Wednesday, September 18, 2013

নিউইয়র্কে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত



জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাসিঁর রায়ের 
 প্রতিবাদে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত




নিউ ইয়র্ক: জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাসিঁর রায়ের প্রতিবাদে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে। বিক্ষোভের পূর্বে কাদের মোল্লার রায়ের প্রতিবাদ ও জামায়াত নেতাদের মুক্তি জানিয়ে নিউ ইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের মাধ্যমে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি।   
বিক্ষোভে বক্তারা বলেন, সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতৃবৃন্দুকে বিচার বিভাগের মাধ্যমে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফাসিঁর রায় দিয়েছে আদালত। স্কাইপি কেলেংকারীর পর মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে ঘটিত ট্রাইবুনালের বিচারিক কার্যক্রম স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। এরপরও প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইবুনালের দেয়া যাবতজীবন  কারাদন্ড আপীল বিভাগ নজিরবিহীনভাবে ফাসিঁর আদেশ দিয়েছেন। 
তারা বলেন, বিচারিক আদালতে যেখানে মুত্যুদন্ড দেয়নি সেখানে প্রথম বারের মতো সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদন্ড প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন। 
তারা বলেন, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে সরকার। একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে, তার মৃত্যুর প্রশ্ন সেখানে তিনি রিভিউ করতে পারবেন না এটা অকল্পনীয়। রিভিউ করা কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার। অথচ শাহবাগের ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই প্রতিধ্বনির ভিত্তিতে আইন সংশোধন বিচার শেষ হওয়ার পর আইন সংশোধন করে আপিলের সুযোগ পেয়েছে সরকার।  
বক্তারা আরো বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ উৎখাতের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। সরকার গণগ্রেফতার, গণহত্যা ও অত্যাচার-নিপীড়নের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বক্তারা বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীর ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কূটকৌশল অবলম্বন করেছে। সরকারের জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, গণহত্যা, গণগ্রেফতার বন্ধ ও আব্দুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের দাবি জানান বক্তারা। 
বিক্ষোভে আব্দুল খালেকের সভাপেিত্ব এবং কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার, রাইটার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন, হিউম্যানিটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মাওলানা রশিদ আহমদ, মঞ্জুর আহমেদ প্রমুখ। 

Friday, May 10, 2013


কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ের প্রতিবাদে নিউ ইর্য়কে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ 
   

নিউ ইর্য়ক, ৯ মে: মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে নিউইর্য়কে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ‘কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশ আমেরিকানস এসোসিয়েশন’(কোব্বা)। 

৯ মে বৃহস্পতিবার নিউইর্য়কের ব্রুকলীন ম্যাকডোনাল্ড ও চার্চ এভিনিউতে  অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলটি প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় গ্রীন হাউজ রেষ্টুরেন্টে সমাবেশ করে সংগঠনটি।  
বক্তারা আরো বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর এই মামলাটির রায় দিয়েছেন আদালত। ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ছিল একজন তরুণ। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যুদ্ধপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের যত বিচার হয়েছে তার কোথাও এরকম একজন তরুণকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। একারণে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাসিঁর আদেশ পর্যালোচনা করলে সহজেই বুঝা যায় আদালত সরকারের ফরমায়েশী রায় দিয়েছেন।
তারা বলেন, প্রসিকিউশন পক্ষের ১৮ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়া  হলেও আসামীপক্ষের সাক্ষী সংখ্যা পাঁচজনে বেঁধে দেয়া হয়। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের অনেক সাক্ষী ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ হয়েছে। এই ধরণের বিতর্কিত রায় দিয়ে আদালতের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংশ করে দেয়া হচ্ছে। সরকার দেশের মানুষ ও বিচার বিভাগকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 
বক্তারা বলেন, তদন্তকারী সংস্থা ও প্রসিকিউশনের যোগসাজশে যে মিথ্যা কল্পকাহিনী রচিত হয়েছে  আর সেখানে ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা সেখানে হার মানিয়েছেন। 
তারা আরো বলেন, স্কাইপ কেলেংকারীর মাধ্যমে ট্রাইবুনালে চলা প্রহসনের বিচার জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ট্রাইবুনালের প্রধান বিচারকের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। ট্রাইবুনালে বিচারের নামে চলা প্রহসন দেখে বিশ্বব্যাপী এর গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। স্কাইপ কেলেংকারীর মাধ্যমে জণগনের কাছে প্রমাণ হয়েগেছে, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা, মাওলানা সাঈদী ও কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় সাজানো। বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ধর্ম ও ইসলামি চিন্তাবিদদের হত্যা করার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার গঠিত ট্রাইবুনাল গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। 
বক্তারা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় বাতিল করে তাকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানান।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. শওকত আলী, প্রগ্রেসিভ ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক কাজী মুহাম্মদ ইসমাঈল, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট প্রগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, ব্যাবসায়ী আমিনুর রসুল জামশেদ, রাজনীতিবিদ ইলিয়াস আহমেদ মাষ্টার, হেলাল উদ্দিন, আবুল হাশেম শাহাদাৎ, রফিকুল মাওলা, ওলামা ফেডারেশনের নেতা মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা সিহাবুদ্দিন, মাওলানা নায়েব আলী, মাওলানা দিদারুল আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাইফুল্লাহ বেলাল। শুরতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা জুনায়েদ আহমেদ।

Thursday, May 9, 2013

গণহত্যায় শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় কোরান খতম: ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রে দোয়া দিবস


     হত্যাযজ্ঞ শেষে লাশগুলোকে তাৎক্ষণিক
   কেমিক্যাল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়


 নিউ ইয়র্ক: ঢাকার মতিঝিলে গণহত্যায় শহীদ হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের রূহের মাগফেরাত কামনায় কোরান খতম ও দোয়া মুনজাতের আয়োজন করেছে নিউ ইয়র্কের ইমাম ও উলামাগণ। 
৮ মে বুধবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন উডসাইডের ফাতেমা মসজিদে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে আলেমরা ১০ মে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোতে দোয়া দিবস ঘোষণা করা হয়। 



মুনাজাতের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মাওলানা অধ্যাপক মহিবুর রহমান বলেন, ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে এতো বেশি আলেম ও ইসলাম প্রিয় মানুষকে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গভীর রাতে ঘুমন্ত ও জিকিররত ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর হত্যা চালিয়ে প্রমাণ সরকার প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মকে মুছে দিতে চায়। 
গণহত্যা তদন্তে জাতিসংঘ ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কোন নিরাপত্ত্বা নেই। প্রতিনিয়ত সরকারী বাহিনী আলেম উলামা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে।



গণহত্যায় একজন প্রত্যক্ষদর্শী আলেমের বরাত দিয়ে মাওলানা আজির উদ্দিন বলেন, গভীর রাতে খোলা আকাশে ঘুমন্ত মানুষের উপর গায়ের উপর সাজোয়া যান উঠিয়ে দিয়ে এবং ব্রাশফায়ার করে গণহত্যা চালিয়েছে সরকার। হত্যাযজ্ঞ শেষে লাশগুলোকে তাৎক্ষণিক কেমিক্যাল দিয়ে পুড়িয়ে সকাল হওয়ার আগে ক্লিন করা হয়। গণহত্যার প্রমাণ মুছে ফেলতে লাশের পোড়া অংশগুলোকে ট্রাক করে গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। 
অনুষ্ঠানে মাওলানা মুফতী রুহুল আমীনের পরিচালনায় আলেমদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, মুফতী আব্দুল মালেক, মাওলানা ইয়ামিন, ইমাম জাকারিযা মাহমুদ, মাওলানা রফিক আহমেদ, হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম, হাফিজ রফিকুল ইসলাম, মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, মাওলানা আবু সুফিযান, মাওলানা শাহজাহান, মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা রশিদ আহমদ ও মাওলানা ইউসুফ ও মাওলানা আনাসসহ নিউ ইযর্কের শতাধিক শীর্ষ আলেম। 

গণহত্যার বিচারে জাতিসংঘ মহাসচিবের নিকট স্মারকলিপি ও বিক্ষোভ সমাবেশ





হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের গণহত্যার
বিচারে জাতিসংঘ মহাসচিবের নিকট
স্মারকলিপি ও বিক্ষোভ সমাবেশ


নিউ ইয়র্ক: ঢাকার মতিঝিল শাফলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে গণহত্যার বিচার দাবীতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশী আমেরিকানস এসোসিয়েশন। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। 




৮ মে বুধবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ শেষে গণহত্যার তদন্ত ও বিচার দাবীতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয়। 



বিক্ষোভ সমাবেশে আব্দুল্লাহ আল আরিফের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আউওয়াল, মাওলানা জাকারিয়া মাহমুদ, আসসফা মুসলিম সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, সাংবাদিক শহিদুল্লাহ কায়সার, এডভোকেট আবুল হাসেম ও মাওলানা রশিদ আহমদ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মাহবুবুর রহমান।  



সমাবেশে বক্তারা বলেন, আলেম উলামা ও ধর্মপ্রমাণ সাধারণ মুসলমানদের গণহত্যার মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে দেশ থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে চায় সরকার। গভীর রাতে যখন হেফাজতে ইসলামের ঘুমন্ত ও জিকিররত নেতাকর্মীদের উপর সরকার এ নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।  





বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতার সাড়ে চার বছরে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ ৩ টি গণহত্যার মাধ্যমে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব গণহত্যা তদন্তের মাধ্যমে বিচার করার জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান বক্তারা। 





বক্তারা অভিযোগ করেন, গণহত্যাকে আড়াল করার জন্য দিগন্ত, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে মতিঝিল গণহত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার সমর্থিত মিডিয়াগুলো হেফাজতে ইসলাম নিয়ে কোরান পোড়ানো ও লুটপাটের মতো নির্লিপ্ত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। 
বক্তারা আরো বলেন, সরকার গণজাগরণ মঞ্চ নামে শাহবাগে মাসের পর মাস নাস্তিকদের লালন পালন করলো, আর মতিঝিলে নবী প্রেমিক আলেমদের এক রাতও সুযোগ না দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।  
বক্তারা বলেন, শাফলা চত্বরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে প্রমাণ করেছে যুদ্ধাপরাধের বিচারে নামে বাংলাদেশ থেকে ইসলামের নাম নেশানা মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। 
তারা আরো বলেন, শাহাবাগে ৩ মাস সরকারী সহযোগিতায় নাস্তিকরা তথকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নামে গান বাজনা করেছিল, তখন জনগণের সমস্যা হয়নি। অথচ শাফলা 
চত্বরে আলেম উলামাদের একরাতও থাকতে না দিয়ে ইতিহাসের জগন্যতম হত্যযজ্ঞ চালিয়েছে সরকার। এভাবে একটার পর একটা গণহত্যার ঘটনা ইতিহাস থেকে আওয়ামী লীগকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে। 



প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য বক্তারা বলেন, গণহত্যা বন্ধ করে সময় থাকতে রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা স্বীকার করে মন্ত্রী সভা নিয়ে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ ক্ষমতা থেকে আপনাদের টেনেহেচড়ে নামাবে। 



Tuesday, May 7, 2013

ইসলাম পন্থিদের গণহত্যায় নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ






           




               ইসলাম পন্থিদের গণহত্যায় নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ
    বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে জাতিসংঘসহ
    বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদ্যোগ নেয়ার আহবান  

নিউ ইয়র্ক: বাংলাদেশে আলেম উলামা ও সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মাজলিসুল উলামা ইউএসএ। অন্যদিকে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধের দাবী জানিয়ে প্রতিবাদী র‌্যালী করেছে বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরাম। এছাড়াও রাতের অন্ধকারে মতিঝিল শাফলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে আসসাফা ইসলামিক সেন্টার নিউ ইয়র্ক। 
মাজলিসুল উলামা ইউএসএ: 
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে নিরস্ত্র আলেম উলামা ও সাধারণ মানুষকে হত্যার প্রতিবাদে সভা করেছে নিউ ইয়র্কের ইমাম ও আলেমদের সংগঠন মাজলিসুল উলামা। ৬ মে রোববার নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের আসসাফা মসজিদে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। সভা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা দাবী মেনে নিয়ে সবধরণের হত্যাকান্ড বন্ধ করে দেশে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনার দাবী জানান আলেমরা। 




সভায় নিউ ইয়র্কের শীর্ষ আলেমরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে দেয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশী শক্তির ইন্ধনে মতিঝিল শাফলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে আলেম উলামা ও সাধারণ মানুষকে গণহত্যা করেছে সরকার। বাংলাদেশে নাস্তিক বিরোধী চলমান আন্দোলনে ৫ মে দিবাগত রাত মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে প্রমাণ করেছে সরকার ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। 
হেফাজতে ইসলামের অসংখ্য নেতা কর্মী গুম, হত্যা ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে আলেমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনকে তদন্তের আহবান জানান। সরকারে চলমান গণহত্যা বন্ধে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। প্রতিবাদ সভা থেকে সরকারের মন্ত্রী সভার পদত্যাগ দাবী করা হয়। 
মাজলিসুল উলামার প্রতিবাদ সভায় অধ্যাপক মাওলানা মহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন, লানা মুফতী রুহুল আমীন, মাওলানা রফিক আহমেদ, ইমাম আব্দুর রহমান, হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম, হাফিজ রফিকুল ইসলাম, মাওলানা ইমাম আজিরুদ্দিন, মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, মাওলানা আবু সুফিয়ান, মাওলানা আব্দুল্লাহ কামাল, মাওলানা আনাসসহ নিউ ইয়র্কের অর্ধশত শীর্ষ আলেম। সভা পরিচালনা করেন ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ। 
বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরাম: 
হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের গণহত্যা নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদে ৫ম রোববার নিউইয়র্কের ব্রুকলীন ম্যাকডোনান্ড এভিনিউ’তে প্রতিবাদী র‌্যালী ও সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরাম (বাপফ)।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ র‌্যলিটি ব্রুকলীনের সেকেন্ড এভিনিউ থেকে শুরু করে ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ, দাহিল রোড, চার্চ এভিনিউ প্রদক্ষিণ করে। পরে ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম, সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক কাজী মুহাম্মদ ইসমাঈল, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা ইব্রাহীম খলিল, মাওলানা সিহাবুদ্দিন, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার, নোয়াব আলী প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সাইফুল্লাহ বেলাল। 
সভায় বক্তারা বলেন, সরকার কর্তৃক আইনশৃংখলা রক্ষাকারীদের হীন দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে নবী করিম (সা:) প্রেমিক ধর্ম প্রাণ মুসলমানদেরকে গণহত্যা চালাচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আইন শৃংখলাবাহিনীর চদ্মাবরণে ভারতীয় বাহিনী নিবির্চারে গুলি চালায়ে শতশত মানুষকে হত্যা করেছে। ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে হামলায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ভয়াভহ আক্রমন ও গুলি চালানোর পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদেরও অস্ত্র হাতে দেখাগেছে। 
বাংলাদেশে চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংগঠনটি। এছাড়াও বাংলাদেশের মিডিয়ার প্রতি সরকারে নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবী জানায় সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকে আড়াল করার জন্য সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত মিডিয়া দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। 




