Friday, May 10, 2013


কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ের প্রতিবাদে নিউ ইর্য়কে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ 
   

নিউ ইর্য়ক, ৯ মে: মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে নিউইর্য়কে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ‘কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশ আমেরিকানস এসোসিয়েশন’(কোব্বা)। 

৯ মে বৃহস্পতিবার নিউইর্য়কের ব্রুকলীন ম্যাকডোনাল্ড ও চার্চ এভিনিউতে  অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলটি প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় গ্রীন হাউজ রেষ্টুরেন্টে সমাবেশ করে সংগঠনটি।  
বক্তারা আরো বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর এই মামলাটির রায় দিয়েছেন আদালত। ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ছিল একজন তরুণ। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যুদ্ধপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের যত বিচার হয়েছে তার কোথাও এরকম একজন তরুণকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। একারণে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাসিঁর আদেশ পর্যালোচনা করলে সহজেই বুঝা যায় আদালত সরকারের ফরমায়েশী রায় দিয়েছেন।
তারা বলেন, প্রসিকিউশন পক্ষের ১৮ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়া  হলেও আসামীপক্ষের সাক্ষী সংখ্যা পাঁচজনে বেঁধে দেয়া হয়। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের অনেক সাক্ষী ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ হয়েছে। এই ধরণের বিতর্কিত রায় দিয়ে আদালতের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংশ করে দেয়া হচ্ছে। সরকার দেশের মানুষ ও বিচার বিভাগকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 
বক্তারা বলেন, তদন্তকারী সংস্থা ও প্রসিকিউশনের যোগসাজশে যে মিথ্যা কল্পকাহিনী রচিত হয়েছে  আর সেখানে ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা সেখানে হার মানিয়েছেন। 
তারা আরো বলেন, স্কাইপ কেলেংকারীর মাধ্যমে ট্রাইবুনালে চলা প্রহসনের বিচার জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ট্রাইবুনালের প্রধান বিচারকের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। ট্রাইবুনালে বিচারের নামে চলা প্রহসন দেখে বিশ্বব্যাপী এর গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। স্কাইপ কেলেংকারীর মাধ্যমে জণগনের কাছে প্রমাণ হয়েগেছে, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা, মাওলানা সাঈদী ও কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় সাজানো। বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ধর্ম ও ইসলামি চিন্তাবিদদের হত্যা করার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার গঠিত ট্রাইবুনাল গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। 
বক্তারা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় বাতিল করে তাকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানান।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. শওকত আলী, প্রগ্রেসিভ ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক কাজী মুহাম্মদ ইসমাঈল, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট প্রগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, ব্যাবসায়ী আমিনুর রসুল জামশেদ, রাজনীতিবিদ ইলিয়াস আহমেদ মাষ্টার, হেলাল উদ্দিন, আবুল হাশেম শাহাদাৎ, রফিকুল মাওলা, ওলামা ফেডারেশনের নেতা মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা সিহাবুদ্দিন, মাওলানা নায়েব আলী, মাওলানা দিদারুল আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাইফুল্লাহ বেলাল। শুরতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা জুনায়েদ আহমেদ।

Thursday, May 9, 2013

গণহত্যায় শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় কোরান খতম: ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রে দোয়া দিবস


     হত্যাযজ্ঞ শেষে লাশগুলোকে তাৎক্ষণিক
   কেমিক্যাল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়


 নিউ ইয়র্ক: ঢাকার মতিঝিলে গণহত্যায় শহীদ হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের রূহের মাগফেরাত কামনায় কোরান খতম ও দোয়া মুনজাতের আয়োজন করেছে নিউ ইয়র্কের ইমাম ও উলামাগণ। 
৮ মে বুধবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন উডসাইডের ফাতেমা মসজিদে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে আলেমরা ১০ মে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোতে দোয়া দিবস ঘোষণা করা হয়। 



মুনাজাতের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মাওলানা অধ্যাপক মহিবুর রহমান বলেন, ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে এতো বেশি আলেম ও ইসলাম প্রিয় মানুষকে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গভীর রাতে ঘুমন্ত ও জিকিররত ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর হত্যা চালিয়ে প্রমাণ সরকার প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মকে মুছে দিতে চায়। 
গণহত্যা তদন্তে জাতিসংঘ ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কোন নিরাপত্ত্বা নেই। প্রতিনিয়ত সরকারী বাহিনী আলেম উলামা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে।



