Monday, April 8, 2013

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকম্প


বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকম্প
ফিরোজ মাহবুব কামাল


উল্টে গেল শাহবাগ মঞ্চ:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন প্রচণ্ড ভূমিকম্প।এ ভূমিকম্পে শুধু যে সরকারের পতন ঘটবে তাই নয়।আমূল পরিবর্তন আসবে বহু কিছুতেই।লন্ডভন্ড হয়ে যাবে বহু কিছুই। ইতিমধ্যে এ ভূমিকম্প উল্টিয়ে দিয়েছে শাহবাগ সার্কাসের সাজানো মঞ্চ। ভারতপন্থি ও ইসলামবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল,সবগুলি সেক্যুলার সাংস্কৃতিক সংগঠন,সকল ইসলামবিরোধী পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়া এবং ইসলামবিরোধী সকল বুদ্ধিজীবী শাহবাগের ব্লগারদের দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির উপর দীর্ঘকালীন দখলদারির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এ ভূমিকম্প তাদের সবকিছুই লন্ডভন্ড করে দিল। তারা ভাবতেই পারিনি,এত দ্রুত তাদের সকল স্বপ্ন হাওয়াই হারিয়ে যাবে। ভূমিকম্পে তো এমনটিই ঘটে। ৬/৪/১৩ তারিখের দৈনিক মানবজমিন লিখেছে,অবস্থা বেগতিক দেখে শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এখন বিপুল অর্থ সাথে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ৬/৪/১৩ তারিখে লংমার্চ শেষ হলো।কিন্তু লংমার্চ কি শুধু মাইলের পর মাইল পথ হাটায় বা সমাবেশে শেষ হয়? রাজনীতির এটি এক সুদুরপ্রসারি কৌশল।রাজনীতির সাথে লংমার্চের একটি সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক বিপ্লবের লক্ষ্যও থাকে। তেমন একটি লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে লাগাতর ভূমিকম্প।

মুসলমানের জীবনে লংমার্চ শেষ হলেও জিহাদ শেষ হয় না।লক্ষ লক্ষ মানুষের এ মহাবেশ প্রমাণ করলো,বাংলাদেশের ইসলামপ্রেমী জনগণ ঘুমিয়ে নাই।শাহবাগীদের লম্ফঝম্প,নাচানাচি ও চিল্লাচিল্লিতে তাদের সবার ঘুম এখন ভেঙ্গে গেছে।আল্লাহ-রাসূলের বিরুদ্ধে গালাগালি এবং ইসলামপন্থিদের ফাঁসিতে ঝুলানো ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে ফাসিবাদী সন্ত্রাস তারা শুরু করেছিল,বাংলাদেশের মাটিতে যে তার স্থান নাই সেটিই প্রমাণিত হলো।অনেকেরই অভিমত,সরকার যানবাহন চলাচল বন্ধ না করলে ঢাকায় কোটি লোকের বেশী সমাবেশ হতো। জনগণের ঈমানে আজ প্রচন্ড জোয়ার এসেছে। ঈমানদারের রাজনীতি তো এভাবেই জিহাদে পরিণত হয়। হাসিনা সরকারের নিষ্ঠুর অত্যাচার ও লুণ্ঠনে সমগ্র দেশবাসী আজ অতিষ্ট। বহুমানুষ কাফনের কাপড় পড়ে ও হাতে জায়নামায নিয়ে ময়দানে নেমেছে। লংমার্চে যাওয়াকে তারা ইবাদত গণ্য করেছে। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ। এতবড় সমাবেশ পূর্বে কখনোই কোন সরকারের বিরুদ্ধে হয়নি। আইয়ুব–ইয়াহিয়া ও এরশাদের বিরুদ্ধেও হয়নি। বাংলাদেশের সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে গণধিকৃত সরকার যে শেখ হাসিনার সরকার সেটি এ লংমার্চ প্রমাণ করলো। এটি শুধু লংমার্চ নয়,রূপ নিয়েছে পবিত্র জিহাদে।এ জিহাদের লক্ষ্য,আল্লাহর দুষমণদের অধিকৃতি থেকে শুধু বাংলাদেশের মুক্তি নয়,ইসলাম রক্ষাও। এ জিহাদ শুধু ব্লগারদের শাস্তির দাবীতে নয়।বরং আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণ বিজয়ের।



