নিউ ইয়র্কে মাজলিসুল উলামার মতবিনিময় সভা
হেজাত ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা বাস্তবায়ন
এবং মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবী
নিউ ইয়র্ক: নিউ ইয়র্কের ইমাম, আলেম ও বিভিন্ন মসজিদের পরিচালনা কমিটির মতবিনিময় সভায় বক্তারা হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে হয়তো মুসলমানরা থাকবে, নয়তো নাস্তিকরা থাকবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের তৌহিদী জনতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বক্তারা বলেন, হেফাজতে ইসলামের ঘোষিত দাবীসমূহ বিজ্ঞান ও বাস্তব সম্মত। সংবিধান পরিবর্তন করে হলেও হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। সভা থেকে আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশ ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করা হয়। এছাড়াও ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ প্রতি সভা থেকে সমর্থন জানানো হয়।
২৮ এপ্রিল রোববার নিউ ইয়র্কের ব্রুকলীনে বায়তুল জান্নাহ মসজিদের মাজলিসুল উলামা ইউএসএ’র উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মাওলানা মুফতী রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মুফতী আব্দুল মালেক, ইমাম আব্দুর রহমান, ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ, ইমাম আজিরুদ্দিন, মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, মাওলানা আবু সুফিয়ান, মুহাম্মদ ইসমাইল, মুফতী খালেদ কাউসার, মাওলানা আব্দুল্লাহ কামাল, ইমাম ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা আসাদ, মাওলানা জুনায়েদ হোসাইন।
সভা পরিচালনা করেন মাজলিসুল উলামা ইউএসএ’র সভাপতি মাওলানা রফিক আহমদ।
নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদ পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন আসসাফা ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ডা নুরুর রহমান, বায়তুল জান্নাহ ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিন, মাওলানা দিদারুল আলম, হাজী আখলাক মিয়া, হাজী মাহমুদ আলী, বায়তুস শরাফ মসজিদের গোলাম হোসেন, ব্রুকলীন ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আমিনুর রসুল জামসেদ, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. জুন্নন চৌধুরী, বায়তুল মোর্কারম মসজিদের মঈন শরীফ, মদিনা মসজিদের জুহাইব ও নোমান রহমান, ডা. ফজলুল হক, আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ বেলাল, ইফনা সেক্ট্রেটারী মির্জা মশিউর রহমান প্রমুখ। আলেমদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম, হাফিজ রফিকুল ইসলাম, মাওলানা আশ্রাফ উল্লাহ, হাফিজ সিদ্দিক প্রমূখ।
এছাড়াও সভায় নিউ ইয়র্কের অর্ধশতাধিক মসজিদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আগত মসজিদ প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুফতী রুহুল আমীন ও মাওলানা আবু সুফিয়ান।
সভা শেষে সাভারে ভবন ধসে শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় এবং আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া মুনাজাত করেন মাওলানা আব্দুর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে মুফতী রুহুল আমিন বলেন, কোরান হাদিস অনুযায়ী ইসলাম, আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) শানে কোন ব্যক্তি বেয়াদবি করলে সে মুসলমান থাকতে পারেনা। মুরতাদ হিসেবে তার শাস্তি হবে মৃত্যদন্ড। এজন্য রাসূল (সাঃ) অবমানকারীর নতুন কোন আইন দরকার হবেনা। প্রচলিত আইনে মুরতাদদের বিচার করা সম্ভব। কোন মুরতাদকে মুসলমান সমর্থন করতে পারেননা, সমর্থনকারী ব্যক্তিও মুরতাদ হয়ে যান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় সবসময় ইসলামের উপর আঘাত আসে। তারা ইসলাম বিরোধী কোন আইন করবে না বলে ক্ষমতায় এসেই সংবিধান থেকে আল্লাহর আস্থা বিশ্বাস স্থাপন করা এবং বিসমিল্লাহ বাদ দিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে পাঠ্য পুস্তুকে কোরান হাদিসকে বিকৃত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী বিচারের কথা বলে সরকারের মনগড়া ট্রাইবুনাল গঠন করে মানবতা বিরোধী বিচার নামে বাংলাদেশ থেকে ইসলাম নিমূর্লের ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এমপি স্বঘোষিত নাস্তিক। তারা কখনো ইসলামের মঙ্গল চাইতে পারেনা। তারা বাংলাদেশে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে বাদ স্বরোচিত মতবাদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আমার দেশ প্রকাশনা পূনরা চালু ও মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান সরকারের নাস্তিকবাদী মুখোশ উম্মোচন করে দিয়েছে। তাই প্রতিহিংসা মূলক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করেন তিনি।
মুফতি আব্দুল মালেক বলেন, ওমরাহ হজ্ব পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবের আলেমদের বেশ কয়েকটি সভা করেছি, সেখানের আলেমরা বাংলাদেশে রাসূল কটাক্ষকারীদের বিচার দাবী করেছে। তারা বাংলাদেশে নাস্তিকদের বিভিন্ন অপতৎপরতা বিষয়ে সৌদি আরবে লিফলেট ছাপিয়ে দেশব্যাপী বিতরণ করছে। এছাড়াও বাংলাদেশে আলেম উলামাদের হত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের আলেমরা।
সৌদি আরব সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সৌদি বাদশা ঘোষিত ২ কোটি শ্রমিকের জটিলতা সমস্যায় ৩ মাসের অন্তবর্তীকালীন সময় অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা সুযোগ সুবিদা পেলেও বাংলাদেশের শ্রমিকরা পাচ্ছেননা। কারণ হিসেবে মূলত তারা বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে কতিপয় নাস্তিকদের মাধ্যমের আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে সংঘাত সৃষ্টি করা হয়েছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ হয়েও ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। এ অবস্থায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলাম ও বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে।
আমার দেশ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবী করে মাওলানা লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী বলেন, আগামী ৫ মে’র মধ্যে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় তৌহিদী জনতা মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত করে আনবে।
মাওলানা আজির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে এখন দুইটি অংশ, একটি হেফাজতে ইসলাম আরেকটি হেফাজতে নাস্তিক। নাস্তিকদের সমর্থন করাও নাস্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফরিদ উদ্দিন মাসুদের মতো ব্যক্তিকে এখন আর আলেম বলার সুযোগ নেই।
আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠি ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে প্রচার করে থাকেন, অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথাও এসব তথাকথিত দাবী ছিল বলে কেউ প্রমাণ দেখাতে পারেনা।
সংবাদ প্রেরক
মাওলানা মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী
দাওয়া গবেষাণা ও শরিয়া মুখপাত্র
মাজলিসুল উলামা ইউএসএ
No comments:
Post a Comment