গণহত্যায় একজন প্রত্যক্ষদর্শী আলেমের বরাত দিয়ে মাওলানা আজির উদ্দিন বলেন, গভীর রাতে খোলা আকাশে ঘুমন্ত মানুষের উপর গায়ের উপর সাজোয়া যান উঠিয়ে দিয়ে এবং ব্রাশফায়ার করে গণহত্যা চালিয়েছে সরকার। হত্যাযজ্ঞ শেষে লাশগুলোকে তাৎক্ষণিক কেমিক্যাল দিয়ে পুড়িয়ে সকাল হওয়ার আগে ক্লিন করা হয়। গণহত্যার প্রমাণ মুছে ফেলতে লাশের পোড়া অংশগুলোকে ট্রাক করে গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। 
অনুষ্ঠানে মাওলানা মুফতী রুহুল আমীনের পরিচালনায় আলেমদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, মুফতী আব্দুল মালেক, মাওলানা ইয়ামিন, ইমাম জাকারিযা মাহমুদ, মাওলানা রফিক আহমেদ, হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম, হাফিজ রফিকুল ইসলাম, মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, মাওলানা আবু সুফিযান, মাওলানা শাহজাহান, মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা রশিদ আহমদ ও মাওলানা ইউসুফ ও মাওলানা আনাসসহ নিউ ইযর্কের শতাধিক শীর্ষ আলেম। 

গণহত্যার বিচারে জাতিসংঘ মহাসচিবের নিকট স্মারকলিপি ও বিক্ষোভ সমাবেশ





হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের গণহত্যার
বিচারে জাতিসংঘ মহাসচিবের নিকট
স্মারকলিপি ও বিক্ষোভ সমাবেশ


নিউ ইয়র্ক: ঢাকার মতিঝিল শাফলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে গণহত্যার বিচার দাবীতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশী আমেরিকানস এসোসিয়েশন। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। 




৮ মে বুধবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ শেষে গণহত্যার তদন্ত ও বিচার দাবীতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয়। 



বিক্ষোভ সমাবেশে আব্দুল্লাহ আল আরিফের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আউওয়াল, মাওলানা জাকারিয়া মাহমুদ, আসসফা মুসলিম সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, সাংবাদিক শহিদুল্লাহ কায়সার, এডভোকেট আবুল হাসেম ও মাওলানা রশিদ আহমদ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মাহবুবুর রহমান।  



সমাবেশে বক্তারা বলেন, আলেম উলামা ও ধর্মপ্রমাণ সাধারণ মুসলমানদের গণহত্যার মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে দেশ থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে চায় সরকার। গভীর রাতে যখন হেফাজতে ইসলামের ঘুমন্ত ও জিকিররত নেতাকর্মীদের উপর সরকার এ নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।  





বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতার সাড়ে চার বছরে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ ৩ টি গণহত্যার মাধ্যমে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব গণহত্যা তদন্তের মাধ্যমে বিচার করার জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান বক্তারা। 





বক্তারা অভিযোগ করেন, গণহত্যাকে আড়াল করার জন্য দিগন্ত, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে মতিঝিল গণহত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার সমর্থিত মিডিয়াগুলো হেফাজতে ইসলাম নিয়ে কোরান পোড়ানো ও লুটপাটের মতো নির্লিপ্ত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। 
বক্তারা আরো বলেন, সরকার গণজাগরণ মঞ্চ নামে শাহবাগে মাসের পর মাস নাস্তিকদের লালন পালন করলো, আর মতিঝিলে নবী প্রেমিক আলেমদের এক রাতও সুযোগ না দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।  
বক্তারা বলেন, শাফলা চত্বরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে প্রমাণ করেছে যুদ্ধাপরাধের বিচারে নামে বাংলাদেশ থেকে ইসলামের নাম নেশানা মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। 
তারা আরো বলেন, শাহাবাগে ৩ মাস সরকারী সহযোগিতায় নাস্তিকরা তথকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নামে গান বাজনা করেছিল, তখন জনগণের সমস্যা হয়নি। অথচ শাফলা 
চত্বরে আলেম উলামাদের একরাতও থাকতে না দিয়ে ইতিহাসের জগন্যতম হত্যযজ্ঞ চালিয়েছে সরকার। এভাবে একটার পর একটা গণহত্যার ঘটনা ইতিহাস থেকে আওয়ামী লীগকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে। 



প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য বক্তারা বলেন, গণহত্যা বন্ধ করে সময় থাকতে রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা স্বীকার করে মন্ত্রী সভা নিয়ে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ ক্ষমতা থেকে আপনাদের টেনেহেচড়ে নামাবে। 



Tuesday, May 7, 2013

ইসলাম পন্থিদের গণহত্যায় নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ






           




               ইসলাম পন্থিদের গণহত্যায় নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ
    বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে জাতিসংঘসহ
    বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদ্যোগ নেয়ার আহবান  

