Thursday, February 28, 2013

মাওলানা সাঈদীর রায় নিয়ে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পর্যালোচনা



মাওলানা সাঈদীর রায় নিয়ে 

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পর্যালোচনা


ডেস্ক রিপোর্ট : জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ডিফেন্স টীমের প্রধান কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, এই রায় অবিশ্বাস্য। আমরা স্তম্ভিত। প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি তারপরেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো। এটা দুঃখজনক। সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড দূরে থাক, এক মিনিটেরও সাজা হওয়ার কথা নয়। তার বিরুদ্ধে এই রায় সম্পূর্ণভাবে ন্যায়ভ্রষ্ট। রায়ের বিরুদ্ধে মাওলানা সাঈদীর ওপর চরম অবিচার করা হয়েছে। তিনি নির্দোষ। তাকে বেকসুর খালাস দেয়া উচিত ছিল। আমরা সংক্ষুব্ধ। রায়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ে আপিল করা হবে। আশা করি আপিলে আমরা সুবিচার পাব।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক যে দু'টি হত্যাকান্ডের অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বিশাবালী হত্যার ঘটনায় তার ভাই সুখরঞ্জন বালী ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে এসেছিলেন। দেশবাসীসহ সকলের জানা আছে সরকারের আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে যায় ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে। এরপর থেকে তার আর হদিস নেই। আরেকটি হলো ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকান্ড। ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী ১৯৭২ সালে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। সেখানে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। আমরা আদালতে এই এজাহারের কপি দাখিল করেছি। এখন কিভাবে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো সেটাই প্রশ্ন। এই দু'টি ঘটনায় মৃত্যুদন্ড দেয়ায় আমরা সতিকার অর্থে বিস্মিত। উই আর রিয়েলি সারপ্রাইজড। রাজনৈতিক বিবেচনায় রায় দেয়া হয়েছে কি না সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে জবাবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, মাওলানা সাঈদীর মামলাটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা ট্রাইব্যুনালে এই অভিযোগের পক্ষে অনেক প্রমাণ উত্থাপণ করেছি।
যুবক সাঈদীর সাজা বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বয়স কতো ১৮, ৩০ না ২ সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। আইনের চোখে এই প্রশ্ন মূল্যহীন। প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে সেগুলো যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় প্রমাণ করতে পেরেছে কি না। আমরা বলব রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। সবগুলো অভিযোগকে আমরা মিথ্যা প্রমাণ করেছি। তারপরেও অন্যায়ভাবে মাওলানা সাঈদীকে সাজা দেয়া হলো।
শাহবাগের আন্দোলনের ফলে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে বা এর প্রভাব পড়েছে কি না এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এটা আইনের কোন বিষয় নয়। বিচারকরা সংবিধান, আইন এবং তার বিবেক অনুসারে বিচার কাজ করেন। বাইরে থেকে কে কি বললো সেটা বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডির বাসভবনে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ডিফেন্স টীমের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
লিখিত প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ। তিনি একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় মুফাসসিরে কুরআন।
গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে এই রায় সপূর্ণভাবে ন্যায়ভ্রষ্ট। এই রায়ের মাধ্যমে মাওলানা সাঈদীর ওপরে চরম অবিচার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের উচিৎ ছিল তাঁকে সপূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস দেয়া।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত ২০টি অভিযোগের মধ্যে ১৬টি অভিযোগ ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের। ৪টি ছিল গণহত্যার। একটি অভিযোগও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। প্রসিকিউশন ২৮ জন সাক্ষীর বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। প্রত্যেকটি সাক্ষীর বক্তব্য অসত্য প্রমাণ করতে আসামী পক্ষ সক্ষম হয়েছে।
এর বাইরে ১৬ জন সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বা আদালতে আনা সম্ভব নয় বলে বক্তব্য দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট তাদের কথিত বক্তব্যকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তাদেরকে জেরা করা সম্ভব হয়নি। কথিত এই খুঁজে না পাওয়া সাক্ষীদের মধ্যে একজন ঊষারাণী মালাকার টেলিভিশনে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, তার স্বামী হরলাল মালাকারের হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদী কোনভাবেই জড়িত নন। অপর দু'জন আদালতে এসে প্রসিকিউশন যে তাদের নামে মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছে তা বলতে চেষ্টা করেছেন। তার মধ্যে বহুল আলোচিত ভাগীরথির ছেলে গণেশ সাহা আদালতে দাঁড়িয়ে তার মায়ের ব্যাপারে সাঈদী সাহেবকে জড়িয়ে প্রসিকিউশন যে মিথ্যাচার করেছে তা তুলে ধরেছেন। অপর জন সুখরঞ্জন বালী তার ভাই বিশাবালী হত্যার ব্যাপারে সরকার পক্ষের মিথ্যাচার ফাঁস করে দেয়ার জন্য আদালতের দরজা পর্যন্ত আসতে পারলেও পুলিশ সেখান থেকে তাকে ৫ নবেম্বর অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আজো জানা যায়নি তিনি বেঁচে আছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো যে কত বড় মিথ্যাচার, সুখরঞ্জন বালীর প্রতি সরকারের আচরণ থেকে তা প্রমাণিত। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো যে সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রচার করা হচ্ছিল। কাউকে কাউকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত সরকারের হেফাজতে সেফ হাউসে আটকে রাখা হয়েছিল। মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ওই সাক্ষীরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হলে তাদেরকে অজ্ঞাত স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর প্রমাণ হিসেবে পাঁচ শতাধিক পৃষ্ঠার দলিলপত্র আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন তদানীন্তন ট্রাইব্যুনাল এই অকাট্য প্রমাণ গ্রহণ করেনি।
পরবর্তীতে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের জনগণসহ গোটা বিশ্ব দেখেছে কিভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অসত্য সাক্ষ্য দিয়ে বিচারক এবং প্রসিকিউশনের যোগসাজশে এমনকি বিদেশ থেকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, আদেশ এবং রায় তৈরি করে মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ এবং ই-মেইল থেকে প্রাপ্ত এসব অকাট্য দলিল ঐ ট্রাইব্যুনালের সামনে আসার পরেও এই ট্রাইব্যুনাল সেগুলোকে আমলে নিয়ে মামলা পুনঃবিচারের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন যা বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। এভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাওলানা সাঈদী মিথ্যাচার ও অবিচারের স্বীকার হয়েছেন।
আইনে সুযোগ থাকার পরেও প্রসিকিউশনের ২৮ জন সাক্ষীর বিপরীতে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মাত্র ১৭ জন সাক্ষীর বক্তব্য দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই ১৭ জন সাক্ষীকে বক্তব্য প্রদানে বাধা প্রদান করা হয়েছে এবং প্রসিকিউশনে সাক্ষীদেরকে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জেরা করতে বাধা দেয়া হয়েছে। এতো সব প্রতিবন্ধকতার পরেও প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে মাওলানা সাঈদীকে সাজা প্রদানের মত ন্যূনতম উপাদান না থাকার পরেও তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। এই রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করব। আশা করি আপীলে সুবিচার পাব।
সূত্র : দৈনিক সংগ্রাম থেকে নেয়া

সাঈদীর রায় প্রত্যাখান ও গণ হত্যার প্রতিবাদে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি







সাঈদীর রায় প্রত্যাখান ও গণ হত্যার প্রতিবাদে

 জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি 


নিজস্ব রিপোর্ট ( নিউ ইয়র্ক, ২৮ ফেব্রুয়ারী, বৃস্পতিবার) :  বিশ্ব বরণ্য আলেম জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত রায় প্রত্যাখ্যান এবং গণ হত্যার প্রতিবাদে জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন  করেছে ‘কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশী আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন’।
সাঈদীর রায়কে প্রহসনের রায় উল্লেখ জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এর কাছে স্বারকলিপি পেশ করা হয়েছে। এছাড়াও নিউইর্য়কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
২৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সকালে (বাংলাদেশ সময় একই দিনে রাত্রে) কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন এ সব কর্মসূচি পালন করে। প্রচন্ড শীতের মধ্যে মাওলানা সাঈদী ভক্ত উপস্থিতিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাইটার্স ফোরামের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আরিফ। বক্তব্য রাখেন প্রফেসর কাজী মো. ইসমাঈল, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আওয়াল, ব্যবসায়ী মাওলানা আবু ওবায়দা,  রাইটার্স ফোরাম অফ নর্থ আমেরিকার সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন, ক্যাবী সংগঠনের নেতা ডা. আজিজ উল্যাহ,  ত্রুীড়া সংগঠক মনির হোসেন, নারী নেত্রী শাহানা মাসুম, রোকেয়া আখতার ডেইজি, ইসমত আরা প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচলনা করেন বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।


 মাওলানা সাঈদীর ফাসিঁ রায় প্রত্যাখান করে বক্তারা বলেন, এই রায় আওয়ামীলীগের তথাকথিত ট্রাইব্যুনালের সাজানো নাটক। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল এবং দেশের বরণ্য আলেমদেরকে নাজেহাল করার লক্ষ্যে সরকার এ রায় দিয়েছে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সরকার নির্দেশিত ছকে দেয়া রায় দেশে-বিদেশে মুসলিম জনতা প্রত্যাখ্যান করছে। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখান করে রায়ের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে হাজার হাজার মানুষ স্বত:স্ফুর্ত ভাবে ময়দানে নেমে আসে প্রতিবাদ জানাতে।

নেতৃবৃন্দ বলেন,  মাওলানা সাঈদী ভক্ত ইসলাম প্রিয় জনতা দেশে যখনই আন্দোলনে নেমে আসে তখন আওয়ামী-যুব-ছাত্রলীগ পুলিশ প্রশাসনের ছত্রছায়ায় নিরীহ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। যা ইতিহাসে এক নজিরবিহীন গণ হত্য। পুলিশের গুলির আঘাতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আরো পাচঁশতাধিক মানুষ। গ্রেফতার হয়েছেন কয়েক হাজার নিরীহ মানুষকে।


নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শাহবাগের আন্দোলনকারী নাস্তিক-মুরতাদদের খুশি করতেই এই রায় দেয়া হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে মাওলানা সাঈদীর প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে বলে তারা উল্লেখ্য করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্বের প্রভাবশালী স¤প্রচার মাধ্যম আল জাজিরা, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও এপি এবং মানবাধিকার সংগঠন গুলো এ ট্রাইব্যুনালকে ‘বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল’ বলে বহুবার মন্তব্য করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ আদালতকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়নি। সরকার মনগড়া আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে দলীয় কর্মীদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শুরু থেকেই প্রতারণা করে আসছেন।


তারা বলেন, স্কাইপ কেলেংকারীর মাধ্যমে ট্রাইবুনালে চলা প্রহসনের বিচার জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ট্রাইবুনালের প্রধান বিচারকের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। ট্রাইবুনালে বিচারের নামে চলা প্রহসন দেখে বিশ্বব্যাপী এর গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তারা বলেন, প্রসিকিউশনের আরেক সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আদালতের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে। আজো তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। মূলত, দেলোয়ার শিকদার নামের এক রাজাকার অপরাধ মাওলানা সাঈদীর উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।


 


নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দেয়া ফাঁসির রায় বাতিল করে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানায়ে বলেন, সরকারের চরম ফ্যাসিবাদী রূপ দেশকে পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান অবস্থায় প্রবাসীরা হতাশ। গুটি কয়েক তোষামোদকারী পরিবেষ্টিত হয়ে শেখ হাসিনা  বাস্তবতা ভুলে গেছেন। আজ শেখ মজিবুর রহমান বেচেঁ থাকলে তথাকথিত প্রহসনের ট্রাইব্যুনালের এ বিচারের অবস্থা দেখে তিনি লজ্জা পেতেন।

বক্তাগণ সরকারকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসনের বিচার বন্ধ করে তাওহিদী জনতার প্রিয় ব্যক্তিত্ব আল্লামা সাঈদীসহ সকল ইসলামী নেতৃবৃন্দুকে নি:শর্ত মুক্তি দিন। নচেৎ দেশে ও প্রবাসে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গড়ে তোলা হবে তখন পালানোর পথ পাওয়া যাবেনা। নেতৃবৃন্দ সরকারের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদে দেশ প্রেমিক সকলকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করে নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশে একদিনে এতো মানুষ হত্যার রেকর্ড নেই। এরআগে পিলখানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একদিনে ৬৭ সেনা অফিসার হত্যার করা হয়েছিলো। এ দুটি গণহত্যার বিচারের জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা।

উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারীর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে ৮১ জন হত্যা করেছে। এরমধ্যে হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে  ৭৫ জনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। এছাড়াও প্রায় ৩ হাজার লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একদিনে ৭০ খুনের ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে এ প্রথম।





গুলি বন্ধ করো, এখনই



বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের নায়েব আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার পরে সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।

দলটির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ-র‌্যাবের গুলিবর্ষণ করলে ও সরকাদলীয় নেতা-কর্মীদের সশস্ত্র হামলা চালালে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বহু নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।

দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, সারা দেশে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত ও তিন হাজারেরও বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে প্রায় পাঁচশ’ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তবে এখন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত হয়েছি সারা দেশে কমপক্ষে ৪৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকায় দুইজন, সিরাজগঞ্জে দুইজন, ঠাকুরগাও পাঁচজন, গাইবান্ধায় তিন পুলিশসহ ছয়জন, নোয়াখালীতে চারজন, চট্টগ্রামে তিনজন, সাতক্ষীরায় পাঁচজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুইজন, কক্সবাজারে দুইজন, দিনাজপুরে দুই জন, রংপুরে সাতজন, বগুড়ায় একজন, মৌলভীবাজারে তিন জন।


বৃহস্পতিবারের এই বিপুল রক্তপাত কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের গুলি, সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের হামলা ও রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে প্রাণ রক্ষার্থে পালাতে গিয়ে মানুষ নিহত হয়েছেন। ২০ দিনে খুন হয়েছেন ২৪ জন।
http://www.facebook.com/photo.php?v=138409692994091&set=vb.100004751830916&type=2&theater

এর আগে গত জানুয়ারি মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৭ জন মানুষ। যাদের মধ্যে গত ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে চার জন; ৩১ জানুয়ারি বগুড়ায় চার জন ও ফেনীতে এক জন নিহত হন।

অন্যদিকে, ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত চার বছরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩০ জন মানুষ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মী। আর রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৭৭৫ জন মানুষ।

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক পক্ষগুলোর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও আদর্শিক লড়াইয়ের দোহাই দিয়ে এই বিপুল প্রাণহানির ঘটনাকে গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব হবে না। এই সব প্রাণহানির ব্যাপারে সবাইকে সংবেদনশীল ও দায়শোধে ইচ্ছুক এমন দায়িত্বশীল হতে হবে।

কারণ, মুক্তিযুদ্ধের মতো এক মহান গণযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। এ রাষ্ট্রের একটি সংবিধান রয়েছে। এই সংবিধানের বলে ধর্ম-বর্ন-শ্রেণী-পেশা-দল-মত নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের পরিচয় হল তারা বাংলাদেশের নাগরিক।

নাগরিক মাত্রই সাংবিধান নাগরিক অধিকারে অধিকারী। এই অধিকার বলে সবার নিরাপদ জীবন ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের বাধ্যবাদকতা রয়েছে।

যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধান এখনও বহাল আছে, সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাও ক্রিয়াশীল, সেহেতু দিনের পর দিন রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নির্বিচারে নাগরিকের প্রাণহানি ঘটতে পারে না।

যদিও অনেক দিন ধরেই আমরা পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের ও সরকারের পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য শুনছি যে, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের ‘নাশকতা’ ‘তাণ্ডব’ ও ‘সহিংসতা’ দমন করতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি চালাতে হচ্ছে।

