সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যম তাদের অনলাইনে এ বিষয়ে পাঠকদের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ফলে দেখা যায় ৭৯ শতাংশ পাঠক জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিভিন্ন মহল থেকে যখন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং তাদের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে তখন জামায়াত-শিবির বিরোধী হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যমের জরিপেই জনমতের পুরো ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের অনলাইন সংস্করণে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘আইন প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ এখন গণদাবি। আপনার মত কী?’ জবাবে ৮৯.৯৫ শতাংশ পাঠক জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ভোট দেন । অন্য দিকে মাত্র ৮.৬৮ শতাংশ পাঠক জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে তাদের মত দেন। নীরব থাকেন ১.৩৭ শতাংশ ।
দৈনিক প্রথম আলো ১৫ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা বিষয়ে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে সরকার সম হবে কি?’
এর উত্তরে ৭২.৭৩ শতাংশ পাঠক বিপক্ষে ভোট দেন এবং ২৪.৮১ শতাংশ পাঠক পক্ষে মত দেন। ২.৪৬ শতাংশ পাঠক মন্তব্য নেই বলে জবাব দেন। প্রথম আলোর ওই দিনের অনলাইন জরিপে অংশ নেন ৩৭০৪ জন।
বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশে রাজনীতি করার। সারা দেশে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি ওঠার প্রোপটে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আপনি কি একমত?’ রাত ৮:১৮ মিনিট পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ ভোটার জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে এবং ৩৫ শতাংশ ভোটার নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দেন।
এ সময় জরিপে ভোটার সংখ্যা উল্লেখ ছিল ১৩ হাজার ৩৩৭ জন।
কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর ৯টার দিকে প্রকাশিত ফলে দেখানো হয় জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ৬৫ শতাংশ এর স্থলে মাত্র ১০ শতাংশ ভোটার মত দিয়েছেন। অন্য দিকে জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে কয়েক মিনিট আগে উল্লিখিত ৩৫ শতাংশ এর স্থলে ৯০ শতাংশ ভোটার দেখানো হয়। এ সময় মোট ভোটারের সংখ্যা উল্লেখ ছিল ১৯ হাজার ৭৩২ জন। এ নিয়ে পাঠক বিডিনিউজের বিরুদ্ধে দ্ইু ধরনের তথ্যের স্ক্রিন শর্ট তুলে ধরে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ধরেন।
বিডিনিউজ কর্তৃপ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলে, ‘একই আইপি থেকে অবিরত ভোট দেয়ার ঘটনা চিহ্নিত করার পর একই আইপি থেকে অতিরিক্ত ভোট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’ অথচ বাস্তবতা হলো বিডিনিউজে একই আইপি থেকে একবারের অধিক ভোট দেয়া যায় না। যা যে কেউ পরীা দেখতে পারেন। তার মানে ফলাফল তাদের পছন্দমতো না হওয়ার কারণে তারা ভোট বাতিল করে ফলাফলে ব্যাপক পরিবর্তন করেছে।
বাংলানিউজে ৬ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘শাহবাগের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন করেন কি না?’ ওই দিন বিকেল ৫টা ৮ মিনিটের সময় ফলাফল ছিল শাহবাগের আন্দোলনের পক্ষে ৩ হাজার ৮৩৫ জন এবং বিপক্ষে ১৪ হাজার ৬৬৮ জন। এর মাত্র ১২ মিনিট পরে ৫টা ২০ মিনিটের সময় ফলাফল দেখানো হয় শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষে ১৫ হাজার ৪৯২ এবং বিপক্ষে মাত্র ৩৩৩ । নিজেদের ইচ্ছামতো এ ধরনের ফলাফল পরিবর্তন নিয়েও জালিয়াতির অভিযোগসহ বাংলানিউজের বিরুদ্ধে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন পাঠক। তাদের জালিয়াতি নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের তীব্র সমালোচনার পর বাংলানিউজ পুরো জরিপটি সরিয়ে ফেলে। তবে অনেকের কাছে এখনো রয়ে গেছে জরিপের স্ক্রিন শট। এর পর থেকে বাংলানিউজ আর কোনো জরিপ করেনি।
দৈনিক ইত্তেফাকে ২১ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা শ্রেয়Ñ ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সাথে আপনি কি একমত?’ উত্তরে ৬০.০১ শতাংশ হ্যাঁ এবং ৩৯.৯ শতাংশ না বলে জবাব দেন। কিন্তু পরদিন তাদের প্রিন্ট সংস্করণে ফলাফল দেখানো হয় ৪০ শতাংশ হ্যাঁ এবং ৫৯ শতাংশ না। ইত্তেফাক ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের জনমত জরিপের ফলাফল প্রিন্ট সংস্করণে পাল্টে দেয়। এ নিয়েও পাঠকমহলে নানা সমালোচনা চলে।
দৈনিক যায়যায়দিনে গত ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের সমর্থন করেন কি না?’ জবাবে ১৮ শতাংশ হ্যাঁ এবং ৮২ শতাংশ পাঠক না সূচক উত্তর দেন।
দৈনিক সমকালে গত ১৮ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সাথে কোনো ধরনের সংলাপ নয়’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কি সমর্থন করেন?’ জবাবে ৬ শতাংশ হ্যাঁ এবং ৯৪ শতাংশ না সূচক উত্তর দেন।
দৈনিক ইনকিলাবে গত ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াত-শিবির ধরার নামে সারা দেশে গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে তা বন্ধ হওয়া উচিত কি না?’ জবাবে ৮১.২৭ শতাংশ হ্যাঁ এবং ১৭.৭৪ শতাংশ না সূচক উত্তর দেন।
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘সরকারি দল (আওয়ামী লীগ) জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে তা কি সমর্থন করেন?’ জবাবে জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ৯১ শতাংশ এবং মাত্র ৯ শতাংশ নিষিদ্ধের পক্ষে মত দেন।
দৈনিক ইত্তেফাক পরিচালিত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনলাইন জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘ব্লগার রাজীব হত্যায় জামায়াত-শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে জামায়াত। তাদের এই দাবি সমর্থন করেন?’
এর জবাবে জামায়াতের দাবির পক্ষে ভোট দেন ৫৮.৪ শতাংশ এবং বিপক্ষে ভোট দেন ৪১.৫ শতাংশ।
দৈনিক ইত্তেফাক পরদিন তাদের প্রিন্ট সংস্করণে অনলাইন জরিপের যে ফলাফল প্রকাশ করে তাতে ভিন্ন তথ্য দেখা যায়। যেমন ওই দিন রাতে পরিচালিত জরিপে অনলাইনে ৫৮.৪ শতাংশ জামায়াতের পক্ষে ভোট দিয়েছে বলে দেখা যায়। কিন্তু প্রিন্ট সংস্করণে তারা ফলাফল পরিবর্তন করে পরদিন উল্লেখ করে জামায়াতের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৫ শতাংশ । অন্য দিকে বিপক্ষে ৪১.৫ শতাংশ এর স্থলে উল্লেখ করে ৬৫ শতাংশ। অনলাইন সংস্করণ এবং প্রিন্ট সংস্করণে তথ্যের এ গরমিল এখনো বিদ্যমান রয়েছে।
ইত্তেফক অনলাইন জরিপে ৭৭৯৮ জন ভোটার অংশ নেন।
সূত্র : দৈনিক নয়াদিগন্ত
No comments:
Post a Comment