নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বিক্ষোভ বিস্তারিত
নিউ ইয়র্ক: বাংলাদেশে ন্যায় বিচার ও শান্তির দাবীতে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ারে আমেরিকার মুসলিম সংগঠনগুলোর এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৩ এপ্রিল শনিবার আমেরিকানস ইউনাটেড ফর হিউম্যান রাইটস এ বিক্ষোভ সমাশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে টাইমস স্কয়ারে বিক্ষোভকারীরা এক র্যালী বের করে।
বিক্ষোভে বাংলাদেশে চরম মানবাধিকর লংঘন, ট্রাইবুনালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে দেশটির শীর্ষস্থানীয় ইসলামী নেতৃবৃন্দসহ বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার প্রক্রিয়া এবং গণহত্যার প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়াও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করা হয়। এসময় আমেরিকান মুসলিম নেতারা বার্মার আরাকান প্রদেশে মুসলিম নিধন বন্ধের আহবান জানান। অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশী আমেরিকানদের সামাজিক, ধর্মীয় ও কমিউনটি সংগঠন ছাড়াও মূলধারার বিভিন্ন সংগঠনসহ ১২ টি আমেরিকান মুসলিম সংগঠনের ৮/১০ হাজার নেতা কর্মী অংশ নেয়।
কেয়ার এর এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর নিহাদ আওয়াদ বলেন, আমি আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াত করিনা। একজন আমেরিকান মুসলমান হিসেবে বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষে কথা বলছি। দেশটি মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশ হওয়ার পরও ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) এর কুৎসা রটনা করা হয়। রাসূল (সাঃ) কে কটাক্ষকারীদের বিচার দাবী নিয়ে দেশটির মুসলমানরা আন্দোলন করে যাচ্ছে। আন্দোলকারী মুসলমানদের উপর সরকারী বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের গঠিত ট্রাইবুনাল কার্যক্রম ইতোমধ্যেই বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। ট্রাইবুনালের একটি রায় নিয়ে দেশী সহিংসতায় গণহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক। ৪২ বছর আগের ঘটনার বিচার করতে গিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি কোন ভাবেই কাম্য হতে পারেনা। আমরা বাংলাদেশে শান্তি ও মুসলমানদের প্রতি ন্যায় বিচার চাই।
তিনি বলেন, ট্রাইবুনালের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে হত্যার করার জন্য ৪২ বছর পূর্বের একটি ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে।
ইসলামিক সার্কেল অফ নর্থ আমেরিকা-ইকনার আমীর নাঈম এম বেগ বলেন, বিশ্ববিখ্যাত আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা শুরু করার পর সারা দেশে প্রতিবাদের যে ঝড় উঠেছে তা দমন করতে গিয়ে গত ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে সরকার গণহত্যা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে ২ শতাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কয়েক হাজার লোক আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এবং অসংখ্য মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে বিনাবিচারে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে। বক্তারা স্বাধীন বিচার কমিশন গঠণ করে এসব হত্যার তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান।
মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা-মুনার ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট আবু আহমেদ নূরুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকার বিরোধী শক্তির ১ লাখের অধিক নেতা কর্মীকে মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বিরোধী শক্তির নেতা কর্মীদের গুম ও খুন করা হচ্ছে। এক কথায় দেশটিতে চরম মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে। তাই একজন আমেরিকান মুসলমানরা মানবাধিকার রক্ষার জন্য বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ৪২ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত অপরাধের দায়ভার পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এবং সেসময় যারা দেশটির পরিচালনায় নিয়োজিত ছিলেন সেসব বেসামরিক লোকদের। স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশ সরকার চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ভারতের মধ্যস্থতায় ১৯৭৪ সালে মুক্তি দিয়েছে। দীর্ঘ চার দশক পর সরকার তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যার তীর ছুঁড়ে তাদেরকে ঘায়েল করতেই প্রহসনে বিচারের ব্যবস্থা করেছে। অবিলম্বে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে ইতোমধ্যে যেসব নেতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে তাদের দন্ড প্রত্যাহার ও ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে বর্তমান সংকট নিরসনের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে একটি ট্রুথ এন্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠণ করে সমঝোতায় উন্নীত হওয়ার আহবান জানান।