কিন্তু, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও জনসংস্কৃতির জায়গায় এ বক্তব্য কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বর্তমান ও সাবেক আমীরসহ জামায়াতের ৯ জন শীর্ষ নেতা ’৭১-এ মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে দলটির নায়েব আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২।

এ অবস্থায় দলটির নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হবেন, রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাবেন এবং বলপ্রয়োগের চেষ্টা করবেন, এটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ ধরনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিক্ষুব্ধ মানুষ সহিংস ও আক্রমণ প্রবণ হয়ে ওঠে।

ঔপনিবেশিক বৃটিশ রাজের উত্তরসুরি বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সরকারবিরোধী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার এই স্বাভাবিকতা ও প্রবণতা সম্পর্কে অজ্ঞাত এটি কোন ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।

পাশাপাশি পুলিশ ও সরকারে এমনটি অজানা নয় যে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হওয়ার কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালানো যায় না।

জাতিসংঘের অষ্টম কংগ্রেসে গৃহীত ‘আইন প্রয়োগকারী বাহিনী কর্তৃক বল প্রয়োগ ও অস্ত্রের ব্যবহার বিষয়ক মূলনীতি’ মোতাবেক বিক্ষোভকারী জনতা ও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে পুলিশের।

এ অবস্থায় আমরা প্রতিনিয়ত বিপুল প্রাণহানি দেখে এমনটি ভাবতে বাধ্য হয়ে পড়ছি যে, গুলি চালানো পুলিশ বাহিনী ও সরকারের নীতিগত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু আমরা মনে করি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারিত্বে বিপুল ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এ কারণেই বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপের মত লঘু বলপ্রয়োগ না করে গুলি চালানোর মত অন্যায় করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আর সাম্প্রতিক বন্দুকবাজি ও অকারণে বলপ্রয়োগ দেখে ধারণা করা যায় যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার সম্পর্কে দায়িত্বশীল হতে যথেষ্ঠ দীক্ষা দেয়া হয়নি।

আমরা এও মনে করি, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিচালনার বেলায় নেতৃত্বের অমার্জনীয় অদক্ষতা ও অযোগ্যতা রয়েছে। নেতৃত্বের মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সংবেদনশীলতার অভাব অত্যন্ত প্রকট।

বিশেষ করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী পরিচালনায় নিযুক্ত মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে দায়িত্বশীলতা, মানবিক সংবেদনশীলতা ও জবাবদীহিতার ঘাটতি অত্যন্ত দুঃখজনক ও ভীতিকর।

আমরা বলতে চাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকবাজির ফলে সমাজে যে শোক ও ক্ষত তৈরি হয়েছে তার ব্যাপারে দেশের সব নাগরিককে সংবেদনশীল হতে হবে। এ ব্যাপারে অনেক আগেই সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা দৃশ্যমান করা দরকার ছিল।

সবার অবহেলায় পরিস্থিতি যে, দিকে গিয়েছে তাতে করে রাষ্ট্রের সংহতি, জাতীয় নিরাপত্তার ও জননিরাপত্তাহীনতা তৈরি হওয়ার নৈর্বত্তিক শর্ত তৈরি হয়ে গেছে।

এ অবস্থায় কৌশলী ও দায়িত্বশীল ভূমিকার বদলে বন্দুকবাজি অব্যাহত রাখলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যা আমরা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করি না।

আমরা মনে করি, ইতোমধ্যে সংঘটিত প্রাণহানির ব্যাপারে জবাবদিহিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করলে, নিহতদের স্বজনদের ন্যায় বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চত করলে পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা সম্ভব হবে।

রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকে বিপুল প্রাণহানির ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণ করে সব প্রাণহানির বিচার ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে।

আর যদি মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যম মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে পক্ষপাতহীন, গণতান্ত্রিক, দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল আচরণ করলে ভবিষ্যতের বন্দুকবাজি ও প্রাণহানি বন্ধ হবে।


আরটিএনএন এর থেকে নেয়া সম্পাদকীয় : http://www.rtnn.net//newsdetail/detail/1/1/59600

Wednesday, February 27, 2013

সাঈদীর ফাসিঁ না যাবজ্বীবন ?

৭১’র মুক্তিযুদ্ধের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযোগে বিচারের সমুখ্খীন মাওলানা সাঈদীর মামলায় রায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা হবে। এ রায় নিয়ে গোটা বাংলাদেশে থমে থমে অবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে সাঈদীর মুক্তির দাবী ও ট্রাইবুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবী জানিয়ে রায়ের দিন (বৃহস্পতিবার) হরতাল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম। অপরদিকে সরকারও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে।
মাওলানা আবুল কালাম ও আব্দুল কাদের মোল্রার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এদের একজনের ফাসিঁ আর অপর জনের যাবজ্বীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে কাদের কাদের মোল্লার যাবজ্বীবন নিয়ে সরকার পক্ষ অখুশী। এ রায় নিয়ে সরকার আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মাওলানা সাঈদী রায় সবচেয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এ রায়টি আরো আগে হওয়ার কথা ছিলো। বিচারপতি নিজামুল ইসলামের স্কাইপ কেলেংকারী ফাস হয়ে যাওয়ার কারণে মূলত বিলম্ব হয়ে যায়। অন্যথায় ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এ রায়ের জন্য সরকার পক্ষ প্রস্তুত ছিলো বলে স্কাইপ কেলেংকারী থেকে জানা যায়। স্কাইপ কেলেংকারীর কারণে বিচারপতি নিজামুল হক ট্রাইবুনাল থেকে পদত্যাগ করেন। পরে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে বিচার কার্য সম্পাদন করে বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ঠিক করে ট্রাইবুনাল।
এ রায়ে মাওলানা সাঈদীর ভাগ্যে কি আছে ? ফাসিঁ না ন যাবজ্বীবন ? না আরো লঘু দন্ড? সরকার পক্ষ বলছে, সাঈদী বিপক্ষে ১৯ টি অভিযোগের সবকটিই তারা প্রমাণ করতে পেরেছেন।
অপরদিকে সাঈদীর আইনজীরা বলছেন, একটি অপরাধও সঠিকভাবে প্রমাণ দিতে পারেনি রাষ্ট্র পক্ষ।
যদি সরকার পক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী যাবত জীবন বা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদন্ড দেয় তাহলে দেশে কি অবস্থা হবে? জামায়াত শিবির কি করবে?
মূলত মাওলানা সাঈদী কোরানের তাফসীরকারক হিসেবে বিশ্বে খ্যাতীমান ব্যক্তি। তিনি সব দল মত নির্বিশেষে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তার ভক্ত আওয়ামী লীগের মধ্যেও রয়েছে। সরকার দলের অনেকে মনে করেন, সাঈদী নিরাপরাধ। এমনই একজন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন) বলেন, আমাদের নেত্রী বেশি রাজনীতি করেছেন। সব বিষয়ে রাজনীতি করা ভালো না। মাওলানা সাঈদীকে শুধু শুধু মামলায় জড়িয়েছে। এখন আবার শাহবাগের আন্দোলন করে দেশের মানুষের হাসির পাত্র হচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপির মধ্যেও সাঈদীর ভক্ত রয়েছেন। তারাও সাঈদীকে নিরাপরাধ মনে করেন। আবার জামায়াত শিবির, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও নির্দলীয় লোকদের মধ্যে সাঈদীর গ্রহণযোগ্যৎতা রয়েছে। সবমিলিয়ে মাওলানা সাঈদীর রায় বিপক্ষে গেলে বাংলাদেশে চরম বিশৃংখলা হতে পারে, এটা স্পষ্ট। শাহবাগের আন্দোলন দিয়েও সরকার কি সাঈদী ভক্তদের মোকাবেলা করতে পারবে কিনা সেটা সময় বলে দিবে। তারপরও আমরা সবাই আশা করি মাওলানা সাঈদীর আল্লাহর কাছে সঠিক রায় পাবেন।
লেখক : মুহাম্মদ সবুজ

