাবেশ ও র‌্যালীর আয়োজন করে। 




সমাবেশে বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদকারীরা সরকার কতৃর্ক নির্যাতনের চিত্র রাজপথ কাপাঁনো মিছিলের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন এবং ‘সেভ বাংলাদেশ’ নামে বুলেটিন বিতরণ করেন। ইংরেজীতে লেখা বুলেটিনের মধ্যে সরকার কর্তৃক পুলিশ ও দলীয় কর্মীদের দ্বারা বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের গণহারে হত্যা, নির্যাতন, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যা, বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীকে হুম এবং তার পরিবারের আহাজারী, সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনীর হত্যা, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে প্রহসণের চিত্র তুলে ধরে তারা। নিউ ইর্য়ক সিটির ব্যস্ততম এলাকা হওয়ায় শতশত ওয়াকিং আমেরিকান ও ভিন্নদেশীরা বুলেটিন  হাতে নিয়ে নির্যাতনের চিত্র দেখে দু:খ প্রকাশ করতে দেখা যায়। 

বিক্ষোভ সমাবেশ ইউনাইটেড ফর পিস ইন বাংলাদেশ এর সভাপতি এ প্রজন্মের বাংলাদেশী- আমেরিকান কাউসার মারুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন মুলধারার নেতা কেয়ারের ষ্ট্রাটিবোর্ড সদস্য জিয়াদ রামাজান, মজলিসে শূরা জাস্টিজের চেয়ারম্যান ইমাম আইয়ুব আব্দুল বাকী, আর‌্যাবিয়ান-আমেরিকান মহিলা নেত্রী জেরিনা শেখ, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট ডা: জুন্নুন চৌধুরী, প্রফেসর আবু আজাদ হক, এডভোকেট মিলাদ উদ্দিন, মহিলা নেত্রী শাহানা মাসুম, সালাহ উদ্দিন, এনামুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডা: ফারুক ওয়াদুদ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকারের আচরণ পৃথিবীর সকল স্বৈরশাসকের হত্যাযজ্ঞকেও হার মানিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে আরেকটি যুদ্ধ ঘটবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন পুলিশের অসাংবিধানিক বক্তব্যের কারণেই ২৮ ফেব্রুয়ারী সারা দেশে ৭০ জন মানুষ নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়। 

Friday, March 22, 2013

বান কি মুনের কাছে স্মারকলিপি





গণহত্যা বন্ধ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবীতে জাতিসংঘরে সামনে আলেমদের বিক্ষোভ 
বান কি মুনের কাছে স্মারকলিপি  



নিউ ইয়র্ক: জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে নিউ ইয়র্কের ওলামা মাশায়েখরা বলেন, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ জনগন মুসলমান হওয়ার পরও মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নির্বিগ্নে মসজিদে যাতায়াত করতে পারছেনা। এমনকি অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদেরও সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেন, কতিপয় নাস্তিক ব্লগারের পক্ষ নিয়ে ইসলাম প্রিয় মানুষকে গুলি করে হত্যা মেনে নেয়া যায়না। অবিলম্ভে ইসলাম ও মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে অবমাননাকারী নাস্তিকদের গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিত করুন। নাস্তিকদের বিচার করতে না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।
নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। 



বৃহস্পতিবার ২১ মার্চ ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা ও মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদে ইমাম, আলেম ও মুফতি ঐক্য পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করে। একই দাবীতে সমাবেশে শেষে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে তারা স্মারকলিপি দেন। 
সমাবেশ থেকে নাস্তিকদের বিচার, চলমান গণহত্যা বন্ধ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চত করার দাবী জানান আলেমরা। 


আলেম শাইখুল ইসলাম অধ্যক্ষ আল্লামা আহমদ শফীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নিন্দা জানিয়ে আলেমরা বলেন, নাস্তিকরা বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে চিরতরে মুছে দেয়ার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। এজন্য ইসলাম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে শুরু করে প্রিয় নবী ভক্ত আলেম বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে। একই উদ্দেশ্যে নাস্তিকরা শিক্ষা ব্যবস্থায় কোরান হাদিসের বিকৃতি থেকে শুরু করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংশ করার পায়তারা করছে। 