নিউ ইয়র্ক: বাংলাদেশে আলেম উলামা ও সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মাজলিসুল উলামা ইউএসএ। অন্যদিকে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধের দাবী জানিয়ে প্রতিবাদী র‌্যালী করেছে বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরাম। এছাড়াও রাতের অন্ধকারে মতিঝিল শাফলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে আসসাফা ইসলামিক সেন্টার নিউ ইয়র্ক। 
মাজলিসুল উলামা ইউএসএ: 
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে নিরস্ত্র আলেম উলামা ও সাধারণ মানুষকে হত্যার প্রতিবাদে সভা করেছে নিউ ইয়র্কের ইমাম ও আলেমদের সংগঠন মাজলিসুল উলামা। ৬ মে রোববার নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের আসসাফা মসজিদে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। সভা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা দাবী মেনে নিয়ে সবধরণের হত্যাকান্ড বন্ধ করে দেশে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনার দাবী জানান আলেমরা। 




সভায় নিউ ইয়র্কের শীর্ষ আলেমরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে দেয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশী শক্তির ইন্ধনে মতিঝিল শাফলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে আলেম উলামা ও সাধারণ মানুষকে গণহত্যা করেছে সরকার। বাংলাদেশে নাস্তিক বিরোধী চলমান আন্দোলনে ৫ মে দিবাগত রাত মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে প্রমাণ করেছে সরকার ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। 
হেফাজতে ইসলামের অসংখ্য নেতা কর্মী গুম, হত্যা ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে আলেমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনকে তদন্তের আহবান জানান। সরকারে চলমান গণহত্যা বন্ধে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। প্রতিবাদ সভা থেকে সরকারের মন্ত্রী সভার পদত্যাগ দাবী করা হয়। 
মাজলিসুল উলামার প্রতিবাদ সভায় অধ্যাপক মাওলানা মহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন, লানা মুফতী রুহুল আমীন, মাওলানা রফিক আহমেদ, ইমাম আব্দুর রহমান, হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম, হাফিজ রফিকুল ইসলাম, মাওলানা ইমাম আজিরুদ্দিন, মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, মাওলানা আবু সুফিয়ান, মাওলানা আব্দুল্লাহ কামাল, মাওলানা আনাসসহ নিউ ইয়র্কের অর্ধশত শীর্ষ আলেম। সভা পরিচালনা করেন ইমাম জাকারিয়া মাহমুদ। 
বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরাম: 
হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের গণহত্যা নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদে ৫ম রোববার নিউইয়র্কের ব্রুকলীন ম্যাকডোনান্ড এভিনিউ’তে প্রতিবাদী র‌্যালী ও সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরাম (বাপফ)।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ র‌্যলিটি ব্রুকলীনের সেকেন্ড এভিনিউ থেকে শুরু করে ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ, দাহিল রোড, চার্চ এভিনিউ প্রদক্ষিণ করে। পরে ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ আবু সামীহাহ সিরাজুল ইসলাম, সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক কাজী মুহাম্মদ ইসমাঈল, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা ইব্রাহীম খলিল, মাওলানা সিহাবুদ্দিন, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার, নোয়াব আলী প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সাইফুল্লাহ বেলাল। 
সভায় বক্তারা বলেন, সরকার কর্তৃক আইনশৃংখলা রক্ষাকারীদের হীন দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে নবী করিম (সা:) প্রেমিক ধর্ম প্রাণ মুসলমানদেরকে গণহত্যা চালাচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আইন শৃংখলাবাহিনীর চদ্মাবরণে ভারতীয় বাহিনী নিবির্চারে গুলি চালায়ে শতশত মানুষকে হত্যা করেছে। ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে হামলায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ভয়াভহ আক্রমন ও গুলি চালানোর পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদেরও অস্ত্র হাতে দেখাগেছে। 
বাংলাদেশে চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংগঠনটি। এছাড়াও বাংলাদেশের মিডিয়ার প্রতি সরকারে নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবী জানায় সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকে আড়াল করার জন্য সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত মিডিয়া দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। 




আসসাফা ইসলামিক সেন্টার:
ইসলাম, আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) কে কটাক্ষকারী বিচার ও হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনকারীদের রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়ে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আসসাফা ইসলামিক সেন্টার নিউ ইয়র্কের সভাপতি ডা: নুরুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুফতী লুৎপুর রহমান ক্বাসিমী। তারা বাংলাদেশে ইসলাম পন্থিদের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদাযের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন। 
বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম পন্থিদের উপর ইতিহাসের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে সরকার। তারা বলেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর মুসলিম দেশকে ধ্বংশ করার জন্য অশুভ শক্তির ইঙ্গিতে ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) এর নামে কুৎসা রটিয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ মানুষের ধর্মীয় মুল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়ন ও নবী প্রেমিক লোকদের হত্যা বন্ধের আহাবান জানান তারা।  