মাওলানা সাঈদীর জন্য হাজারো তরুণ কাপনের কাপড় নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে

ন্বিউ ইয়র্ক : ক্যাঙ্গারো ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মাওলানা সাঈদীসহ আলেমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিচারের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে সমাবেশ করেছে মাওলানা সাঈদী মুক্তি আন্দোলন পরিষদ যুক্তরাষ্ট শাখা।সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাঈদী বিরুদ্ধে অন্যায় রায় দিলে প্রতিবাদে জীবন দিতে বাংলাদেশে হাজার হাজার তরুণ কাফনের কাপড় নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে।
১০ ফেব্রুয়ারি রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশ শুরু করার আগে মাওলানা সাঈদী পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে সাঈদী ভক্ত এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের এক কর্মী মাওলানা সাঈদীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেললে সাঈদী ভক্তরা তাদের ধাওয়া করে। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ আওয়ামী লীগকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে সাঈদী মুক্তি আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্র শাখা সভাপতি আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার নেতা মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, এটর্নি আবদুল আজিজ, মনিরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, আবু ওবায়দা, মাহবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম ও প্রফেসর কাজী ইসমাঈল।
সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রাশেদুজ্জামান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফরমায়েশী রায় আনার চক্রান্ত চলছে। ইতোমধ্যেই দেশের শীর্ষ স্থানীয় আইনবিদরা এ ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছেন। একইভাবে জাতিসংঘও এ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আবদুল কাদের মোল্লার রায় প্রত্যাহার ও মাওলানা সাঈদীসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সরকার এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে।
‘এখন ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম প্রভাবিত করার উদ্দেশেই সরকার পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। ট্রাইব্যুনালকে নিজেদের ইচ্ছামত নিজস্ব ছকে চলতে বাধ্য করার জন্য সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন’ যোগ করেন তারা।
বক্তারা বলেন, বছরের পর বছর কোরআনের তাফসির করে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এ দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। এই নিরপরাধ মুফাসসিরের বিরুদ্ধে অন্যায় রায় হলে দেশে-বিদেশে সর্বস্তরের জনতা গর্জে উঠবে।
সমাবেশে বলা হয়, কোরআনের সেবককে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের রায়ে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয় তাহলে তা হবে ইসলামপ্রিয় জনতার আবেগে কুঠারাঘাত করা। জনগণ কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রের রায় মেনে নেবে না।
সমাবেশে দাবি করা হয়, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শতাব্দীর জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সাীকেই হাজির করতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে আনা ১৯টি অভিযোগের একটিও প্রমাণিত হয়নি।
বক্তারা বলেন, স্কাইপি কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে চলা প্রহসনের বিচার জাতির সামনে পরিস্কার হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ট্রাইবুনালের প্রধান বিচারকের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। ট্রাইবুনালের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রসিকিউশনের আরেক সাী সুখরঞ্জন বালী মাওলানা সাঈদীর পে স্যা দিতে এলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আদালতের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করেছে। আজও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
‘এইসব জালিয়াতি’ জনগণের সামনে প্রকাশ হবার পরও যদি কোনো অন্যায় রায় দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে সরকারকে চরম পরিণতিই ভোগ করতে হবে হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
শাহবাগের আন্দোলনকে সরকারের সাজানো নাটক দাবি করে তারা বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাঈদীসহ ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের হত্যার নীলনকশা তৈরি করেছে সরকার।

মাওলানা সাঈদীর সাক্ষী সুখরঞ্জণ বালী কোথায় ?


মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের একজন সাক্ষীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহরণ করেছে ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) পুলিশের লোকজন। সাক্ষীর নাম সুখরঞ্জন বালী। তিনি ছিলেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত সাক্ষী। তিনি এসেছিলেন ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। সাক্ষ্য দিতে আসার সময় ট্রাইব্যুনালের প্রবেশপথে তাকে ডিবি পুলিশের লোকজন ধরে যায়।
সাক্ষী অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল বর্জন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। আইনজীবীদের উপস্থিতি ছাড়াই বিকালে মাওলানা সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক গ্রহণ শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
মাওলানা সাঈদীপক্ষের আইনজীবীরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন সাক্ষীকে   ধরে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় তাকে থাপ্পড় মেরেছে ডিবি পুলিশের লোকজন।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছেন  সাক্ষী অপহরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
যেভাবে সাক্ষী অপহরণ হলো
আইনজীবী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এবং অন্য কয়েকজন আইনজীবী একটি গাড়িতে করে ট্রাইব্যুনালে আসছিলেন। তাদের সাথেই ছিলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী। তাদের বহনকারী গাড়ি ট্রাইব্যুনালের পাশে মাজারসংলগ্ন গেটে আসার পর দায়িত্বরত পুলিশ গাড়ি থামান। পুলিশ সব আইনজীবীদের গাড়ি থেকে নামতে বলেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, হাসানুল বান্না সোহাগ সবাই নেমে আসেন। তাদেরকে হেঁটে ট্রাইব্যুনালে যেতে বলেন  দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম পক্ষাগাতগ্রস্ত হওয়ায় কেবল তাকে গাড়িতে চড়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে যাওয়ার অনুমতি দেন পুলিশ। গাড়িতে থাকা সাক্ষীকে সুখরঞ্জন বালীকেও নেমে আসতে বলেন তারা। সাক্ষী নেমে আসেন।
সাক্ষীসহ অন্য আইনজীবীরা গেটে দাঁড়িয়ে থাকেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ  ভেতরে যান অন্য আইনজীবী এবং সাক্ষীর জন্য গেট পাশ আনতে। (অন্যান্য দিন এ ধরনের কড়াকড়ি ব্যবস্থা থাকে না। সাক্ষী এবং আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা  সরসারি ট্রাইব্যুনালের সামনে চলে যেতে পারতেন। শুধু আজই বাইরের গেটে এভাবে কড়াকড়ি এবং চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।)
এ সময়  আসামিপক্ষের জুনিয়র আইনজীবী হাসানুল বান্না সোহাগ এবং সাক্ষী গেটে  দাঁড়িয়ে থাকেন। তখন চারজন সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি এসে নিজেদের ডিবি পুলিশের লোক পরিচয় দেন। তারা সাক্ষীর নাম জিজ্ঞেস করেন। তারপর  সাক্ষীর দুপাশ থেকে দুজন করে পুলিশ হাত ধরে রাস্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। আইনজীবী এর  প্রতিবাদ করলে  ডিবি সদস্যরা জানান, পাশের কন্ট্রোল রুমে নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর সাক্ষীকে টেনে শিক্ষাভবনের দিককার পুরনো হাইকোর্ট গেট থেকে বের করে দোয়েল চত্বরের দিকে ট্রাইব্যুনালের অপর গেটের দিকে নিয়ে যায়। এসময় ডিবি পুলিশের এক সদস্য মোবাইলে ফোন করলে ট্রাইব্যুনালের ভেতরের চত্বর থেকে একটি পুলিশের  পিকআপ ভ্যান গেটে আসলে সাক্ষীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া  হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী জানান, তাকে গাড়িতে ওঠানোর সময় থাপ্পর দেয়া হয় এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ধাক্কা দেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনাল বর্জন
সকাল সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি অবহিত করেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন কোর্ট শেষে আমরা বিষয়টি দেখব। আসামিপক্ষের প্রধান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন সাক্ষীকে এ অবস্থায় রেখে আমরা বিচারকাজে অংশ নিতে পারি না। এখনই পদক্ষেপ নেয়া হোক।
এরপর ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুকে নির্দেশ দেন অপহরণের বিষয়টি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে এবং তাকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করতে। তিনি আদেশের সাথে সাথে তাকে কোর্ট থেকে বের হয়ে চেম্বারে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার নির্দেশ দেন।
সাড়ে ১২টার দিকে গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে আসেন। তখন অন্য একটি মামলার শুনানি চলছিল। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক সে শুনানি বন্ধ রেখে গোলাম আরিপ টিপুর কাছ থেকে সাক্ষীবিষয়ক পরিস্থিত শোনার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, চলমান আবেদনের শুনানি শেষ হোক। শুনানি শেষ হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যনালের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, আইনের কোনো লঙ্ঘন তারা করেননি। ট্রাইব্যুনালের প্রবেশপথে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন একজনকে ধরে  নিয়ে যাবার বিষয়ে আপনাকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম তার কি হল?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি আজ সেখানে।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, একটা হতে পারে যে কারা এ কাজ যারা করেছে তারা চিনতে পারেনি অথবা ঘটনা ঘটেনি।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আদৌ এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বিচারপতি নিজামুল হক আবারো বলেন, ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে কেউ অপহরণ হয়েছে কিনা?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, কেউ অপহরণ হয়নি।
এর সাথে সাথে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার কয়েকজন আইনজীবী এখানে এসে ঘটনা বলল প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেটা মিথ্যা হয়ে গেল? মিজান সাহেব কি তাহলে মিথ্যা বলেছেন?  তার সাথে থাকা আমাদের অন্য আইনজীবীরা মিথ্যা বলেছেন?  আর চিফ প্রসিকিউটর পুলিশের কথা শুনে বলে দিলেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি?
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, দুইটার পর আমরা বিষয়টি দেখব। এর মধ্যে আমরাও একটু খোঁজখবর  নিয়ে দেখি কি হয়েছে। ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক অনুরোধ করেন বিষয়টি সুরাহা করে তারপর কোর্ট বিরতিতে যাক।
এরই মধ্যে সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যাওয়াসংক্রান্ত মোবাইল ফোনে তোলা ছবি প্রিন্ট করে ট্রাইব্যুনাল কক্ষে প্রবেশ করেন আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির। আসামি পক্ষ ট্রাইব্যুনালের সামনে সে ছবি জমা দেন। তিনজন বিচারপতি তা দেখেন। এরপরও তারা দুপুরের বিরতিতে যাবার প্রস্তুতি নেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিজানুল ইসলাম কিছু  কথা বলেন। এসময় বিচারপতিরা চেয়ার থেকে উঠে যান। চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, এখন আর শোনা হবে না। মিজানুল ইসলাম তীব্র ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাদের কথাও শোনাও হবেনা? তাহলে আমরা এ কোর্টে আসব কিভাবে? আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয় কোর্টরুমে। মিজানুল ইসলাম উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এরই মধ্যে কোর্টরুম ত্যাগ করে চলে যান বিচারপতিরা।
সকালে শুনানি চলাকালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডন্টে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদনী ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনাল বর্জনের পর খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জানি না হতভাগ্য সাক্ষীর ভাগ্যে কি আছে? বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে এখন লোকজন গুম হচ্ছে। আমরা জানি না এ সাক্ষীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। কারণ সরকার পক্ষ তাকে অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করছে। কোর্টে আসার পথে সাক্ষী অপরহণ করা হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?
রাষ্ট্রপক্ষের   অভিযোগ : সাক্ষী অপহরণ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের কাছে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সুখরঞ্জন বালী আসামিপক্ষের কোনো সাক্ষী নয়। আজ সাক্ষীর জন্য নির্ধারিত কোনো তারিখও ছিল না।  সে তাদের কাছে গেল কি করে সেটাই আমাদের প্রশ্ন। সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল বর্জনের অজুহাত হিসেবে এ ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে।
কে এই সুখরঞ্জন বালী : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ১৯৭১ সালের ২ জুন পিরোজপুরের উমেদপুরে হিন্দুপাড়ায় বিশাবালী নামে এক অসুস্থ ব্যক্তিকে নারকেল গাছে সাথে বেঁধে রাজাকাররা হত্যা করে। মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই বিশাবালীর ভাই হলেন সুখরঞ্জন বালী। রাষ্ট্রপক্ষ তাকে সাক্ষী মেনেছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ তাকে হাজির করতে পারেনি।
বিশাবালীকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছিল চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর সুখরঞ্জনবালী নিখোঁজ হয়েছে।
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক। এই ৪৬ জন সাক্ষীর তালিকায় সুখরঞ্জন বালীর নামও ছিল।
সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যেসব কারণ উল্লেখ করেছিল তার মধ্যে রয়েছে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের হুমকির কারণে  অনেকে আত্মগোপন করেছে, কেউ বাড়ি থেকে নিখোঁজ, কেউ গোপনে ভারতে  পালিয়ে গেছে, কেউ অসুস্থ, কারো কারো স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে।
৪৬ জনের সেই তালিকা থেকে ১৫ জনের জবানবন্দী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সেই ১৫ জনের মধ্যেও ছিলেন সুখরঞ্জন বালী।
রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষী সম্পর্কে বলেছিল সে নিখোঁজ সেই সুখরঞ্জন বালী আজ এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে।
রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষী হাজির করতে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল তাকে মিথ্যা এবং প্রতারণা বলে অভিযোগ করেছিল আসামিপক্ষ। আসামি পক্ষ অভিযোগ করে বলেছিল সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের শেখানো মতে মিথ্যা বলতে রাজি নয় বিধায় তাদের হাজির করা হচ্ছে না।
কড়া নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালে : আজ ট্রাইব্যুনালে ছিল কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি যা আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারণত ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে পাশ নিয়ে প্রতিদিন গেট পাশ নিয়ে সাংবাদিক আইনজীবী এফ’ আসামির স্বজনকে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু আজ বাইরের গেটে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা কর্র্মী মোতায়েন ছিল। প্রত্যেকের আইডি কার্ড চেক করে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়। মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করে বলেন, আজ কি কারণে এরকম ব্যবস্থা করা হল তা আমরা জানি না এবং  এরকম যে ব্যবস্থা করা হবে তাও আমাদের জানানো হয়নি। জানালে আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারতাম। তিনি বলেন নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব হল আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা যদি আমাদের হয়রানি করে, আইনজীবীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যায় তাহলে সে নিরাপত্তা কর্মী কিসের জন্য?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ গাড়ি চেক করতেই পারে, আগতদের পরিচয় জানতে চাইতে পারে। কিন্তু তারা আমাদের আইনজীবীদের সাথে আজ যা ব্যবহার করছে তা কোনোমতেই  গ্রহণযোগ্য নয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দুজন আইনজীবীকে এখনো পুলিশ বাইরে আটকে রেখেছে। তাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছে না। বলা হচ্ছে পাশ ছাড়া কারো ভেতরে যাবার অনুমতি নেই।  কিন্তু বাইরে তো  গেট পাশ সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থাই নেই। ভেতরেই যদি প্রবেশ করতে না দেয়া হয় তাহলে সে পাশ সংগ্রহ করবে কিভাবে? তিনি বলেন আমাদের আইনজীবীদের সাথে একরকম এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে আরেক রকম ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ অভিযোগের পর ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিনকে ডেকে পাঠান এবং এ বিষয়ে জানতে চান।
নতুন নিরাপত্তা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরাই এ নির্দেশ দিয়েছি। আমরা ট্রাইব্যুনালকে হাট বানাতে দিতে চাই না। আমরা দেখতে  পাই প্রতিদিন গাউন পরে অনেক লোক এখানে আসেন যারা  কোনো পক্ষের আইনজীবী নন। তারা কিভাবে পাশ নিয়ে এখানে আসেন? আমরা আগেই বলেছি আসামির আইনজীবী ছাড়া শেখার জন্য কেউ কেউ আসবেন। কিন্তু তার একটা মাত্রা তো থাকতে হবে। আমরা আপনাদের জন্য একশ আইনজীবী আসতে দিতে পারি না।
তাজুল ইসলাম  গতকালের ঘটনার জন্য ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন কারণ ট্রাইব্যুনাল বলেছেন তাদের নির্দেশেই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে।
সুখরঞ্জন বালী কার সাক্ষী? সুখরঞ্জন বালী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।  তিনি এবং আরেক সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহাকে আসামিপক্ষের সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। এ বিষয়ে আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন আপনারা যাকে খুশি সাক্ষী হিসেবে আনতে পারেন তবে সমন জারি করা  হবে না।  এরপর গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী  গণেশচন্দ্রকে হাজির করে আসামিপক্ষ  তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে আজ আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল  তাকে আসামিপক্ষের সাক্ষী উল্লেখ না করেননি। মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি এখন  আমাদের  মানে আসামিপক্ষের সাক্ষী। তাকে সে হিসেবে উল্লেখ করা হোক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি আসামি পক্ষের সাক্ষী।
সূত্র : নয়া দিগন্ত