হেফাজতে ইসলামের পরিকল্পনা ছিল,৬ই এপ্রিল বাংলাদেশের সকল জেলা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকায় এসে হাজির হবে। কিন্তু সরকার সেটি চায়নি। চায়নি বলেই সড়ক থেকে যানবাহন তুলে নেয়ার লক্ষ্যে সহযোগী সংগঠনগুলি দিয়ে শুক্রবার ৫ই এপ্রিল সন্ধা থেকেই শনিবার সন্ধা অবধি হরতাল আহবান করে। সরকার সমর্থিত বাস ও লঞ্চ মালিকদের দিয়ে সারা দেশে বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখে। বন্ধ করে দেয় রেল যোগাযোগ। অথচ এ সরকারই হরতালের বিরুদ্ধে বিরোধী দলকে নসিহত করে এবং নির্দেশ দেয় যানবাহন চলাচলের। ঢাকায় জলসার জন্য স্থান দিতেও এ সরকার দীর্ঘদিন গরিমসি করে। তবে এ সমাবেশ রুখার সামর্থ সরকারের ছিল না। কারণ অনুমতি না দিলে হেফাজতে ইসলাম লাগাতর হরতালের ঘোষণা দিয়েছিল। ফলে অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। তবে অনুমতি দিলেও নানা শর্ত জুড়ে দেয়। পুলিশ এ সমাবেশকে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সীমিত রাখার জন্য নির্দেশ দেয়। এর বাইরে মাইক স্থাপনের অনুমতি দেয়নি। অনুমতি দেয়নি আগে ভাগে মঞ্চ নির্মাণেরও। নির্দেশ দিয়েছিল সমাবেশে কোন রাজনৈতিক তথা সরকার বিরোধী বক্তব্য না রাখার।সে সাথে হুমকি দিয়েছিল,শর্তগুলি মানা না হলে যখন তখন সমাবেশের অনুমতি প্রত্যাহার করে নিবে। তাছাড়া লংমার্চে আসার পথে কুমিল্লা,ফরিদপুরসহ নানা স্থানে মিছিলের উপর সরকারি দলের গুন্ডাদের হামলা হয়েছে। চট্টগ্রামে বহুবাস ভাঙ্গচুর হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে যিকর করতে করতে ঢাকায় এসেছে। আসার পথে পথের দুপাশের গ্রামের মানুষ তাদেরকে খাদ্যপানীয় দিয়ে আপ্রায়ন করেছে। সরকারি বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তাই লংমার্চ ব্যর্থ হয়নি। বরং ক্ষতি হয়েছে সরকারেরই। তাতে বসন খুলে গেছে খোদ আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ যে ইসলামের কতটা জঘন্য শত্রু এবং গণবিরোধী সেটি তারা নিজেরাই সমগ্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরলো। ফলে তাদের চরিত্র তুলে ধরতে হেফাজতে ইসলামকে আর বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন পড়েনি।

শুরু হলো বিরামহীন জিহাদ:
মু’মিনের জীবনে জিহাদে বিরাম নেই।ব্যক্তির জীবনে প্রকৃত সফলতাটি তো আসে জিহাদে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে।জিহাদ কখনো হয় নিজের নফসের বিরুদ্ধে।কখনো হয় শয়তানি শক্তির রাজনৈতীক,সামরিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে।স্বেচ্ছাচারি নফসের আধিপত্যের বিরুদ্ধে জিহাদকে বলা হয় জিহাদে আকবর অর্থাৎ বড় জিহাদ। আর শয়তানি শক্তির রাজনৈতীক ও সামরিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে জিহাদকে বলা হয় জিহাদে আছগর তথা ছোট জিহাদ। মুসলমানের আমৃত্যু বিচরণ হলো এ দুই জিহাদের অঙ্গণে। জিহাদে আকবরে যারা বিজয়ী হয় তারাই যোগ দেয় জিহাদে আসগরে। এমন জিহাদে পরাজয়ের অর্থঃ শয়তানের কাছে বশ্যতা।তখন ব্যক্তির নফস শয়তানের এজেন্ট বা গোলামে পরিণত হয়। শয়তান তখন তার দখলদারি প্রতিষ্ঠা করে এমন গোলাম ব্যক্তির বুদ্ধি-বিবেক ও রাজনীতি-সংস্কৃতির উপর। শয়তানের হাতে অধিকৃত এমন দাস-ব্যক্তিরাই পাপাচারে লিপ্ত হয় এবং পরিণামে জাহান্নামে গিয়ে পৌঁছে।