Monday, May 6, 2013

যেভাবে মতিঝিলে গণহত্যা


যেভাবে মতিঝিলে গণহত্যা 



আমার পেশাগত জীবনের দীর্ঘ ১৪ বছরের মধ্য গতরাতের মতো এতো কঠিন পরিস্থিথির মুখে কোনদিন পড়িনি। জীবনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একাধিকবার ভয়ানক দুষ্কৃতিকারীদের সাথে গোলাগুলি করেছি । কিন্তু একবারও হাত কাঁপেনি। একবারও মনের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করেনি । কিন্তু গতরাতের অবস্থা ছিল পুরোটা ভিন্ন ।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় মানুষ থেকে কুকুরে পরিনত হতে হয় । কারন পশু না হলে আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করতে সবসময় পারবেন না । দায়িত্ব পালন ঠিক মতো না হলে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে । ঠিক যেমনটি হতে হয়েছিল গতকাল । একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম যা সারা জীবন হয়তো আমাকে তাড়া করবে যার নাম ‘অপারেশন ফ্রিডম ‘, অপারেশন ফ্রিডমের একটা মোহড়া গতকালেই আমরা দিয়ে দিলাম যা সবাইকে সংক্ষেপে একটু বলি ।
বিকালে একদিকে হেফাজত কর্মীদের দোকানপাট, রাস্তাঘাটে লাগানো আগুন নিভাচ্ছিলাম অন্যদিকে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থেকে যে কোন মূল্য সরিয়ে দেয়ার জন্য ভয়াবহ আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । রাত ২.৩০ মিনিট । একটা যুদ্ধের প্রস্তুতির মতোই ভারী অস্রসস্র নিয়ে আমরা সংখ্যায় তিন বাহিনী মিলে ১০/১১ হাজার মানুষ পলটন থেকে মতিঝিলে যাওয়া শুরু করলাম । পল্টনে দেখা মিললো বিএনপি, ছাত্রদলের শো দুয়েক কর্মীর। যাদের সবাইকে পল্টন ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো । আমাদের রণসাজ দেখে ঐ শো দুয়েক কর্মী কোনরকম বাৎচিত করার সাহস পেলো না। মতিঝিলে প্রবেশের তিনটি পথ বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র টিকাটুলি যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখলাম । হেফাজতের মঞ্চ থেকে মাইকে তখন ‘আল্লাহ ,আল্লাহ ‘ জিকির শোনা যাচ্ছিল । অপারেশন কমান্ডার হ্যান্ড মাইকে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলেন । কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে সরে না যাওয়ার ঘোষণা আসলো। এরপর আর কোন সুযোগ না দিয়ে তিনদিক থেকে ঘিরে রাখা সবাই একসাথে চোখ বন্ধ করে গুলি করা শুরু করলাম। সবার বন্দুকের নল বুক বরাবর তাক করা। আমি প্রথম ১/২ মিনিট বুক বরাবর নল তাক করে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম অন্য সবার মতো । এরপর নিজের বন্দুকের নলটি আরেকটু নিচের দিকে নামিয়ে পা বরাবর গুলি করতে লাগলাম হয়তো কোন বিবেকের তাড়নায় । ১৫/২০ মিনিট অবিরাম গুলিবর্ষণ চলতে লাগলো কমান্ডারের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত । কত শত /হাজার রাউনড গুলি ছোড়া হয়েছে তার কোন হিসাব নেই , হিসাব মেলানোও যাবে না । কারন তখন আমরা ১০ হাজার মানুষ থেকে ১০ হাজার পশু ছিলাম । হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বর থেকে পিছু হটে টিকাটুলি , হাটখোলার বিভিন্ন গলিতে ঢুকে গেলো । আমাদের অবিরাম গুলিও বন্ধ হয়ে গেলো । শাপলা চত্বর নির্দেশ মোতাবেক নিজেদের দখলে নিলাম । যখন গুলি থামলো তখন ধোঁয়াচ্ছন্ন চারদিক। ধোঁয়া সরে যখন একটু পরিস্কার হলো তখন দেখি শত শত নিথর দেহ, স্যান্ডেল , টুপি, ব্যাগ, পানির বোতল আর রক্ত । নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলাম । কতশত নিহত আর কতশত আহত হয়েছে তা গোনার সময় নেই , কারন যত কিছুই ঘটুক তা এই রাতের আধারেই ধুয়ে মুছে শেষ করতে হবে । সময় খুব কম । তাই বারবার তাগাদা আসছিল সব ধুয়ে মুছে পরিস্কার করার জন্য । মাঝে মাঝে নিজের বন্দুকের নলটি নিজের বুকের মাঝে তাক করছিলাম প্রচণ্ড ঘৃণায় , ক্ষোভ নিয়ে । কতজন নিহত হবে ? ১০০/৫০০/১০০০ বা তারও অনেক বেশি ? কিভাবে হিসাব করে? কার কি আসে যায়? আমি আমার চেয়ারে থাকতে পারলেই তো হলো । এই চেয়ার আমার, আমার বাপদাদার সম্পত্তি। এই চেয়ার আমি কাউকে দিবো না , কাউকে দিবো না । তার জন্য যদি আমাকে আরও লক্ষ লাশ ফেলতে হয় আমি ফেলবো । পশুদের এই রাজত্বে আমি একটি মানুষকেও রাখবো । শুধু থাকবে পশু আর আমি থাকবো সেই পশুদের রাজা ‘পশুরাজ’ হয়ে আমৃত্যু পর্যন্ত । আমার শুধু ভয় একটাই তা হলো ‘যে আগুন জ্বালিয়ে দিলাম সেই আগুন যদি পশুদের এই রাজত্বকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় ‘ তখন কি হবে ? জানিনা, জানতেও চাইনা । শুধু জানি আমি এক পশুরাজ ।