আসসাফা ইসলামিক সেন্টার:
ইসলাম, আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) কে কটাক্ষকারী বিচার ও হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনকারীদের রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়ে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আসসাফা ইসলামিক সেন্টার নিউ ইয়র্কের সভাপতি ডা: নুরুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুফতী লুৎপুর রহমান ক্বাসিমী। তারা বাংলাদেশে ইসলাম পন্থিদের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদাযের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন। 
বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম পন্থিদের উপর ইতিহাসের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে সরকার। তারা বলেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর মুসলিম দেশকে ধ্বংশ করার জন্য অশুভ শক্তির ইঙ্গিতে ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) এর নামে কুৎসা রটিয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ মানুষের ধর্মীয় মুল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়ন ও নবী প্রেমিক লোকদের হত্যা বন্ধের আহাবান জানান তারা।  

Monday, May 6, 2013

যেভাবে মতিঝিলে গণহত্যা


যেভাবে মতিঝিলে গণহত্যা 



আমার পেশাগত জীবনের দীর্ঘ ১৪ বছরের মধ্য গতরাতের মতো এতো কঠিন পরিস্থিথির মুখে কোনদিন পড়িনি। জীবনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একাধিকবার ভয়ানক দুষ্কৃতিকারীদের সাথে গোলাগুলি করেছি । কিন্তু একবারও হাত কাঁপেনি। একবারও মনের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করেনি । কিন্তু গতরাতের অবস্থা ছিল পুরোটা ভিন্ন ।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় মানুষ থেকে কুকুরে পরিনত হতে হয় । কারন পশু না হলে আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করতে সবসময় পারবেন না । দায়িত্ব পালন ঠিক মতো না হলে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে । ঠিক যেমনটি হতে হয়েছিল গতকাল । একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম যা সারা জীবন হয়তো আমাকে তাড়া করবে যার নাম ‘অপারেশন ফ্রিডম ‘, অপারেশন ফ্রিডমের একটা মোহড়া গতকালেই আমরা দিয়ে দিলাম যা সবাইকে সংক্ষেপে একটু বলি ।
বিকালে একদিকে হেফাজত কর্মীদের দোকানপাট, রাস্তাঘাটে লাগানো আগুন নিভাচ্ছিলাম অন্যদিকে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থেকে যে কোন মূল্য সরিয়ে দেয়ার জন্য ভয়াবহ আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । রাত ২.৩০ মিনিট । একটা যুদ্ধের প্রস্তুতির মতোই ভারী অস্রসস্র নিয়ে আমরা সংখ্যায় তিন বাহিনী মিলে ১০/১১ হাজার মানুষ পলটন থেকে মতিঝিলে যাওয়া শুরু করলাম । পল্টনে দেখা মিললো বিএনপি, ছাত্রদলের শো দুয়েক কর্মীর। যাদের সবাইকে পল্টন ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো । আমাদের রণসাজ দেখে ঐ শো দুয়েক কর্মী কোনরকম বাৎচিত করার সাহস পেলো না। মতিঝিলে প্রবেশের তিনটি পথ বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র টিকাটুলি যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখলাম । হেফাজতের মঞ্চ থেকে মাইকে তখন ‘আল্লাহ ,আল্লাহ ‘ জিকির শোনা যাচ্ছিল । অপারেশন কমান্ডার হ্যান্ড মাইকে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলেন । কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে সরে না যাওয়ার ঘোষণা আসলো। এরপর আর কোন সুযোগ না দিয়ে তিনদিক থেকে ঘিরে রাখা সবাই একসাথে চোখ বন্ধ করে গুলি করা শুরু করলাম। সবার বন্দুকের নল বুক বরাবর তাক করা। আমি প্রথম ১/২ মিনিট বুক বরাবর নল তাক করে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম অন্য সবার মতো । এরপর নিজের বন্দুকের নলটি আরেকটু নিচের দিকে নামিয়ে পা বরাবর গুলি করতে লাগলাম হয়তো কোন বিবেকের তাড়নায় । ১৫/২০ মিনিট অবিরাম গুলিবর্ষণ চলতে লাগলো কমান্ডারের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত । কত শত /হাজার রাউনড গুলি ছোড়া হয়েছে তার কোন হিসাব নেই , হিসাব মেলানোও যাবে না । কারন তখন আমরা ১০ হাজার মানুষ থেকে ১০ হাজার পশু ছিলাম । হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বর থেকে পিছু হটে টিকাটুলি , হাটখোলার বিভিন্ন গলিতে ঢুকে গেলো । আমাদের অবিরাম গুলিও বন্ধ হয়ে গেলো । শাপলা চত্বর নির্দেশ মোতাবেক নিজেদের দখলে নিলাম । যখন গুলি থামলো তখন ধোঁয়াচ্ছন্ন চারদিক। ধোঁয়া সরে যখন একটু পরিস্কার হলো তখন দেখি শত শত নিথর দেহ, স্যান্ডেল , টুপি, ব্যাগ, পানির বোতল আর রক্ত । নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলাম । কতশত নিহত আর কতশত আহত হয়েছে তা গোনার সময় নেই , কারন যত কিছুই ঘটুক তা এই রাতের আধারেই ধুয়ে মুছে শেষ করতে হবে । সময় খুব কম । তাই বারবার তাগাদা আসছিল সব ধুয়ে মুছে পরিস্কার করার জন্য । মাঝে মাঝে নিজের বন্দুকের নলটি নিজের বুকের মাঝে তাক করছিলাম প্রচণ্ড ঘৃণায় , ক্ষোভ নিয়ে । কতজন নিহত হবে ? ১০০/৫০০/১০০০ বা তারও অনেক বেশি ? কিভাবে হিসাব করে? কার কি আসে যায়? আমি আমার চেয়ারে থাকতে পারলেই তো হলো । এই চেয়ার আমার, আমার বাপদাদার সম্পত্তি। এই চেয়ার আমি কাউকে দিবো না , কাউকে দিবো না । তার জন্য যদি আমাকে আরও লক্ষ লাশ ফেলতে হয় আমি ফেলবো । পশুদের এই রাজত্বে আমি একটি মানুষকেও রাখবো । শুধু থাকবে পশু আর আমি থাকবো সেই পশুদের রাজা ‘পশুরাজ’ হয়ে আমৃত্যু পর্যন্ত । আমার শুধু ভয় একটাই তা হলো ‘যে আগুন জ্বালিয়ে দিলাম সেই আগুন যদি পশুদের এই রাজত্বকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় ‘ তখন কি হবে ? জানিনা, জানতেও চাইনা । শুধু জানি আমি এক পশুরাজ ।


Friday, May 3, 2013

সিএনএন চ্যানেলের সঙ্গে শেখ হাসিনার ইন্টারভিউর হুবহু কনভারসেশন

সিএনএন চ্যানেলের সঙ্গে শেখ হাসিনার 





ইন্টারভিউর হুবহু কনভারসেশন 





সাম্প্রতিক সময়ে সাভারে বহুতল ভবন ধসের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ (এক্সক্লুসিভ) সাক্ষাৎকার প্রচার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউজ চ্যানেল সিএনএন-এ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন চ্যানেলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর। সাক্ষাৎকারে সাভারে ভবন ধস, গার্মেন্টস সেক্টরের নানা অনিয়ম, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে তাকে ‘স্টপ’ বলে উঠেন আমানপোর। এক্সক্লুসিভ এ ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তারা সাংবাদিকের এমন আচরণে রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকারটির হুবহু বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো।

আমানপোর : দেশের কয়েক হাজার গার্মেন্ট কারখানা পরিদর্শন করতে মাত্র ১৮ জন ইন্সপেক্টর রয়েছে। এতো কম সংখ্যক ইন্সপেক্টর দিয়ে কীভাবে এসব কারাখানা পরিদর্শন সম্ভব? (কারখানা ও ইন্সপেক্টরের এই হারকে ক্রেজি রেশিও বলে মন্তব্য করেন আমানপোর)
প্রধানমন্ত্রী: এই দুর্ঘটনার আগে আমরা শ্রমিক আইন করেছি। ইতোমধ্যে আমাদের মন্ত্রিপরিষদ এই আইন অনুমোদন করেছে এবং জাতীয় সংসদে তা পাস হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আমরা শ্রমনীতি গ্রহণ করেছি। আমরা এসব ব্যাপারে সচেতন এবং তা বাস্তবায়নে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু, পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি কিছুই আগে অনুমান (প্রেডিক্ট) করতে পারেন না। উন্নত দেশগুলোতেই আমরা এ ধরণের ঘটনা দেখছি। সাম্প্রতিককালে টেক্সাসে সারকারখানায় সংঘটিত দুর্ঘটনা আমরা দেখেছি। সুতরাং দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। যেহেতু এই শিল্প (গার্মেন্টস শিল্পের কথা বলতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী) ক্রমবর্ধমান শিল্প, বায়ার এবং ইনভেস্টররাও এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য গুড কনডিশনে আছে। .. ..

আমানপোর: প্রাইম মিনিস্টার... (তিনি প্রশ্ন করার চেষ্টা করেন এবং বিরক্তি প্রকাশ করে মাথা নাড়তে থাকেন। )

আমানপোর: প্রাইম মিনিস্টার... এসব কিছুই এখন হুমকিতে (আমানপোর প্রশ্ন করার চেষ্টা করেন)।
প্রধানমন্ত্রী: (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেসে বলেন) আমাকে কথা শেষ করতে দেয়া হোক।

আমানপোর: আমি আপনাকে কথা শেষ করার সুযোগ দিবো। কিন্তু, আপনি বলেছেন দুর্ঘটনা প্রেডিক্ট করা যায় না। অবশ্যই আপনি তা করতে পারেন না। কিন্তু, দুর্ঘটনার আগের রাতে বিভিন্ন টেলিভিশনের খবরে ফ্যাক্টরিটির বড় ধরণের ফাঁটলের চিত্র দেখানো হয়েছে। মালিকরা বলেছিলেন, এটা কিছুই না। ভবনের প্লাস্টার খসে পড়েছে। আর তার পরদিনই ভবনটি ধসে পড়ে। আপনি হয়তো প্রেডিক্ট করতে পারবেন না। কিন্তু, এই ঘটনার জন্য কারা দায়ী?
প্রধানমন্ত্রী: জি, আপনি সম্পূর্ণ ঠিক বলেছেন। (ফাঁটল দেখা দেয়ার পর) স্থানীয় প্রশাসন ও শিল্প পুলিশ কারখানার কাজ বন্ধ করে দেয়। এবং তারা সব শ্রমিককে আগের রাতে ভবন থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে কারখানার মালিকরা সকালে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে চাপ দেয়। তবে, স্থানীয় প্রশাসন ও শিল্প পুলিশ তাদেরকে থামাতে চেষ্টা করে। কিন্তু, মালিকপক্ষ বলে ভবনটি ধসে পড়বে না এবং পরিস্থিতি অতোটা খারাপ না এবং তারা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলে। শিল্প পুলিশরা তখনো বলেন শ্রমিকদের এই অবস্থায় কাজ করতে দেয়া ঠিক হবে না। কিন্তু সেই মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাই এটা সত্য না যে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম এবং আমরা তাদের ঠেকাতেও চেষ্টা করেছিলাম।

আমানপোর: সেটাই করা উচিত। জানা গেছে ভবনটির মালিক ওই ব্যক্তি (সোহেল রানার ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়) এবং তিনি ক্ষমতাসীন দলের ইয়ূথ উইংয়ের লিডার (যুবলীগ নেতা) যে দলটি আপনার। সে ইয়ুথ উইং এর শীর্ষ নেতা ...
প্রধানমন্ত্রী: না। এটা সত্য না।

আমানপোর: আমরা সেভাবেই জেনেছি ...
প্রধানমন্ত্রী: না। এটা সত্য না।

আমানপোর: ইউথ উইং এর... আপনি বলছেন এটা ঠিক না?
প্রধানমন্ত্রী: না না না... ভুল তথ্য

আমানপোর: অলরাইট...
প্রধানমন্ত্রী: আমি আপনাকে বলতে চাই, ভবনটিতে পাঁচটি গার্মেন্টস কারখানা ছিলো। পাঁচজন মালিক। তারা শ্রমিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। তারা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে পাঠায়।

আমানপোর: ওকে ..
প্রধানমন্ত্রী: সে (সোহেল রানাকে উদ্দেশ্য করে) একাই ভবনটির মালিক না। আমরা ইতোমধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা সব মালিককে গ্রেপ্তার করেছি। প্রকৌশলীসহ সবাইকে। আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা সবাইকে গ্রেপ্তার করেছি।

আমানপোর: তাদের ব্যাপারে কি ঘটতে যাচ্ছে? (প্রশ্ন শেষ করতে পারেননি আমানাপোর)
প্রধানমন্ত্রী: আমরা তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি না। (কয়েক সেকেন্ড দু'জনই চুপ..)
প্রধানমন্ত্রী: অপরাধী অপরাধীই...। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এটা জনগণকে দেয়া আমাদের ওয়াদা। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। ভবনটির মালিক এবং গার্মেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধে। সুতরাং আমাদের সরকার ... আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

আমানপোর: সমস্যা হলো জনগণ এ ধরণের প্রতিশ্রুতি অতীতে দেখেছে এবং তারা বিশ্বাস করে না যে অভিযুক্তদের শাস্তি হবে। তারা অপেক্ষায় আছে কীভাবে মামলাটি আগায়। কিন্তু আমি এই সেক্টরে দুর্নীতির বিষয়ে কিছু জানতে চাই... নানা প্রতিবেদনে জানা গেছে সে (সোহেল রানা) স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সাথে যোগসাজশ করে এবং নানা ধরণের অনিয়ম করে তার পরিবার সম্পদ করেছে। কিছুর তোয়াক্কা না করেই সে ভবন গড়ে তোলে। আরেকটা কথা ... ১০ শতাংশ সংসদ সদস্য এই ধরণের ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। এই সেক্টরে কি আপনি নানা ধরণের দুর্নীতির মুখোমুখি হচ্ছেন না?
প্রধানমন্ত্রী: দেখুন, আপনি অন্য বিষয়ে চলে যাচ্ছেন।