শয়তানের এজেন্ডা শুধু ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করা নিয়ে নয়,বরং সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিয়েও।ব্যক্তির পথভ্রষ্টতা বাড়াতেই শয়তান ও তার এজেন্টগণ রাষ্ট্রীয় শক্তিকে কাজে লাগাতে চায়। প্রতি দেশেই শয়তানি শক্তির লাগাতর প্রচেষ্টা তাই সমাজ,সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠার।শয়তানের সে দখলদারি থেকে নিজেকে এবং সে সাথে পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রকে বাঁচানোর তাগিদেই প্রতিটি মু’মিনের জীবনে জন্ম নেয় লাগাতর জিহাদ। অঙ্গারে আগুন থাকলে তাতে উত্তাপও থাকে। তেমনি প্রাণে ঈমান থাকলে সে প্রাণে জিহাদও থাকে। জিহাদ না থাকার অর্থ তাই ঈমানহীনতা। নবীজীর আমলে জিহাদে অংশ নেননি এমন একজন সাহাবাকে তাই খুঁঝে পাওয়া যাবে না। তাদের সে জিহাদ ছিল আল্লাহর দ্বীনের বিজয় আনার। সে সাথে শয়তানি শক্তির নির্মূলের। মু’মিনের ঈমান তাই শুধু তাঁকে মসজিদেই টানে না। টানে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলে আমৃত্যু জিহাদেও। তাই যে দেশে যত বেশী ঈমানদারের সংখ্যা সেদেশে ততই আল্লাহর পথে জিহাদ। আল্লাহর শরিয়তি বিধান তখন সেদেশে বিজয়ী হয়। সমগ্র মানব ইতিহাসে ঈমানের সবচেয়ে বড় জোয়ার এসেছিল নবীজী (সাঃ)র আমলে মদিনায়। ফলে মদিনার ঘরে ঘরে সেদিন শহীদ পয়দা হয়েছিল। ফলে সে জনপদে তাজমহল নির্মিত না হলেও নির্মিত হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বহু মানুষ। মানবতা একমাত্র সেদিনই সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। মহান আল্লাহপাক তো ফিরেশতাদের মাঝে তাদের নিয়েই গর্ব করে থাকেন। ইসলামের রাষ্ট্রের এটিই তো সবচেয়ে বড় নেয়ামত। অথচ আজকের ১৫ কোটি মুসলমানের বাংলাদেশে সেটি হয়নি। ফলে দেশটিতে পরাজিত হয়েছে ইসলাম। ইসলাম দুর্বল ভাবে বেঁচে আছে শুধু মসজিদ-মাদ্রাসার ক্ষুদ্র আঙিনায়। বেঁচে আছে নিছক জায়নামাযে;রাষ্ট্রের রাজনীতি,আইন-আদালত,প্রশাসন,শিক্ষা-­সংস্কৃতিতে নয়। ফলে সেকালে মদিনার বুক থেকে ইসলামের নামে বিশ্বশক্তি ও মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মাণের কাজ শুরু হলেও বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ইতিহাস সৃষ্টি করছে দুর্বৃত্তিতে। মুজিবামলে পরিচিত পেয়েছিল ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়ি রূপে। বাংলাদেশের এ ব্যর্থতার কারণ, দেশের ভূমি বা জলবায়ু নয়। বরং দেশটির উপর শয়তানের অনুগতদের পূর্ণ দখলদারি। শয়তান ও তার দাসদের হাতে এমন অধিকৃতি কি কোন দেশবাসীকে ভাল কিছু দিতে পারে? আবু জেহেল ও আবু লাহাব যেমন পারিনি,তেমনি মুজিব-হাসিনাও পারিনি।