Friday, May 3, 2013

সিএনএন চ্যানেলের সঙ্গে শেখ হাসিনার ইন্টারভিউর হুবহু কনভারসেশন

সিএনএন চ্যানেলের সঙ্গে শেখ হাসিনার 





ইন্টারভিউর হুবহু কনভারসেশন 





সাম্প্রতিক সময়ে সাভারে বহুতল ভবন ধসের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ (এক্সক্লুসিভ) সাক্ষাৎকার প্রচার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউজ চ্যানেল সিএনএন-এ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন চ্যানেলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর। সাক্ষাৎকারে সাভারে ভবন ধস, গার্মেন্টস সেক্টরের নানা অনিয়ম, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে তাকে ‘স্টপ’ বলে উঠেন আমানপোর। এক্সক্লুসিভ এ ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তারা সাংবাদিকের এমন আচরণে রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকারটির হুবহু বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো।

আমানপোর : দেশের কয়েক হাজার গার্মেন্ট কারখানা পরিদর্শন করতে মাত্র ১৮ জন ইন্সপেক্টর রয়েছে। এতো কম সংখ্যক ইন্সপেক্টর দিয়ে কীভাবে এসব কারাখানা পরিদর্শন সম্ভব? (কারখানা ও ইন্সপেক্টরের এই হারকে ক্রেজি রেশিও বলে মন্তব্য করেন আমানপোর)
প্রধানমন্ত্রী: এই দুর্ঘটনার আগে আমরা শ্রমিক আইন করেছি। ইতোমধ্যে আমাদের মন্ত্রিপরিষদ এই আইন অনুমোদন করেছে এবং জাতীয় সংসদে তা পাস হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আমরা শ্রমনীতি গ্রহণ করেছি। আমরা এসব ব্যাপারে সচেতন এবং তা বাস্তবায়নে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু, পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি কিছুই আগে অনুমান (প্রেডিক্ট) করতে পারেন না। উন্নত দেশগুলোতেই আমরা এ ধরণের ঘটনা দেখছি। সাম্প্রতিককালে টেক্সাসে সারকারখানায় সংঘটিত দুর্ঘটনা আমরা দেখেছি। সুতরাং দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। যেহেতু এই শিল্প (গার্মেন্টস শিল্পের কথা বলতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী) ক্রমবর্ধমান শিল্প, বায়ার এবং ইনভেস্টররাও এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য গুড কনডিশনে আছে। .. ..

আমানপোর: প্রাইম মিনিস্টার... (তিনি প্রশ্ন করার চেষ্টা করেন এবং বিরক্তি প্রকাশ করে মাথা নাড়তে থাকেন। )

আমানপোর: প্রাইম মিনিস্টার... এসব কিছুই এখন হুমকিতে (আমানপোর প্রশ্ন করার চেষ্টা করেন)।
প্রধানমন্ত্রী: (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেসে বলেন) আমাকে কথা শেষ করতে দেয়া হোক।