আমানপোর: না প্রধানমন্ত্রী। আমি অন্য বিষয়ে যাচ্ছি না।
প্রধানমন্ত্রী: আমি আপনাকে বলতে চাই ২০০৫ সালে এই জমিটি তারা দখল করে এবং ভবনটি গড়ে তোলে। সে সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো না। এটা আপনার জানা উচিত। আর এসব ফ্যাক্টরির মালিক ব্যবসায়ীরা। যে কোন ব্যবসায়ী যদি কোনো ধরণের অপরাধ করে আমাদের সরকার তার/তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা এখানে জনগণকে সেবা দিতে এসেছি। দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিতে না। অন্তত আমাদের সরকার এটা করে না। এটা আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি।

আমানপোর: অলরাইট। এটা শুনে জনগণ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে। এমনকি গত বছর বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছিলেন আমেরিকায় বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। ইতোমধ্যেই ডিজনি, যা অনেক বড় ক্রেতা, তারা বলেছে বাংলাদেশ থেকে কোন পণ্য নয়। কানাডাও আপনাদের সাথে ব্যবসার বিষয়টা নিয়ে ভাবছে। তারাও আপনাদের বড় ব্যবসায়িক পার্টনার। এটা আপনাদের জন্য বড় ধরণের ক্রাইসিস সৃষ্টি করতে পারে। আপনি কি একমত?
প্রধানমন্ত্রী: তারা যদি ব্যবসা করতে চায় তাহলে তাদেরকে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে যাতে ব্যবসা ভালোমতো চলে এবং শ্রমিকরা ন্যায্য পারিশ্রমিক পায়। তারাও (ডিজনি, কানাডা ও অন্যান্য ক্রেতা) এসব ঘটনার জন্য কিছুটা দায়ী। সস্তা শ্রম পায় বলেই বিনিয়োগকারীরা এখানে আসে। আমাদের শ্রমিকরা নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী এবং তারা যথাযথভাবে কাজ করে। এজন্যই বিনিয়োগকারীরা এখানে আসে। এবং তারা আসবে এবং ব্যবসা করবে বলে আমি মনে করি।

আমানপোর: আপনার ভালো শ্রমিক আছে এবং পণ্যও ভালো। কিন্তু আপনার সরকার শ্রমিক ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের প্রতি অনেক বেশি আগ্রাসী বলে অভিযোগ রয়েছে। আপনি জানেন গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশে গিয়েছিলেন এবং তিনি আপনার সরকারকে একটি প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন এর নেতা আমিনুল হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে বলেছিলেন। আমিনুলকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। তাকে কেন হত্যা করা হলো এর উত্তর হয়তো জানা নেই। আমিনুল ইসলাম ইস্যুতে আপনার বক্তব্য কী?
প্রধানমন্ত্রী: আমিনুল ইসলাম কোন ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন?

আমানপোর: আমি আপনাকে বলতে পারি.... (তিনি কথা শেষ করতে পারেন নি।
প্রধানমন্ত্রী: তিনি কোন ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন? আপনি কি নাম বলতে পারেন?

আমানপোর: তিনি (আমিনুল ইসলাম) শ্রমিকদের (বঞ্চনা থেকে উদ্ধারের জন্য) সংগঠিত করার কাজ করছিলেন যেখানে শ্রমিকদের জিম্মি করে রাখা হয়। আপনি নিজেই বলেছেন কিছু মানুষ বেআইনী কাজ...
প্রধানমন্ত্রী: না। আপনি ভুল ...

আমানপোর: স্টপ! আমি কি ভুল বললাম?
প্রধানমন্ত্রী: আপনি ভুল। আপনি ভুল।

আমানপোর: কি ভুল?
প্রধানমন্ত্রী: কেউ জানে না তিনি (আমিনুল) শ্রমিক নেতা ছিলেন। বাংলাদেশের কেউ জানে না তিনি (আমিনুল) শ্রমিক নেতা ছিলেন। তিনি খুন হন অথবা কিছু ঘটেছে। চারদিন পর তার মৃতদেহ উদ্ধার করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এটা আমাদের পুলিশ। আমাদের পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। আমরা জানতাম না তিনি ইউনিয়ন নেতা ছিলেন বা অন্য কিছু। কিন্তু তার প্রতি সিমপ্যাথি আছে। মামলা তদন্ত হচ্ছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব বুঝি। সুতরাং এই ব্লেইম গেইম থাকা উচিত না।

আমানপোর: অলরাইট। আপনি জানেন না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে গিয়ে এ ব্যাপারে তদন্ত করতে বলেছেন। আপনি বলেছেন আপনি আপনাদের জনগণ ও শ্রমিকদের ব্যাপারে সচেতন...
প্রধানমন্ত্রী: তদন্ত চলছে...

আমানপোর: ওকে..
প্রধানমন্ত্রী: মন দিয়ে শোনেন। মন দিয়ে শোনেন। তদন্ত চলছে...।

আমানপোর: আমি অনুমান করতে পারি যে আপনার সরকারের উচিত জনগণের প্রতি ও শ্রমিকদের প্রতি আরো সচেতন হওয়া এবং শ্রমিকদেরকে তাদের ইউনিয়ন করতে দেয়া উচিত...। পোপ গতকাল বলেছেন বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ক্রীতদাসের মতো কাজ করে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
প্রধানমন্ত্রী: শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আমি মাঝে মাঝে মালিকদের সাথে দরকষাকষি করি। যাতে তারা ন্যায্য মজুরী ও অন্যান্য সুবিধাদি পায়। আমাদের সরকারের তরফ থেকে তাদের জন্য ডরমেটরি তৈরী করাসহ নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমরা তাদের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ অন্যান্য চাহিদাও নিশ্চিত করেছি। আমরা সবসময় শ্রমিকদের পক্ষে। তাদের ভালো অবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি সব সময় বিবেচনা করি।

আমানপোর: প্রধানমন্ত্রী এখানে স্বচ্ছতার একটা বড় ঘাটতি চোখে পড়েছে। আমি এজন্য বলছি যে সিএনএন বাংলাদেশে গিয়ে এই দূর্ঘটনা কাভার করার অনুমতি পায়নি। আপনি বলছেন সব ভালো। অন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও অনুমতি পায়নি (কথা শেষ করতে পারেননি আমানপোর)
প্রধানমন্ত্রী: আমি দু:খিত, সিএনএন কি বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি পায়নি?

আমানপোর: না। না। আমি আপনাকে বলতে চাই এই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলুন। (কথা শেষ করতে পারেননি আমানপোর)
প্রধানমন্ত্রী: আপনি কি তা-ই বলছেন?

আমানপোর: জি, আমি তা-ই বলছি। সিএনএন কে স্টোরি কাভার করতে অনুমতি দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী: না। না আমি দুঃখিত। (মানতে পারলাম না)

আমানেপার: নো ম্যাম।
প্রধানমন্ত্রী: আপনি কী বলছেন?

আমানপোর: জি, আমি তাই বলছি। এই ঘটনা কাভার করতে সিএনএন এবং অন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশে অনুমতি দেয়া হয়নি। তারা (কর্তৃপক্ষ) অদ্ভূত সব শর্ত আরোপ করেছে... (কথা শেষ করতে পারেননি)
প্রধানমন্ত্রী: না। এটা সত্য না।

আমানপোর: এটা সত্য
প্রধানমন্ত্রী: না না না।

আমানপোর: হ্যা হ্যা। এটা সত্যি
প্রধানমন্ত্রী: বাংলাদেশ একটি উন্মুক্ত দেশ। বাংলাদেশে প্রাইভেট টেলিভিশন আছে (এই বক্তব্যের সময় আমানপোর হেসে উঠেন)।
নিষেধাজ্ঞা থাকলে কেন আমি আপনার সাথে কথা বলছি?

আমানপোর: কারণ, আমি বাংলাদেশে নেই।
প্রধানমন্ত্রী :আমিতো আপনার সাথে কথা বলতাম না!

আমানপোর: (হেসে) প্রধানমন্ত্রী আমি সেখানে (বাংলাদেশে) নেই।
প্রধানমন্ত্রী: আমরা যদি সিএনএন কে প্রিভেন্ট করতাম তাহলে আমি কেন আপনার সাথে কথা বলছি? তাহলে আপনি এটা বন্ধ করুন। এটা প্রচার করবেন না। আপনি যদি মনে করেন সিএনএন কে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি তাহলে আপনি আমার সাক্ষাৎকার প্রচার করবেন না। ঠিক আছে?

আমানপোর: আমাদের সিএনএন কর্তৃপক্ষ এবং সাংবাদিকদের বলা হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে (আমানপোর একটা কাগজ পড়ার চেষ্টা করেন).. ভিসা কর্তৃপক্ষ বলেছেন, তারা রিভিউ করা, জব্দ করা..
প্রধানমন্ত্রী: (মাথা নেড়ে) মন দিয়ে শোনেন.. না।

আমানপোর: না না।
প্রধানমন্ত্রী: কেউ যদি কোন দেশে প্রবেশ করে.... (বক্তব্য শেষ না করে) না না। আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। হ্যা, অবশ্যই সেখানে কিছু নিয়ম কানুন থাকে। (আমানপোর মাথা নাড়তে থাকেন। না না।)

প্রধানমন্ত্রী: সব দেশেরই কিছু নিয়ম কানুন থাকে। সবাইকেই তা অনুসরণ করতে হবে। আমরা আমাদের মানুষ হারিয়েছি। আমি এসব মানুষের জন্যই রাজনীতি করি। সুতরাং প্রতিটি জীবনহানিই আমার জন্য কষ্টদায়ক। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। এবং এটা আমার দায়ভার। আমি এটা দেখভাল করবো এবং আমি তা করছি।

আমানপোর: প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ
প্রধানমন্ত্রী: ধন্যবাদ।

কৃতজ্ঞতা- ইসলামী চত্ত্বর-চট্টগ্রাম

Monday, April 29, 2013

নিউ ইয়র্কে মাজলিসুল উলামার মতবিনিময় সভা


                  


নিউ ইয়র্কে মাজলিসুল উলামার মতবিনিময় সভা
হেজাত ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা বাস্তবায়ন 
এবং মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবী




নিউ ইয়র্ক: নিউ ইয়র্কের ইমাম, আলেম ও বিভিন্ন মসজিদের পরিচালনা কমিটির মতবিনিময় সভায় বক্তারা হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে হয়তো মুসলমানরা থাকবে, নয়তো নাস্তিকরা থাকবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের তৌহিদী জনতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বক্তারা বলেন, হেফাজতে ইসলামের ঘোষিত দাবীসমূহ বিজ্ঞান ও বাস্তব সম্মত। সংবিধান পরিবর্তন করে হলেও হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। সভা থেকে আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশ ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করা হয়। এছাড়াও ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ প্রতি সভা থেকে সমর্থন জানানো হয়।
২৮ এপ্রিল রোববার নিউ ইয়র্কের ব্রুকলীনে বায়তুল জান্নাহ মসজিদের মাজলিসুল  উলামা ইউএসএ’র উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।  
সভায় মাওলানা মুফতী রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মুফতী আব্দুল মালেক, ইমাম আব্দুর রহমান, ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ, ইমাম আজিরুদ্দিন, মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, মাওলানা আবু সুফিয়ান, মুহাম্মদ ইসমাইল, মুফতী খালেদ কাউসার, মাওলানা আব্দুল্লাহ কামাল, ইমাম ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা আসাদ, মাওলানা জুনায়েদ হোসাইন। 
সভা পরিচালনা করেন মাজলিসুল উলামা ইউএসএ’র সভাপতি মাওলানা রফিক আহমদ। 
নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদ পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন আসসাফা ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ডা নুরুর রহমান, বায়তুল জান্নাহ ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিন, মাওলানা দিদারুল আলম, হাজী আখলাক মিয়া, হাজী মাহমুদ আলী, বায়তুস শরাফ মসজিদের গোলাম হোসেন, ব্রুকলীন ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আমিনুর রসুল জামসেদ, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. জুন্নন চৌধুরী, বায়তুল মোর্কারম মসজিদের মঈন শরীফ, মদিনা মসজিদের জুহাইব ও নোমান রহমান, ডা. ফজলুল হক, আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ বেলাল, ইফনা সেক্ট্রেটারী মির্জা মশিউর রহমান প্রমুখ। আলেমদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম, হাফিজ রফিকুল ইসলাম, মাওলানা আশ্রাফ উল্লাহ, হাফিজ সিদ্দিক প্রমূখ। 
এছাড়াও সভায় নিউ ইয়র্কের অর্ধশতাধিক মসজিদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আগত মসজিদ প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুফতী রুহুল আমীন ও মাওলানা আবু সুফিয়ান। 
সভা শেষে সাভারে ভবন ধসে শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় এবং আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া মুনাজাত করেন মাওলানা আব্দুর রহমান। 
সভাপতির বক্তব্যে মুফতী রুহুল আমিন বলেন, কোরান হাদিস অনুযায়ী ইসলাম, আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) শানে কোন ব্যক্তি বেয়াদবি করলে সে মুসলমান থাকতে পারেনা। মুরতাদ হিসেবে তার শাস্তি হবে  মৃত্যদন্ড। এজন্য রাসূল (সাঃ) অবমানকারীর নতুন কোন আইন দরকার হবেনা। প্রচলিত আইনে মুরতাদদের বিচার করা সম্ভব। কোন মুরতাদকে মুসলমান সমর্থন করতে পারেননা, সমর্থনকারী ব্যক্তিও মুরতাদ হয়ে যান।  
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় সবসময় ইসলামের উপর আঘাত আসে। তারা ইসলাম বিরোধী কোন আইন করবে না বলে ক্ষমতায় এসেই সংবিধান থেকে আল্লাহর আস্থা বিশ্বাস স্থাপন করা এবং বিসমিল্লাহ বাদ দিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে পাঠ্য পুস্তুকে কোরান হাদিসকে বিকৃত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী বিচারের কথা বলে সরকারের মনগড়া ট্রাইবুনাল গঠন করে মানবতা বিরোধী বিচার নামে বাংলাদেশ থেকে ইসলাম নিমূর্লের ষড়যন্ত্র করছে।  
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এমপি স্বঘোষিত নাস্তিক। তারা কখনো ইসলামের মঙ্গল চাইতে পারেনা। তারা বাংলাদেশে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে বাদ স্বরোচিত মতবাদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। 
আমার দেশ প্রকাশনা পূনরা চালু ও মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান সরকারের নাস্তিকবাদী মুখোশ উম্মোচন করে দিয়েছে। তাই প্রতিহিংসা মূলক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করেন তিনি। 
মুফতি আব্দুল মালেক বলেন, ওমরাহ হজ্ব পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবের আলেমদের বেশ কয়েকটি সভা করেছি, সেখানের আলেমরা বাংলাদেশে রাসূল কটাক্ষকারীদের বিচার দাবী করেছে। তারা বাংলাদেশে নাস্তিকদের বিভিন্ন অপতৎপরতা বিষয়ে সৌদি আরবে লিফলেট ছাপিয়ে দেশব্যাপী বিতরণ করছে। এছাড়াও বাংলাদেশে আলেম উলামাদের হত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের আলেমরা। 
সৌদি আরব সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সৌদি বাদশা ঘোষিত ২ কোটি শ্রমিকের জটিলতা সমস্যায় ৩ মাসের অন্তবর্তীকালীন সময় অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা সুযোগ সুবিদা পেলেও বাংলাদেশের শ্রমিকরা পাচ্ছেননা। কারণ হিসেবে মূলত তারা বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটকে দায়ী করেছেন। 
তিনি বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে কতিপয় নাস্তিকদের মাধ্যমের আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে সংঘাত সৃষ্টি করা হয়েছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ হয়েও ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। এ অবস্থায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলাম ও বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে। 
আমার দেশ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবী করে মাওলানা লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী বলেন, আগামী ৫ মে’র মধ্যে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় তৌহিদী জনতা মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত করে আনবে। 
মাওলানা আজির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে এখন দুইটি অংশ, একটি হেফাজতে ইসলাম আরেকটি হেফাজতে নাস্তিক। নাস্তিকদের সমর্থন করাও নাস্তিক উল্লেখ করে  তিনি বলেন, ফরিদ উদ্দিন মাসুদের মতো ব্যক্তিকে এখন আর আলেম বলার সুযোগ নেই। 
আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠি ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে প্রচার করে থাকেন, অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথাও এসব তথাকথিত দাবী ছিল বলে কেউ প্রমাণ দেখাতে পারেনা। 