জিহাদ যখন ফরজে আইন হয়:
দেশ যখন শয়তানি শক্তির হাতে অধিকৃত হয় এবং আইন-আদালত থেকে যখন বিলুপ্ত হয় আল্লাহর শরিয়তি বিধান তখন জিহাদ আর ফরজে কেফায়া থাকে না। নামায-রাযার ন্যায় তখন সেটি ফরজে আইনে পরিণত হয়। শয়তানের অধিকৃতি থেকে দেশকে উদ্ধারের কাজ তখন আর শুধু সরকারের হাতে সীমিত থাকে না। সেটি তখন প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্বে পরিণত হয়। নামাযের আযানে হাজির না হওয়াটি যেমন ঈমানদারি নয়,বেঈমান শক্তির অধিকৃতি থেকে দেশমুক্তির জিহাদে অংশ না নেয়াটিও তেমনি ঈমানদারি নয়।নবীজী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর (রাঃ) যখন খলিফা হন তখন সাহাবীগণ তাঁকে জানিয়ে দেন, “হে আমিরুল মু’মিনিন,আপনি যদি কোরআনের বিধান ও নবীজী (সাঃ) সূন্নত থেকে দূরে সরে যান তবে তরবারি দিয়ে আপনাকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবো।” অথচ আজ যারা বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্টিত তারা শুধু কোরআনের শরিয়তি বিধান ও নবীজী (সাঃ) সূন্নত থেকেই দূরে সরেনি, বরং আল্লাহর শরিয়তি বিধানকে আস্তাকুঁরে রাখাই তাদের রাজনৈতীক এজেন্ডা।অথচ অতীতে মুসলমানগণ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় শুধু রাজস্বই দেয়নি,শ্রম,মেধা এবং রক্তও দিয়েছে। মুমিনের জীবনের এটিই তো জিহাদ।বেতনভোগী চাকরবাকরদের দিয়ে এ পবিত্র জিহাদের কাজ হয় না। যখনই তাদের ঘাড়ে এ দায়িত্ব চাপানো হয়েছে তখনই সে চাকরেরা নিজেরাই রাজা হয়ে বসেছে। মুসলিম ইতিহাসে এরাই মীর জাফর রূপে পরিচিত। তারা সহযোদ্ধা ও মিত্র হয়েছে বিদেশী কাফেরদের,এবং ডেকে এনেছে বিদেশী কাফেরদের লুন্ঠন ও শাসন। ফলে তাদের হাতে মু্সলিম দেশের স্বাধীনতা বাঁচেনি।আল্লাহর শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠাও হয়নি।বাংলাদেশে এ চাকর-বাকরগণই নামাযী নাগরিকদের রাজস্বের অর্থে মদ আমদানি করে,পতিতাপল্লি পাহারাদারির ব্যবস্থা করে এবং সূদি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ন্যায় নানারূপ পাপের আবাদ বাড়ায়। সর্বোপরি এরাই ইসলামের বিজয়কে অসম্ভব করে রাখে। তাই প্রশ্ন হলো, অপরাধি কি শুধু ব্লগারগণ? হাসিনা সরকার কি কম অপরাধি? ব্লগারদের অপরাধ তারা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও কোরাআন-হাদীসের বিরুদ্ধে অপমানকর কুৎসা লিখেছে। আর সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থার বানিকে হঠিয়েছে। উভয়ের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। উভয়ই চায় মহান আল্লাহর অসম্মান।চায় রাষ্ট্রীয় মঞ্চ থেকে ইসলামকে সরাতে। তাই বাংলাদেশের আজকের এজেন্ডা কি স্রেফ ব্লগারদের শাস্তিদান?

শত্রুর দুর্গে আঘাত হানার এখনই সময়:
১৯৭৫ ছাড়া আওয়ামী লীগ আর কখনোই রাজনীতিতে এতটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি যতটা এখন পড়েছে। ফলে তাদের দুর্গে আঘাত আনার এখনই সময়। এ সুযোগ হাতছাড়া হলে শুধু ইসলামপ্রেমী ও দেশপ্রেমী মানুষেরই বিপদ বাড়বে না,বিপদ বাড়বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার। মাত্র ক’দিন আগেও আওয়ামী লীগ শাহবাগীদের মাধ্যমে দেশের রাজনীতির দখলদারি নিজ হাতে নিয়ে নিয়েছিল। এখন তারা গভীর গর্তে গিয়ে পড়েছে। সে শাহবাগীদের তারা মাথায় তুলেছিল, যাদেরকে তারা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধা বলে আখ্যায়ীত করেছিল তাদেরকে এখন জেলে তুলতে বাধ্য হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ইসলামের যে কতবড় শত্রু সেটি তারা কখনোই গোপন রাখেনি। শেখ মুজিব ১৯৭০য়ের নির্বাচনে ভোট নিয়েছিলেন এ ওয়াদ দিয়ে যে,কোরআন-হাদীসের বিরুদ্ধে কোন আইন তৈরী করা হবে না। অথচ ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের যেখানেই ইসলাম,মুসলমান এবং কোরআনের আয়াত ছিল সেখান থেকেই ইসলাম ও কোরআনের আয়াত সরানোর কাজ শুরু করে। পবিত্র কোরআনের বানি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে,সে বানি শেখ মুজিবের দানবীয় থাবা থেকে বাঁচেনি। ইসলাম ছিল নজরুল ইসলাম কলেজের গায়ে। সেখান থেকেও ইসলাম বিলুপ্ত করা হয়। মুসলিম শব্দটি ছিল জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।সেখান থেকেও মুসলিম নামটি কর্তিত হয়। অথচ ভারতে বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়,কলকাতায় হিন্দু কলেজের ন্যায় বহু প্রতিষ্ঠান আছে যার সাথে হিন্দু নামটি জড়িত। অন্যদের হাতে বাংলাদেশের সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থার ঘোষণাটি যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সে পবিত্র বানি ভাল লাগেনি। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরই আল্লাহর উপর আস্থার সে ঘোষণাটি তারা বিলুপ্ত করে দেয়।

