Saturday, April 13, 2013

বাংলাদেশে ন্যায় বিচার ও শান্তির দাবীতে নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বিশাল বিক্ষোভ








বাংলাদেশে ন্যায় বিচার ও শান্তির দাবীতে 
নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বিশাল বিক্ষোভ

বাংদেশে মানবাধিকারের চরম লংঘন, ক্যাঙ্গারু কোর্টে দেশটির শীর্ষস্থানীয় ইসলামী নেতৃবৃন্দসহ বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মানবাধিকার তথা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার প্রক্রিয়া এবং সরকারী বাহিনী পরিচালিত সাম্প্রতিক গণহত্যার প্রতিবাদে গতকাল ১৩ এপ্রিল শনিবার দুপুরে নিউইয়র্কে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ম্যানহাটানে টাইমস স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশী আমেরিকানদের সামাজিক, ধর্মীয় ও কমিউনটি সংগঠন ছাড়াও মূলধারার বিভিন্ন সংগঠনের দশ সহ¯্রাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক অংশগ্রহণ করেন।



আমেরিকানস ইউনাইটেড ফর হিউম্যান রাইটস এর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে ইতোমধ্যে যেসব নেতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে তাদের দন্ড প্রত্যাহার ও ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে বর্তমান সংকট নিরসনের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে একটি ট্রুথ এন্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠণ করে সমঝোতায় উন্নীত হওয়ার আহবান জানান। তারা আরো বলেন, ৪২ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত অপরাধের দায়ভার পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এবং সেসময় যারা দেশটির পরিচালনায় নিয়োজিত ছিলেন সেসব বেসামরিক লোকদের। স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশ সরকার চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ভারতের মধ্যস্থতায় ১৯৭৪ সালে মুক্তি দিয়েছে। দীর্ঘ চার দশক পর সরকার তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যার তীর ছুঁড়ে তাদেরকে ঘায়েল করতেই প্রহসনে বিচারের ব্যবস্থা করেছে। 



তারা বলেন, দেশটির সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামী নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা শুরু করার পর সারা দেশে প্রতিবাদের যে ঝড় উঠেছে তা দমন করতে গিয়ে গত ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে ২ শতাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কয়েক হাজার লোক আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এবং অসংখ্য মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে বিনাবিচারে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে এবং তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার চালিয়ে জোর করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে। তারা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে। বক্তারা স্বাধীন বিচার কমিশন গঠণ করে এসব হত্যার তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান।
তারা বাংলাদেশ সরকারকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জাতিসংঘের তত্বাবধানে বসনিয়া, রুয়ান্ডা, সিয়েরা লিওনের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুরূপ নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠণ করে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিচার করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আহবান জানান। তারা আরো বলেন, বর্তমান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বিচার প্রক্রিয়া বহির্ভূত ও বিদেশে অবস্থানরত একজন অজ্ঞাত পরিচয় আইনজীবীর সাথে স্কাইপে ও ই-মেইলের মাধ্যমে বিচার সম্পর্কিত আলোচনা এবং নির্দেশনা নিয়ে ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য প্রমাণ করেছেন। এধরনের কেলেঙ্কারির পর এই আদালতের অস্তিত্ব বজায় রেখে নির্দোষ লোকদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়া কোন মতেই মেনে নেয়া যায় না। তারা বলেন, বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ও স্বজন হারিয়েছেন তাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু একটি সভ্য সমাজে নিরীহ মানুষকে ভূঁয়া সাক্ষী ও দলিলের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার এই প্রক্রিয়া ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক অধ্যায় সৃষ্টি করবে এবং সমাজকে বিভক্ত করে ফেলবে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে তা প্রকট হয়ে উঠেছে। বিশ্ব যখন শান্তির অন্বেষায় বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ অশান্তির বিষবৃক্ষ রোপন করতে পারে না। বিশ্ব বিবেক এতে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না।
এছাড়া তারা মায়ানমার সরকারের ছত্রছায়ায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর গত কয়েক দশক যাবত নিপীড়ন চালানো এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে যাওয়া এবং তাদের ধর্মীয় স্থাপনা একের পর এক ধ্বংস করার চেষ্টার প্রতিবাদ করে তাদেরকে মায়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদানের আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে মাওলানা জুলকিফুল চৌধুরী। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম ও নতুন প্রজন্মের আকিব আজাদের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য আমেরিকানস ইউনাইটেড ফর হিউম্যান রাইটস এর সভাপতি মোবাশ্বির রহমান। বক্তব্য রাখেন কেয়ার নিউইয়র্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াদ রামাদান, ইসলামিক সার্কেল অফ নর্থ আমেরিকা-ইকনার আমীর নাঈম এম বেগ, মজলিস আস শুরার আমীর ইমাম আলহাজ্ব তালিব আবদুর রশীদ, কেয়ার এর এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর নিহাদ আওয়াদ, মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা-মুনার ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট আবু আহমেদ নূরুজ্জামান, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা: মুজিবুর রহমান মজুমদার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, বিএনপি নেতা ডা: গুলজার আহমেদ, মুনার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, ইন্টারনেট ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন, হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ-এইচআরডিবির প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ওম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ এর চেয়ারপার্সন শাহানা মাসুম, পার্ক আমেরিকান সোসাইটির প্রেসিডেন্ট শামস উজ জামান, মজলিস আস শুরার জাষ্টিস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারপার্সন ইমাম আইয়ুব আবদুল বাকী, মজলিস আস শুরার সাবেক আমীর ইমাম আল আমীর আবদুল লতিফ, বাইস এর শুরা সদস্য ডা: মোহাম্মদ জুন্নুন চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী বিউটি আকন্দ, মসজিদ বায়তুশ শরফের ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ, হিলসাইড ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ ভূঁইয়া, দারুল কোরআন ওয়া সুন্নাহ’র ইমাম মুফতি রুহুল আমিন প্রমুখ। সমাবেশে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের উপর লিখিত সুপারিশ পাঠ করেন নতুন প্রজন্মের শারমিন ও ইশরাত রুমা।   


No comments:

Post a Comment