সংবাদ প্রেরক
মাওলানা মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী
দাওয়া গবেষাণা ও শরিয়া মুখপাত্র
মাজলিসুল উলামা ইউএসএ



Tuesday, April 23, 2013

প্রথমবার আমার দেশ যেভাবে বন্ধ করা হয়েছিল




প্রথমবার আমার দেশ যেভাবে বন্ধ করা হয়েছিল
খোমেনী ইহসান: সপ্তাহে আমার ছুটির-দিন হল মঙ্গলবার। সাধারণত বাইরে যাই না, সপ্তাহে একটা দিন ছুটি, একটু অলস সময় কাটাই। ফলে জুনের এক তারিখেও বাসা থেকে বার হওয়ার কথা ছিলো না। দুপুরের খাবার খেয়ে শুয়েছিলাম। পৌনে তিনটার দিকে বন্ধু রাকিব--দৈনিক ডেসটিনির কূটনৈতিক প্রতিবেদক বন্ধু রাকিব-উন-নবী ফোন দিয়া বললো, কী রে তোদের পত্রিকা নাকি বন্ধ হয়ে গেছে? তারপর ও নিশ্চিত করেই বললো যে, এটা হবে আজই। ওকে কী আর বলবো? বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কই এমন আভাস ইঙ্গিতও তো পাই নাই, গতকালও!

মানিক ভাইকে ফোন দিলাম--আহমদ হোসেন মানিক, আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার। তিনি বললেন--ফোনে কথা বলা যাবে না। তার কথায় বুঝলাম--ঘটনা তাহলে ঘটে যাচ্ছেই। বাসা থেকে দৌড়ে বের হলাম। বাসে চেপে কাওরান বাজার, অফিসে।

ঘড়িতে তখন বিকাল সাড়ে চারটা। অফিসে ঢুকেই জানলাম, পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীকে সকাল ৯টায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই-এর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। তার কাছ থেকে দুইটা সাদা কাগজে সই রেখে দুপুর দুইটার দিকে ছেড়ে দিছে। কিন্তু তাকে বাসায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে বিষাদ ও ক্ষোভের ছায়া। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানালেন। সহকর্মীরা সবাই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, আজই দৈনিক আমার দেশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাহমুদ ভাইও গ্রেফতার হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনের খবর জোগাড় করতে নানা সংবাদমাধ্যমের প্রচুর সাংবাদিকরা আসলেন। অনেক পরিচিত মুখ। বন্ধু কিম্বা বড় ভাই, ছোটো ভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের আমার সিনিয়র জুবেরী ভাই--ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সিনিয়র রিপোর্টার, তিনিও এসেছেন। তার চোখে-মুখে স্পষ্ট বিরক্তি ও ক্ষোভের ছাপ। সংবাদকর্মী হিশাবে অন্য একটা সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর জোগাড় করতে আসা নিশ্চয় কোনো সুখের ব্যাপার না। বিষণ্ণ সবাই। কেউ কেউ আমাদের সান্ত্বনা দিলেন। গায়ের জোরের ওপর এই সরকারের নির্ভরতার কথা বললেন, যাচ্ছেতাই করে যাওয়ার মানসিকতার কথা বললেন। টের পেয়েছি, শিড়দাঁড়া বেয়ে একটি গোপন দীর্ঘশ্বাস নামছে। নীচে, অনেক নীচে, অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে।

সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদ ভাই কী বললেন, প্রচণ্ড ভীড়-ভাট্টায় তার পুরাটা কানে ঢুকল না, অনেক পেছনে ছিলাম আমি। শুধু কানে বাজলো--‘সরকার গতকাল রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০ দিনের মধ্যে আমার দেশ বন্ধ করে দেবে ও আমাকে গ্রেফতার করবে। তাদের হুকুমে এনএসআই-ডিজিএফআই’র মতো গোয়েন্দাসংস্থাগুলো আজ মাঠে নেমেছে।

সময় গড়াতে থাকলো। পুরা আমার দেশ নিরবতার কুণ্ডলিতে চলে যেতে থাকলো। ধীরে ধীরে ভীড় বাড়তে শুরু করলো শুভাকাঙ্ক্ষীদের। আমাকে অবাক করে দিয়ে রাত ১০ টার দিকে ছোটো ভাই মুনতাসির ও মারুফ আসলো, ব্যাগে করে কাপড়-চোপড় নিয়ে। ওরা শুনেছে আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। ওদের দেখে মনটা আরো বিষণ্ণ হয়ে গেল। যতোই বলি কিছুই হবে না, ওরা দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে পারে না। ওদের ধারণা মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আমার দেশ থেকে সব সাংবাদিককেই পুলিশ গ্রেফতার করবে।

১১টা বেজে গেল। শুনলাম পুলিশ ওপররে দিকে আসছে । কিছুক্ষণের মধ্যে এসেই গেল। উর্দি পরা ও সাদা পোষাকধারী। উর্দিপরাদের বেশিরভাগ দাঙ্গা পুলিশ। আর্মড পুলিশ ও ব্যাটালিয়নও আছে। লিফট বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। আমরা দরজায় দাঁড়িয়ে গেলাম। রিপোর্টার মাহাবুবুর রহমান, সহ-সম্পাদক আরীফ মুহাম্মদ, সহ-সম্পাদক এমদাদ, রিসার্চ সেলের শহিদুল, পিয়ন সাইফুল ও রাজা প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে গেল। আমরা সাফ জানিয়ে দিলাম--এভাবে জোর করে মাহমুদুর রহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সিনিয়র সাংবাদিকরা সহ সবাই দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে গেলাম মানব দেয়াল হয়ে। পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের প্রতিবাদে মুহুর্মুহু শ্লোগান দিতে থাকলাম সবাই, কলম বন্ধ, ভাবছিলাম আবার এই কলমের বাঁধ খুলতে কতো শ্লোগান দিতে হবে রাজপথে কে জানে!
পুলিশ বারবার জোর করে ভেতরে ধেয়ে আসতে চাইলেও আমাদের বাধার কারণে ব্যর্থ হচ্ছিলো। ওদিকে মাঝরাত পার হয়ে যাচ্ছে। ক্যালেন্ডারের হিসাবে ২ জুন রাত ১টা বাজে তখন। ক্ষুধায় সবাই কাহিল। পুলিশ নীচে থেকে কাউকে উঠতে দিচ্ছে না, নামতেও না। খাবার নিয়া আসার কোনো উপায় নাই। পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ফিল্টার জার কয়েকটাতে যা পানি ছিলো তা থেকেই একটু একটু করে খাচ্ছিলো সবাই। আমাদের হাউসের লোকজন ছাড়াও অন্যান্য হাউস থেকে নিউজ কাভার করতে আসা প্রায় অর্ধশতের বেশি সাংবাদিকও ছিলেন। সবাই খিদা আর পিপাসায় কাতর।

টিকতে না পেরে তাই একজন পিয়নকে পাঠানো হলো নিচ থেকে খাবার ও পানি আনার জন্য। পিয়ন খাবার ও পানি নিয়ে নিচে অপেক্ষা করতে থাকল। কিন্তু তাকে উপরে ওঠতে দেয়া হচ্ছে না। সে উপরের সবার অবস্থা জেনে বেশ করে কাকুতি-মিনতি করল। কাজের কাজ হল না। উল্টা খাবার কেড়ে নিয়ে তাকে আচ্ছা মতো পেটানো হল। এক সময় আমার দেশ-এর টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো। ওদিকে বারবার তার প্রবেশ পথে হামলে পড়ছে পুলিশ। বুট-হেলমেট ও বন্দুক সমৃদ্ধ পুলিশের শক্তির সামনে যেন আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের দেয়ালটা একটু একুট করে ভেঙ্গে পড়ছে।

রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। একদিকে নিরস্ত্র সংবাদকর্মী। আরেক দিকে সশস্ত্র পুলিশ। ফারাকটা যেন শুধু অস্ত্রের, মাঝখানে রাষ্ট্র-সংবিধান-আইন বলে কিছু নাই। সংবাদকর্মীদের রক্ষাকবচ সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার ও আইনের দোহাই। পুলিশের হাতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সংঘটনের মারণাস্ত্র। উপরের নির্দেশে পুলিশের দল জ্বি স্যার, জ্বি স্যার করতে করতে ভেঙ্গে পড়ছে। কিন্তু তিনটায়, চারঘণ্টায় অসংখ্যবার হামলা করেও তারা প্রতিরোধের দেয়াল টপকাতে পারছে না। একটা পর্যায় পরিস্থিতি এমন হলো মারমুখী পুলিশের চোখে-মুখে হিংস্রতার দাগগুলো গাঢ় হয়ে গেল। আমরা সংবাদকর্মীরাও প্রবেশ পথে আরো গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। শ্লোগান চলছে। শ্লোগান জুড়ে রক্ত দেয়ার, জান দেয়ার ঘোষণা ধ্বনি।

গুজব বাড়ছে। গুঞ্জন বাড়ছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন ও ওয়াকিটকির ব্যস্ততা বাড়ছে। প্রচন্ড আবেগ আমাদের হৃদয়কে দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে। আমার দেশ, আমাদের কর্মস্থল না। নিছকই একটা সংবাদপত্র মনে করা যায় না আমার দেশকে। এ যে আমাদের ভালোবাসা। প্রেম। না, আমার বুকের ছাতি ফুলে ওঠলো। ইতিহাসের যতো নিষ্ঠুরতম ঘটনাই ঘটুকনা কেন প্রতিরোধ চলবে। চরম আবেগে আমরা কেঁপে গেলাম। শ্লোগান বন্ধ। সবাই গেয়ে ওঠলাম জাতীয় সংগীত ও রণ সঙ্গীত। আবারো শুরু হলো শ্লোগান। শ্লোগানে আমার দেশ-এর ছাদ কেঁপে কেঁপে ওঠছে। জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ সব সংবাদকর্মীই দৃঢ় অবস্থান গড়ে তুললাম। এই শ্লোগানের তোড়ে একসময় সব পুলিশ আমাদের অভ্যর্থনা চত্বর থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে চলে গেল। আমার দেশ যেহেতু আগুনে নিজের প্রাণশক্তিকে বাংলাদেশে মূর্ত করে তুলেছে, সেহেতু আমরা পিশাচের কৌশল ও শঠতার সঙ্গেও পরিচিত ছিলাম। সবাই বুঝে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করবে।

সময় ৩ টা ১৭। নিষ্ঠুরতার রাতে চূড়ান্ত আঘাতটি পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ করেই শতাধিক দাঙ্গা পুলিশ-আর্মড পুলিশ হামলে পড়লো প্রবেশ পথে। আমরা সবাই প্রাণপণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চেষ্টা করলাম। দরজার এপাশ ধরে আমরা, ওপাশ ধরে ওরা। বড় জোর ৫-৭ মিনিট। এরপর আর আমরা পারি নাই। আমরা ক্ষুধার্ত একদল মানুষ আর কতক্ষণ পারি! সামনে ছিলেন যারা তাদের--মাহবুব ভাই, আরীফ, এমদাদ ও সাইফুলকে টেনে হেচড়ে নিয়ে গেল সশস্ত্র উর্দিওয়ালারা। দরজার ওপাশে নিয়েই লাঠির আঘাত, বুটের লাথি আর অশ্রাব্য গালি। আঘাতে জর্জরিত হয়ে লুটিয়ে পড়লেন ওরা। দেখলাম টেনে হিচড়ে তাদের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর সামনে থেকে লাঠি-বন্দুক উচিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো শতাধিক পুলিশ। সামনে যাকেই পেল, তাকেই মারতে মারতে এগোলো--উপ-সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, নগর সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী ও আলাউদ্দিন আরিফ ভাই মার খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন।


চোখের সামনে দেখলাম, উর্দি ছাড়া ক’জন গুন্ডামতো লোক পিস্তল বাগিয়ে সামনে চলে আসছে। তারা উর্দিওয়ালা পুলিশদের নির্দেশ দিচ্ছে লাঠিচার্জ করতে। ওরা আমাদের বসার চেয়ারগুলো আমাদের গায়ের উপর ছুঁড়ে মারতে লাগলো। সামনে যা কিছু পেল সব চুরমার করেই ওরা ভেতরে ঢুকে ডান দিকে মাহমুদ ভাই’-র রুমের দিকে ধেয়ে গেলো। পেছন থেকে আমরা চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকলাম। ততক্ষণে প্রবেশ পথের লাইট নিভিয়ে দিয়েছে ওরা। পুরো আমার দেশ কার্যালয় জুড়ে ভীতির ছাপ। পুলিশ লাঠি-বন্দুক তাক করে আমাদের ঘেরাও করে রেখেছে। মাহমুদ ভাইয়ের কাছে যেতে দিচ্ছে না। সেখানে তার সঙ্গে পুলিশের কী কথা হলো, না হলো কিছুই জানতে পারছি না।