আমানপোর: আমি আপনাকে কথা শেষ করার সুযোগ দিবো। কিন্তু, আপনি বলেছেন দুর্ঘটনা প্রেডিক্ট করা যায় না। অবশ্যই আপনি তা করতে পারেন না। কিন্তু, দুর্ঘটনার আগের রাতে বিভিন্ন টেলিভিশনের খবরে ফ্যাক্টরিটির বড় ধরণের ফাঁটলের চিত্র দেখানো হয়েছে। মালিকরা বলেছিলেন, এটা কিছুই না। ভবনের প্লাস্টার খসে পড়েছে। আর তার পরদিনই ভবনটি ধসে পড়ে। আপনি হয়তো প্রেডিক্ট করতে পারবেন না। কিন্তু, এই ঘটনার জন্য কারা দায়ী?
প্রধানমন্ত্রী: জি, আপনি সম্পূর্ণ ঠিক বলেছেন। (ফাঁটল দেখা দেয়ার পর) স্থানীয় প্রশাসন ও শিল্প পুলিশ কারখানার কাজ বন্ধ করে দেয়। এবং তারা সব শ্রমিককে আগের রাতে ভবন থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে কারখানার মালিকরা সকালে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে চাপ দেয়। তবে, স্থানীয় প্রশাসন ও শিল্প পুলিশ তাদেরকে থামাতে চেষ্টা করে। কিন্তু, মালিকপক্ষ বলে ভবনটি ধসে পড়বে না এবং পরিস্থিতি অতোটা খারাপ না এবং তারা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলে। শিল্প পুলিশরা তখনো বলেন শ্রমিকদের এই অবস্থায় কাজ করতে দেয়া ঠিক হবে না। কিন্তু সেই মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাই এটা সত্য না যে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম এবং আমরা তাদের ঠেকাতেও চেষ্টা করেছিলাম।

আমানপোর: সেটাই করা উচিত। জানা গেছে ভবনটির মালিক ওই ব্যক্তি (সোহেল রানার ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়) এবং তিনি ক্ষমতাসীন দলের ইয়ূথ উইংয়ের লিডার (যুবলীগ নেতা) যে দলটি আপনার। সে ইয়ুথ উইং এর শীর্ষ নেতা ...
প্রধানমন্ত্রী: না। এটা সত্য না।

আমানপোর: আমরা সেভাবেই জেনেছি ...
প্রধানমন্ত্রী: না। এটা সত্য না।

আমানপোর: ইউথ উইং এর... আপনি বলছেন এটা ঠিক না?
প্রধানমন্ত্রী: না না না... ভুল তথ্য

আমানপোর: অলরাইট...
প্রধানমন্ত্রী: আমি আপনাকে বলতে চাই, ভবনটিতে পাঁচটি গার্মেন্টস কারখানা ছিলো। পাঁচজন মালিক। তারা শ্রমিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। তারা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে পাঠায়।

আমানপোর: ওকে ..
প্রধানমন্ত্রী: সে (সোহেল রানাকে উদ্দেশ্য করে) একাই ভবনটির মালিক না। আমরা ইতোমধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা সব মালিককে গ্রেপ্তার করেছি। প্রকৌশলীসহ সবাইকে। আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা সবাইকে গ্রেপ্তার করেছি।

আমানপোর: তাদের ব্যাপারে কি ঘটতে যাচ্ছে? (প্রশ্ন শেষ করতে পারেননি আমানাপোর)
প্রধানমন্ত্রী: আমরা তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি না। (কয়েক সেকেন্ড দু'জনই চুপ..)
প্রধানমন্ত্রী: অপরাধী অপরাধীই...। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এটা জনগণকে দেয়া আমাদের ওয়াদা। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। ভবনটির মালিক এবং গার্মেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধে। সুতরাং আমাদের সরকার ... আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

আমানপোর: সমস্যা হলো জনগণ এ ধরণের প্রতিশ্রুতি অতীতে দেখেছে এবং তারা বিশ্বাস করে না যে অভিযুক্তদের শাস্তি হবে। তারা অপেক্ষায় আছে কীভাবে মামলাটি আগায়। কিন্তু আমি এই সেক্টরে দুর্নীতির বিষয়ে কিছু জানতে চাই... নানা প্রতিবেদনে জানা গেছে সে (সোহেল রানা) স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সাথে যোগসাজশ করে এবং নানা ধরণের অনিয়ম করে তার পরিবার সম্পদ করেছে। কিছুর তোয়াক্কা না করেই সে ভবন গড়ে তোলে। আরেকটা কথা ... ১০ শতাংশ সংসদ সদস্য এই ধরণের ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। এই সেক্টরে কি আপনি নানা ধরণের দুর্নীতির মুখোমুখি হচ্ছেন না?
প্রধানমন্ত্রী: দেখুন, আপনি অন্য বিষয়ে চলে যাচ্ছেন।

আমানপোর: না প্রধানমন্ত্রী। আমি অন্য বিষয়ে যাচ্ছি না।
প্রধানমন্ত্রী: আমি আপনাকে বলতে চাই ২০০৫ সালে এই জমিটি তারা দখল করে এবং ভবনটি গড়ে তোলে। সে সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো না। এটা আপনার জানা উচিত। আর এসব ফ্যাক্টরির মালিক ব্যবসায়ীরা। যে কোন ব্যবসায়ী যদি কোনো ধরণের অপরাধ করে আমাদের সরকার তার/তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা এখানে জনগণকে সেবা দিতে এসেছি। দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিতে না। অন্তত আমাদের সরকার এটা করে না। এটা আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি।