আমেরিকানস ইউনাইটেড ফর হিউম্যান রাইটস এর সভাপতি মোবাশ্বির রহমান বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জাতিসংঘের তত্বাবধানে বসনিয়া, রুয়ান্ডা, সিয়েরা লিওনের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুরূপ নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠণ করে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিচার করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বিচার প্রক্রিয়া বহির্ভূত ও বিদেশে অবস্থানরত একজন অজ্ঞাত পরিচয় আইনজীবীর সাথে স্কাইপে ও ই-মেইলের মাধ্যমে বিচার সম্পর্কিত আলোচনা এবং নির্দেশনা নিয়ে ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য প্রমাণ করেছেন। এধরনের কেলেঙ্কারির পর এই আদালতের অস্তিত্ব বজায় রেখে নির্দোষ লোকদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়া কোন মতেই মেনে নেয়া যায় না।
সমাবেশে থেকে বক্তারা মায়ানমার সরকারের ছত্রছায়ায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর গত কয়েক দশক যাবত নিপীড়ন চালানো এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে যাওয়া এবং তাদের ধর্মীয় স্থাপনা একের পর এক ধ্বংস করার চেষ্টার প্রতিবাদ করে তাদেরকে মায়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদানের আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে মাওলানা জুলকিফুল চৌধুরী। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম ও নতুন প্রজন্মের আকিব আজাদের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য আমেরিকানস ইউনাইটেড ফর হিউম্যান রাইটস এর সভাপতি মোবাশ্বির রহমান।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, কেয়ার নিউ ইয়র্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াদ রামাদান, মজলিস আস শুরার আমীর ইমাম আলহাজ্ব তালিব আবদুর রশীদ, মুনার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, ইন্টারনেট ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন, হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ-এইচআরডিবির প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ওম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ এর চেয়ারপার্সন শাহানা মাসুম, পার্ক আমেরিকান সোসাইটির প্রেসিডেন্ট শামস উজ জামান, মজলিস আস শুরার জাষ্টিস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারপার্সন ইমাম আইয়ুব আবদুল বাকী, মজলিস আস শুরার সাবেক আমীর ইমাম আল আমীর আবদুল লতিফ, বাইস এর শুরা সদস্য ডা: মোহাম্মদ জুন্নুন চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা: মুজিবুর রহমান মজুমদার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, বিএনপি নেতা ডা: গুলজার আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী বিউটি আকন্দ, মসজিদ বায়তুশ শরফের ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ, হিলসাইড ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ ভূঁইয়া, দারুল কোরআন ওয়া সুন্নাহ’র ইমাম মুফতি রুহুল আমিন প্রমুখ। সমাবেশে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের উপর লিখিত সুপারিশ পাঠ করেন নতুন প্রজন্মের শারমিন ও ইশরাত রুমা।
আমেরিকার ঐতিহাসিক টাইমস স্কয়ারে বেলা ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে আমেরিকান মুসলমানরা অংশ নেন। বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য সকাল থেকে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, সাবওয়ে ও প্রাইভেট গাড়ীতে নারী, পুরুষ ও তরুণ তরুণীরা টাইম স্কয়ারে জমায়েত হয়। সবার হাতে ছিলো বিভিন্ন ধরণের শ্লোগান লেখা প্লেকার্ড। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্য হলো- সেইভ বাংলাদেশ, গণহত্যা বন্ধ কর, নারী নির্যাতন বন্ধ কর, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, মাওলানা নিজামী, গোলাম আজম, আলী আহসান মুজাহিদ ও মীর কাসেম আলীকে মুক্তি দাও দিতে হবে। এছাড়াও সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবী করে শ্লোগান ও প্লেকার্ড প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভের ফাঁকে ফাঁকে জামায়াত নেতাদের মুক্তি এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবী করে শ্লোগান দেয়া হয়।
ব্যস্তততম নগরীতে এতো বড় বিক্ষোভ দেখে আমেরিকানরা থমকে দাড়িয়ে ছিলো। অনেকেই বিক্ষোভের কারণ জিজ্ঞাসা করতে থাকে। বিক্ষোভের সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে আমেরিকার বেশ কয়েকটি মিডিয়াতে স্থান পায়। আয়োজকরা এ বিক্ষোভকে বাংলাদেশের ইস্যূতে আমেরিকায় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ বলে দাবী করেছেন।
http://coalitionbdus.blogspot.com/2013/04/blog-post_202.html
ছবি নিউজে যে সব ছবি বাদ পড়েছে:
No comments:
Post a Comment