দীর্ঘক্ষণ পর দেখলাম ভোর চারটার দিকে মাহমুদ ভাইকে ঘিরে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র উর্দিওয়ালারা। মাহমুদ ভাই হাত উচিয়ে আমাদের বিদায় জানাতে জানাতে বেরোলেন হাসিমুখে। স্লোগানের বদলে তখন আমাদের চোখে পানি। ডাকাতের মতো রাতদুপুরে সশস্ত্র পুলিশ আর সাদা পোশাকধারী ভয়ংকর মানুষগুলা আমাদের ওপর হামলে পড়ছিলো সন্ধ্যা থেকে--কিন্তু আমরা তো হতাশ হই নাই তখন! এই কান্না আসলে অপমানের নয়, একজন সম্পাদকের সাহস আর আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়ে চলে যাওয়া দেখে।
তিনি যেভাবে যাচ্ছিলেন তাতে মনে হতে লাগলো তিনি প্রচন্ড নির্বোধ কোন মানুষকে সততা ও সাহসের মাধ্যমে জব্দ করতে যাচ্ছেন। তিনি আবারও আমাদের মাঝে ফিরবেন। আবারও আমার দেশ প্রকাশিত হবে। পুলিশি রাষ্ট্রের এই ডাকাতের গ্রামে যেই রাত্রি আমাদের ওপর চেপে বসেছিল- সেই রাত্রির আঁধারবিস্তারী অপশাসনের বিরুদ্ধে আবারো লড়বে আমার দেশ।


Monday, April 22, 2013

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আমার দেশের অপরাধ নেই




তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে 
আমার দেশের অপরাধ নেই

  
লেখক: মোহাম্মদ আরজু

যেই মামলার সূত্র ধরে দৈনিক আমার দেশের ছাপাখানা সীলগালা করে ও অন্য কোথাও থেকে পত্রিকাটি ছাপতে না দিয়ে সরকার এটি কার্যত নিষিদ্ধ করে রেখেছে, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে যেই মামলায় এবার গ্রেফতার করা হলো, এই মামলাটি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে দায়ের করা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৬ ও ৫৭ ধারা ও দণ্ডবিধির ১২৪, ১২৪-এ, ৫০৫এ, ১২০বি ও ৫১১ ধারায় গত ১৩ ডিসেম্বর এই মামলাটি দায়ের করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান এই মামলায় পত্রিকাটির প্রকাশক হাসমত আলীকেও আসামি করেন।

এতে রয়েছে দুই ধরনের অভিযোগ; প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমের কম্পিউটারে হ্যাকি করে তার স্কাইপ কথোপকথন ও ইমেইলসহ মিথ্যা-অশ্লীল তথ্য প্রকাশ এবং তা প্রকাশের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহ। 

ট্রাইব্যুনালটির চেয়ারম্যান বিচারাধীন বিষয় ও সম্ভাব্য রায় নিয়ে দিনের পর দিন কথা বলেছেন ট্রাইব্যুনাল বহির্ভুত এক ব্যক্তির সঙ্গে। আদালতের কাগজপত্র তাকে পাঠিয়েছেন, তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। স্কাইপ যোগে আলাপের অডিও ও ভিডিও রেকর্ড নিজেদের কাছে থাকা সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে খবরটি প্রথম দেয় বৃটিশ সাময়িকী দি ইকনমিস্ট। দৈনিক আমার দেশ ওই কথোপকথনের অনেকাংশ প্রকাশ করে।  পরে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, একজন গ্রাহকের ফরমায়েশ অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিচারক ও ট্রাইব্যুনাল বহির্ভূত ব্যক্তির আলাপালোচনা ‘সংগ্রহ’ করেছে আমেরিকার একটি বেসরকারি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ‘গ্রাহকে’র নাম প্রকাশে করেনি তারা গোয়েন্দা সংস্থাটি।

বিচারকের শপথ ভঙ্গ করে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বাইরে আলাপ করার এমন কেলেঙ্কারি ফাঁস হলে ট্রাইব্যুনাল ছাড়েন চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম। অবশ্য তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে পূর্ববর্তী পদে বিচারক হিসেবে ফেরত গিয়েছেন তিনি।

এদিকে টানা কয়েকদিন স্কাইপ কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাদের ওই আদেশের অনুলিপি ইকনমিস্ট ও আমার দেশের সম্পাদক এবং বিটিআরসি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

একইদিনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্ট বিভাগে আবেদন করেন এক আইনজীবী। বিভাগের বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও ফরিদ আহমেদের যুগ্ম বেঞ্চে ওই আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজহারুল্লাহ ভূঁইয়া। শুনানি শেষে আদালত তার রুলে বলেন, স্কাইপ কথোপকথন ‘হ্যাকিং’ ও তা প্রকাশে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তারের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানাতে হবে। স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের দু’সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেন আদালত। একইসঙ্গে দৈনিক আমার দেশ ছাপা ও প্রকাশনায় আইনের কোন ধারা লঙ্ঘন করেছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে বলেন বিচারকদ্বয়। 

সেদিনই মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দায়ের করা মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমানের আইনজীবী বলেন, ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৬ ও ৫৭ ধারার অধীনে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

আইনটির ৫৬ ও ৫৭ ধারায় কি বলা হয়েছে তা দেখে নেয়া যাক। আইনটির ৫৬ ধারার শিরোনাম হচ্ছে ‘কম্পিউটার সিস্টেমের হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দণ্ড’ । এখানে বলা হয়েছে; 
কোনো ব্যক্তি যদি ১. (ক) জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তির ক্ষতি করিবার উদ্দেশ্যে বা ক্ষতি হইবে মর্মে জ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও এমন কোন কার্য করেন যাহার ফলে কোন কম্পিউটার রিসোর্সের কোন তথ্য বিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা উহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস পায় বা অন্য কোনভাবে উহাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে; (খ) এমন কোন কম্পিউটার, সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করার মাধ্যমে ইহার ক্ষতিসাধন করেন, যাহাতে তিনি মালিক বা দখলকার নহেন; তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি হ্যাকিং অপরাধ। ২.  কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন হ্যাকিং অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

আইনটির ৫৭ ধারায় ‘ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দণ্ড’ শিরোনামে বলা হচ্ছে (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বত্সর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

বিচারকের স্কাইপ কথোপকথন আমার দেশ হ্যাক করেছে বলে এযাবত কোনো প্রমাণের দাবি করেনি সরকার। নিউ এজ’র প্রতিবেদনে অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ‘গার্ডিয়ান কনসাল্টিং এলএলসি’ বলছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত তাদের লোকেরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারক নিজামুল হক এবং বেলজিয়ামভিত্তিক বাংলাদেশী আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপে এবং ই-মেইল আলাপের কপি সংগ্রহ করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ‘অপকর্মের ব্যাপারে নজর রাখার’ জন্যই তাদের ভাড়া করা হয়েছিল বলে জানায়। এক্ষেত্রে সংস্থাটির জন্য যারা কাজ করেছে বা তথ্য সংগ্রহ করেছে তাদের কেউই কোনো আইন লঙ্ঘন করেনি বলেও দাবি করেছে ওই গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানটি।

এর বাইরে স্কাইপ কথোপকথন ও ইমেইল সংগ্রহের বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেয়নি দি ইকনমিস্ট বা আমার দেশ। মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে তার কার্যালয় ও আমার দেশ’র ছাপাখানা থেকে কম্পিউটার ইত্যাদি জব্দ করেছে সরকার। তারপর রিমান্ডে নিয়ে তাকে দৃশ্যত ব্যাপক নির্যাতনও করা হয়েছে। এরপরও সরকার দাবি করতে পারেনি যে, আমার দেশ এই হ্যাকিং বা সংগ্রহ কাজে জড়িত ছিলো। ফলে হ্যাকিং বেআইনি হলেও ‘বেআইনিভাবে’ পাওয়া তথ্য প্রকাশে আইনে যেহেতু কোনো বাধা নেই- কাজেই কোনো অপরাধ নেই আমার দেশের।

এরপর থাকে ৫৭ ধারার বিষয়। কিন্তু না সরকার না কোনো আদালত কখনো দাবি করেনি যে এই স্কাইপ কথোপকথন ঘিরে প্রকাশিত খবর ‘মিথ্যা’। সংশ্লিষ্ট বিচারক তো ট্রাইব্যুনালে শুনানিকালে একবার এটা স্বীকারই করেছেন যে তিনি ওই লোকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাছাড়া এসব খবর ‘অশ্লীল’ অথবা ‘জনসাধারণকে নীতিভ্রষ্ট করতে পারে’ অথবা ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা’ বা ‘আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটা’নোর মত খবরও নয়। কিছু খবর কারো ‘ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন’ করে কি?  কিন্তু কোনো খবর যদি জনস্বার্থে করা হয়, তা যদি সত্য হয়, তাতে আইনত কারো ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়না। বরং জনস্বার্থ এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল এমন একটি অনিয়মের খবর প্রকাশ নিঃসন্দেহে জনস্বার্থের দিক থেকে খুব দরকারি ছিল।
সূত্র: আরটিএনএন (http://www.rtnn.net//newsdetail/detail/1/3/62626#.UXXkWrXvtac)


বাংলাদেশে ভারতের যুদ্ধ ও ইসলামী জাগরণ



বাংলাদেশে ভারতের যুদ্ধ ও ইসলামী জাগরণ




লেখক: ফিরোজ মাহবুব কামাল



শেষ হয়নি শত্রুর যুদ্ধ

শত্রুর যুদ্ধ কখনোই শেষ হয়না। শত্রু শুধু রণাঙ্গন ও কৌশল পাল্টায়।বাংলাদেশের ভারতের যুদ্ধ তাই শেষ হয়নি,তারা শুধু কৌশল পাল্টিয়েছে। যুদ্ধ দুটি ভিন্ন রূপে আসে। কখনো রক্তাক্ষয়ী অস্ত্রযুদ্ধ রূপে। কখনো স্নায়ু যুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ার রূপে। অস্ত্রের যুদ্ধটি সীমান্তে হয়। আর স্মায়ুযুদ্ধ বা বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধটি হয় দেশের অভ্যন্তরে,এবং ঘরে ঘরে ও রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে।এবং সেটি অবিরাম ভাবে। এ যুদ্ধটি যেহেতু স্নায়ু বা চেতনার রাজ্য জুড়ে হয়,এ যুদ্ধকে তাই স্মায়ুযুদ্ধও বলা হয়।এ যুদ্ধে অস্ত্র রূপে কাজ করে বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষাসংস্কৃতি –তাই এটি বুদ্ধিবৃত্তিক বা সাংস্কৃতিক যুদ্ধও।অস্ত্র ব্যবহৃত না হলেও এ যুদ্ধের নাশকতা কম নয়। বিগত একশত বছরে মুসলিম দেশগুলির সবচেয়ে বড় বড় পরাজয়গুলি হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তির যুদ্ধে। এবং সে পরাজয়ের ফলে মুসলিম বিশ্বের ভৌগলিক মানচিত্রের সাথে পাল্টে গেছে চেতনা ও সংস্কৃতির মানচিত্রও। এ রণাঙ্গনে জিততে হলে যোদ্ধার বুদ্ধিবৃত্তিক বলটা অপরিহার্য।



স্নায়ু যুদ্ধে অস্ত্র রূপে কাজ করে ধ্যানধারণা,মতবাদ বা দর্শন।যুদ্ধ হয় শিক্ষা,সংস্কৃতি,বুদ্ধিবৃত্তি, মিডিয়া ও রাজনীতির ময়দানে। বিশ্বরাজনীতির ময়দান থেকে কম্যুনিজমকে বিলুপ্ত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্রদের একটি তীরও ছুড়তে হয়।অপরদিকে মুসলমানগণ তাদের আদর্শিক,রাজনৈতীক ও সামরিক বল হারিয়েছে জাতিয়তাবাদ,সমাজতন্ত্র,কম্যুনিজম,লিবারালিজম ও সেক্যুলারিজমের ন্যায় মতবাদগুলির হামলায়। সে হামলায় শক্তিহীন হয়েছে এবং অবশেষে ভেঙ্গে গেছে উসমানিয়া খেলাফতের ন্যায় দীর্ঘকালের বিশ্বশক্তি। মুসলমানগণ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বলটি সর্বশেষ বার দেখিয়েছে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কলে। মাওলানা মহম্মদ আলী জওহার, আল্লামা কবি ইকবাল,কবি হালী, আশরাফ আলী থানবী,শিবলী নোমানী,সোলায়মান নদভীর মত এক ঝাঁক মুসলিম জ্ঞানী ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছিল ব্রিটিশ-শাসনাধীন ভারতে। অবাঙালী মুসলমানদের সে বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ বাংলাতেই আঘাত হেনেছিল। পাকিস্তান অর্জিত হয়েছিল তো সে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়,কোন সামরিক শক্তি বলে নয়।



কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামপন্থিরা সে যুদ্ধে পরাজিত হতে শুরু করে ১৯৪৭য়ের পর থেকেই। কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসলামপন্থিদের বুদ্ধিবৃত্তিক বলটি ছিল অতি সামান্যই। অথচ ভারতের বিনিয়োগটি এক্ষেত্রে ছিল বিশাল ও পরিকল্পিত। বর্তমান স্নায়ুযুদ্ধ বা কোল্ডওয়ারটি মূলত ভারতের ১৯৪৭ পরবর্তী সে বিনিয়োগেরই ধারাবাহিকতা। এ যুদ্ধের মাধ্যমেই ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতীক, সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক মানচিত্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। সে লক্ষ্য পুরণে সীমান্তে ভারত সৈন্য সমাবেশ না ঘটালেও,দেশের অভ্যন্তরে লক্ষ লক্ষ সৈন্য দিবারাত্র নিয়োজিত রেখেছে। সে যুদ্ধেরই কৌশল রূপে ভারত বাংলাদেশে শুরু করেছে ডি-ইসলামাইজেশন প্রজেক্ট। বাংলাদেশ তার বর্তমান মানচিত্রটি ভাষা বা জলবায়ুর কারণে পায়নি। একই বাংলা ভাষা ও একই বাংলার জলবায়ু পাশ্ববর্তী পশ্চিম বাংলার বহু কোটি বাঙালীর জীবনেও আছে। পশ্চিম বাংলার জনসংখ্যার দশমাংশ জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশ স্বাধীন আছে। কিন্তু তারা আলাদা স্বাধীন দেশ পায়নি। বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিতের মূল ভিত্তিটি দেশটির ১৫ কোটি মানুষের আলাদা ধর্মীয় বিশ্বাস। সেটি ইসলাম। ভারত সে ভিত্তিটাই ধ্বসিয়ে দিয়ে চায়। আর ভিত্তিতে ধ্বস নামলে শুধু প্রাসাদই নয়,দেশও ধ্বসে পড়ে। সে ধ্বসাতেই বাংলাদেশে জোরে শোরে কোল্ড ওয়ার বা স্মায়ু যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ কোল্ড ওয়ারের ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধা হলো শত শত নাস্তিক ব্লগার।তারা ব্যবহার করছে ইন্টারনেটের ন্যায় আধুনিক প্রযুক্তিকে। তারা যেমন ভারতে আছে,তেমনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও আছে। নাস্তিক ব্লগারদের সাথে রয়েছে শত শত নাস্তিক মিডিয়াকর্মী,কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অঙ্গণ,টিভি নেটওয়ার্ক,বহু এনজিও অফিস,বহু পত্র-পত্রিকার দফতর,এমনকি বহু সরকারি অফিস মূলত এসব ভারতপন্থিদের হাতে অধিকৃত ভূমি।সেখান থেকে হামলা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যান্য অঙ্গনে। হামলার লক্ষ্য শুধু ইসলামের মৌল বিশ্বাস,জিহাদী চেতনা ও কোরআন-হাদীসের শিক্ষা নয়, বরং খোদ মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর প্রিয় নবীরাসূল। তাদের সে বীভৎস প্রচারণা সম্প্রতি জনসম্মুখে প্রচারও পেয়েছে। তারা সে প্রচারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীদের ইতিমধ্যে মুরতাদ বানিয়ে ছেড়েছে।ইসলামে বিশ্বাসীদের রাজনীতিকেই শুধু নয়,তাদের শারিরীক উপস্থিতিও বাংলাদেশের মাটিতে তারা মেনে নিতে রাজী নয়।