আমানপোর: অলরাইট। এটা শুনে জনগণ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে। এমনকি গত বছর বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছিলেন আমেরিকায় বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। ইতোমধ্যেই ডিজনি, যা অনেক বড় ক্রেতা, তারা বলেছে বাংলাদেশ থেকে কোন পণ্য নয়। কানাডাও আপনাদের সাথে ব্যবসার বিষয়টা নিয়ে ভাবছে। তারাও আপনাদের বড় ব্যবসায়িক পার্টনার। এটা আপনাদের জন্য বড় ধরণের ক্রাইসিস সৃষ্টি করতে পারে। আপনি কি একমত?
প্রধানমন্ত্রী: তারা যদি ব্যবসা করতে চায় তাহলে তাদেরকে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে যাতে ব্যবসা ভালোমতো চলে এবং শ্রমিকরা ন্যায্য পারিশ্রমিক পায়। তারাও (ডিজনি, কানাডা ও অন্যান্য ক্রেতা) এসব ঘটনার জন্য কিছুটা দায়ী। সস্তা শ্রম পায় বলেই বিনিয়োগকারীরা এখানে আসে। আমাদের শ্রমিকরা নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী এবং তারা যথাযথভাবে কাজ করে। এজন্যই বিনিয়োগকারীরা এখানে আসে। এবং তারা আসবে এবং ব্যবসা করবে বলে আমি মনে করি।

আমানপোর: আপনার ভালো শ্রমিক আছে এবং পণ্যও ভালো। কিন্তু আপনার সরকার শ্রমিক ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের প্রতি অনেক বেশি আগ্রাসী বলে অভিযোগ রয়েছে। আপনি জানেন গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশে গিয়েছিলেন এবং তিনি আপনার সরকারকে একটি প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন এর নেতা আমিনুল হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে বলেছিলেন। আমিনুলকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। তাকে কেন হত্যা করা হলো এর উত্তর হয়তো জানা নেই। আমিনুল ইসলাম ইস্যুতে আপনার বক্তব্য কী?
প্রধানমন্ত্রী: আমিনুল ইসলাম কোন ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন?

আমানপোর: আমি আপনাকে বলতে পারি.... (তিনি কথা শেষ করতে পারেন নি।
প্রধানমন্ত্রী: তিনি কোন ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন? আপনি কি নাম বলতে পারেন?

আমানপোর: তিনি (আমিনুল ইসলাম) শ্রমিকদের (বঞ্চনা থেকে উদ্ধারের জন্য) সংগঠিত করার কাজ করছিলেন যেখানে শ্রমিকদের জিম্মি করে রাখা হয়। আপনি নিজেই বলেছেন কিছু মানুষ বেআইনী কাজ...
প্রধানমন্ত্রী: না। আপনি ভুল ...

আমানপোর: স্টপ! আমি কি ভুল বললাম?
প্রধানমন্ত্রী: আপনি ভুল। আপনি ভুল।

আমানপোর: কি ভুল?
প্রধানমন্ত্রী: কেউ জানে না তিনি (আমিনুল) শ্রমিক নেতা ছিলেন। বাংলাদেশের কেউ জানে না তিনি (আমিনুল) শ্রমিক নেতা ছিলেন। তিনি খুন হন অথবা কিছু ঘটেছে। চারদিন পর তার মৃতদেহ উদ্ধার করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এটা আমাদের পুলিশ। আমাদের পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। আমরা জানতাম না তিনি ইউনিয়ন নেতা ছিলেন বা অন্য কিছু। কিন্তু তার প্রতি সিমপ্যাথি আছে। মামলা তদন্ত হচ্ছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব বুঝি। সুতরাং এই ব্লেইম গেইম থাকা উচিত না।

আমানপোর: অলরাইট। আপনি জানেন না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে গিয়ে এ ব্যাপারে তদন্ত করতে বলেছেন। আপনি বলেছেন আপনি আপনাদের জনগণ ও শ্রমিকদের ব্যাপারে সচেতন...
প্রধানমন্ত্রী: তদন্ত চলছে...