মুজিব নাস্তিক কম্যুনিষ্টদের রাজনীতিকে শুধু বৈধতাই দেয়নি। তাদেরকে তিনি হাসিনার ন্যায় রাজনীতির পার্টনার রূপে গ্রহণ করেছিলেন। অপরদিকে দেশের ইসলামপন্থিদের রাজনীতিকে তিনি আইন করে নিষিদ্ধ করেছিলেন। অথচ ইসলামে রাজনীতি না করাটাই অনৈসলামি। রাজনীতি করেছেন নবীজী (সাঃ) ও তারা সাহাবায়ে কেরাম। তাদের সে রাজনীতি ভোটদানের রাজনীতি ছিল না,সেটি ছিল রক্তাত্ব জিহাদের মাধ্যমে দেশের শাসনক্ষমতা হাতে নেয়ার। মুসলমান যেখানে নামাযের ইমামতি কোন বেনামাজীকে দিতে পারে না,তেমনি রাষ্ট্রের ইমামীতে বা নেতৃত্বেও কোন বেনামাজী, বেপর্দা ও ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য ব্যক্তিকে দিতে পারে না। সেটি হলে নবীজীর সূন্নত পালন হয় না। বরং গাদ্দারি হয় আল্লাহতায়ালা,তাঁর রাসূলে পাক (সাঃ)ও ইসলামের মূল আক্বিদার সাথে।তখন আল্লাহর শরিয়তি বিধান আস্তাকুঁরে গিয়ে পড়ে।কোন ঈমানদার ব্যক্তি কি আল্লাহর দ্বীনের এমন অপমান কি মেনে নিতে পারে? অথচ বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে।

আলেম নামধারি কিছু পথভ্রষ্ট ও ইসলামশূন্য ব্যক্তি আওয়ামী সরকারকে জনরোষ থেকে বাঁচাতে বলা শুরুকরেছে আল্লাহই ইসলামের রক্ষক,অতএব ইসলামের রক্ষায় বান্দাহর কোন দায়িত্ব নেই। অর্থাৎ তাদের কথা,মুসলমানের কাজ আল্লাহর দ্বীনের পরাজয় ও অবমাননাটি নীরবে দেখার। তাদের কিছু করার নাই। প্রশ্ন হলো,ইসলামের উপর এতবড় অজ্ঞতা নিয়ে কোন ব্যক্তি আলেম দূরে থাক,মুসলমানও কি হতে পারে? অথচ হাসিনা সরকার তাদেরকে আলেম রূপে চিত্রিত করছে। আল্লাহতায়ালা অবশ্যই ইসলামের রক্ষক। তবে ইসলাম রক্ষণের কাজে আল্লাহর খলিফা রূপে কাজ করে মুসলমানগণ। নবী (সাঃ) ও তার সাহাবাগণকে তো সে কাজেই বহুবার জিহাদ লড়তে হয়েছে। সে জিহাদে যেমন নিজেদের শহীদ হতে হয়েছে,তেমনি বহুশত্রুকে হত্যাও করতে হয়েছে।এবং সে রক্তাত্ব লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই আল্লাহর ভূমি আল্লাহর শত্রুদের দখলদারি থেকে মুক্ত হয়েছে।আজও কি এর বিকল্প আছে। এ গুরুভার পালনের জন্যই মুসলমান হওয়ার অর্থই হলো আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাওয়া,এবং তাঁর রাস্তায় লাগাতর মুজাহিদ হয়ে যাওয়া। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে,“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও।”–(সুরা সাফ,আয়াত ১৪)।আল্লাহর এ সাহায্যকারিদের কাজ কি তাই আল্লাহর শরিয়তের বিধানের পরাজয় দেখে সেটিকে নীরবে হজম করে যাওয়া? বরং পবিত্র কোরআনে অসংখ্য বার বলা হয়েছে,“আল্লাহর রাস্তায় তোমরা জিহাদ করো জান মাল দিয়ে।” তাই যেখানেই ইসলাম ও মুসলমানের উপর হামলা হয়েছে সেখানেই মুসলমানগণ জানমাল নিয়ে তার প্রতিরোধ করেছে। আর এ বিভ্রান্ত ব্যক্তিগণ বলছে,আল্লাহর দ্বীনের হেফাজতের দায়িত্ব হেফাজতে ইসলামকে কে দিল?

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি :
হেফাজতে ইসলাম তাদের আন্দোলনকে শুধু ব্লগারদের শাস্তির দাবীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। তাদের এ আন্দোলনের এটি এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ ইসলামি বিরোধী ব্লগারগণই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রকৃত রোগ নয়,এটি সিম্পটম মাত্র। রোগ আরো গভীরে। সেটি যেমন দুর্বৃত্ত কবলিত সেক্যুলার প্রশাসন,শিক্ষাব্যবস্থা,বিচার ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি,তেমনি দেশের সংবিধান।শুধু দেহের জ্বর কমালে নিউমোনিয়া সারে না।সেজন্য নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দরকার।তাই বাংলাদেশে মূল ব্যাধি সারাতে হলে শুধু ব্লগারদের শাস্তি দিলে হবে না,মূল রোগ সেক্যুলার রাজনীতির স্থলে ইসলামের বিজয়ও আনতে হবে। আল্লাহর জমিনকে একমাত্র আল্লাহর সার্বভৌম মালিকানায় দিতে হবে এবং একমাত্র তারই শরিয়তি বিধান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।হেফাজতে ইসলামের কাছে সেটি যে গুরুত্ব পেয়েছে সেটি তাদের ১৩ দফা দাবীর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। ১৩ দফা দাবী হলো নিম্নরূপঃ

১. সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কুরআন-সুন্নাহ্বিরোধী সব আইন বাতিল।

২.আল্লাহ,রাসূল (সাঃ)ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।

৩. কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয়নবীর (সাঃ) শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা।

৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা,অনাচার,ব্যভিচার,নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা,মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।

৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি,ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।

৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।

৭. মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড় এবং কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।

৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।

৯. রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।

১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।

১১. রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা,মাদরাসাছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমনপীড়ন,নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও গণহত্যা বন্ধ করা।

১২. সারাদেশের কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক,ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।

১৩. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা,মাদরাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান।

যুদ্ধাবস্থায় দেশ: 
বাংলাদেশ আজ শুধু দ্বিধা বিভক্তই নয়,রীতিমত যুদ্ধও শুরু হয়েছে। এক দিকে ইসলামের পক্ষের শক্তি। অপর দিকে ইসলামের বিপক্ষ শক্তি। ইতিমধ্যেই দুইশতের মত মানুষ শহীদ হয়ে গেছেন। বহু হাজার আহত হয়েছেন। ইসলামের পক্ষের হাজার হাজার মোজাহিদ এখন জালেম শাসকের জিন্দানে। অনেকের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশে যখন এরূপ যুদ্ধ শুরু হয় তখন কি সেদেশে নিরপেক্ষ বলে কেউ থাকে না। যুদ্ধাবস্থায় সবাই নিজ নিজ পক্ষের সাথে একাত্ম হয়ে যায়।তাই খন্দকের যুদ্ধে আরবের পৌত্তলিক,ইহুদী তথা ইসলামবিরোধী সকল শক্তি একতাবদ্ধ হয়ে মদিনার উপর হামলা করেছিল।তেমনি বাংলাদেশেও যত কাফের,ফাসেক,মোনাফিক,সমাজতন্ত্রি,নাস্তিক -তথা আল্লাহর বিরুদ্ধে যত রকমের অবাধ্য বিদ্রোহী আছে তারা সবাই আজ একই মঞ্চে একতাবদ্ধ। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বাইরেও তাদের মিত্র রয়েছে। সে মিত্রদেরই একজন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রনব মুখার্জি সম্প্রতি তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে ছুটে এসেছিলেন দিল্লি থেকে।