একাত্তরের ভারত আওয়ামী লীগ,ছাত্রলীগ ও মস্কোপন্থি কম্যুনিস্টদের বহু হাজার নেতাকর্মীকে নিজ দেশের অভ্যন্তরে নানা স্থানে নিয়ে দীর্ঘদিন ট্রেনিং দিয়েছিল। লক্ষ্য এ ছিল না যে,তাদেরই কাজ একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। শিক্ষা বা ট্রেনিংয়ের আছড় কি ৯ মাসে শেষ হয়? এমনকি কুকুর-বিড়ালের ন্যায় ইতর জীবকে একবার পোষ মানানো হলে আজীবন তারা পোষমানাই থেকে যায়। তারা বিদ্রোহ করে না। মানুষও তেমনি শিক্ষালয়ে যে শিক্ষা বা ট্রেনিং পায় তা নিয়ে মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে। শিক্ষার গুরুত্ব এত অধীক বলেই নামায-রোযা ফরয করার আগে ইসলাম বিদ্যার্জনকে ফরয করেছে। মিশনারিরা তাই মুসলিম দেশে এসে শত শত স্কুল-কলেজ খোলে এবং হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রদের নিজদেশে বৃত্তি দিয়ে নিয়ে যায়। তাই ভারতে গিয়ে যারা একবার রাজনৈতীক ও সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা ভারতীয় গোলামীর শিকলটি গলা থেকে নামিয়ে আবার স্বাধীন ভাবে দাঁড়াবে সেটি কি এতই সহজ? বাংলাদেশের স্বাধীনতার বড় শত্রু এ মানসিক গোলামরাই।



মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন আপনজনের কোলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কে কাকে কতটা আপন মনে করে সেটি তখন বুঝা যায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ ও তাদের রাজনৈতীক মিত্ররা ভারতকে যে কতটা আপন মনে করে সেটি কি শুধু একাত্তরে প্রকাশ পেয়েছে? সেটি যেমন ১৯৭৫য়ে দেখা গেছে,তেমনি আজও নানা ভাবে বুঝা যাচ্ছে।পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাংলাদেশ আজ আর কোন আলোচনার বিষয় নয়। পূর্ব পাকিস্তানকে তারা শুধু পাকিস্তানের মানচিত্র ও সংবিধান থেকেই বাদ দেয়নি,স্মৃতি থেকেও বাদ দিচ্ছে।সেদেশে এমন কোন দল নাই যারা বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানভূক্ত করার কথা মুখে আনে। তেমনি বাংলাদেশেও এমন কোন রাজনৈতীক দল নাই যারা পাকিস্তানের সাথে আবার একীভূত হওয়া নিয়ে ভাবে। কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের যেমন প্রচুর ভাবনা আছে,তেমনি এজেন্ডাও আছে। এজেন্ডার সাথে বিপুল বিনিয়োগও আছে। ২০০৮ সনের নির্বাচনের আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে ভারতে বিনিয়োগ কত বিশাল ছিল তার একটি বিবরণ দিয়েছে লন্ডনের বিখ্যাত পত্রিকা“দি ইকোনমিস্ট”।
পাকিস্তান ভাঙ্গাটিই আগ্রাসী ভারতের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। লক্ষ্য হলো,ভারতের পূর্ব সীমান্তে ইসলামী রাষ্ট্র গড়ে উঠাকে যে কোন ভাবে প্রতিরোধ করা। কারণ আদর্শিক রাষ্ট্রের সীমারেখা কোন ভৌগলিক সীমানা দিয়ে সীমিত থাকে না। ভারতে ভয় সে আদর্শ ভারতে ঢুকে পড়া নিয়ে। দেশে দেশে ইসলামের বিপুল জাগরণ দেখে ভারতের সে ভয় আরো বহুগুণ বেড়েছে। তাই ভারতের বিনিয়োগও বেড়েছে। তাই তাদের যুদ্ধটি স্রেফ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়। বরং সেটি ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে। ফলে বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতের যুদ্ধটি তাই একাত্তরে শেষ হয়নি। বরং যতই বাড়ছে বাংলাদেশে ইসলামের জাগরণ ততই বাড়ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বিনিয়োগ ও সংশ্লিষ্টতা।



বাংলাদেশে ভারতের যুদ্ধ

ভারতের শাসকচক্রের প্রচন্ড ভয় দক্ষিণ এশিয়ার বুকে ইসলামী শক্তির উত্থান নিয়ে। তেমনি একটি উত্থান এসেছিল ১৯৪৭ সালে। সে মুসলিম উত্থানের মুলে ছিল ভাষা ও আঞ্চলিকতার উর্দ্ধে উঠে জন্ম নেয়া প্যান-ইসলামিক চেতনা।সে চেতনা নিয়েই ঢাকার বুকে ১৯০৬ সালে জন্ম নেয় মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগের নেতৃত্বে জন্ম নেয় পাকিস্তান। ১৯৭১য়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলেও চেতনা মারা পড়েনি। ফলে ভারতের যুদ্ধও শেষ হয়নি। কারণ চেতনা বেঁচে থাকলে সে চেতনার ভিত্তিতে দল গড়ে উঠে,আন্দোলনও গড়ে উটে। তাই কোন রাজনীতি বা আন্দোলন দমন করতে হলে চেতনাকে দমাতে হয়।কীরূপে সে ইসলামী চেতনাকে দমন করা যায় সেটি ভারতীয়দের বিদেশনীতির আজও মূল স্ট্রাটেজী। এটা ঠিক যে পাকিস্তানের ব্যর্থতা অনেক। ঘর বাঁধলে তাতে ভয়ংকর শাপও বাসা বাঁধতে পারে। তা ডাকাতদেরও দখলে যেতে পারে। পাকিস্তান আজ আভ্যন্তরীণ শত্রুদের দখলদারির শিকার। কিন্তু তাতে ঘরবাঁধার গুরুত্ব কমে না।তাই পাকিস্তানের বর্তমান সংকট দেখে যারা পাকিস্তানের সৃষ্টিকেই অহেতুক বলে তাদের এ বিষয়টি বোঝা উচিত।তাছাড়া একটি শিশু প্রসবেও প্রচন্ড বেদনা থাকে। আর ইসলামি বিপ্লব ও সভ্যতা প্রসবের বেদনা তো প্রকট ও দীর্ঘকালীন। তাদে বহু মানুষের জীবন ক্ষয় হয়, সম্পদহানিও হয়। সেটি নবীজী (সাঃ)র যুগেও হয়েছে। পাকিস্তান সে প্রসববেদনার মধ্যেই। বাংলাদেশও সে প্রসব বেদনায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ১৯৪৭ সালের অখন্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে ইসলামী শক্তির উত্থান যে আরো প্রবলতর ভাবে হতো সে বিষয়টিও ভারতীয় নেতাদের অজানা ছিল না। তাই শুরু থেকেই তারা পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল। ১৯৪৭ সালের গান্ধি ও ইন্ধিরা গান্ধির পিতা জওহারলাল নেহেরু পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা রুখতে ব্যর্থ হন। কারণ,সে সময় বঙ্গভূমি থেকে শেখ মুজিব ও তাজুদ্দীনদের ন্যায় ভারতীয় হিন্দুস্বার্থের জন্য কোন সেবাদাস জুটেনি। হোসেন সহরোয়ার্দী,খাজা নাজিমুদ্দীন এবং ফজলুল হকের ন্যায় নেতাগণ তখন মুজিবের ন্যায় আগ্রাসী ভারতের হাতে শিকারি ঘুঘুতে পরিণত হননি। তারা বরং অবাঙালী মুসলমানদের সাথে মিলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অংশ নেন। ফলে ভারত অপেক্ষায় থাকে পরবর্তী সুযোগের এবং সেটি আসে ১৯৭১য়ে। ফলে সফল হয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি কোমরভাঙ্গা যুদ্ধ তৈরী করতে।



ইসলাম বিনাশের একটি গ্রান্ড স্ট্রাটেজীকে সামনে রেখেই ভারত ১৯৭২ সালে তাদের সশস্ত্র সৈনিকদের সরিয়ে নিলেও স্মায়ু-যুদ্ধের কলমধারি যোদ্ধাদের তুলে নেয়নি। বরং বিপুল ভাবে বাড়িয়েছে সে বাহিনীর জনবল। সেটির শুরু শেখ মুজিবের আমল থেকেই। তাই মুজিবের ক্ষমতায় বসানোর পর দেশে কৃষি,শিল্প,রাস্তাঘাট ও আইনশৃঙ্খলায় কোন উন্নয়ন ঘটেনি,কিন্তু প্রচন্ড ভাবে বৃদ্ধি ঘটেছে ছাত্র-শিক্ষক,রাজনৈতিক নেতা-কর্মী,বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়াকর্মীদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজ। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি পরিণত হয় ইসলামের শত্রু তৈরীর বিশাল ইন্ডাস্ট্রিতে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাশকরা মগজ ধোলাইকৃত ছাত্রগণ যখন মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর মহান রাসূলকে গালি দিয়ে ব্লগ লেখে,দাড়ি-টুপি-ধারি ব্যক্তিদের ফাঁসি চায়,ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে -তাতে কি বিস্ময়ের কিছু থাকে? বরং প্রমাণ মেলে ভারতের স্ট্রাটেজী ফল দিয়েছে। শাহবাগের মোড়ে বিগত একমাস ধরে তো সেসব ভারতীয় ফসলদেরই লাগাতর প্রদর্শণী চলছে। তারা শুধু জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করতে চায় না,নিষিদ্ধ করতে চায় সকল ইসলামপন্থিদের রাজনীতি।রুখতে চায় আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠা।



লক্ষ্য ইসলামের বিজয়রোধ

আওয়ামী লীগ বিগত ৫ বছর ধরে ক্ষমতায়। এর আগে তারা আরো দুইবার ক্ষমতায় এসেছে। তাদের রাজনৈতীক এজেন্ডা তাই কোন গোপন বিষয় নয়। ইসলামের বিজয় রোধ এবং যে কোন মূল্যে আল্লাহর শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রোধই তাদের রাজনীতি।সেটি তারা বার বার নানা ভাবে প্রমাণ করেছে।তাছাড়া দলটির প্রতিষ্ঠাও ইসলামের খেদমতের জন্য হয়নি। বরং এদলটির সকল সামর্থ ব্যয় হয়েছে মুজিব বা হাসিনার ন্যায় যারা ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য তাদের ক্ষমতায় বসানোর কাজে। ইসলামের জাগরণ ঘটলে তাদের রাজনীতি যে ড্রেনে গিয়ে পড়বে সেটি তারা জানে। ফলে নিজেদের রাজনীতি বাঁচাতে তারা কোয়ালিশন গড়েছে দেশ-বিদেশের সকল ইসলামবিরোধী শয়তানি শক্তির সাথে।দিল্লির শাসকচক্রের সাথে শেখ হাসিনার গভীর বন্ধুত্বের কারণ এ নয় যে,তাদের মিলটি ভাষা,পোষাক-পরিচ্ছদ ও খাদ্য-পানীয়ে। বরং সে মিলটি তাদের তাদের রাজনৈতীক এজেন্ডায়। রাজনৈতীক সম্প্রীতি তো গড়ে উঠে এরূপ অভিন্ন এজেন্ডার উপর ভিত্তি করে। এজন্যই ভারতীয় শাসককে মুজিব বা হাসিনার ন্যায় বাঙালী হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। ইন্দিরা ছিলেন এলাহাবাদের উর্দুভাষী মহিলা। কিন্তু তারপরও মুজিবের সাথে তার প্রচন্ড সখ্যতা জমেছিল। কারণ ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থহানী ঘটাতে উভয়ের রাজনৈতীক এজেন্ডায় ভীষণ মিল ছিল। কিন্তু সে মিলটি বাংলাদেশের কোন ইসলামপন্থি দল বা কোন আলেমের সাথে না থাকায় মুজিব তাদের সাথে তিনি একটি দিনের জন্যও একতা গড়তে পারেননি। ইন্দিরা গান্ধির এজেন্ডা ছিল,ভারতের দুই পাশে বিস্তৃত বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে খন্ডিত করা। এবং সুযোগ বুঝে খন্ডিত দুর্বল বাংলাদেশকে ভারতভূক্ত করা। এটিই হলো ভারতীয় রাজনীতির বহুপরিচিত নেহুরু ডকট্রিন। সে লক্ষ্যে একটি রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য যে কোন ভারতীয় শাসকের ন্যায় ইন্দিরা গান্ধিরও প্রস্তুতি ছিল। কারণ তিনি জানতেন,পাকিস্তান একদিন পারমানবিক শক্তির অধিকারি হবেই। তখন ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে মোতায়েন করা হবে পারমানবিক বোমা বহনকারি দূর পাল্লার বহু ভারি মিজাইল। তখন ভারতের পক্ষে পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা,তিস্তা, গোমতির পানি ডাকাতি করা সম্ভব হবে না। সম্ভব হবে না বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বাজার দখল ও অর্থনৈতিক শোষণ। সেটি করতে গেলে অনিবার্য হযে উঠতো পারমানবিক যুদ্ধ।তখন পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা হামলার মুখে পড়বে সমগ্র ভারত। সেরূপ একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই ভারত তাই পাকিস্তান খন্ডিত করণে উঠে পড়ে লাগে। সে যুদ্ধটি শুরুর জন্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে মুসলিম স্বার্থ-বিরোধী একজন ভারতভক্ত নেতার প্রয়োজন ছিল ইন্দিরার। সে ভূমিকা পালনে ১৯৭১য়ে নিজেকে সঁপে দেয় শেখ মুজিব।



মিত্র ইসলামের শত্রুর

ব্যক্তির আসল পরিচয় জানা যায় তার বন্ধদের দেখে। কারণ প্রত্যেকেই চেতনা-চরিত্রের দিক দিয়ে অতি কাছের মানুষকেই বন্ধু রূপে বেছে নেয়। চোর-ডাকাত,ব্যাভিচারি বা মদ্যপায়ীদের বন্ধুত্ব তাই কোন ঈমানদারের সাথে হয় না। ইসলামের শত্রুপক্ষও তাই কোন আলেম-উলামাকে দলে নেয় না। তাদের সাথে রাজনৈতীক মৈত্রী গড়ে না। ইসলামের শত্রুপক্ষের রাজনীতিতে তাই নাস্তিক কম্যুনিষ্ট, ভারতীয় পৌত্তলিক, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ব্লগারগণ আপনজন রূপে গৃহীত হয়। নাস্তিক ব্লগার রাজীব নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা যেভাবে তার ঘরে ছুটে গিয়েছিলেন সেটি রক্তের টানে নয়। বরং একই আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে। বাংলাদেশ শতাধিক ইসলাম প্রেমিক মানুষ নির্মম ভাবে পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা কি তাদের বাসায় একবারও গিয়েছেন বা তাদের মৃত্যুতে একটি বারের জন্য দুঃখ্য প্রকাশ করেছেন?