আমানপোর: ওকে..
প্রধানমন্ত্রী: মন দিয়ে শোনেন। মন দিয়ে শোনেন। তদন্ত চলছে...।

আমানপোর: আমি অনুমান করতে পারি যে আপনার সরকারের উচিত জনগণের প্রতি ও শ্রমিকদের প্রতি আরো সচেতন হওয়া এবং শ্রমিকদেরকে তাদের ইউনিয়ন করতে দেয়া উচিত...। পোপ গতকাল বলেছেন বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ক্রীতদাসের মতো কাজ করে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
প্রধানমন্ত্রী: শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আমি মাঝে মাঝে মালিকদের সাথে দরকষাকষি করি। যাতে তারা ন্যায্য মজুরী ও অন্যান্য সুবিধাদি পায়। আমাদের সরকারের তরফ থেকে তাদের জন্য ডরমেটরি তৈরী করাসহ নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমরা তাদের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ অন্যান্য চাহিদাও নিশ্চিত করেছি। আমরা সবসময় শ্রমিকদের পক্ষে। তাদের ভালো অবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি সব সময় বিবেচনা করি।

আমানপোর: প্রধানমন্ত্রী এখানে স্বচ্ছতার একটা বড় ঘাটতি চোখে পড়েছে। আমি এজন্য বলছি যে সিএনএন বাংলাদেশে গিয়ে এই দূর্ঘটনা কাভার করার অনুমতি পায়নি। আপনি বলছেন সব ভালো। অন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও অনুমতি পায়নি (কথা শেষ করতে পারেননি আমানপোর)
প্রধানমন্ত্রী: আমি দু:খিত, সিএনএন কি বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি পায়নি?

আমানপোর: না। না। আমি আপনাকে বলতে চাই এই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলুন। (কথা শেষ করতে পারেননি আমানপোর)
প্রধানমন্ত্রী: আপনি কি তা-ই বলছেন?

আমানপোর: জি, আমি তা-ই বলছি। সিএনএন কে স্টোরি কাভার করতে অনুমতি দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী: না। না আমি দুঃখিত। (মানতে পারলাম না)

আমানেপার: নো ম্যাম।
প্রধানমন্ত্রী: আপনি কী বলছেন?

আমানপোর: জি, আমি তাই বলছি। এই ঘটনা কাভার করতে সিএনএন এবং অন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশে অনুমতি দেয়া হয়নি। তারা (কর্তৃপক্ষ) অদ্ভূত সব শর্ত আরোপ করেছে... (কথা শেষ করতে পারেননি)
প্রধানমন্ত্রী: না। এটা সত্য না।

আমানপোর: এটা সত্য
প্রধানমন্ত্রী: না না না।

আমানপোর: হ্যা হ্যা। এটা সত্যি
প্রধানমন্ত্রী: বাংলাদেশ একটি উন্মুক্ত দেশ। বাংলাদেশে প্রাইভেট টেলিভিশন আছে (এই বক্তব্যের সময় আমানপোর হেসে উঠেন)।
নিষেধাজ্ঞা থাকলে কেন আমি আপনার সাথে কথা বলছি?

আমানপোর: কারণ, আমি বাংলাদেশে নেই।
প্রধানমন্ত্রী :আমিতো আপনার সাথে কথা বলতাম না!

আমানপোর: (হেসে) প্রধানমন্ত্রী আমি সেখানে (বাংলাদেশে) নেই।
প্রধানমন্ত্রী: আমরা যদি সিএনএন কে প্রিভেন্ট করতাম তাহলে আমি কেন আপনার সাথে কথা বলছি? তাহলে আপনি এটা বন্ধ করুন। এটা প্রচার করবেন না। আপনি যদি মনে করেন সিএনএন কে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি তাহলে আপনি আমার সাক্ষাৎকার প্রচার করবেন না। ঠিক আছে?

আমানপোর: আমাদের সিএনএন কর্তৃপক্ষ এবং সাংবাদিকদের বলা হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে (আমানপোর একটা কাগজ পড়ার চেষ্টা করেন).. ভিসা কর্তৃপক্ষ বলেছেন, তারা রিভিউ করা, জব্দ করা..
প্রধানমন্ত্রী: (মাথা নেড়ে) মন দিয়ে শোনেন.. না।

আমানপোর: না না।
প্রধানমন্ত্রী: কেউ যদি কোন দেশে প্রবেশ করে.... (বক্তব্য শেষ না করে) না না। আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। হ্যা, অবশ্যই সেখানে কিছু নিয়ম কানুন থাকে। (আমানপোর মাথা নাড়তে থাকেন। না না।)

প্রধানমন্ত্রী: সব দেশেরই কিছু নিয়ম কানুন থাকে। সবাইকেই তা অনুসরণ করতে হবে। আমরা আমাদের মানুষ হারিয়েছি। আমি এসব মানুষের জন্যই রাজনীতি করি। সুতরাং প্রতিটি জীবনহানিই আমার জন্য কষ্টদায়ক। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। এবং এটা আমার দায়ভার। আমি এটা দেখভাল করবো এবং আমি তা করছি।

আমানপোর: প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ
প্রধানমন্ত্রী: ধন্যবাদ।

কৃতজ্ঞতা- ইসলামী চত্ত্বর-চট্টগ্রাম