আওয়ামী নেতাদের অসুস্থ্য চেতনা

চোর-ডাকাতগণ স্রেফ হাত-পা আর অস্ত্র নিয়ে চুরি-ডাকাতিতে নামে না। তাদের প্রতিটি অপরাধের পিছনে রোগাগ্রস্ত একটি চেতনাও কাজ করে। তেমনি ইসলামপন্থিদের জনসভায় যারা লগি-বৈঠা নিয়ে মানুষ হত্যায় নামে,ইসলামের রাজনীতি যারা নিষিদ্ধ করতে চায়,শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকে যারা রুখতে চায়,খুঁজে খুঁজে ইসলামি বইপুস্তক যারা বাজেয়াপ্ত করে,আলেমদেরকে যারা কারারুদ্ধ করে,আলেমদের ফাঁসির রায় শুনে যারা মিষ্টি বিতরণ করে,-তাদের মগজেও একটি ভয়ানক দুষ্ট চেতনা কাজ করে।কোন শত্রুকে চিনতে হলে শুধু তার দৈহীক পরিচয়টি জানলে চলে না,তার মনের সে কুৎসিত পরিচয়টিও জানতে হয়।তাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চিনতে হলে তাদের মনের সে পরিচয়টি জানাও অতি জরুরী। তাদের মাঝে ইসলামবিরোধী দুষ্টচেতনা যে কতটা ভয়ানক তার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। শুরু করা যাক দলের নেত্রী খোদ শেখ হাসিনা থেকে। বিগত ২০১১ সালের ৫ই অক্টোবর রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গা পূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছেন,“আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো বাহন চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে—তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখেই-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।”-(দৈনিক আমার দেশ,৬ই অক্টোবর, ২০১১)। এ কথাগুলো শেখ হাসিনা কোনরুপ নেশার ঘোরে বলেননি। জ্বরের প্রকোপে বিকার গ্রস্ততায়ও বলেননি। সুস্থ্য মাথায় “জানেন এবং শুনেছেন” এমন দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলেছেন। দুর্গাকে তিনি আমাদের দেবী বলেছেন।“পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং জিডিপি বেড়েছে” এতে দুর্গা যে গজে চড়ে এসেছে সে বিশ্বাসটি আরো মজবুত হয়েছে -সেটিও বলেছেন। শেখ হাসিনা এ কথাগুলো বলেছেন মনের মাধুরি মিশিয়ে, এবং পুজা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে। এমন অবস্থায় মানুষ যখন কথা বলে তখন সে অন্যের শেখানো কথা বলে না, একান্ত নিজের মনের কথাগুলোই অতি নির্ভয়ে বলে। প্রশ্ন হলো, দেবদেবীর উপর এমন প্রগাড় বিশ্বাসী ব্যক্তিকে কি মুসলমান বলা যায়? কোন ব্যক্তি মুসলমান হওয়ার জন্য কালেমায়ে শাহাদত পাঠের মাধ্যমে সেটির প্রকাশ্যে ঘোষনা দেয়। সে যে মুসলমান সে তার সে মৌখিক উচ্চারণের মধ্যেই প্রকাশ পায়। তখন তার ঈমানদার হওয়ার বিষয়টি শুধু মহান আল্লাহতায়ালাই নন, তাঁর বান্দারাও জানতে পারে। আর পৌত্তলিক অমুসলমানটি তার অমুসলমান হওয়ার ঘোষণাটি দেয় পুজামন্ডমে গিয়ে দেব-দেবীর উপর তার নিজের বিশ্বাসটি জানিয়ে দিয়ে। হাসিনা তো দেবদেবীর উপর সে বিশ্বাসটিই ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গা পূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপে গিয়ে ব্যক্ত করেছেন। তার মনের বিশ্বাসের সে কথাটি তার মুখের ভাষায় এতটা প্রকট ভাবে প্রকাশ পাওয়ার পরও কি তার ঈমান জানার জন্য তার অদৃশ্য অন্তরের দিকে তাকানোর প্রয়োজন আছে? অথচ শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশ আজ এ পৌত্তলিক নেত্রীর হাতে অধিকৃত। এমন ব্যক্তি যখন বার বার হজ-ওমরাহ করে নির্বাচন কালে মাথায় কালো পট্টি বাঁধে,হাতে তসবিহ নেয় এবং রাস্তার মাঝে মিছিল থামিয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়,তাকে কি বলা যাবে? ধর্মের নামে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষকে ধোকা দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি যে এসব বেশ ধরেন তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ থাকে? তার পিতাও এরূপ গণতন্ত্রের বেশ ধরে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে শত্রুতা করেছেন।এবং প্রচণ্ড শত্রুতা করেছেন ইসলামের সাথে।