মাওলানা সাঈদীকে চিনে না সরকার পক্ষের স্বাক্ষীরা

মাওলানা সাঈদীকে চিনে না সরকার পক্ষের স্বাক্ষীরা

http://www.facebook.com/photo.php?v=341497219300780&set=vb.318946701549121&type=3&permPage=1

Tuesday, February 26, 2013

মহানবী (সাঃ) ও ইসলামকে অবমাননার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ মসজিদে বিক্ষোভ


সরকার ইসলামী মূল্যবোধ উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে 



নিউ ইয়র্ক  ( শুক্রবার ২২ ফেব্রুয়ারী ১৩  ) মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামকে কটাক্ষকারীদের তৎপরতা বন্ধ এবং মুসল্লি হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটের ২৫ টি মসজিদে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসীরা।

শুক্রবার জুমা’আ নামাজের পর বাংলাদেশী ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা সমবেত হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভে সমম্বয়কারী ওলামা মাশায়েখ পরিষদের আহবায়ক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন জানান, রাসূল (সা.) ও ইসলামকে কটাক্ষ এবং বাংলাদেশে মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ টি মসজিদে বাদ জুমার পর বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, “সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। সরকার বিচারের কথা বললেও সাম্প্রতিক সময়ে বিচারের দাবিদার শাহবাগী নৈরাজ্যবাদীদের নবী-রাসূল (সা) ও ইসলাম বিরোধিতায় তাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে।
স্বঘোষিত নাস্তিকরা আল্লাহ, নবী-রাসূল (সা), সাহাবায়ে কিরাম ও আজওয়াজে মোতাহারাদের সম্পর্কে কটূক্তি করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। কুচক্রীদের ঘৃণ্য অপতৎপরতার প্রতিবাদে বাদ জুমা দেশের সকল ইসলামী দলসমূহ ও ইসলামপ্রিয় জনতা রাজপথে নেমে আসলে সরকারের নির্দেশে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী উলামা-মাশায়েখ, ইসলামপ্রিয় ও দেশপ্রেমী জনতার ওপর হামলা, লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ এবং বৃষ্টিরমত গুলিবর্ষণ করে মুসল্লিদের হত্যা করেছে। এতে প্রমাণ হয় সরকার মুরতাদদের পক্ষ নিয়ে আলেমদের 

উপর হামলা করে হত্যা করেছে।” 


সমাবেশ থেকে ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) কে অবমাননাকারীদের শাস্তি এবং আলেম ওলামাদের হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে সরকারের কার্যকর প্রদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ওলামা মাশায়েখরা। অন্যথায় অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়ার হুমকি দেন তারা।

বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা মসজিদ গুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ ইয়র্ক ব্রুকলীনের বায়তুল মামুর, চার্চ  ম্যাকডোনাল্ড এলাকায় অবস্থিত বাইতুল জান্নাহ জামে মসজিদ, দারুন জান্নাহ জামে মসজিদ, ব্রুকলীন ইসলামিক সেন্টার (বিআইসি) ও নুরুল ইসলাম জামে মসজিদ।
হিউজটন আবু বকর মসজিদ, হিউজটন আলবিন জামে মসজিদ, হিউজটন পেয়ারল্যান্ড মসজিদ, বেটাউন মসজিদ, হিউজটন নর্থশোর মসজিদ। এছাড়াও ফেনসেলভেনিয়া, কানেকটিকাট, লসএঞ্জেল, মিশিগান, দেলোয়ার, নিউজার্সি, বোস্টন, নিউ ইংল্যান্ড ও বাফেলোসহ বিভিন্ন স্টেটে শুক্রবার জুমার পরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এসব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মাওলানা মহিব্বুর রহমান, মাওলানা আশরাফ উল্লাহ, মাওলানা দিদারুল আলম, মাওলানা ইব্রাহিম, ইমরান গাজী, মাওলানা রশিদ আহমেদ, মাওলানা জুনায়েদ কবীর, হাফেজ আব্দুল্লাহ আল আরিফ, মাওলানা সাফায়েতুল্লাহ, হাফেজ মোশাররফ হোসাইন, হাফেজ আমিনুল ইসলাম ও মাওলানা আলমগীর হোসাইন প্রমুখ।
- See more at: http://www.natunbarta.com/expatriate/2013/02/23/12975/4daa1e9a278534675496557813d8a352#sthash.yvxV4RNI.dpuf

৯টি গণমাধ্যমের অনলাইন জরিপ :৭৯ শতাংশ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে



সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যম তাদের অনলাইনে এ বিষয়ে পাঠকদের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ফলে দেখা যায় ৭৯ শতাংশ পাঠক জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিভিন্ন মহল থেকে যখন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং তাদের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে তখন জামায়াত-শিবির বিরোধী হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যমের জরিপেই জনমতের পুরো ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের অনলাইন সংস্করণে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘আইন প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ এখন গণদাবি। আপনার মত কী?’ জবাবে ৮৯.৯৫ শতাংশ পাঠক জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ভোট দেন । অন্য দিকে মাত্র ৮.৬৮ শতাংশ পাঠক জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে তাদের মত দেন। নীরব থাকেন ১.৩৭ শতাংশ ।
দৈনিক প্রথম আলো ১৫ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা বিষয়ে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে সরকার সম হবে কি?’
এর উত্তরে ৭২.৭৩ শতাংশ পাঠক বিপক্ষে ভোট দেন এবং ২৪.৮১ শতাংশ পাঠক পক্ষে মত দেন। ২.৪৬ শতাংশ পাঠক মন্তব্য নেই বলে জবাব দেন। প্রথম আলোর ওই দিনের অনলাইন জরিপে অংশ নেন ৩৭০৪ জন।
বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশে রাজনীতি করার। সারা দেশে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি ওঠার প্রোপটে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আপনি কি একমত?’ রাত ৮:১৮ মিনিট পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ ভোটার জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে এবং ৩৫ শতাংশ ভোটার নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দেন।
এ সময় জরিপে ভোটার সংখ্যা উল্লেখ ছিল ১৩ হাজার ৩৩৭ জন।
কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর ৯টার দিকে প্রকাশিত ফলে দেখানো হয় জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ৬৫ শতাংশ এর স্থলে মাত্র ১০ শতাংশ ভোটার মত দিয়েছেন। অন্য দিকে জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে কয়েক মিনিট আগে উল্লিখিত ৩৫ শতাংশ এর স্থলে ৯০ শতাংশ ভোটার দেখানো হয়। এ সময় মোট ভোটারের সংখ্যা উল্লেখ ছিল ১৯ হাজার ৭৩২ জন। এ নিয়ে পাঠক বিডিনিউজের বিরুদ্ধে দ্ইু ধরনের তথ্যের স্ক্রিন শর্ট তুলে ধরে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ধরেন।
বিডিনিউজ কর্তৃপ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলে, ‘একই আইপি থেকে অবিরত ভোট দেয়ার ঘটনা চিহ্নিত করার পর একই আইপি থেকে অতিরিক্ত ভোট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’ অথচ বাস্তবতা হলো বিডিনিউজে একই আইপি থেকে একবারের অধিক ভোট দেয়া যায় না। যা যে কেউ পরীা দেখতে পারেন। তার মানে ফলাফল তাদের পছন্দমতো না হওয়ার কারণে তারা ভোট বাতিল করে ফলাফলে ব্যাপক পরিবর্তন করেছে।
বাংলানিউজে ৬ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘শাহবাগের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন করেন কি না?’ ওই দিন বিকেল ৫টা ৮ মিনিটের সময় ফলাফল ছিল শাহবাগের আন্দোলনের পক্ষে ৩ হাজার ৮৩৫ জন এবং বিপক্ষে ১৪ হাজার ৬৬৮ জন। এর মাত্র ১২ মিনিট পরে ৫টা ২০ মিনিটের সময় ফলাফল দেখানো হয় শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষে ১৫ হাজার ৪৯২ এবং বিপক্ষে মাত্র ৩৩৩ । নিজেদের ইচ্ছামতো এ ধরনের ফলাফল পরিবর্তন নিয়েও জালিয়াতির অভিযোগসহ বাংলানিউজের বিরুদ্ধে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন পাঠক। তাদের জালিয়াতি নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের তীব্র সমালোচনার পর বাংলানিউজ পুরো জরিপটি সরিয়ে ফেলে। তবে অনেকের কাছে এখনো রয়ে গেছে জরিপের স্ক্রিন শট। এর পর থেকে বাংলানিউজ আর কোনো জরিপ করেনি।
দৈনিক ইত্তেফাকে ২১ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা শ্রেয়Ñ ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সাথে আপনি কি একমত?’ উত্তরে ৬০.০১ শতাংশ হ্যাঁ এবং ৩৯.৯ শতাংশ না বলে জবাব দেন। কিন্তু পরদিন তাদের প্রিন্ট সংস্করণে ফলাফল দেখানো হয় ৪০ শতাংশ হ্যাঁ এবং ৫৯ শতাংশ না। ইত্তেফাক ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের জনমত জরিপের ফলাফল প্রিন্ট সংস্করণে পাল্টে দেয়। এ নিয়েও পাঠকমহলে নানা সমালোচনা চলে।
দৈনিক যায়যায়দিনে গত ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের সমর্থন করেন কি না?’ জবাবে ১৮ শতাংশ হ্যাঁ এবং ৮২ শতাংশ পাঠক না সূচক উত্তর দেন।
দৈনিক সমকালে গত ১৮ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সাথে কোনো ধরনের সংলাপ নয়’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কি সমর্থন করেন?’ জবাবে ৬ শতাংশ হ্যাঁ এবং ৯৪ শতাংশ না সূচক উত্তর দেন।
দৈনিক ইনকিলাবে গত ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াত-শিবির ধরার নামে সারা দেশে গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে তা বন্ধ হওয়া উচিত কি না?’ জবাবে ৮১.২৭ শতাংশ হ্যাঁ এবং ১৭.৭৪ শতাংশ না সূচক উত্তর দেন।
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘সরকারি দল (আওয়ামী লীগ) জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে তা কি সমর্থন করেন?’ জবাবে জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ৯১ শতাংশ এবং মাত্র ৯ শতাংশ নিষিদ্ধের পক্ষে মত দেন।
দৈনিক ইত্তেফাক পরিচালিত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনলাইন জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘ব্লগার রাজীব হত্যায় জামায়াত-শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে জামায়াত। তাদের এই দাবি সমর্থন করেন?’
এর জবাবে জামায়াতের দাবির পক্ষে ভোট দেন ৫৮.৪ শতাংশ এবং বিপক্ষে ভোট দেন ৪১.৫ শতাংশ।
দৈনিক ইত্তেফাক পরদিন তাদের প্রিন্ট সংস্করণে অনলাইন জরিপের যে ফলাফল প্রকাশ করে তাতে ভিন্ন তথ্য দেখা যায়। যেমন ওই দিন রাতে পরিচালিত জরিপে অনলাইনে ৫৮.৪ শতাংশ জামায়াতের পক্ষে ভোট দিয়েছে বলে দেখা যায়। কিন্তু প্রিন্ট সংস্করণে তারা ফলাফল পরিবর্তন করে পরদিন উল্লেখ করে জামায়াতের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৫ শতাংশ । অন্য দিকে বিপক্ষে ৪১.৫ শতাংশ এর স্থলে উল্লেখ করে ৬৫ শতাংশ। অনলাইন সংস্করণ এবং প্রিন্ট সংস্করণে তথ্যের এ গরমিল এখনো বিদ্যমান রয়েছে।
ইত্তেফক অনলাইন জরিপে ৭৭৯৮ জন ভোটার অংশ নেন।
সূত্র : দৈনিক নয়াদিগন্ত

আওয়ামী লীগের বাধা উপেক্ষা করে নিউইয়র্কে ওলামা মাশায়েখদের সমাবেশ


আল্লাহ-রাসূল (সাঃ) ও ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তিকারী ব্লগারদের কঠোর শাস্তির দাবি

নিউইয়র্ক (২৪ ফেব্রুয়ারী, রোববার)  : মহান আল্লাহ-রাসূল (সাঃ), ইসলাম সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কটূক্তিকারী ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে সমাবেশ ও হরতালের ঘটনায় নিরীহ মুসলমানদের হত্যা এবং নাস্তিক ব্লগারদের বিচার দাবিতে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ওলামা মাশায়েখরা। এ সময়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী সমাবেশে বিশৃক্মখলার সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। ওলামা-মাশায়েখদের তোপের মুখে এবং পুলিশের উপস্থিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সমাবেশ স্থল ত্যাগ করে। পরে পুলিশের প্রিজেন্ট ৬৬ কর্মকর্তাদের পরামর্শে সুগন্ধা রেস্টেুরেন্টের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আলেমরা। বিক্ষোভে হাজার হাজার ধর্মপ্রমাণ মুসলমান যোগ দেয়। গত রোববার নিউইয়র্কের ব্রুকলীনের সুগন্ধা রেস্টুরেন্টের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বায়তুল জান্নাহ মসজিদের অধ্যাপক মাওলানা মুহিববুর রহমানের সভাতিত্বে বক্তব্য দেন শেখ ইসমাঈল খান, হাফেজ রফিকুল ইসলাম, মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা জাকারিয়া মাহমুদ, মুফতী খালেদ, মুফতী রুহুল আমিন, মাওলানা আব্দুর রহমান খান ও আবু সামীহহা সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশে মাওলানা মুহিববুর রহমান বলেন, কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী মহান আল্লাহ-রাসূল (সাঃ) ও ইসলামকে অস্বীকারকারীরা মুরতাদ ও নাস্তিক। এ ধরনের মুরতাদদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মুসলমান হিসেবে নাস্তিক মুরতাদদের শাস্তি দেয়াও তার ঈমানী দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এরপরও মুরতাদদের শাস্তি না দিয়ে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করলো আমরা ধরে নিবো প্রধানমন্ত্রীও মুরতাদদের পক্ষের শক্তি। সমাবেশে ও হরতালে নিরীহ মুসলমানদের হত্যার বিচার দাবি করে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার দাবি করেছেন মাওলানা মহিব।
পাবনা ও মানিকগঞ্জে পুলিশের গুলীতে ৭ জন মুসল্লি নিহত ও শতাধিক লোক গুলীবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এভাবে ইসলামের জন্য আন্দোলনরত লোকদের গুলী করে হত্যা করা হবে তা কল্পনা করা যায় না। সরকার নাস্তিকদের খুশি করতে ও ইসলামবিরোধী শক্তিকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়ে আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিদের হত্যা করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে।


বক্তারা নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান এবং খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খানসহ এই আন্দোলনে গ্রেফতারকৃত সকলের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি করেন। মাওলানাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুফতী মাওলানা আব্দুল মালেক, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, হাফেজ আব্দুল্লাহ আল আরিফ, মাহাফেজ আশরাফ উল্লাহ, মাওলানা আব্দুল করিম, মাওলানা নঈম উদ্দিন, মাওলানা মোদাচ্ছের, মাওলানা দিদারুল ইসলাম, শিহাব উদ্দিন, মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা ইব্রাহিম, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাকসুদ, মাওলানা জুনায়েদ, মাওলানা সাইফুল্লা বিলাল, মাওলানা শহিদ উল্লাহ, মাওলানা হাফেজ সুফিয়ান, মাওলানা আলমগীর ও মাওলানা আব্দুল কাদের প্রমুখ। এছাড়াও কনকনে শীত উপেক্ষা করে হাজার হাজার প্রবাসী বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত হয়।