ইসলামের চিহ্নিত শত্রুদের সাথে শেখ হাসিনা ও তার পিতার সহযোগিতাপূর্ণ নীতি কোন গোপন বিষয় নয়। বর্তমানে ভারতে বসবাসরত চিত্তরঞ্জন সুতার হলো বাংলাদেশ খন্ডিত করে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা নিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলনের নেতা। ইসলাম ও মুসলমানদের সে ঘোরতর শত্রু। তেমনি মুসলিম বিরোধী চেতনা ছিল মনরঞ্জন ধর ও ফনিভূষন মজুমদারের। অথচ আওয়ামী লীগ এ তিন’জনকেই তাদের দলের এমপি বানিয়েছিল। মনরঞ্জন ধর ও ফনিভূষনকে তো মন্ত্রীও বানিয়েছিল। মনরঞ্জন ধর ছিলেন এক সময় কংগ্রেসের নেতা। ১৯৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার সংসদে বাংলাকে বিভক্ত করে পশ্চিম বাংলাকে ভারতভূক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। জ্যোতি বসুদের কারণেই কলকাতা পূর্বপাকিস্তানে আসেনি। অথচ সেই জ্যোতি বসু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগনেতাদের ঘনিষ্ট বন্ধু। শুধু তাই নয়,শেখ হাসিনা মন্ত্রী বানিয়েছেন ও কোলে টেনে নিয়েছেন বাংলাদেশের রাজনীতির অতি কট্টোর নাস্তিক ও কম্যুনিস্টদের। সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন,শাহবাগের যুবকদের থেকে তিনি অনুপ্রেরণা পান। নাস্তিক শাহবাগীদের সাহস জোগানোর জন্য সংসদ থেকে একটি প্রতিনিধি দলকেও সেখানে পাঠানো হয়।অথচ শাহবাগের মূল আয়োজক হলো সেসব ব্লগারগণ যারা ইন্টারনেটে দীর্ঘকাল যাবৎ মহান আল্লাহতায়ালা,তাঁর মহান নবী (আঃ) ও নবীজী (সাঃ)র স্ত্রী উম্মেহাতুল মু’মিনদের নিয়ে ইতর ভাষায় যা ইচ্ছে তাই লিখে আসছে। তাদের সে কুকর্ম জনসম্মুখে প্রকাশ পাওয়ায় বাংলার তৌহিদী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেও শেখ হাসিনা ও তার আা্ওয়ামী লীগ সে কুলাঙ্গরদের সমর্থণ দেয়া বন্ধ করেনি। বরং গণধোলাই থেকে বাঁচাতে এসব শাহবাগী নাস্তিক ব্লগারদের দিবারাত্র দেয়া হচ্ছে পুলিশী প্রটেকশন। শেখ হাসিনা তো নিহত ব্লগার রাজীবের বাসায় গিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন। রাজীবকে তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ রূপে ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়,নাস্তিক ব্লগারদের বক্তৃতাকে প্রায় সকল টিভি চ্যানেলে লাগাতর দেখানো ব্যবস্থা করা হয়েছে।



ভারতের প্রতি নিমকহালালীর রাজনীতি

আওয়ামী লীগের রাজনীতি মূলত ভারতের প্রতি নিমকহালালীর রাজনীতি। ১৯৭৫য়ের পট পরিবর্তনের পর শেখ হাসিনা বহুদিন দিল্লিতে কাটান। ভারতের নিমক তার পেটে তাই কম পড়েনি। পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোর ন্যায় বিগত নির্বাচনেও হাসিনা ভারত থেকে বিপুল অর্থ পেয়েছেন। আর অর্থের সাথে তো শর্তও আসে। ফলে ক্ষমতায় আসার পরই তারা লিপ্ত হয় শর্ত পূরণে তথা ভারতীয় প্রভুর মনোবাসনা পূরণে। হাত দেয় জনগণের ঈমানে। ভারতীয় প্রজেক্টের অংশ রূপেই শেখ মুজিব নাস্তিক কম্যুনিস্টদের দলগড়ার পূর্ণ আজাদী দিলেও সে আজাদী তিনি ইসলামপন্থিদের দেননি। বরং তিনি ইসলামপন্থিদের শত্রুরূপে চিহ্নিত করেছেন। সে নীতি নিয়েই চলেছে শেখ হাসিনা। কিন্তু জনগণ এখন জেগে উঠেছে। জনগণের সে জাগ্রত রূপটি দেখা গেছে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ ও সমাবেশে। দেখা গেল ১১ই এপ্রিল ফটিকছড়িতে। ফটিকছড়ির জনগণ সেদিন ছাত্রশিবিরের ডাকা হরতাল স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে হরতাল পালন করছিল। হরতালের মধ্য দিয়েই জনগণ জানিয়ে দেয় সরকারের বিরুদ্ধে তারা কতটা বিক্ষুব্ধ। এটি ছিল তাদের নাগরিক অধিকার। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণকে সে অধিকার দিতে রাজি নয়। বিরোধী দলকে শান্তি পূর্ণ সমাবেশ করতে দেয়া দূরে থাক তাদেরকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে দিতেও রাজী নয়। জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের তো তারা তাদের দলীয় অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও ঢাকা মেট্রোপটিটান পুলিশ কমিশনার তো শিবির কর্মী দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের কারাবন্দী করা হয়েছে। সেখানে তাদের উপর অমানষিক নির্যাতনও করছে।





যুদ্ধও যখন অপরিহার্য হয়

হরতালে দেশের ক্ষতি হয় তা তো শিশুও বুঝে। সে নসিহত আওয়ামী সরকারের দেয়ার হক আছে কি? দলটি বিএনপির ২০০১-২০০৬ শাসানামলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। হরতালের দিনে অফিসগামী মানুষদের তারা উলঙ্গ করেছে। যাত্রী-ভর্তি বাসে আগুন দিয়ে বহু মানুষ হত্যা করেছে। আজ এরাই আবার হরতালের বিরুদ্ধে নসিহত করে! অথচ সে নসিহত কি তারা নিজেরাও মানে? নিজে মানলে গত ৬ এপ্রিলের লংমার্চ ঠেকাতে তারা দুই দিনের হরতাল দিল কেন? সবকিছুই তারা করে নিজেদের রাজনৈতীক স্বার্থে। রাজনৈতীক স্বার্থে তারা যেমন নিজেরা ১৭৩ দিন হরতাল করেছে,তেমনি আবার হরতালের বিরুদ্ধেও কথা বলে।তাছাড়া দেশের অর্থনীতির ক্ষতি কি শুধু হরতালে হয়? সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় দেশের অর্থনীতির উপর চুরি-ডাকাতিতে। সরকারি দলের লোকদের হাতে দেশের ব্যাংকিং খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেল। ভয়ানক ডাকাতি হয়ে গেল শেয়ার মার্কেটে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠিত হলো হলমার্ক,ডেস্টিনির মত কোম্পানীগুলোর হাতে। মন্ত্রীদের দূর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ঋন বন্ধ হয়ে গেল। সরকার কি এসব দুর্নীতিবাজদের একদিনের জন্য শাস্তি দিয়েছে? দেশের অর্থনীতির প্রতি সরকারের সামান্য দরদ থাকলে নিজ দলে এসব চোর-ডাকাতদের কি প্রশ্রয় দিত?



দেশের স্বার্থে এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা বাঁচাতে শুধু বার বার হরতাল নয়,দেশবাসীকে লাগাতর যুদ্ধও করতে হয়।আর যুদ্ধ তো রক্তপাত ঘটবেই। হাজার হাজার মানুষের জানমালের কোরবানীও হয়। অনেক সময় সে কোরবানী অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ দেশের উপর থেকে জালেমের শাসকদের দখলদারি কি শুধু নামায-রোযা,দোয়া-দরুদের কারণে শেষ হয়? এমন মহান বিপ্লবী কাজ তো প্রচুর কোরবানি চায়। আর সে কোরবানীই মু’মিনদের জন্য জান্নাতপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে। ইসলামে তাই নামায রোযার পাশাপাশি জিহাদের বিধানও দেয়া হয়েছে। নবীজী (সাঃ)তাই যুদ্ধের পর যুদ্ধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেয়া হলো,যদিও তোমাদের নিকট এটি অপ্রিয়।কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ করো সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।”-(সুরা বাকারা আয়াত ২১৬)।তাই ইসলামের প্রাথমিক যুগে শত্রুর নির্মূল ও মুসলমানদের বিশ্বশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বহুরক্ত ও বহুঅর্থ ঢালতে হয়েছে। আবু লাহাব ও আবু জেহেলদের ন্যায় দুর্বৃত্তগণ নিছক দোয়ার বদলে নির্মূল হয়নি। তাদের নির্মূলে নবীজী (সাঃ) ও তার সাহাবায়ে কেরামকে নাঙ্গা তরবারি নিয়ে রণাঙ্গনে দাড়াতে হয়েছে। বহুরক্ত ও বহঅর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।



আবু জেহেল আবু লাহাব মারা গেলেও তাদের পৌত্তলিকতা তো আজও বেঁচে আছে। বেঁচে আছে তাদের বিষাক্ত থাবাও। অন্তুত সেটি প্রবল ভাবে বেঁচে শেখ হাসিনার ন্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মগজে। তাই বাংলাদেশের মুসলমানগণ আজ কত্টা বিপদে পড়েছে সেটি কি বুঝতে বাঁকি থাকে? শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৫ই অক্টোবর রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গা পূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন,“আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো বাহন চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে—তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখেই-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।”-(দৈনিক আমার দেশ,৬ই অক্টোবর, ২০১১)।
 কথা হলো পৌত্তলিক চেতনা তো একাকী বেঁচে থাকে না। সে চেতনার সাথে প্রবল ভাবে বেঁচে থাকে ইসলাম-নির্মূলের চেতনাও।তখন সে পৌত্তলিক চেতনায় ইসলামপন্থিদের রাজনীতি নির্মূলের চেতনা আসবে, ইসলামি নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানোর খায়েশ জাগবে, ইসলামি বিরোধী ব্লগারদের বীর মুক্তিযোদ্ধা বলা হবে –এ সবই কি স্বাভাবিক নয়?





জান্নাত লাভের ব্যবসা

যারা ইসলামের প্রতিষ্ঠা চায় তাদের জন্যও রয়েছে ভাবনার বহু বিষয়। যারা মনে করে নিয়েছে,দেশজুড়ে দু’চার বার হরতাল করলে বা কিছু মিছিল-সমাবেশ করলেই ইসলামবিরোধী শক্তি উৎখাত হবে এবং বাংলাদেশে ইসলামের বিজয় ঘটবে –সে ধারণাটি ভূল। কোন বিপ্লবই এত সহজে হয় না। এটি শয়তানী শক্তির বহুদিনের প্রতিষ্ঠিত শেকড় উপড়ানোর কাজ। কোন একটি গাছের শিকড় উপড়াতেও বহু মেহনত ও ব্হু সময় লাগে। ফলে বাংলাদেশে ইসলামি বিপ্লবের লক্ষ্যে বহুপথ ও বহু কোরবানী এখনও বাঁকি।পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিয়ে কীতকার্য হতে হয়। তবে এমন লড়ায়ে মু’মিনের জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জনটি রাজনৈতিক বিজয় নয়।সেটি অর্জনটি হলো জীবনের সকল গোনাহ থেকে পরিত্রাণ লাভ,সে সাথে করুণাময় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হাশর দিনে মাগফিরাত লাভ। সে মাগফিরাতের পথ ধরেই জুটে জান্নাত লাভ।তবে নিজ ভূমিতে রাজনৈতিক বিজয়ও যে মুমিন মাত্রই পছন্দ করে -সেটিও মহাজ্ঞানী আল্লাহর অজানা নয়।তবে মু’মিন সেটি পায় একটি বোনাস রূপে। আখেরাতের বিশাল অর্জন থেকে এ রাজনৈতিক বিজয়টি এক বাড়তি পাওনা মাত্র। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এমন একটি রাজনৈতীক বিজয়ের প্রতিশ্রুতিটা এসেছেমাগফিরাত লাভের প্রতিশ্রুতির পরে। তবে এমন একটি বিজয় না পেলেও আখেরাতে ঈমানদারের প্রাপ্তিতে কোন কমতি হয় না। হযরত হামযা (রাঃ)র ন্যায় বহু উচ্চস্তরের সাহাবী সেরূপ বিজয় দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু তাতে কি তারা ব্যর্থ হয়েছেন? তারা তো কাজ করেছেন আখেরাতে পুরস্কার লাভের লক্ষ্যে। এবং সেটি তার বিশাল ভাবেই পাবেন।