আওয়ামী নেত্রীর মশকরা:
রোগটি শুধু শেখ হাসিনার একার নয়। ছড়িয়ে পড়েছে তার অন্যান্য সাথীদের মাঝেও। তারও কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। আওয়ামী লীগের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য,কৃষি মন্ত্রী ও সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী। ইসলাম থেকে তার ভ্রষ্টতা এতটাই প্রকট যে,তিনি তার এক ভাষণে এক নতুন উম্মতের সন্ধান দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন,“তারা রাসূলে পাক (সাঃ)-এর ইসলামে বিশ্বাস করে না। বিএনপি হচ্ছে জিয়াউর রহমানের উম্মত,তাদের দোসর জামায়াত হচ্ছে নিজামীর উম্মত,আর আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা মহানবীর (সাঃ)উম্মত।”-(আমারদেশ, ২১ মার্চ,২০১০)।ধর্ম,মহানবী (সাঃ)ও উম্মত নিয়ে এই নেত্রীর মশকরা যে কতটা রুচীহীন ও অজ্ঞতাপ্রসূত এ হলো তার নমুনা। প্রশ্ন হলো,আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মহানবীর সূন্নত হওযার প্রমাণ কি এই,সংবিধান থেকে তারা আল্লাহর উপর আস্থার বানি বিলুপ্ত করবে? এই কি মহান নবী (সাঃ)র উম্মত হওয়ার লক্ষণ? আল্লাহর উপর আস্থার বানিটি সরিয়ে তারা কি প্রমাণ করলো? তারা যে ইসলাম থেকে কতদূরে সেটিই কি প্রমাণিত হলো না? তাছাড়া সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও নির্ভরশীলতা কি এতই সহজ? নাস্তিক এবং আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী তাদের জীবনে কি সেরূপ আস্থা কি সৃষ্টি হয়? আস্থা তো তখনই আসে যখন আল্লাহর উপর ঈমান গভীরতর হয়। ঈমান ছাড়া কি আল্লাহর উপর আস্থা সৃষ্টি হয়? তারা যে কাজটি করলো সে কাজ তো বেঈমানের। তাছাড়া আল্লাহর উপর আস্থার অর্থ কি? অর্থ কি শুধু তার করুণার উপর আস্থা? বরং সেটি হলো তাঁর দেয়া শরিয়তি বিধান ও তাঁর দেখানো সিরাতুল মোস্তাকীমের উপর নির্ভরশীলতা। মহান আল্লাহর উপর মু’মিনের প্রবল আস্থাটি শুধু তার মনের ভূবনে সীমিত থাকে না,নিছক তার আমল,দোয়া ও ইবাদতেই প্রকাশ পায় না। বরং প্রকাশ পায় তার রাজনীতি,সংস্কৃতি,অর্থনীতি ও আচরণের মধ্যেও।সে আস্থা নিয়েইঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই আল্লাহর দ্বীনের বিজয় চায়,রাষ্ট্রের বুকে শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠা চায় এবং এজন্যই সে ইসলামি বিপ্লব চায়। সে লক্ষ্যে সে যেমন জিহাদ করে,সে জিহাদে তেমনি জানমালের কোরবানীও পেশ করে। অথচ কাফের ও মুনাফিকের বড় বেঈমানিটা হলো আল্লাহর শরিয়তি বিধানের বিরুদ্ধে। তারা সে বিধানকে আস্তাকুঁরে ফেলে প্রতিষ্ঠিত করে কাফেরদের দেয়া আইন ও বিচার ব্যবস্থা। মতিয়া চৌধুরি ছাত্রজীবনে রূশপন্থি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করছেন। আর এখন লড়ছেন ইসলামের বিজয় রুখতে। লড়ছেন শরিয়ত প্রতিষ্ঠা রুখতে। একাজ তো শয়তানের উম্মতের,ফলে তিনি নবীজী(সাঃ)র উম্মত হওয়ার দাবী করেন কোন যুক্তিতে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের আরেক নেতা এইচ টি ইমাম কিছুদিন আগে বলেছেন, “আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র ইসলামি দল”। তিনি আরো বলেছেন,দেশে ইসলামি পরিবার থাকলে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পরিবারই আছে। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী ওলামা লীগ আয়োজিত “ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এইচ টি ইমাম আরো বলেন,“দেশে ইসলাম টিকিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ।এই ইসলামের প্রবর্তক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”-(আমারদেশ ও নয়াদিগন্ত,এপ্রিল ৩,২০১০)। আজ আওয়ামী লীগ শিবির থেকে ইসলামের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী উঠেছে। প্রশ্ন হলো,একমাত্র ইসলামি দল যদি আওয়ামী লীগ হয় তবে তো জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোন দল তো কোন ইসলামি দলই নয়! সেটি হলে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবী কেন? নিষিদ্ধ করা উচিৎ তো তবে আওয়ামী লীগকে।শেখ হাসিনার আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ঠাট্টা করেছেন মহান আল্লাহকে নিয়ে। তিনি বলেছেন,"লাখ লাখ কোটি কোটি বছর পর আল্লাহ যদি আমাদের বিচার করতে পারেন তবে আমরা এখন এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে পারব না কেন?" নয়াদিগন্ত,আমারদেশ,মার্চ ২১,২০১০)। তিনি বলতে চেয়েছেন,আল্লাহর অধিকার থাকলে সে অধিকারও তাদেরও কাছে। কত বড় স্পর্ধার কথা!কাফের দেশেও কি আল্লাহর বিরুদ্ধে এতবড় বেয়াদবীপূর্ণ কথা বলা হয়? এথেকে প্রমাণ মেলে, আওয়ামী লীগ আল্লাহর ও তার রাসূলের সবচেয়ে জঘন্য শত্রুদের রাজনীতির ময়দানে নামিয়েছে।শয়তান জানে তার পক্ষে বড় খেলোয়াড় কোনটি। সেটি আওয়ামী লীগও জানে। ফলে অতি পরিকল্পিত ভাবেই তাদেরকে মাঠে নামিয়েছে।এক্ষেত্রে তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে সহযোদ্ধা রূপে পেয়েছে নাস্তিক ব্লগারদের। ফলে মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারি নাস্তিক ব্লগার মরলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বলা হবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?

মুজিবের অপরাধ ও মুজিব-ভক্তদের মুর্খতা:
মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর বিধানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যে বিদ্রোহ ও অপরাধ সেটি একদিনে জন্ম নেয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে রক্ত চক্ষু বর্ষিত হয়েছিল খোদ শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে। এবং সেটি বাংলাদেশ সৃষ্টির পর

...

No comments:

Post a Comment