Monday, February 18, 2013

আযাদের ফাঁসির আদেশে নিউ ইয়র্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া


Tue, 22 Jan, 2013 01:23:38 PM
নিউ ইয়র্ক : মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির রায়ে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে প্রবাসীরা পক্ষে-বিপক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
 
বিচারের নামে আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে ‘প্রহসন’ করা হয়েছে অভিযোগ করে  এর প্রতিবাদ জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক যুবকমান্ড। সোমবার রাতে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ৬টা) নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিবাদ সভা। প্রতিবাদ সভা শেষে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের কাবাব কিংয়ের সামনে সংগঠনটি মানববন্ধন করে। 
 
প্রতিবাদ সভায় যুক্তরাষ্ট্র যুবকমান্ডের সভাপতি আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন হিউম্যানিটি ক্লাবের অব আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রশীদ আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফখলরুল ইসলাম, শফিকুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আরাফাত রহমান, কুতুব উদ্দিন ও খবীরুজ্জামান। সভা পরিচালনা করেন মনজুর আহমদ।
 
মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির রায় প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, এই রায় আওয়ামী লীগের তথাকথিত ট্রাইব্যুনালের সাজানো নাটক। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল এবং দেশের বরণ্য আলেমদের নাজেহাল করার লক্ষ্যে সরকার সরকার এ রায় দিয়েছে। দেশে বিদেশে সরকারের প্রহসনের এই ট্রাইব্যুনালকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতি আওয়ামী ট্রাইব্যুনালের মিথ্যা এ রায় মানে না বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
 
নেতারা বলেন, বিশ্বের প্রভাবশালী সম্প্রচার মাধ্যম বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও এপি এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ট্রাইব্যুনালকে ‘বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল’ বলে মন্তব্য করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ আদালতকে জাতিসংঘও স্বীকৃতি দেয়নি। সরকার মনগড়া আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে দলীয় কর্মীদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শুরু থেকেই প্রতারণা করে আসছেন।
 
নেতৃবৃন্দ ট্রাইব্যুনালের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে সরকার এক তরফা রায় দিয়েছে।
 
তারা  সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসনের বিচার বন্ধ করুন না হলে দেশে ও প্রবাসে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গড়ে তোলা হবে তখন পালানোর পথ পাওয়া যাবে না। এ সময় তারা মঙ্গলবার ওজনপার্কে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন।
 
এদিকে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের প্রত্যাখান করে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়া ও দেলোয়ার রাজ্যেও প্রতিবাদ সভা করেছে প্রবাসীরা। এসব প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন মোহাম্মদ রশিদ সালিম, মোহাম্মদ আলমগীর চৌধূরী, আটিকুর রহমান, সায়েদ নজরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, খুরশীদ আলম ও বখতিয়ার রানা প্রমুখ।
 
অন্যদিকে, আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নিউ ইয়র্কে আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা আনন্দ-উল্লাস এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারের সামনের এ আনন্দ উল্লাসে নেতাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা মসুদুল হাসান, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ এবং সেক্রেটারি ফরিদ আরশ, শ্রমিক লীগ সেক্রেটারি আজিজুল হক খোকন প্রমুখ।
 
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এ রায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দীর্ঘ ৪১ বছর পর হলেও একাত্তরের ঘাতকদের বিচার বাংলার মাটিতে সম্পন্ন হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার পথ সুগম হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি অবশিষ্ট যুদ্ধাপরাধীদেরও দ্রুত বিচারের দাবি জানান।
 
এদিকে মাওলানা আযাদের ফাঁসির রায়ে যুক্তরাষ্ট্র উদীচী আনন্দ প্রকাশ করছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী রায়ের জন্য বিচারকমণ্ডলীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে দেরিতে হলেও সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের সূচনাকে অভিনন্দিত করছে। অবিলম্বে তাকে খুঁজে বের করে রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
 
এছাড়াও মানবতাবিরোধী প্রথম রায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগ, নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ ও স্টেট আওয়ামী লীগ।
 সূত্র : http://www.natunbarta.com/expatriate/2013/01/22/8019/0dafb594f1a069859123150362e9d132

যুবলীগের হামলায় নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ


Fri, 01 Feb, 2013 11:18:33 AM


নিউ ইয়র্ক: জামায়াতে ইসলামীর ডাকে হরতাল চলাকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় চারজন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে নিউ ইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কোয়ালিশন অব বাংলাদেশ আমেরিকা।
 
বৃহস্পতিবার বেলা সকাল ১১ টায় ( বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায়) নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের কনস্যুলেট অফিসের সামনে তিন শতাধিক প্রবাসীর উপস্থিতিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
 
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর কাজী মোহাম্মদ ইসমাঈল, রাইটার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন, ওলামা পরিষদের নেতা মাওলানা নজরুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ আবু ওবায়দা, অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম, মাওলানা রশিদ আহমেদ, হিউম্যানিটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মাওলানা রশিদ আহমেদ, মাওলানা শিহাব উদ্দিন, মহিলা কল্যাণ সংস্থার নেত্রী শাহানা মাসুম ও ইসমত আর প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশ পরিচালন করেন প্রগ্রেসিভ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব।  
 
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নেমেছে। বাংলাদেশ থেকে ইসলাম চিরতরে নির্মূল করার জন্য ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নাটক সাজিয়ে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীসহ আলেমদের ফাঁসিতে ঝুলানোর ষড়যন্ত্র করছে। 
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করেছেন। একইসঙ্গে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ শিবির দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দিয়ে নিজেকে সরকারের দালাল হিসেবে প্রমাণ করেছেন।
 
হরতালে বগুড়ায় চার জামায়াত-শিবির নেতা কর্মীর হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সহযোগিতায় জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। এজন্য হুকুমের আসামি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীকে গ্রেফতার দাবি করেন বক্তারা।  
  সূত্র: http://www.natunbarta.com/expatriate/2013/02/01/9419/6a3c2642716eabb46f95316303e75396

নিউ ইর্য়কে সাঈদীর মুক্তির দাবিতে সভা


Thu, 31 Jan, 2013 02:16:29 PM

নিউ ইয়র্ক :  জাতীয় যুব কমান্ড যুক্তরাষ্ট্র শাখা আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় খ্যাতিমান ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার নাটক এবং মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় প্রত্যাখ্যানের দাবি জানানো হয়েছে।
ঘোষিত রায়কে পূর্বনির্ধারিত উল্লেখ করে নেতারা বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল এবং দেশের  বরেণ্য আলেমদের নাজেহাল করার উদ্দেশ্যেই সরকার তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে মূলত ভারতের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন শুরু করেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার সকালে) নিউ ইয়র্কের ওজনপার্কের বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় যুব কমান্ড যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি চৌধুরী আলম, যুক্তরাষ্ট্র বিএপির সহ-সভাপতি ও নিউ ইর্য়ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বাবর উদ্দিন, হিউম্যানিটি ক্লাব অফ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মাওলানা রশীদ আহমদ, শিক্ষাবিদ আবু ওবায়দা, ক্রীড়া সংগঠক মনির হোসেন, মাওলানা নজরুল ইসলাম, রেজাউল করিম সিদ্দিকী, সাবেক ছাত্রনেতা এমদাদ উল্লাহ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট খসরুজ্জামান খসরু, আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।

বক্তাগণ সরকারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার বন্ধ না করা হলে দেশে ও প্রবাসে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সূত্র : http://www.natunbarta.com/expatriate/2013/01/31/9315/913925b39d063fc103fb9711fcdcf1db