কোন কিছুই বিনা মেহনতে জুটে না। সামান্য মুনাফার জন্যও ব্যক্তিকে ব্যবসায় বসতে হয়।সে ব্যবসায় তার মেধা,অর্থ,শ্রম ও সময়ের বিনিয়োগ ঘটাতে হয়। মহান আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দাহর মহাকল্যাণ চান। সে কল্যাণ পৌঁছাতে তাকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দিতে চান যাতে কোন লোকসান নাই। বরং আছে অতুলনীয় এক বিস্ময়কর মুনাফা। সেটি জান্নাত পাওয়ার মুনাফা। সমগ্র পৃথিবী এবং তার সকল পাহাড়-পর্বত ও সাগর-মহাসাগর যদি সোনা হয়ে যায় এবং কোন ব্যক্তি যদি পৃথিবীময় সে সোনার মালিকও হয়ে যায় তবুও কি তা দিয়ে সে জান্নাতের এক ইঞ্চি ভূমি কিনতে পারবে? পারবে কি সে সম্পদের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে? মহান আল্লাহপাক সে মহান ব্যবসার সন্ধানটি দিয়েছেন এভাবে,“হে ঈমানদারগণ!তোমাদের কি এমন এক ব্যবসার কথা বলে দিব যা তোমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে বাঁচাবে? (সেটি হলো) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনো এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো। যদি তোমরা জানতে,এটিই হলো তোমাদের জন্য কল্যাণকর।(এর বরকতে)আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচে দিয়ে ঝরণাধারা প্রবাহিত,আর সে চিরস্থায়ী জান্নাতে তোমাদের জন্য দিবেন উত্তম ঘর। এটি একটি বড় কামিয়াবী।আর অন্যান্য জিনিষ যা তোমরা পছন্দ করো (তাও তোমাদের দেয়া হবে)আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য দিবেন এবং খুব শীঘ্রই দিবেন একটি বিজয়।(হে রাসূল!এ বিষয়ে) মু’মিনদের সুসংবাদ দান করুন।” –(সুরা সাফ আয়াত ১০-১৩)।



উপরুক্ত আয়াতগুলিতে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণার শিক্ষণীয় মূল বিষয়টি হলো,জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি লাভ,হাশর দিনে মাগফেরাত লাভ ও পরকালে জান্নাত লাভ এবং দুনিয়ার বুকে রাজনৈতীক বিজয় লাভের জন্য ঈমানদারের জীবনেও লাগাতর একটি ব্যবসা চাই। সে ব্যবসায়ে জানমালের বিনিয়োগ চাই। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত সে ব্যবসাটি হলো জিহাদ। মুসলমান হওয়ার অর্থ তাই শুধু কালেমা পাঠ নয়। স্রেফ নামায-রোযা,হজ-যাকাত পালনও নয়।বরং মহান আল্লাহর নির্দেশিত এ ব্যবসাকে তথা জিহাদকে জীবনের মূল ব্যবসা রূপে গ্রহণ করা। স্রেফ নামায-রোযা,হজ-যাকাত ও অন্যান্য ইবাদত মূলত মূল ব্যবসায়ে তথা জিহাদে ব্যক্তিকে আধ্যাত্মীক ভাবে প্রস্তুত করে।সে প্রস্তুতি না আসলে বুঝতে হবে তার ইবাদতেই সমস্যা আছে। প্রতিটি সাহাবায়ে কেরামের জীবনে মূল ব্যবসা ছিল জিহাদ। নানা পেশায় তাঁরাও কাজকর্ম করেছেন,তবে সে পেশাগুলো তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল না। সেগুলি ছিল নিছক জীবন নির্বাহের কৌশল। মূল লক্ষটি ছিল আল্লাহগর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জিহাদ। এবং সে জিহাদের মাধ্যমে আখেরাতে মাগফেরাত লাভ ও জান্নাত লাভ।



ক্ষতির ব্যবসা

মানুষের সকল ব্যবসা ও সকল বিনিয়োগ শুধু ক্ষতির অংকই বাড়ায় যদি তা ইসলামের পথে না হয়। সে সত্যটি পবিত্র কোরআনের সুরা আসরে বলা হয়েছে এভাবে,“সময়ের কসম, নিশ্চয়ই সকল মানুষই ক্ষতির মধ্যে। একমাত্র তারা ব্যতীত যার ঈমান এনেছে,নেক আমল করেছে এবং একে অপরকে সৎ কাজের নসিহত করেছে এবং সবর ধারণ করেছে।” আর সবচেয়ে বড় নেক আমল হলো কাউকে অর্থদান, খাদ্যদান বা পথ থেকে কাটা সরানো নয়। বরং সেটি হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের বুক থেকে তাগুতী তথা শয়তানি শক্তির দখলদারি সরানোর কাজ। ঘন মেঘ যেন সূর্যকে আড়াল করে রাখে কোরআনের সত্যকেও তেমনি আড়াল করে রাখে শয়তানি শক্তির হুকুমত। এভাবে তারা জাহিলিয়াত যুগের অন্ধকার নামিয়ে আনে। বাংলাদেশে আজ সেকাজটিই ব্যাপাক ভাবে হচ্ছে। জাহিলিয়াত যুগে মানুষ আল্লাহর ঘরে মুর্তি বসিয়েছিল। আর আজ বাংলাদেশে মুর্তি বসানো আছে নানাস্থানে। সেগুলিতে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল চড়ানো হচ্ছে।



মহান আল্লাহতায়ালা যেমন ব্যক্তির ঈমান ও ইবাদত-বন্দেগী দেখেন,তেমনি তার প্রদর্শিত ব্যবসায় জান ও মালের বিনিয়োগও দেখেন। আল্লাহর অবাধ্যতা তথা কুফরি হয় যেমন তাঁর নির্দেশিত নামায-রোযা ও হজ-যাকাতের ন্যায় ইবাদত পালন না করায়,তেমনি অবাধ্যতা ঘটে যখন আল্লাহর নির্দেশিত ব্যবসায় জানমালের বিনিয়োগ করা না হয়। আজকের মুসলমানদের দ্বারা বড় অবাধ্যতা হচ্ছে তো এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। তাদের সমুদয় সময়,শ্রম ও মেধা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের পেশাগত সাফল্য অর্জনে।নিজেদের পেশাগত সাফল্যে আনন্দ চিত্তে ভাবছে তারা ভালই করছে। অথচ এমন পেশাগত সাফল্যের বড়াই তাদের জাহান্নামে নিয়ে পৌছাবে।পবিত্র কোরআনে তাদের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে,“(হে মুহাম্মদ তাদেরকে) বল, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খবর শুনাবো? (তারা হচ্ছে) সে সব ব্যক্তি যারা জীবনের সকল প্রচেষ্টা শুধু পার্থিব জীবনের জন্য নিয়োজিত করে এবং তারা ভাবে কর্মে তথা পেশাগত ভাবে তারা কতই না উত্তম কাজ করছে।”-(সুরা কাহাফ,আয়াত ১০৩-১০৪)।



তাই সামান্য কয়েক দিনের হরতাল পালনে মুসলমানের জিহাদ শেষ হবে সেটি কি আশা করা যায়? তাছাড়া এ জিহাদ তো কি শুধু হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে? হাসিনা ও তার ১৪দলীয় মিত্রবাহিনীর লোকেরা তো এ যুদ্ধে নিছক ফুটসোলজার মাত্র। এ যুদ্ধের আসলে জেনারেলগণ তো যুদ্ধ লড়ছে দিল্লিতে বসে। যেমনটি লড়েছিল ১৯৭১য়ে। ভারত হাসিনার ঘাড়ে বন্দুক রেখে মূল শত্রু ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে আঘাত হানছে মাত্র। ফলে হাসিনা গদি উল্টে গেলে ভারত অন্যদের ঘাড়ে বন্দুক রাখবে। মুজিবের মৃত্যুর পরা তারা খালেদ মোশাররফকে বেছে নিয়েছিল। অতীতে জেনারেল এরশাদ ও জেনারেল মঈনকেও ভারত ব্যবহার করেছে।ভবিষ্যতে অন্যদেরও বেছে নিবে। তাছাড়া এমন বিশ্বাসঘাতক উৎপাদনে বাংলাদেশের ভূমি কি এতটাই অনুর্বর?



জিহাদেই শক্তি

কোন দেশে যুদ্ধ শুরুর মধ্যে যেমন নানা দুঃসংবাদ থাকে তেমনি প্রচণ্ড একটি সুংবাদও থাকে। কারণ যুদ্ধ জাতির জীবনে একটি প্রসব বেদনা। যুদ্ধই মানব ইতিহাসে বড় বড় বিপ্লব প্রসব করেছে। নির্মাণ করেছে বড় বড় সভ্যতা। যুদ্ধের মধ্য দিয়েই জাতির জীবনে জন্ম নেয় সাহসী মোজাহিদের। নির্মূল হয় রাজনৈতীক ও সামাজিক জঞ্জাল। পরিবর্তন আসে রাজনৈতিক ও আদর্শিক মানচিত্রে। তাই যুদ্ধ সব জাতিকে দুর্বল করে না। বহু জাতিকে শক্তিশালীও করে। অফুরন্ত শক্তি ও প্রাণের সঞ্চারও করে। যুদ্ধের পর যুদ্ধ করেই প্রাথমিক কালের মুসলমানগণ বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভুত হয়েছিলেন।পরাজয় তো তখনই শুরু হয়েছে যখন মুসলমানগণ যুদ্ধে আগ্রহ হারিয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধ তো জান্নাত লাভের চাবি। এখানেই তো মু’মিনের মূল পরীক্ষাটি হয়। পবিত্র কোরআনের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাই ঘোষণা করেছেন,“তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনও তোমাদের উপর তোমাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অবস্থা আসে নাই। তাদেরকে আক্রান্ত করেছিল অর্থ-সংকট,দুঃখকষ্ট;(ঈমানের সে পরীক্ষায়)তারা ভীত এবং প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল।এমন কি রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাঁরা বলে উঠেছিলেন,“আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?” জেনে রাখো,অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।”-(সুরা বাকারা,আয়াত ২১৪)। আরো বলা হয়েছেঃ “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে আর কে ধৈর্যশীল আল্লাহ সেটি এখনও প্রকাশ করেননি।”–(সুরা আল ইমরান, অয়াত ১৪২)। একই চেতনা ব্যক্ত হয়েছে নবী-জীবনের জিহাদে ও জিহাদ বিষয়ক তাঁর অসংখ্য হাদীসের মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে সহীহ মুসলিম শরিফের প্রসিদ্ধ হাদীসঃ “যে ব্যক্তি মৃত্যূবরণ করলো অথচ জিহাদ করলো না এবং জীবনে জিহাদে যোগ দেয়ার বাসনাও করলো না সে ব্যক্তির মৃত্যু হলো মুনাফিক রূপে।” মহান আল্লাহতায়ালা আরো বলেছেন,“মানুষ কি মনে করে যে,“আমরা ঈমান এনেছি” শুধু এটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে,আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? অথচ তাদের আগে যারা ছিল তাদের সবাইকে আমি পরীক্ষা করেছি।আল্লাহকে তো অবশ্যই দেখে নিতে হবে, (ঈমান এনেছি বলার মধ্যে)কে সত্যবাদী,আর কে মিথ্যুক।”–(সুরা আনকাবুত আয়াত ২-৩)।



উপরুক্ত আয়াতগুলিতে যা বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে জিহাদ বিষয়ক এমন নির্দেশাবলী বহু। মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রতিটি মু’মিন বান্দাহকে জান্নাতের নিয়ামত ভরা জীবনের পুরস্কার দিতে চান। তবে সেটি কীরূপে সম্ভব -জান্নাতের সে চাবিটি তিনি কোন গোপন স্থানে রাখেননি। বরং পবিত্র কোরআনে সে চাবীর সন্ধান দিয়েছেন বার বার। সে চাবীটি যে আল্লাহর পথে জিহাদে সে বিষয়টি তিনি নানা ভাবে সুস্পষ্ট করেছেন।সাহাবায়ে কেরামের ন্যায় প্রতি যুগের প্রকৃত ঈমানদারগণ সে চাবীকে চিনতে ভূল করেননি,ভূল করনেনি শক্ত হাতে তা আঁকড়ে ধরতেও। নবীজীর প্রত্যেক সাহাবা তো সে চাবি নিয়ে জেহাদ করেছেন এবং অধিকাংশ সাহাবা শহীদও হয়েছেন।ফলে তারা জান্নাতের সুখবরও পেয়েছেন।তাদের সম্পর্কেই তো মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন,“তাদের উপর আল্লাহ রাজী আছেন এবং তারা রাজী আছেন আল্লাহর উপর” –(সুরা বাইয়েনাহ)। মহান আল্লাহর প্রদর্শিত ব্যবসায় জানমালের সর্বোচ্চ বিনিয়োগের কারণে তারাই সমগ্র মানব ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।মুসলমানগণ শুধু মুখে ঈমান এনেছি বলবে,নামায-রোযা ও হজ-যাকাত পালন করবে,আর তাতেই পরকালে তারা জান্নাত পাবে -তেমন সহজ পথ যে আল্লাহতায়ালা খোলা রাখেননি উপরের আয়াতগুলোতে কি সেটাই প্রকাশ পায় না? নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ এ বিষয়টি শতভাগ বুঝেছিলেন। ফলে সে আমলে এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেননি। তাদের কাছে সে জিহাদটি ছিল ইসলামের বিজয়,রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা,শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ও সে লক্ষ্যে জালেম শক্তির নির্মূলে জানমালের সর্বাত্মক বিনিয়োগ।



বাংলাদেশীদের সৌভাগ্য

কোন দেশে জিহাদ শুরু হলে বুঝতে হবে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সেখানে মু’মিনদের চুড়ান্ত পরীক্ষাটিও শুরু হয়ে গেছে। আর এমন পরীক্ষা শুরু হওয়াটাই যে কোন ঈমানদারের জন্য বড় সুংবাদ। কারণ প্রতিটি পরীক্ষাই অংশগ্রহণকারীদের জন্য বড় রকমের প্রমোশনের সুযোগ নিয়ে আসে।তবে সে প্রমোশনের জন্য তাকে সে পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। আর তাছাড়া পরীক্ষায় বসার জন্যও তো যোগ্যতা লাগে। বিবেকশূণ্য গরুছাগলদের তো পরীক্ষায় হলে বসানো যায় না! ফলে যে দেশে জিহাদ নাই,বুঝতে হবে সে দেশের জনগণ মহান রাব্বুল আলমীনের দরবারে প্রমোশন পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়নি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির সরকার তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে এই সরকার।সরকারি মন্ত্রীগণ বলছে,শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠা পেলে বাংলাদেশে মধ্যযুগীয় অন্ধকার নেমে আসবে। এরূপ বক্তব্যের পর মহান আল্লাহতায়ালা,তাঁর মহান রাসূল (সাঃ) ও কোরআন-সূন্নাহর দুষমণ প্রমাণিত হওয়ার জন্য কি অন্য কোন দলীল লাগে? কাশ্মীর,মায়ানমার ও ভারতের মজলুম মুসলমানদের পক্ষ না নিয়ে হাসিনা সরকার ও তার ১৪ দলীয় জোট ভারতের শাসক শক্তির মিত্র হওয়াকেই অধীক গুরুত্ব দেয়। সরকারি টিভি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মালিকানাধীন পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে দাড়ি-টুপিধারিদের চরিত্র হরণ হচ্ছে লাগাতার।
এমন একটি ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে মুসলিম ভূমিতে জিহাদ খাকবে না সেটি কি ভাবা যায়?