  
সমাবেশে বক্তরা বলেন, শাহাবাগে গণজাগরণের নামে ইসলাম ও রাসুল (সাঃ) কে অবমাননাকারীরা নাস্তিক ও মুরতাদ। ফরিদ উদ্দিন মাসুদের মতো তথাকাথিত কতিপয় আলেম নাস্তিকদের পক্ষ নিয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, নাস্তিকদের সহযোগিতা ও সমর্থন 
করাও সমান অপরাধে অপরাধী।  



ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) এর সম্মান রক্ষায় সব গণমাধ্যমের সহাযোগিতা কামনা করে তারা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী প্রসংঙ্গ আসলে বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম দাড়ি, পাঞ্জাবী ও টুপিওয়ালা মানুষ সাজিয়ে কাল্পনিকভাবে জাতির সামনে হাজির করে। এসব সংবাদ প্রকাশ করে আলেম সমাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ বহু আলেম ৭১ সালে রনাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। 
শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী করে তারা বলেন, পাঠ্য বইয়ে ইসলাম, কোরান ও হাদিসের বিকৃত দায় শিক্ষামন্ত্রীকে নিতে হবে। পাঠ্য বইয়ে কোরান হাদিসের বিকৃতি করার পর মুসলিম দেশের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীকে গণহত্যার নির্দেশদাতা আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী সভা থেকে তার  অপসারণ দাবী করেছে আলেমরা। 



সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়ে আলেমরা বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদে তালা লাগিয়ে পুলিশ পাহারা দিয়ে মুসল্লিদের নামাজ পড়তে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তহীন রেখে সরকার নিজেদের লোক দিয়ে হামলা ও ভাঙ্গচুর করাচ্ছে। 
তারা আরো অভিযোগ করেন, সংখ্যালঘুদেরকে রাজনৈতিক ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তাদের উপর কথিত নির্যাতন নাটক সাজিয়েছে সরকার। যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্দীরে সরকার সমর্থক লোকদের হামলা দখলের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।



  



 তারা বলেন, মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র অ্যাখ্যা দিয়ে জাতির সত্য ও ন্যায়ের দিশারী এবং সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত আলেম ইমামদেরকে কাল্পনিক জঙ্গী সন্ত্রাসী বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।   
তারা আরো বলেন, ৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিতর্কিত রায় দিয়ে পরিকল্পিতভাবে দেশকে সংঘাতে দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই স্কাইপি কেলেংকারীর মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়েগেছে।



সমাবেশে বায়তুল জান্না মসজিদের ইমাম প্রফেসর মাওলানা মহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মজলিসে শূরা জাস্টিজের চেয়ারম্যান ইমাম আইয়ুব আব্দুল বাকী, বেলাল মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল মালেক, বায়তুল হামিদ ইনেস্টিটিউশনের পরিচালক মাওলানা আনাস, আবু হুরায়রা মসজিদের ইমাম মাওলানা ফায়েক উদ্দিন, আসসফা ইসলামিক সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মুফতি লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, বায়তুস শরাফ মসজিদের ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ, আসসফা ইসলামিক সেন্টারের ইমাম মাওলানা রফিক আহমেদ, মুফতি খালেদ কাওসার, জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টারের ইমাম মুফতি ইসমাঈল, বায়তুল জান্নাহ মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল্লাহ কামাল, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো: ইব্রাহিম আব্দুল আজিজ ভুইঁয়া, জুনায়েদ হোসাইন ও রশিদ আহমেদ প্রমুখ। সমাবেশের শুরুতে কোরান তেলওয়াত করেন হাফেজ জুলফিকুল চৌধুরী।  
যৌথভাবে সমাবেশ পরিচালনা করেন বায়তুল আমান মসজিদের ইমাম মাওলানা আজের উদ্দিন ও মদিনা মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু সুফিয়ান। সমাবেশে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের কাছে দেয়া স্মারকলিপি পড়ে শুনান মাওলানা মহিবুর রহমান।



সমাবেশ শেষে জাতিসংঘ পার্ক এলাকায় আলেমরা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য র‌্যালী বের করে। র‌্যালিটি পার্কে পদক্ষিণ শেষে দেশের কল্যান কামনা করে দোয়া মুনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। 

কর্মসূচী: ৩১ মার্চ রোববার ম্যানহাটনের মদীনা মসজিদে শানে রেসালাত মহাসম্মেলন ও লাগাতার কর্মসূচী ঘোষণা। 


সমাবেশের ভিডিও দেখুন:
ভিডিও ১



ভিডিও ২